নয়ত জার্মানি গাড়ি-পাগল দেশ৷ পেট্রোল সেভিং-এও তাদের জুড়ি নেই৷ অথচ ইলেকট্রিক কার-এর ক্ষেত্রে সেই জার্মানিই আবার চলছে ঢিমে তালে৷ সরকারও চান পথে-ঘাটে আরো বেশি বৈদ্যুতিক গাড়ি৷ অলীক আশা৷
বিজ্ঞাপন
২০০৯ সালে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ঘোষণা করেছিলেন যে, লক্ষ্য হলো, ২০২০ সালের মধ্যে জার্মানিতে দশ লাখ ইলেকট্রিক কার চলবে৷ তাঁর – বর্তমান – পরিবহণ মন্ত্রী আলেক্সান্ডার ডোব্রিন্ট তো এই সেদিন বলেছেন, ‘‘আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব বলেই আমাদের বিশ্বাস৷'' বিশেষজ্ঞরা কিন্তু বলছেন: ম্যার্কেল ওর বদলে যদি বলতেন, ২০২০ সালের মধ্যে চাঁদে এক লক্ষ গাড়ি চলবে, তাহলে সেটাই বেশি বাস্তবসম্মত হত৷
২০১৪ সালের প্রথমার্ধের হিসেব অনুযায়ী জার্মানিতে ইলেকট্রিক কার-এর সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৯০০৷ অর্থাৎ পেট্রোল অথবা ডিজেলে চলা প্রতি দশ হাজার গাড়ি প্রতি ইলেকট্রিক কার-এর সংখ্যা ছিল – চার৷ ঠিকই দেখেছেন: দশ হাজার বনাম চার৷ এমনকি ফ্রান্সেও প্রতি দশ হাজার পেট্রোলে চলা গাড়ির তুলনায় ইলেকট্রিক কার চলে দশটা৷
অথচ সরকার উৎসাহ দিতে কার্পণ্য করেননি৷ ইলেকট্রিক গাড়ি কিনলে প্রথম দশ বছর কোনো রোড ট্যাক্স দিতে হয় না৷ তা-তেও বিশেষ কাজ হয়নি, তাই সরকার এবার নতুন প্রলোভন দেখাচ্ছেন: শহরের ভিতরে বাস চলার লেনে চলতে পারবে ইলেকট্রিক কার; বিনি খরচায় পার্ক করতে পারবে; নতুন করে চার্জ করার কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে পার্কিং-এর ব্যবস্থা রাখা হবে৷
চালকবিহীন গাড়ি
গুগল সহ কয়েকটি কোম্পানি স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়ি নিয়ে গবেষণা করছে৷ ফলে সামনের দিনগুলোতে রাস্তায় হয়ত চালকবিহীন গাড়ি দেখা যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্বনিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রিক গাড়ি
গুগলের ‘সেলফ-ড্রাইভিং কার প্রজেক্ট’-এর পরিচালক ক্রিস উর্মসন গুগল ব্লগে জানিয়েছেন, কয়েক বছরের মধ্যে স্বনিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রিক গাড়ি নামানোর পরিকল্পনা করছে তারা৷
ছবি: Getty Images
গবেষণা চলছে
অনেকদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে নিজেদের সদর দফতরে পরীক্ষামূলকভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালিয়ে আসছে গুগল৷ তবে গাড়ি নিজে চললেও এখনো সবসময় একজন ড্রাইভার পাশে থাকছেন৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
দুর্ঘটনা এড়ানো
সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত গাড়ির স্তূপ এটি৷ চোখে স্পষ্ট দেখতে ব্যর্থ হওয়া সহ নানা কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে৷ তবে গুগল আশা করছে বুদ্ধিমান রোবট দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যাবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেন্সরযুক্ত গাড়ি
গুগল-এর স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়িতে অনেক ধরনের সেন্সর থাকবে৷ যেমন এই লেজার সেন্সরটি রাস্তার ত্রিমাত্রিক ছবি তুলবে৷
ছবি: DW/Fabian Schmidt
জার্মান প্রযুক্তি
একটু আগে গুগল-এর যে লেজার সেন্সরের কথা বলা হলো, সেটা জার্মানির বুন্ডেসভেয়ার ইউনিভার্সিটিও তাদের স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়িতে ব্যবহার করছে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, লেজার সেন্সর যে ত্রিমাত্রিক ছবি তুলেছে সেটা গাড়িতে থাকা কম্পিউটারে পাঠিয়ে দিয়েছে৷
ছবি: Universität der Bundeswehr/TAS
৬ডি-ভিশন
ছবির এই বস্তুটি একটি ক্যামেরা৷ গাড়ির উইন্ডশিল্ডের পেছনে লাগানো আছে এটি৷ রাস্তায় যা কিছু ঘটে তার ছবি তোলে এই ক্যামেরা৷ ডাইমলারের একদল গবেষকের ‘৬ডি-ভিশন’ প্রকল্পের আওতায় উদ্ভাবিত এই ক্যামেরা ২০১১ সালে ‘জার্মান ফিউচার অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছিল৷ এর কাজ সম্পর্কে জানা যাবে পরের ছবিতে৷
ছবি: Deutscher Zukunftspreis/Ansgar Pudenz
আলোর খেলা
আগের ছবিতে যে ক্যামেরাটি দেখা গেছে সেটির তোলো ছবিগুলো গাড়ির কম্পিউটারে চলে যায়৷ এই ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে সামনে কোনো ঝুঁকি আছে কিনা – তা বুঝতে পারেন চালক৷ এই ছবিতে পথচারীকে কমলা রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ আর সবুজ চিহ্নটি চলমান একটি গাড়ির৷ অর্থাৎ কোনো বিপদ নেই৷ এভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালক ছাড়াই সামনে চলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷
ছবি: Deutscher Zukunftspreis/Ansgar Pudenz
কম্পিউটার নাকি মানুষ?
রোবট চালিত গাড়ি যদি দুর্ঘটনায় পড়ে তাহলে তার জন্য কাকে দায়ী করা হবে? এর নির্মাতা, নাকি সফটওয়্যার প্রোগ্রামারকে৷ নাকি গাড়ির মালিককে? রাজনীতিবিদ ও আইনজীবীদের ভবিষ্যতে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে৷
ছবি: DW/Fabian Schmidt
অন্য কাজে
যুদ্ধের সময় পণ্য পরিবহণ কাজে কোনো চালককে কাজে না লাগিয়ে কিংবা পরমাণু দুর্ঘটনার পর সেই বিষাক্ত অঞ্চলে কোনো মানুষকে না পাঠিয়ে সেখানে স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়ি পাঠানো যেতে পারে৷
ছবি: DW/Fabian Schmidt
9 ছবি1 | 9
কিন্তু কিছুতেই কিছু কাজ হবে না বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা৷ তারা চান, ইলেকট্রিক কার-এর জন্য কর ছাড় – যেমন যে সব কোম্পানি তাদের অফিসের গাড়ি হিসেবে ইলেকট্রিক কার রাখবে, তাদের জন্য৷ কিন্তু সরকার আপাতত সেদিকে এগোতে রাজি নন – যার মূল কারণটা সম্ভবত অন্যত্র৷ আসলে স্রেফ প্রযুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকেই জার্মান গাড়ি শিল্প এখনও অতদূর পৌঁছায়নি৷ তাই সরকার প্রথাগত পেট্রোল কি ডিজেল চালিত মোটর শিল্পকে আরো কিছুটা সময় দিতে চাইছেন বলে অনেকের ধারণা – যেমন সবুজ দলের পরিবহণ সংক্রান্ত মুখপাত্র ভ্যালেরি ভিলম্স-এর৷
ভিলম্স বলেন: সরকার চান না যে, মার্কিন টেসলা কিংবা ফরাসি রেনো-র মতো মোটর কার নির্মাতারা জার্মান মার্সিডিজ-এর চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা পাক৷ অবশ্য জার্মান গাড়ি-নির্মাতারা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে৷ ডাইমলার স্মার্ট-এর একটি ইলেকট্রিক সংস্করণ বাজারে ছেড়েছে৷ ফোক্সভাগেন দেখিয়েছে মিনি এবং গল্ফ-এর ইলেকট্রিক সংস্করণ৷ বিএমডাব্লিউ তো তার হাই-এন্ড আই-থ্রি মডেল এনে সবার নজর কেড়েছে৷
অবশ্য সমস্যাটা সম্ভবত অন্য কোথাও৷ জার্মানিতে ইলেকট্রিক কার-এর ব্যাটারি রি-চার্জ করার স্টেশনগুলোর সংখ্যা চার হাজার৷ এ বছরের শেষে ফ্রান্সে রি-চার্জিং স্টেশনের সংখ্যা দাঁড়াবে দশ হাজার৷
এখন ডিম আগে না মুর্গি আগে, সে তর্ক তুলবেন না প্লিজ!