আগামী ১২ই অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করার ঘোষণা করতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ বাকি স্বাক্ষরকারী দেশ ও ইরান অবশ্য চুক্তিটি চালু রাখতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
শুরু থেকেই ইরানের বিরুদ্ধে তোপ দেগে চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ ইরানের সঙ্গে ৬ দেশের পরমাণু চুক্তি বাতিল করারও হুমকি দিয়ে চলেছেন তিনি৷ এই চুক্তির কড়া সমালোচনা সত্ত্বেও ইরান সেই চুক্তি অমান্য করছে, এমন কোনো প্রমাণ না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন ট্রাম্প৷ এবার তিনি এই চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন৷ তাঁর মতে, ইরান এই চুক্তির ‘স্পিরিট’ বা মূলমন্ত্র অমান্য করছে৷ দেশের সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে এক বৈঠকের পর হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে তিনি বলেন, ইরানের প্রশাসন সন্ত্রাসবাদে মদত এবং মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে হিংসা ও অরাজকতা রপ্তানি করে চলেছে৷ তাই ইরানের ধারাবাহিক আগ্রাসী মনোভাব ও পরমাণু অস্ত্র তৈরির স্বপ্ন বন্ধ করতে হবে৷ এ সংক্রান্ত কড়া নীতির পূর্বাভাষ দিয়ে ট্রাম্প বলেন, শীঘ্রই ইরান সম্পর্কে ঘোষণা আসতে চলেছে৷ সম্ভবত ১২ই অক্টোবর ট্রাম্প চুক্তি বাতিল করার ঘোষণা করতে পারেন৷
উল্লেখ্য, আগামী ১৫ই অক্টোবরের মধ্যে মার্কিন কংগ্রেসকে জানাতে হবে, ইরান পরমাণু চুক্তি মেনে চলছে কিনা৷ ৯০ দিন পর পর কংগ্রেসকে এই মর্মে জানানো মার্কিন প্রশাসনের দায়িত্ব৷ ট্রাম্পের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা মনে করেন, ইরান চুক্তির শর্ত মানছে না৷ সেই বক্তব্য আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ করলে কংগ্রেসকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ সেখানে দুই কক্ষেই রিপাবলিকান দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে৷ ৬০ দিনের মধ্যে কংগ্রেস ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চাপানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷
তবে অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মতো ইরানের প্রশ্নেও ট্রাম্প প্রশাসনে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে পড়ছে৷ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস ও জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের সভাপতি জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ড এই চুক্তি চালু রাখতে চান৷ ইউরোপীয় কূটনীতিকরাও ট্রাম্প প্রশাসনকে চুক্তি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন৷ কারণ, তাঁদের আশঙ্কা, অ্যামেরিকা এককভাবে এই চুক্তি থেকে সরে এলে ইরান সে দেশের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ এনে আবার আগের পথে ফিরে যেতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের জটিল পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়বে এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও সংঘাতের আশঙ্কা বেড়ে যাবে৷
চুক্তির বাকি স্বাক্ষরকারী দেশগুলি এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি চাইছে না৷ ওবামা প্রশাসন, রাশিয়া ও চীন ছাড়াও ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে এই চুক্তি সম্ভব করেছিল৷ ইরান অক্ষরে অক্ষরে চুক্তির শর্ত মেনে চলায় সে দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো কারণ নেই৷ ইরানের অন্যান্য নীতি পরমাণু চুক্তির আওতায় পড়ে না৷
ইরান অবশ্য বাকি স্বাক্ষরকারীদের সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে চুক্তি মেনে চলার ইঙ্গিত দিচ্ছে৷ এভাবে তারা ট্রাম্প প্রশাসনকে একঘরে করে ফেলতে চায়৷ সে ক্ষেত্রে ইরানের অর্থনৈতিক সুবিধাগুলিও বজায় থাকবে৷
নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে ইরানের রাজধানীতে একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ অংশ নিচ্ছেন ৭৮টি দেশের কার্টুন আঁকিয়ে, তাঁদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেও দু’জন আছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
ছেলেমানুষি
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচার-ব্যবহার কোনো প্রবীণ বা অভিজ্ঞ রাজনীতিকের মতো নয় – কোথায় যেন তার মধ্যে ছেলেমানুষি মিশে আছে৷ কার্টুনের খোকা ট্রাম্প...
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
পিনোকিও
কলোডির গল্পের কাঠের পুতুল পিনোকিও-র নাক সে মিথ্যে কথা বললেই আরো খানিকটা লম্বা হয়ে যেতো৷ ট্রাম্পের লম্বা নাকের অর্থ যদি মিথ্যাভাষণ হয়, তবে সেই নাকের ওপর টুইটারের লোগোর মতো দেখতে ছোট ছোট পাখি বলে দিচ্ছে, ট্রাম্প কিভাবে মিথ্যাভাষণ করে থাকেন৷ কার্টুনিস্টের কল্পনায় একেবারে সামনের পাখিটি আবার নখে বোমা ঝুলিয়ে চলেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
টুইটারের লোগো, কিন্তু মুখটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের
ট্রাম্প যে টুইট করতে ভালোবাসেন, সেটা বিশ্বের বাকি মানুষজনের মতো কার্টুনিস্টদেরও নজর এড়ায়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
সীমান্তে প্রাচীর
সারা বিশ্ব থেকে মোট ১,৬১৪টি ব্যঙ্গচিত্র তেহরানের ট্রাম্প কার্টুন প্রতিযোগিতায় এসে পৌঁছেছে – তার মধ্যে দু’টি ব্যঙ্গচিত্র এসেছে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে, বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন৷ ট্রাম্প যে মেক্সিকো সীমান্তে প্রাকার নির্মাণ করতে চান, এই প্রসঙ্গটিকে বিষয়বস্তু করেছেন বহু কার্টুনিস্ট৷ ছবিতে কিউবার এক কার্টুনিস্টের পাঠানো ব্যঙ্গচিত্রটি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
মেলানিয়ার মুখে হাসি ফোটানোর পন্থা
ইটালির এক কার্টুনিস্টের ব্যঙ্গচিত্রে ট্রাম্প মেলানিয়ার ঠোঁটের কোণ টেনে ধরে তাঁকে জোর করে হাসাচ্ছেন৷ এখানে দু’জনের সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে: ট্রাম্পদের দাম্পত্য জীবন কি সুখের? ওদিকে মেলানিয়া এ পর্যন্ত ক’বার ট্রাম্পের হাত ঠেলে সরিয়ে দিয়েছেন, তার হিসেব রাখছেন ট্যাবলয়েড সাংবাদিকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
‘অ্যামেরিকা মানে তো আমি!’
কার্টুনটিতে নানা দেশের পতাকা উড়ছে – শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে পতাকার জায়গায় উড়ছেন ট্রাম্প স্বয়ং৷ তেহরানে এর আগেও কার্টুন প্রতিযোগিতা হয়েছে এবং তার সবটাই যে বিতর্ক মুক্ত, এমন নয়: যেমন ইসলামিক স্টেট সন্ত্রাস গোষ্ঠীকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রতিযোগিতা সাহসী বলে প্রশংসা পেলেও, হলোকস্ট নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রতিযোগিতা কতটা সুরুচির পরিচায়ক, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
এ কেমন বৈরি
দেশ বা প্রশাসন হিসেবে ইরান যে ঠিক মানবাধিকারের আলোকবর্তিকা নয়, তা বলা চলে৷ তবে ইরান-মার্কিন সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতিতে কার্টুনিস্টরা ট্রাম্পকে তুলোধোনা করলে তেহরানের আপত্তি না থাকারই কথা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
বিজয়ী ইরানেরই
জ্বলন্ত মাথার চুল আর একশ’ ডলার নোটের তৈরি সুট পরিহিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যঙ্গচিত্র এঁকে প্রায় দেড় হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের প্রথম পুরস্কার লাভ করেছেন ইরানি কার্টুনিস্ট হাদি আসাদি৷ তাঁকে অভিনন্দন৷