২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ছয়টি দেশের একটি চুক্তি হয়েছিল৷ এর আওতায় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে ইরান পরমাণু কর্মসূচি থেকে সরে আসার অঙ্গীকার করেছিল৷
বিজ্ঞাপন
কিন্তু ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ঐ চুক্তি থেকে বের হয়ে যায়৷ এরপর জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে চুক্তিটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়৷
চুক্তিটি পুনরুদ্ধারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্যোগে আলোচনা শুরু হয়৷ কিন্তু রাশিয়া ও ইরানের দুটি দাবির কারণে কোনো অগ্রগতি হয়নি৷ এখন পর্যন্ত রাশিয়ার দাবি কৌশলে এড়ানো গেলেও ইরানের দাবি মানতে রাজি নয় যুক্তরাষ্ট্র৷ ইরানের ‘ইসলামিক রেভুলিউশনারি গার্ড কর্পস' বা আইআরজিসির নাম যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার দাবি জানিয়েছে ইরান৷ কিন্তু সেটি করার পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের নেই বলে মার্কিন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন৷
এই অবস্থায় ইরান চুক্তি পুনরুদ্ধার নিয়ে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ আলোচনায় স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে৷
তাহলে কি চুক্তিটি এখন মৃত বলা যায়? সেটি অবশ্য স্বীকার করতে রাজি নন পশ্চিমা কূটনীতিকরা৷ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে একটি সূত্র জানায়, ‘‘তারা রোগীর হাত থেকে আইভি খুলে নিচ্ছেন না... তবে ইতিবাচকভাবে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমার প্রত্যাশা কম৷''
ইরান পরমাণু চুক্তি কী ও কেন?
অ্যামেরিকা একতরফাভাবে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করলেও বাকি স্বাক্ষরকারী দেশগুলি চুক্তি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর৷ ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ নামের এই চুক্তির প্রধান শর্তগুলি কী?
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Neubauer
পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ?
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইরান শুধু পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাতে পারবে না৷ তবে আন্তর্জাতিক নজরদারির মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি চালু রাখার অধিকার সে দেশের রয়েছে৷ অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসার মতো ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তি কাজে লাগানো যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/IIPA
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ
চুক্তির প্রথম আট বছরে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সীমা মেনে চলতে রাজি হয়েছিল৷ সেইসঙ্গে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত গবেষণাও বন্ধ থাকবে৷ আন্তর্জাতিক পরমাণু জ্বালানি সংস্থা আইএইএ ইরানের কার্যকলাপের উপর নজর রেখে চলেছে৷ জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন ও রাশিয়া এক্ষেত্রে আইএইএ-র মূল্যায়নকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে৷
ছবি: Kazem Ghane/AFP/Getty Images
পরমাণু ভাণ্ডারের ভবিষ্যৎ
চুক্তির আওতায় ইরান ৩,৬৭ শতাংশ সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়ামের ভাণ্ডার ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর অঙ্গীকার করেছিল৷ অর্থাৎ ১৫ বছরের জন্য ৩০০ কিলোগ্রামের বেশি এমন মানের ইউরেনিয়াম ইরানের হাতে থাকার কথা নয়৷ ফলে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথ আপাতত বন্ধ থাকছে৷
ছবি: BEHROUZ MEHRI/AFP/Getty Images
নিষেধাজ্ঞা শিথিল
ইরান শর্ত পূরণ করার পরিবর্তে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ ফলে ইরান আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলিয়াম বিক্রি ও আন্তর্জাতিক অর্থ বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিল৷ অ্যামেরিকার চাপের মুখে সেই সুবিধা হাতছাড়া করতে চায় না ইরান৷
ছবি: FARS
চুক্তিভঙ্গের পরিণতি
পরমাণু কর্মসূচির উপর আন্তর্জাতিক নজরদারির ফলে একটি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করতে ইরানের কমপক্ষে এক বছর লাগবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷ সে রকম প্রচেষ্টা চালালে আবার সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিধান মেনে নিয়েছে ইরান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Jenis
চুক্তির মেয়াদ শেষের অবস্থা
সমালোচকরা বার বার চুক্তির ‘সানসেট ক্লজ’ বা মেয়াদ শেষের অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন৷ তাদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ লক্ষ্যে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা সত্ত্বেও ইরান চুক্তির মেয়াদ শেষে আবার অস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করবে৷ তবে চুক্তির প্রবক্তারা মনে করিয়ে দেন, যে বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপের উপর ১০, ১৫, ২০ বা ২৫ বছর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে৷
ছবি: Fars
ক্ষেপণাস্ত্র ও আঞ্চলিক প্রভাব
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বাড়বাড়ন্ত ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সে দেশের প্রভাব প্রতিপত্তির কড়া সমালোচনা করেন৷ ইউরোপসহ অন্যান্য অনেক দেশও বিষয়ে একমত৷ তবে ‘সফল’ পরমাণু চুক্তি বাতিল করার বদলে তা কাজে লাগিয়ে ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় তারা৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
7 ছবি1 | 7
আরও চারজন পশ্চিমা কূটনীতিক নাম প্রকাশ করতে না চেয়ে রয়টার্সকে ইরান চুক্তির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্রায় একই মনোভাব প্রকাশ করেছেন৷ যেমন মার্কিন এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘‘এটা কি মৃত? আমরা এখনও জানি না৷ আমাদের মনে হয় ইরানও জানে না৷''
এদিকে আইআরজিসির নাম সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার দাবি থেকে সরে আসতে রাজি নয় ইরান৷ ‘‘এটা আমাদের জন্য রেডলাইন,'' বলে জানান ইরানের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা৷
ইরানের সঙ্গে চুক্তি করা দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি ও রাশিয়া৷
২০১৫ সালে চুক্তি সইয়ের আগে ইরানের উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ব্যাপারে রাশিয়া ও চীনের সমর্থন পেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু এখন রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করায় এই দুই দেশের সঙ্গে বাকি দেশগুলোর বিভক্তি তৈরি হয়েছে৷ এই বিষয়টিও ইরান চুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলেছে বলে মনে করছেন পশ্চিমা কূটনীতিকেরা৷