ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার হুমকি সত্যি কার্যকর করবেন কিনা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবারই সেই সিদ্ধান্ত জানাবেন৷ ইরান জানিয়েছে, সে দেশ সব রকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত৷
ট্রাম্প এই নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পালন করতে বদ্ধপরিকর৷ তাঁর মুখরক্ষা হয়, এমন কোনো বিকল্প পথ পেলে তবেই তিনি পরমাণু চুক্তি মেনে চলবেন, এমনটাই ধরে নেওয়া হচ্ছে৷
ট্রাম্প প্রশাসন শুরু থেকেই চারটি অভিযোগ করে আসছে৷ তাদের ধারণা, পরমাণু চুক্তি সত্ত্বেও সে দেশ আন্তর্জাতিক ইনস্পেক্টরদের ফাঁকি দিয়ে গোপনে অস্ত্র কর্মসূচি চালু রেখেছে৷ যদিও এই অভিযোগের সপক্ষে কোনো অকাট্য প্রমাণ পেশ করা হয়নি৷ চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে ইরান কার্যত আবার আগের পথে ফিরে যেতে পারে – এমন ‘সানসেট ক্লজ' নিয়েও ওয়াশিংটনের আপত্তি রয়েছে৷ কোনো রাখঢাক না করে ইরান দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে৷ তাছাড়া ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেনের মতো দেশে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন করছে৷ ইউরোপীয় সহযোগীরা শেষোক্ত দুই যুক্তি কার্যত মেনে নিলেও তারা পরমাণু চুক্তির সাফল্য থেকে সরে আসতে প্রস্তুত নয়৷ বরং বাড়তি পদক্ষেপের মাধ্যমে ইরানের প্রভাব-প্রতিপত্তি খর্ব করার প্রচেষ্টা চালিয়ে তারা ট্রাম্প প্রশাসনের দুশ্চিন্তা দূর করতে চায়৷
ট্রাম্প শেষপর্যন্ত চুক্তি বাতিল করলে ইউরোপের সঙ্গে অ্যামেরিকার কৌশলগত সহযোগিতা বড় ধাক্কা খাবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ সে ক্ষেত্রে ইরানও চুক্তি পুরোপুরি বাতিল করার হুমকি দিয়েছে৷ অর্থাৎ সে দেশ কোনো রকম বাধ্যবাধকতা ছাড়াই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথে এগোতে পারবে৷ সোমবার অবশ্য প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানি পরমাণু চুক্তি মেনে চলার ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ইরান যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত৷
অ্যামেরিকা চুক্তি বাতিল করলেও ইউরোপের ৩ দেশ, চীন ও রাশিয়া এই চুক্তি মেনে চলতে প্রস্তুত৷ ইরানও চুক্তি মেনে চললে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলতে পারবে৷ সে ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতি নতুন করে কোনো সংকটের মুখে পড়বে না৷ তাছাড়া তেহরান এই প্রশ্নে অ্যামেরিকা ও ইউরোপের মধ্যে বিভাজনের ফায়দা তোলার চেষ্টা করতে পারে৷
তবে ইরান মরিয়া হয়ে চুক্তি বাতিল করলে গোটা অঞ্চলে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও তার জের ধরে যুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ বিশেষ করে সৌদি আরব সেই পথে চলতে পারে৷ ইসরায়েলও কোনো গোপনীয়তা ছাড়াই পরমাণু অস্ত্রধর দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
কার, কতগুলো পারমাণবিক বোমা আছে
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে বর্তমানে ১৩,৪০০টি আণবিক বোমা আছে৷ তবে এ সব বোমার সংখ্যা কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/KCNA
রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশি
স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট সিপ্রি-র তথ্য অনুসারে রাশিয়ার কাছে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আণবিক বোমা রয়েছে৷ দেশটিতে এ ধরনের বোমার সংখ্যা ৬,৩৭৫টি৷ ১৯৪৯ সালে রাশিয়া প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা করেছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kolesnikova
দ্বিতীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা বানিয়েছে এবং একমাত্র দেশ যারা যুদ্ধেও এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে৷ দেশটির কাছে এখন ৫,৮০০ টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
চীনও পিছিয়ে নেই
৩২০টি পারমাণবিক বোমা আছে চীনের৷ রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সংখ্যাটা কম হলেও দেশটি ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বাড়াচ্ছে৷ যেমন ২০১৯ সালেই তাদের কাছে ২৯০ টি বোমা ছিল৷ স্থল, আকাশ বা সমুদ্রপথে সেগুলো ছোঁড়া সম্ভব৷
ছবি: Getty Images
সাবমেরিনে পারমাণবিক বোমা
ফ্রান্সের কাছে পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে ২৯০টি৷ এগুলোর অধিকাংশই রয়েছে সাবমেরিনে৷ দেশটির অন্তত একটি সাবমেরিন সবসময় পারমাণবিক বোমা নিয়ে টহল দেয়৷
ছবি: AP
যুক্তরাজ্যেরও আছে পারমাণবিক বোমা
২১৫টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে যুক্তরাজ্যের কাছে৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এই দেশটি ১৯৫২ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kaminski
দক্ষিণ এশিয়ায় এগিয়ে পাকিস্তান
ইতোমধ্যে তিনবার প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে পাকিস্তান৷ দেশটির আছে ১৬০টি আণবিক বোমা৷ সাম্প্রতিক সময়ে পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়িয়েছে দেশটি৷ অনেকে আশঙ্কা করেন, প্রতিবেশীর সঙ্গে দেশটির লড়াই কোন এক সময় পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP
থেমে নেই ভারত
পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়াচ্ছে ভারতও৷ দেশটি প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ১৯৭৪ সালে৷ সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, তাদের কাছে এখন ১৫০টি বোমা রয়েছে৷ ভারত অবশ্য জানিয়েছে, তারা আগে কোনো দেশকে আঘাত করবে না, আর যেসব দেশের পারমাণবিক বোমা নেই, সেসব দেশের বিরুদ্ধে তারা এ ধরনের বোমা ব্যবহার করবে না কোনোদিন৷
ছবি: Reuters
ইসরায়েল সম্পর্কে তথ্য কম
ইসরায়েল অবশ্য নিজের দেশের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে তেমন কিছু জনসমক্ষে প্রকাশ করে না৷ যদিও দেশটির নব্বইটি পারমাণবিক ‘ওয়ারহেড’ আছে বলে উল্লেখ করেছে সিপ্রি৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
উত্তর কোরিয়া সবার নীচে
পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করে উত্তর কোরিয়াও৷ এখন দেশটির কাছে থাকা বোমার সংখ্যা আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০টি৷