খবর বেরিয়েছে যে, ইরান চুক্তি বাঁচাতে এবার ফ্রান্স, রাশিয়া, ব্রিটেন ও চীনের সঙ্গে বৈঠক করবে জার্মানি৷ এ সপ্তাহেই ভিয়েনায় হবার কথা এই বৈঠক৷ যুক্তরাষ্ট্র এই বৈঠকে অংশ নেবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Salemi
বিজ্ঞাপন
রোববার জার্মান পত্রিকা ভেল্ট আম সনটাগ এই খবর প্রকাশ করেছে৷ ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখতে এই চুক্তি করা হয়েছিল৷ তবে সম্প্রতি চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এরপর থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ নিয়ে যেন হাহাকার পড়ে গেছে৷
প্রতিবেদনে কী আছে?
ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষস্থানীয় এক দূতের নেতৃত্বে জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, রাশিয়া ও চীন বসবে এই বৈঠকে৷ আগামী সপ্তাহের কোনো এক সময় অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় হবে এই বৈঠক৷
যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকে অংশ নিচ্ছে না৷ এছাড়া ইরান সেখানে থাকবে কিনা, তা-ও পরিষ্কার নয়৷
২০১৫ সালে করা চুক্তির অনুকরণে দেশগুলোর প্রতিনিধিরা নতুন একটি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করবেন৷ ইরানের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প ও মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ভূমিকা সীমিত রাখার বিষয়টি থাকবে নতুন চুক্তিতে৷ তবে যোগ হতে পারে ইরানকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি৷
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে ইরানের পক্ষে ইইউ কী উদ্যোগ নিতে পারে, সে বিষয়েও আলোচনা করবেন কূটনীতিকরা৷
দু‘দিন আগে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল রাশিয়ার সোচিতে সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে ইরান চুক্তি বাঁচিয়ে রাখার বিষয়ে একমত হন তাঁরা।
পত্রিকাটির রিপোর্টে একজন শীর্ষ ইইউ কূটনীতিকের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে যে, চুক্তির নাম পরিবর্তনসহ ‘কিছু বাড়তি উপাদান' যোগ করলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সম্মতি পাওয়া যেতে পারে৷ তবে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো বক্তব্য ছিল না প্রতিবেদনে৷
এই বৈঠক প্রমাণ করে ইরান চুক্তি বাঁচাতে কতটা মরিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ ওয়াশিংটনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে হলেও মস্কো, বেইজিং ও তেহরানের সঙ্গে কাজ করছে তারা৷ ইইউ মনে করে, চুক্তিটি না বাঁচাতে পারলে ফল হতে পারে ভয়াবহ৷
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের চুক্তিতে ছিল যে, ইরান তাদের পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্পগুলো সীমিত করে আনবে৷ যদিও দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পগুলো সম্পর্কে কিছুই ছিল না চুক্তিতে৷ মধ্যপ্রাচ্যে সশস্ত্র কয়েকটি দলকে ইরানের সহায়তা দেয়ার বিষয়েও কোনো কথা ছিল না৷
এর বদলে ইরানের ওপর থেকে পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল৷ এরপর ইরান তাদের জ্বালানি তেল উত্তোলন দ্বিগুণ করে দেয়৷ এতে করে তাদের অর্থনীতিও মন্দাভাব কাটিয়ে উঠতে থাকে৷
জেডএ/ডিজি
German chancellor expresses EU support for Iran nuclear deal at meeting with Putin.
00:27
This browser does not support the video element.
জার্মানি-রাশিয়া সুসম্পর্কের পথে ৬টি বাধা
সোচি শহরে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের বৈঠকে ইরান সম্পর্কে ঐকমত্যে এলেও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে দুই দেশের গভীর মতপার্থক্য রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schreiber
হ্যাকিং হামলা
জার্মানিতে সাইবার হামলার নেপথ্যে কিছু রুশ রাষ্ট্রীয় সংস্থা রয়েছে বলে জার্মানির গোয়েন্দা সংস্থা মনে করে৷ ২০১৫ সালে জার্মানির সংসদের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও ফাউন্ডেশনের উপর এমন হামলা হয়েছিল৷ ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জার্মানির সরকারি নেটওয়ার্কের উপর সাইবার হামলার ক্ষেত্রেও রাশিয়া জড়িত বলে সন্দেহ করা হয়৷ সেই হামলায় অনেক তথ্য চুরি হয়েছিল৷
ছবি: Imago/T. Trutschel
সিরিয়ায় রাশিয়ার ভূমিকা
সিরিয়ার নেতা বাশার আল আসাদকে মদতের কারণে রাশিয়াও সে দেশে যুদ্ধাপরাধের দোসর হয়ে উঠেছে বলে জার্মানি মনে করে৷ জার্মান সরকার সিরিয়ার দুমায় রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের তীব্র নিন্দা করেছে৷ এই ঘটনায় কমপক্ষে ৬০ জনের মৃত্যুর পর পশ্চিমা দেশগুলির সামরিক হামলায় অংশ না নিলেও জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল রাশিয়ার দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
রাশিয়ার ক্রাইমিয়া দখল
২০১৪ সালের মার্চ মাসে রাশিয়া যেভাবে ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নিয়েছে, জার্মানির মতে, তার ফলে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে৷ রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিন এর মধ্যে রুশ ভূখণ্ড থেকে ক্রাইমিয়ার মধ্যে একটি সেতুও উদ্বোধন করেছেন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে জার্মানিও এই বিবাদের ক্ষেত্রে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে৷
ছবি: Reuters/P. Rebrov
গোয়েন্দা সংস্থার অস্বাভাবিক তৎপরতা
ব্রিটেনে প্রাক্তন রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তাঁর কন্যার উপর বিষ প্রয়োগের পেছনে রাশিয়ার হাত ছিল বলে সে দেশের সরকার নিশ্চিত৷ জার্মানিও এই হামলার নিন্দা করেছে এবং তথ্যপ্রমাণ যাচাই করে ব্রিটেনের দাবি মেনে নিয়েছে৷ অন্য কিছু দেশের মতো জার্মানিও কয়েকজন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে৷ এছাড়া ইইউ দেশগুলিতে ভুয়া খবর ছড়ানোর পেছনেও রুশ গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়৷
পূর্ব ইউক্রেনে অগ্রগতির অভাব
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সংকট কাটাতে মিনস্ক শহরে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, রাশিয়া তা লঙ্ঘন করে চলেছে বলে মনে করে জার্মানিসহ পশ্চিমা জগৎ ফ্রান্স, রাশিয়া ও ইউক্রেনের উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিকদের ‘নর্মান্ডি কনট্যাক্ট গ্রুপ’-এর কাঠামো সত্ত্বেও দেশগুলি৷ ইউক্রেন ও রাশিয়া সীমান্তে লাগাতার সংঘর্ষ চলে আসছে৷ জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল পুটিনের উদ্দেশ্যে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রাশ টানার ডাক দিয়ে আসছেন৷
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও হয়রানি
রাশিয়ায় আসন্ন ফুটবল বিশ্বকাপের আসরে ডোপিং বিশেষজ্ঞ এক সাংবাদিকের উপস্থিতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল রাশিয়া৷ জার্মানি কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে তাঁর ভিসার ব্যবস্থা করতে পেরেছে বটে, কিন্তু সব ক্ষেত্রে এমন সাফল্য অর্জন করা যাচ্ছে না৷ যেমন, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ইউরোপীয় প্ল্যাটফর্ম’ নামের এক জার্মান এনজিও-কে অযাচিত ঘোষণা করেছে রাশিয়া৷