ইরানকে পরমাণু চুক্তির চূড়ান্ত খসড়া দিলো ইইউ। ইরান জানিয়েছে, তারা তা খতিয়ে দেখছে।
বিজ্ঞাপন
ভিয়েনায় ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে ইইউ-র যে কর্মকর্তারা আলোচনা চালাচ্ছিলেন, তারা চুক্তির চূড়ান্ত খসড়া ইরানের হাতে তুলে দিয়ে নিজেদের দেশে ফিরে গেছেন। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স ও জার্মানির।
২০১৮ সালে অ্যামেরিকা চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে। ফলে এই চুক্তি আর কার্যত বলবৎ থাকে না। ইরানও তাদের পরমাণু কর্মসূচি এই কয়েক বছরে অনেকটাই প্রসারিত করেছে।
পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানের জনগণের ভাবনা
03:15
বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর আবার চুক্তি নিয়ে উৎসাহ দেখায় অ্যামেরিকা। ইরানের সঙ্গে পশ্চিমা দেশের আলোচনা আবার শুরু হয়। গত কয়েক মাস ধরে আলোচনার পর চূড়ান্ত খসড়া চুক্তি তৈরি হলো। ইরানের সরকারি মিডিয়া জানিয়েছে, ইরানের প্রধান আলোচনাকারী আলি বাঘেরি কানিও তেহরান ফিরে গেছেন।
খসড়া চুক্তি নিয়ে যা জানা গেছে
ইইউ-র পররাষ্ট্র নীতি সংক্রান্ত প্রধান জোসেপ বরেল জানিয়েছেন, ''যতটা আলোচনা করা সম্ভব ছিল, আমরা করেছি। তারপর চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।''
ইরান পরমাণু চুক্তি কী ও কেন?
অ্যামেরিকা একতরফাভাবে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করলেও বাকি স্বাক্ষরকারী দেশগুলি চুক্তি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর৷ ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ নামের এই চুক্তির প্রধান শর্তগুলি কী?
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Neubauer
পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ?
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইরান শুধু পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাতে পারবে না৷ তবে আন্তর্জাতিক নজরদারির মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি চালু রাখার অধিকার সে দেশের রয়েছে৷ অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসার মতো ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তি কাজে লাগানো যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/IIPA
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ
চুক্তির প্রথম আট বছরে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সীমা মেনে চলতে রাজি হয়েছিল৷ সেইসঙ্গে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত গবেষণাও বন্ধ থাকবে৷ আন্তর্জাতিক পরমাণু জ্বালানি সংস্থা আইএইএ ইরানের কার্যকলাপের উপর নজর রেখে চলেছে৷ জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন ও রাশিয়া এক্ষেত্রে আইএইএ-র মূল্যায়নকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে৷
ছবি: Kazem Ghane/AFP/Getty Images
পরমাণু ভাণ্ডারের ভবিষ্যৎ
চুক্তির আওতায় ইরান ৩,৬৭ শতাংশ সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়ামের ভাণ্ডার ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর অঙ্গীকার করেছিল৷ অর্থাৎ ১৫ বছরের জন্য ৩০০ কিলোগ্রামের বেশি এমন মানের ইউরেনিয়াম ইরানের হাতে থাকার কথা নয়৷ ফলে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথ আপাতত বন্ধ থাকছে৷
ছবি: BEHROUZ MEHRI/AFP/Getty Images
নিষেধাজ্ঞা শিথিল
ইরান শর্ত পূরণ করার পরিবর্তে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ ফলে ইরান আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলিয়াম বিক্রি ও আন্তর্জাতিক অর্থ বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিল৷ অ্যামেরিকার চাপের মুখে সেই সুবিধা হাতছাড়া করতে চায় না ইরান৷
ছবি: FARS
চুক্তিভঙ্গের পরিণতি
পরমাণু কর্মসূচির উপর আন্তর্জাতিক নজরদারির ফলে একটি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করতে ইরানের কমপক্ষে এক বছর লাগবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷ সে রকম প্রচেষ্টা চালালে আবার সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিধান মেনে নিয়েছে ইরান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Jenis
চুক্তির মেয়াদ শেষের অবস্থা
সমালোচকরা বার বার চুক্তির ‘সানসেট ক্লজ’ বা মেয়াদ শেষের অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন৷ তাদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ লক্ষ্যে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা সত্ত্বেও ইরান চুক্তির মেয়াদ শেষে আবার অস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করবে৷ তবে চুক্তির প্রবক্তারা মনে করিয়ে দেন, যে বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপের উপর ১০, ১৫, ২০ বা ২৫ বছর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে৷
ছবি: Fars
ক্ষেপণাস্ত্র ও আঞ্চলিক প্রভাব
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বাড়বাড়ন্ত ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সে দেশের প্রভাব প্রতিপত্তির কড়া সমালোচনা করেন৷ ইউরোপসহ অন্যান্য অনেক দেশও বিষয়ে একমত৷ তবে ‘সফল’ পরমাণু চুক্তি বাতিল করার বদলে তা কাজে লাগিয়ে ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় তারা৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
7 ছবি1 | 7
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত মিখাইল উলিয়ানভ বলেছেন, ''পরমাণু প্রকল্প নিয়ে কড়াকড়ি মানলে ইরানের উপরেও নিষেধাজ্ঞার কড়াকড়ি থাকবে না বলে ইইউ-র দেশগুলি জানিয়েছে।''
এবার আলোচনাকারীরা ঠিক করবে, চুক্তির এই খসড়া তারা মেনে নেবে কি না। যদি কেউ আপত্তি না তোলে, তাহলে পরমাণু চুক্তি আবার চালু হবে।
কিন্তু ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ''এখনই সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই।''
ইরানের সরকারি সংবাদসংস্থা জানাচ্ছে, ওই মুখপাত্র আরো বলেছেন, তেহরান আরো গভীর আলোচনার পর তাদের মতামত জানাবে।
আলোচনার গতিপ্রকৃতি
পরমাণু চুক্তির নবায়ন নিয়ে কখনো ঘরোয়াভাবে আলোচনা হয়েছে। কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কথা হয়েছে। কখনো আলোচনা বন্ধ হয়ে গেছে। কখনো তা আবার শুরু হয়েছে। গত মার্চে আলোচনায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছিল। এপ্রিলে আবার আলোচনা শুরু হয়।
মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি বা আইএইএ-র তদন্ত করা নিয়ে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছিল।
নতুন জায়গায় ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে জানতে পেরে আইএইএ ইরানের নিন্দা করে।
ইরান প্রথম থেকেই জানিয়েছে, তারা পরমাণু অস্ত্র বানাচ্ছে না। আইএইএ মনে করছে, ইরান পরমাণু অস্ত্র বানাবার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।