বৃহস্পতিবার দক্ষিণ টেক্সাস থেকে স্টারশিপের সফল উৎক্ষেপণ হয়। কিন্তু সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট একটু পরেই ভেঙে পড়ে।
বিজ্ঞাপন
স্পেসএক্সের এই স্টারশিপের ইঞ্জিনে ছিল সুপারহেভি বা অত্যন্ত ভারি বুস্টার। এটাই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় রকেট। ধোঁয়ার ঝড় তুলে এই স্টারশিপ মহাকাশ যাত্রা শুরু করে। উৎক্ষেপণে কোনো ভুলভ্রান্তি ছিল না। স্টারশিপ উঠে যাচ্ছিল উপরের দিকে। মিনিটখানেক পরে স্টারশিপ সবচেয়ে জোরালো এয়ারোডাইনামিক চাপের মধ্যে দিয়ে চলে যায়। যে কোনো রকেটের ক্ষেত্রে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়।
তার একটু পরেই রকেটটি টাল খায়। এরপরই তা বিস্ফোরিত হয়। গালফ অফ মেক্সিকোর উপরে তা আগুনের গোলায় পরিণত হয়। পৃথিবীর কক্ষপথে যেতে পারেনি এই স্টারশিপ।
তবে নাসার প্রশাসক বিল নেলসন ইলন মাস্কের কোম্পানিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ''ইতিহাস বলে, প্রতিটি মহান প্রাপ্তির ক্ষেত্রেই একটা ঝুঁকি থাকে। কারণ, বড় ঝুঁকি নিলেই বড় প্রাপ্তি হয়।''
ইলন মাস্কের স্পেস এজেন্সি এই মহাকাশযান করেই চাঁদে তিনজন মহাকাশচারীকে নিয়ে যাবে। এই মিশনের নাম আর্টেমিস থ্রি। তার আগে এই পরীক্ষামূলক উড়ান নিয়ে কৌতূহল ছিল প্রচুর। গত সোমবার উৎক্ষেপণের কথা ছিল। সেই যাত্রা পিছিয়ে দেয়া হয়। এই রকেটই একসময় প্রচুর যাত্রী ও বিশাল ওজনের মালপত্র নিয়ে মহাকাশে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। যে মহাকাশয়ানটি ভেঙে পড়লো তার উচ্চতা ছিল ৩৯৪ ফুট, যা স্ট্যাচু অফ লিবার্টি থেকেও ৯০ ফুট উঁচু।
তবে এই স্পেসশিপে কোনো মানুষ ছিল না। রকেটের নকশা ঠিক কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছিল। ইলন মাস্ক বলেছেন, ''স্টারশিপের এই পরীক্ষামূলক উড়ানে সাফল্য পেতে হয়ত আরো কয়েকবার চেষ্টা করতে হবে।''
বেজোস, ব্র্যানসন, মাস্ক: মহাকাশে কে জিতছেন?
অ্যামাজনের জেফ বেজোস, ভার্জিনের রিচার্ড ব্র্যানসন ও টেসলার ইলন মাস্ক মহাকাশে পর্যটন ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন৷ এ লক্ষ্যে তারা কতদূর এগোলেন তা জানা যাবে এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Virgin Galactic
নিউ শেপার্ড
এটি অ্যামাজনের জেফ বেজোসের ‘ব্লু অরিজিন’ কোম্পানির বাহন ‘নিউ শেপার্ড’৷ এতে করে আগামী ২০ জুলাই অরবিটে ঘুরে আসবেন বেজোস, তার ভাই মার্ক ও আরেকজন৷ অনলাইনে নিলামের মাধ্যমে টিকিট পেয়েছেন ঐ ব্যক্তি, যার নাম এখনও প্রকাশ করা হয়নি৷ টিকিটের দাম পড়েছে ২৩৮ কোটি টাকার কিছু বেশি৷ একটি রকেট নিউ শেপার্ডকে উপরে নিয়ে ছেড়ে দিয়ে আসবে৷ এরপর নিউ শেপার্ড ক্যাপসুলটি প্যারাসুটের সহায়তায় পৃথিবীতে ফিরে আসবে৷
ছবি: Isaiah J. Downing/REUTERS
টিকিটের দাম
২০১৮ সালে রয়টার্স জানিয়েছিল নিউ শেপার্ডে উঠতে একজনকে কমপক্ষে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা খরচ করতে হবে৷ রকেট থেকে ছাড়া পাওয়ার পর নিউ শেপার্ড প্রায় ১০ মিনিট অরবিটে থাকবে৷ এসময় যাত্রীরা ওজনহীন অবস্থার অভিজ্ঞতা লাভ করবেন৷ নিউ শেপার্ডে ছয়জন যাত্রী যেতে পারবেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/Blue Origin/AP
ভিএসএস ইউনিটি
এটি রিচার্ড ব্রেনসনের ভার্জিন গ্যালাকটিকোর মহাকাশে যাওয়ার প্লেন৷ ভিএমএস ইভ নামের একটি বড় ক্যারিয়ার এয়ারক্রাফটে করে ভিএসএস ইউনিটিকে উপরে নিয়ে যাওয়া হবে৷ ভিএসএস ইউনিটি স্পেস প্লেনে ছয়জন বসতে পারবেন৷ এর মধ্যে দুজন ক্রু, বাকিরা যাত্রী৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Virgin Galactic
টিকিটের দাম
ভার্জিন গ্যালাকটিক ইতিমধ্যে ৬০০-র বেশি টিকিট বিক্রির আবেদন পেয়েছে৷ প্রতিটির দাম প্রায় দুই কোটি সাড়ে ১২ লাখ টাকা৷ ২০২২ সালে তারা বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে পারবে বলে আশা করছে৷ ওড়া শুরু থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসা পর্যন্ত সময় লাগবে প্রায় দেড় ঘণ্টা৷ এর মধ্যে কিছুক্ষণ ওজনহীন অবস্থার স্বাদ পাবেন যাত্রীরা৷ টিকিটের দাম ক্রমান্বয়ে ৩৪ লাখ টাকায় কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে ভার্জিন৷
ছবি: AFP/VIRGIN GALACTIC
স্পেসএক্স ড্রাগন
এটি টেসলার ইলন মাস্কের মহাকাশ যান৷ ইতিমধ্যে নাসার নভচারীরা এটিতে চড়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস-এ গেছেন৷ তবে এই সেপ্টেম্বরে ড্রাগনে চড়ে চার ব্যক্তির মহাকাশে যাওয়ার কথা রয়েছে যাদের কেউ পেশাদার নভচারী নন৷ তারা মহাকাশে তিনদিন থাকবেন৷ আইএসএস-এর চেয়ে বেশি উঁচুতে তারা যাবেন বলে জানা গেছে৷ বিলিওনেয়ার উদ্যোক্তা ও জেট পাইলট জারেড আইজ্যাকম্যান এই চারজনের টিকিট কেটেছেন৷
ছবি: NASA/AP Photo/picture alliance
চাঁদের কাছাকাছি
স্পেসএক্স ড্রাগনে সর্বোচ্চ সাতজন বসতে পারবেন৷ স্পেসএক্সের একেকটি মিশন তিন থেকে চারদিনের হতে পারে৷ ইলন মাস্ক সম্প্রতি জানিয়েছেন, তারা স্টারশিপ নামে একটি রকেটের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করেছেন যেটিত করে ২০২৩ সালে জাপানি বিলিওনেয়ার ইয়ুসাকু মেজাওয়াকে চাঁদের কাছাকাছি ঘুরিয়ে আনা হবে৷
ছবি: SpaceX/AP/dpa/picture alliance
6 ছবি1 | 6
তবে ভেঙে পড়লেও স্টারশিপের এই পরীক্ষা একেবারে ব্যর্থ হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না। মিনিট তিনেক রকেটটি উড়েছিল। লঞ্চপ্যাড থেকে যাত্রা সফল ছিল। যেটুকু সময় উড়েছে, তাতে ইঞ্জিনিয়াররা বুঝতে পেরেছেন, রকেটটি কীরকম কাজ করেছে, ত্রুটিই বা কোথায় রয়ে গেছে।
নাসার সাবেক কর্মকর্তা ড্যানিয়েল ডামবাকর বলেছেন, ''কিছু মানুষের মনে হতেই পারে, কিন্তু এটা পরীক্ষা মোটেই ব্যর্থ হয়নি। এটা ছিল একটা প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে যাওয়া।''