ইরান: দ্রুত পরমাণু চুক্তি চায় অ্যামেরিকা, জার্মানি
২১ জানুয়ারি ২০২২
দ্রুত আলোচনা সেরে তাড়াতাড়ি ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি চায় অ্যামেরিকা ও জার্মানি।
বিজ্ঞাপন
মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিংকেন এখন জার্মানি সফর করছেন। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বেয়ারবকের সঙ্গে আলোচনার পর দুই নেতাই বলেছেন, তারা ইরানের সঙ্গে দ্রুত পরমাণু চুক্তি চান।
ব্লিংকেন জানিয়েছেন, চুক্তি যাতে তাড়াতাড়ি হয়, তার জন্য জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
ব্লিংকেন ও বেয়ারবক কী বলেছেন?
যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে ব্লিংকেন বলেন, ''বেশ কিছু সপ্তাহ ধরে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। আমরা পরমাণু চুক্তিতে আবার ফিরতে পারি কি না তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এখন কালক্ষেপ করা উচিত হবে না।''
তার মতে, ''ভিয়েনা আলোচনায় অগ্রগতি খুব বেশি হয়নি। তা সত্ত্বেও এখনো ইরানের সঙ্গে আবার পরমাণু চুক্তি সম্ভব।
পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানের জনগণের ভাবনা
03:15
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বইডেনও বুধবার বলেছেন, ''আবার এই চুক্তি করার প্রয়াস থেকে সরে আসা হচ্ছে না।''
বেয়ারবক জানিয়েছেন, ''তাড়াতাড়ি চুক্তি হওয়া জরুরি।'' তবে তার মতে, ''সমাধান পেতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। আলোচনা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে গেছে। আমদের খুবই জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে, আমরা সমাধানে পৌঁছতে পারব না।''
ফ্রান্সের অভিযোগ
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বার্লিনে ছিলেন। তিনি বলেছেন, আলোচনা খুবই ধীর গতিতে এগোচ্ছে। আংশিক সাফল্য এসেছে। এখনই আলোচনার গতি বাড়ানো দরকার।
তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্বেগ বাড়িয়েছে ইরানের প্রয়াস। ইরান আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের গতি বাড়িয়েছে বলে রিপোর্ট এসেছে।
ইরান পরমাণু চুক্তি কী ও কেন?
অ্যামেরিকা একতরফাভাবে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করলেও বাকি স্বাক্ষরকারী দেশগুলি চুক্তি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর৷ ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ নামের এই চুক্তির প্রধান শর্তগুলি কী?
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Neubauer
পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ?
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইরান শুধু পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাতে পারবে না৷ তবে আন্তর্জাতিক নজরদারির মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি চালু রাখার অধিকার সে দেশের রয়েছে৷ অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসার মতো ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তি কাজে লাগানো যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/IIPA
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ
চুক্তির প্রথম আট বছরে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সীমা মেনে চলতে রাজি হয়েছিল৷ সেইসঙ্গে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত গবেষণাও বন্ধ থাকবে৷ আন্তর্জাতিক পরমাণু জ্বালানি সংস্থা আইএইএ ইরানের কার্যকলাপের উপর নজর রেখে চলেছে৷ জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন ও রাশিয়া এক্ষেত্রে আইএইএ-র মূল্যায়নকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে৷
ছবি: Kazem Ghane/AFP/Getty Images
পরমাণু ভাণ্ডারের ভবিষ্যৎ
চুক্তির আওতায় ইরান ৩,৬৭ শতাংশ সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়ামের ভাণ্ডার ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর অঙ্গীকার করেছিল৷ অর্থাৎ ১৫ বছরের জন্য ৩০০ কিলোগ্রামের বেশি এমন মানের ইউরেনিয়াম ইরানের হাতে থাকার কথা নয়৷ ফলে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথ আপাতত বন্ধ থাকছে৷
ছবি: BEHROUZ MEHRI/AFP/Getty Images
নিষেধাজ্ঞা শিথিল
ইরান শর্ত পূরণ করার পরিবর্তে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ ফলে ইরান আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলিয়াম বিক্রি ও আন্তর্জাতিক অর্থ বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিল৷ অ্যামেরিকার চাপের মুখে সেই সুবিধা হাতছাড়া করতে চায় না ইরান৷
ছবি: FARS
চুক্তিভঙ্গের পরিণতি
পরমাণু কর্মসূচির উপর আন্তর্জাতিক নজরদারির ফলে একটি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করতে ইরানের কমপক্ষে এক বছর লাগবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷ সে রকম প্রচেষ্টা চালালে আবার সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিধান মেনে নিয়েছে ইরান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Jenis
চুক্তির মেয়াদ শেষের অবস্থা
সমালোচকরা বার বার চুক্তির ‘সানসেট ক্লজ’ বা মেয়াদ শেষের অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন৷ তাদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ লক্ষ্যে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা সত্ত্বেও ইরান চুক্তির মেয়াদ শেষে আবার অস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করবে৷ তবে চুক্তির প্রবক্তারা মনে করিয়ে দেন, যে বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপের উপর ১০, ১৫, ২০ বা ২৫ বছর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে৷
ছবি: Fars
ক্ষেপণাস্ত্র ও আঞ্চলিক প্রভাব
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বাড়বাড়ন্ত ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সে দেশের প্রভাব প্রতিপত্তির কড়া সমালোচনা করেন৷ ইউরোপসহ অন্যান্য অনেক দেশও বিষয়ে একমত৷ তবে ‘সফল’ পরমাণু চুক্তি বাতিল করার বদলে তা কাজে লাগিয়ে ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় তারা৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
7 ছবি1 | 7
ভিয়েনায় দুই মাস আগে এই আলোচনা শুরু হয়েছে। এখনো পর্যন্ত আট দফা কথা হয়েছে। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, চীন ও ইইউ-র কথা হচ্ছে।
অ্যামেরিকা এই আলোচনার সঙ্গে পরোক্ষভাবে যুক্ত। ২০১৮ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তারপর থেকে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে।
বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আবার চুক্তির নবীকরণ চাইছেন। কিন্তু তিনি ইরানের উপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা তুলতে চান না। আর ইরানের দাবি, নিষেধাজ্ঞা না তুললে তারা চুক্তিতে ফিরবে না।