জো বাইডেন ফের ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করতে চান। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা কতটা সম্ভব?
বিজ্ঞাপন
ইরানের পরমাণু চুক্তি যে ভাবে হয়েছিল এবং পরবর্তীতে অ্যামেরিকা সেই চুক্তি থেকে যে ভাবে বেরিয়ে এসেছিল, তা খুব স্বাভাবিক ঘটনা নয়। পুরনো সেই চুক্তি ফিরিয়ে আনাও খুব সহজ কাজ নয়। কারণ, মধ্যবর্তী সময়ে অনেক ঘটনা ঘটে গিয়েছে। তবে অ্যামেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নতুন করে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনার কথা বিবেচনা করেছেন। ইরান তাকে স্বাগতও জানিয়েছে।
গত সপ্তাহের গোড়ায় ইরানের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছিলেন, অ্যামেরিকা চুক্তিতে ফিরে এলে তাঁর দেশও নতুন করে পরমাণু চুক্তিতে অংশ নিতে পারে। কিন্তু তাতেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না।
অ্যামেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুধুমাত্র পরমাণু চুক্তিতে আটকে নাও থাকতে পারে। ইরানের বিতর্কিত মিসাইল প্রোগ্রাম নিয়েও তারা আলোচনা চাইতে পারে। কিন্তু ইরান একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছে। এ বিষয়ে আরব দেশগুলির সঙ্গে আলোচনা করতে তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু ইইউ বা অ্যামেরিকার সঙ্গে এই প্রসঙ্গে তারা কোনো কথা বলতে চায় না। অ্যামেরিকা এবং ইইউকে এই বিষয়গুলি আগে স্পষ্ট করতে হবে। নইলে নতুন করে পরমাণু চুক্তি সফল হবে বলে মনে হয় না।
ইরান পরমাণু চুক্তি কী ও কেন?
অ্যামেরিকা একতরফাভাবে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করলেও বাকি স্বাক্ষরকারী দেশগুলি চুক্তি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর৷ ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ নামের এই চুক্তির প্রধান শর্তগুলি কী?
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Neubauer
পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ?
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইরান শুধু পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাতে পারবে না৷ তবে আন্তর্জাতিক নজরদারির মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি চালু রাখার অধিকার সে দেশের রয়েছে৷ অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসার মতো ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তি কাজে লাগানো যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/IIPA
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ
চুক্তির প্রথম আট বছরে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সীমা মেনে চলতে রাজি হয়েছিল৷ সেইসঙ্গে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত গবেষণাও বন্ধ থাকবে৷ আন্তর্জাতিক পরমাণু জ্বালানি সংস্থা আইএইএ ইরানের কার্যকলাপের উপর নজর রেখে চলেছে৷ জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন ও রাশিয়া এক্ষেত্রে আইএইএ-র মূল্যায়নকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে৷
ছবি: Kazem Ghane/AFP/Getty Images
পরমাণু ভাণ্ডারের ভবিষ্যৎ
চুক্তির আওতায় ইরান ৩,৬৭ শতাংশ সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়ামের ভাণ্ডার ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর অঙ্গীকার করেছিল৷ অর্থাৎ ১৫ বছরের জন্য ৩০০ কিলোগ্রামের বেশি এমন মানের ইউরেনিয়াম ইরানের হাতে থাকার কথা নয়৷ ফলে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথ আপাতত বন্ধ থাকছে৷
ছবি: BEHROUZ MEHRI/AFP/Getty Images
নিষেধাজ্ঞা শিথিল
ইরান শর্ত পূরণ করার পরিবর্তে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ ফলে ইরান আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলিয়াম বিক্রি ও আন্তর্জাতিক অর্থ বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিল৷ অ্যামেরিকার চাপের মুখে সেই সুবিধা হাতছাড়া করতে চায় না ইরান৷
ছবি: FARS
চুক্তিভঙ্গের পরিণতি
পরমাণু কর্মসূচির উপর আন্তর্জাতিক নজরদারির ফলে একটি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করতে ইরানের কমপক্ষে এক বছর লাগবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷ সে রকম প্রচেষ্টা চালালে আবার সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিধান মেনে নিয়েছে ইরান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Jenis
চুক্তির মেয়াদ শেষের অবস্থা
সমালোচকরা বার বার চুক্তির ‘সানসেট ক্লজ’ বা মেয়াদ শেষের অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন৷ তাদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ লক্ষ্যে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা সত্ত্বেও ইরান চুক্তির মেয়াদ শেষে আবার অস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করবে৷ তবে চুক্তির প্রবক্তারা মনে করিয়ে দেন, যে বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপের উপর ১০, ১৫, ২০ বা ২৫ বছর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে৷
ছবি: Fars
ক্ষেপণাস্ত্র ও আঞ্চলিক প্রভাব
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বাড়বাড়ন্ত ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সে দেশের প্রভাব প্রতিপত্তির কড়া সমালোচনা করেন৷ ইউরোপসহ অন্যান্য অনেক দেশও বিষয়ে একমত৷ তবে ‘সফল’ পরমাণু চুক্তি বাতিল করার বদলে তা কাজে লাগিয়ে ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় তারা৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
7 ছবি1 | 7
পরমাণু চুক্তির সমস্যা
ডনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন বার বার একটি কথা বলতেন। ইরান পরমাণু চুক্তির স্পিরিট নষ্ট করছে। এ কথা বলেই তিনি ইরানের উপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছেন। ট্রাম্পের প্রশাসন বার বার বলেছে, পরমাণু চুক্তি বিফল হয়েছে। ইরানের বিবিধ সামরিক কাজ এই চুক্তি বন্ধ করতে পারেনি।
ট্রাম্প চাইলে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে না এসেও সমস্যার কথাগুলি তুলে ধরতে পারেন। এমনই মনে করেন ননপ্রলিফিরেশন পলিসি অ্যাট দ্য আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের ডিরেক্টর কেলসি ডেভপোর্ট। তাঁর মতে, ট্রাম্প বারবারই বলেছেন, ইরানের সঙ্গে একটি নতুন চুক্তি করা দরকার, যা অ্যামেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য সমস্যাগুলিকেও অ্যাড্রেস করবে। কিন্তু চার বছরে ট্রাম্প সেই বিকল্প চুক্তির ব্যবস্থা করতে পারেননি। জো বাইডেন এখন বলছেন, নতুন করে পরমাণু চুক্তিতে যুক্ত হবে অ্যামেরিকা। ফলে দেশের ভিতরেই ফের নতুন চুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, পুরনো পরমাণু চুক্তিতে যোগ দেওয়া এখন অর্থহীন। 'পরমাণু চুক্তি প্লাস'ই হলো এখন বিকল্প ব্যবস্থা। সেই চুক্তি নিয়েই এখন ভাবতে হবে।
জার্মানি ছাড়াও ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য একই ইঙ্গিত দিয়েছে। ডিসেম্বরের গোড়ায় তিনটি দেশ একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছিল। সেখানে ইরানের সঙ্গে একটি কূটনৈতিক আলোচনার পরিসর তৈরির প্রস্তাব গৃহিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের পরমাণু সংক্রান্ত সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রসি বলেছেন, ''অ্যামেরিকা এখন পুরনো চুক্তিতে ফিরে এলে হবে না। কারণ সেই পরিস্থিতি আর নেই। নতুন চুক্তির প্রয়োজন তৈরি হয়েছে।''
ইউরোপান কাউন্সিলের পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ এলি গেরানমায়েহের বক্তব্য, ইরানকে চাপ দেওয়া এখন খুবই কঠিন কাজ। ইরানের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে হলে দেশের রাজনৈতিক সমাজকে আশ্বস্ত করতে হবে। ইরানকে বোঝাতে হবে, এই চুক্তিতে তাদের উপকার হবে। চুক্তিটি দীর্ঘমেয়াদি হবে।
২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে নতুন আরো কিছু বিষয় ঢুকিয়ে জো বাইডেন যদি বর্তমান পরমাণু চুক্তির খসড়া তৈরি করতে চান, তা হলে তা বাস্তবসম্মত হবে না। ইরান সেই প্রস্তাব কোনো ভাবেই মেনে নেবে না।
ট্রাম্পের প্রশাসনিক পরামর্শদাতারা অবশ্য অন্য কথা মনে করছেন। গত চার বছরে ইরানের উপর ব্যাপক চাপ তৈরি করা গিয়েছে। ফলে বাইডেনের পক্ষে নতুন করে দর কষাকষি করা সহজ হবে। ইরানের উপর চাপ এতটাই বেশি যে, তারা সহজেই নতুন চুক্তি মেনে নেবে।
কিন্তু ডেভেনপোর্ট মনে করেন, এই যুক্তিটির কোনো বাস্তবতা নেই। বরং তাঁর ধারণা, বাইডেনের পরিস্থিতি পরমাণু চুক্তির আগের অবস্থার মতো। অ্যামেরিকাকে প্রথমে ইরানের হুমকি বন্ধ করতে হবে। ইরান যে ভাবে পরমাণু পরীক্ষার কথা ভাবছে, তা আটকাতে হবে। তারপর একটি চুক্তিতে আসতে হবে। ফলে চাপ তৈরি করে কিছু করা সম্ভব নয়। তাতে হিতে বিপরীত হবে। প্রাথমিক একটি চুক্তি করে, ইরানের বিশ্বাস অর্জন করে তারপর পরবর্তী আলোচনায় যেতে হবে।
‘পিছু হটেছে’ ইরান, বললেন ট্রাম্প
ইরানের বিভিন্ন গণমাধ্যম মার্কিন ঘাঁটিতে হামলায় ৮০ জন নিহতের তথ্য জানালেও ট্রাম্প বললেন ভিন্ন কথা৷ ভাষণে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এই হামলায় কোনো মার্কিন বা ইরাকি নিহত হননি৷ ট্রাম্পের বক্তব্যের মূল অংশগুলো দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: AFP/S. Loeb
প্রতীক্ষিত ভাষণ
ইরানের হামলার পরপরই বেশ কিছু দেশ তাদের কোনো সৈন্য নিহত হয়নি জানালেও, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু জানায়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ রাতে টুইট করে ‘সব ঠিক আছে’ বললেও ক্ষতির পরিমাণ অ্যামেরিকার স্থানীয় সময় সকালে জানাবেন বলেও জানান ট্রাম্প৷ ভাষণের সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক স্পেনসার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা ছিলেন ট্রাম্পের পাশে৷
ছবি: AFP/S. Loeb
‘ইরান পরমাণু অস্ত্র পাবে না’
ভাষণের প্রথম বাক্যেই ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমি যতদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আছি, ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে দেয়া হবে না৷’’ তিনি বলেন, ‘‘পরমাণু বোমার পেছনে ছুটে ইরান ‘সভ্য’ বিশ্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে৷ আমরা তা কখনও হতে দেবো না৷’’
ট্রাম্প জানান, ইরানের হামলায় কোনো অ্যামেরিকান বা ইরাকি আঘাতপ্রাপ্ত হননি৷ কেউই হতাহতও হননি৷ সব মার্কিন সৈন্য নিরাপদে আছে এবং সেনা ঘাঁটিতেও খুব সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ পূর্বসতর্কীকরণ ব্যবস্থা, আক্রমণ ঠেকানোর সক্ষমতার জন্য মার্কিন সেনাদের ধন্যবাদও জানান ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Nasser
‘পিছু হটেছে’ ইরান
মার্কিন সেনাবাহিনীকে ‘মহান’ এবং শক্তিশালী উল্লেখ করে তিনি বলেন, শক্তি থাকলেই তা ব্যবহার করতে হবে তা তিনি মনে করেন না৷ ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর ইরান ‘পিছু হটেছে’ বলে মনে করেন ট্রাম্প৷ ইরানের এমন অবস্থান সকল পক্ষ এবং বিশ্বের জন্যেও ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: Mehr
‘সন্ত্রাসী সোলেইমানি’
ইরাকে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলেইমানিকে বিশ্বের ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প৷ তিনি বলেন, হেজবুল্লাহর মতো ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠনকে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, রাস্তার পাশে বোমা পেতে রাখা এবং হাজার হাজার মার্কিন নাগরিককে হত্যা করার অভিযোগ ছিল সোলেইমানির বিরুদ্ধে৷
ইরানের সঙ্গে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর পরমাণু চুক্তি ‘ছুঁড়ে ফেলার’ আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প৷ ওবামার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চু্ক্তিতে স্বাক্ষর করলেও ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর চুক্তি থেকে নাম প্রত্যাহার করেন৷ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্য দেশগুলো- জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও চীনকেও চুক্তি বাতিল করতে আহ্বান জানালেন ট্রাম্প৷ সোলেইমানি হত্যার পর ইরান এ চুক্তি না মানার ঘোষণা দিয়েই রেখেছে৷
ছবি: picture-alliance/abaca/SalamPix
‘চুক্তির টাকায় সন্ত্রাস’
ট্রাম্প দাবি করেন, পরমাণু চুক্তির ফলে বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে পাওয়া অর্থে মধ্যপ্রাচ্যে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ চালাচ্ছিল ইরানের বর্তমান সরকার৷ তিনি বলেন, এর ফলে ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন, আফগানিস্তান এবং ইরাক ‘নরকে’ পরিণত হয়েছে৷
ছবি: AFP/Iranian Presidency
আরো অবরোধ
ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট৷এই নিষেধাজ্ঞা আরো কঠোর হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি৷ নতুন অবরোধ কেমন হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু উঠে আসেনি তার বক্তব্যে৷ তবে ইরান তার ‘ব্যবহার’ পরিবর্তন করার আগ পর্যন্ত এ অবরোধ জারি থাকবে বলেও জানান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Brandon
নতুন অস্ত্র আসছে
মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক জোট ন্যাটোকে আরো বেশি সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প৷ নিজের প্রশাসনের অধীনে আড়াই লাখ কোটি ডলার খরচ করে মার্কিন সেনাবাহিনীকে ঢেলে সাজানো হয়েছে বলে জানান তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘মার্কিন সেনাবাহিনী আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী৷ আমাদের বড়, শক্তিশালী, নির্ভুল, প্রাণঘাতি এবং দ্রুতগামী মিসাইল রয়েছে৷ হাইপারসনিক মিসাইল তৈরি হচ্ছে৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/U.S. Department of Defense/S. Apel
ইরানের প্রতি আহ্বান
ভাষণের শেষে ইরানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও এবং জনতাকে সম্বোধন করেন ট্রাম্প৷ তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইরানিদের জন্য ‘দারুণ’ এক স্বপ্নের ভবিষ্যত চান তিনি৷ যারা শান্তি চায়, তাদের পাশে দাঁড়াতে অ্যামেরিকা সর্বদা প্রস্তুত বলেও ভাষণে বলেন ট্রাম্প৷
ছবি: Getty Images/C. Somodevilla
10 ছবি1 | 10
ইরান কেবলমাত্র প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলোচনায় যাবে
এখনো পর্যন্ত ইরান স্পষ্ট করে দিয়েছে তারা পুরনো চুক্তিতে নতুন কোনো বিষয় যুক্ত করতে চায় না। অন্য কোনো বিষয় নিয়ে অ্যামেরিকা বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তারা আলোচনাও করতে চায় না। তাদের স্পষ্ট বক্তব্য, যে চুক্তি একবার হয়ে গিয়েছিল, তার উপর নতুন করে আলোচনার কোনো প্রশ্ন ওঠে না। রোমের একটি কনফারেন্সে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ এ কথা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন।
ব্যালেস্টিক মিসাইল প্রোগ্রাম নিজেদের অধিকার বলে মনে করে ইরান। ইরানের বক্তব্য, এই ধরনের প্রোগ্রাম নিয়ে তারা প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলতে পারে। প্রতিবেশীরা যদি এ ধরনের সামরিক বিষয় বন্ধ করে এবং ইরানকে বন্ধ করার অনুরোধ করে, তা হলে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
ফলে এই সমস্যা কাটানোর একমাত্র উপায় হলো আঞ্চলিক আলোচনা। ইরান জানিয়েছে, আঞ্চলিক শক্তিগুলিকে নিয়ে হরমুজ পিস এনডেভর বা হোপ অনুষ্ঠিত হোক। সেখানে প্রতিবেশী দেশগুলি যোগ দিক এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করুক। অ্যামেরিকা বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন নয়, হোপে অংশ নিতে পারে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কোনো সংস্থা। যারা আলোচনায় উঠে আসা বিষয়গুলিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
ইরানের এই প্রস্তাব খুব বাস্তবসম্মত বলে মনে হয় না। পশ্চিমের দেশগুলিই আরব দেশগুলিকে বা উপসাগরীয় দেশগুলিকে অস্ত্র বিক্রি করে। ফলে ওই অঞ্চলের সামরিক আলোচনা কখনোই পশ্চিমি দেশগুলিকে বাদ দিয়ে করা সম্ভব নয়। ডেভেলপোর্ট মনে করেন, এ বিষয়ে আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে ইরানকে যেমন কথা বলতে হবে, তেমনই পশ্চিমি দেশগুলির সঙ্গেও কথা বলতে হবে।
কিন্তু আপাতত সেই সুযোগ নেই। বরং ইরানের প্রস্তাবকে মেনে নিয়েই আলোচনা শুরু করা যেতে পারে। আলোচনা শুরু না হলে কোনো চুক্তিই বাস্তবায়িত হবে না। পরমাণু চুক্তির বিষয়টি সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সেই বিষয়ে আলোচনা শুরু করে ক্রমশ শিকড়ে পৌঁছনো যেতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।