পরিবেশ সংরক্ষণের তাগিদে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ইলেকট্রিক গাড়ির চল বাড়ছে৷ কিন্তু গাড়ির ব্যাটারি বাতিল হয়ে গেলে ফেলে দেবার প্রয়োজন নেই৷ ফ্রান্স ও জার্মানিতে এমন ব্যাটারির পুনর্জন্মের লক্ষ্যে একাধিক উদ্যোগ চলছে৷
বিজ্ঞাপন
ইলেকট্রিক গাড়ির বাতিল ব্যাটারির পুনর্জন্মের ব্যবস্থা করছে ‘বেটারিস' নামের স্টার্ট আপ কোম্পানি৷ বার্লিনে এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷ কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার রাইনার হ্যোনিশ বলেন, ‘‘ব্যাটারির ৭০ শতাংশ স্টোরেজ ক্ষমতা থাকলেও অনেকে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন৷ প্রথমে ব্যাটারি খুলে তার মধ্যে রাখা ৪৮টি মডিউল পরীক্ষা করে সেগুলি দিয়ে আমাদের নতুন ‘বেটারপ্যাক' তৈরি করি৷''
গাড়ি থেকে খুলে নেওয়া পুরানো ব্যাটারির ক্ষমতা ৭০ শতাংশ থাকে৷ সব আলাদা করে ভিতরের অংশগুলি নতুন করে সাজানো হয়৷ ৩৫ কিলো ওজনের সেই ‘বেটারপ্যাক' দিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যায়৷ ফলে জ্বালানির উৎস হয়েও সেটি পরিবেশবান্ধব৷ হ্যোনিশ বলেন, এভাবে চলমান জ্বালানি পরিষেবা প্রণালী তৈরি হচ্ছে৷ আমরা কেন এটা করছি? আমরা আসলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন এড়াতে চাই৷ এটা নির্মল জ্বালানি৷''
প্যারিস জলবায়ু সংরক্ষণ চুক্তি অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনের মাত্রা শূন্যে নিয়ে আসতে হবে৷ বেটারপ্যাক সেই উদ্যোগে সাহায্য করতে পারে৷ বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিষ্কার বিকল্প হিসেবে সেটিকে গোটা বিশ্বে নানা ধরনের যানে ব্যবহার করা সম্ভব৷
অর্থাৎ এমনকি টুক টুক বা অটোরিক্সায়ও সেই ব্যাটারি ব্যবহার করা সম্ভব৷ এভাবে বাতিল গাড়ির ব্যাটারির পুনর্জন্ম ঘটে৷ ‘ক্লিন মোবিলিটি' বা পরিবেশবান্ধব গতিশীলতা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিনব উদ্যোগ এটি৷
করোনা-পর্বেও উৎপাদনে টেসলা
বিশ্বের প্রথম সারির ইলেকট্রিক গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা টেসলার প্রধান এলন মাস্ক জানিয়েছেন শিগগিরই উৎপাদনে ফিরছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Chinatopix
অপেক্ষার অবসান
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ সারা বিশ্বে ছড়ানোর আঁচ এসে পড়েছিল টেসলার জার্মানি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারখানাগুলিতেও৷ ২৩ মার্চ থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার ফ্রেমন্ট শহরের এই কারখানাটি বন্ধ থাকার পর আবার চালু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এলন মাস্ক৷ এতদিন, এই কারখানা ছিল জনমানবশূন্য৷
চলতি সপ্তাহের শুরুতে এলন মাস্ক জানান, স্থানীয় বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই ক্যালিফোর্নিয়ার এই কারখানাটি চালু করা হচ্ছে৷ এই কারখানায় সাধারণত ১০ হাজার কর্মচারী কাজ করে৷ কারখানা চালু হবার পর সেখানের গাড়ির পার্কিং করার জায়গাটি পুরোপুরি ভর্তি ছিল৷
ছবি: Reuters/J. White
কড়া বার্তা দিলেন মাস্ক
ফ্রেমন্টের কারখানা চালু করার পর টেসলার সাথে কেমন আচরণ করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এখন, সেটাই দেখার৷ যদিও ইতিমধ্যে টুইটারে এলন মাস্ক জানিয়েছেন যে, প্রয়োজন পড়লে এই কারখানা অন্যত্র সরিয়ে নিতেও পেছপা হবেন না তিনি৷ শুধু তাই নয়, তিনি বলেন যে, অবস্থার প্রয়োজনে টেসলার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও সরিয়ে টেক্সাস বা নেভাডায় নিয়ে যেতে পারেন তিনি৷
বর্তমানে খবরের শীর্ষে ফ্রেমন্টের এই কারখানা উঠে এলেও পিছিয়ে নেই বার্লিনে টেসলার গিগাফ্যাক্টরি প্রকল্পের কাজও৷ জার্মান সরকারের করোনা বিষয়ক কড়া নীতি অবলম্বন সত্ত্বেও চলছে কাজ৷ কারখানার ঘর তৈরির অনুমতি এখনও না পাওয়া গেলেও জঙ্গল সাফাই করার কাজ সম্পূর্ণ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
প্রয়োজনে পিঁপড়ারও স্থান বদল
পরিবেশবিদদের পরামর্শে, টেসলার গিগাফ্যাক্টরি প্রকল্পের অঞ্চলে বসবাসরত বাদুড় ও পিঁপড়াকে সরাতে রাজি হয়েছেন এলন মাস্ক৷ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে অন্য কোনো বাসযোগ্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
টেসলার পাশেই জার্মানি
জার্মান অর্থনীতি মন্ত্রী পেটার আল্টামায়ার জানিয়েছেন যে, করোনা সংকট টেসলার এই প্রকল্পের জন্য কোনো বড় বিলম্ব বয়ে আনবে না৷ বার্লিনের পাশে গ্র্যুনহাইডে অঞ্চলে তৈরি হচ্ছে এই প্রকল্প৷ স্থানীয়দের কাছে এই প্রকল্প ইতিমধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে৷
ছবি: DW/H. Graupner
২০২১ সালেই কি তৈরি হবে গাড়ি?
স্থানীয়দের বেশির ভাগ মানুষ টেসলার পাশে থাকলেও ৩৭৩টি নালিশও জমা পড়েছে, যার ফলে জার্মানিতে টেসলার ভবিষ্যৎ কিছুটা হলেও প্রশ্নের মুখে৷ ২০২১ সালের মধ্যে এই কারখানা থেকে গাড়ি বাজারে আসার কথা থাকলেও, বাড়তি খরচ ও পুরোদমে যানবাহনের ঝঞ্ঝাটের সম্ভাবনা গ্র্যুনহাইডের মতো ছোট অঞ্চলে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে৷
ছবি: DW/H. Graupner
7 ছবি1 | 7
হ্যোনিশ আগে রোলস রয়েস কোম্পানিতে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন৷ আজ তিনি সবুজ প্রযুক্তি নিয়ে মেতে রয়েছেন৷ কিন্তু সেই কাজ করতে শিল্পক্ষেত্রে তাঁর সহযোগীর প্রয়োজন৷
প্যারিস শহরের উপকণ্ঠে বার্লিনের এই আইডিয়াকে আরও বড় আকারে রূপায়নের তোড়জোড় চলছে৷ সেখানে প্রথম গাড়ির ব্যাটারি রিসাইক্লিং কারখানা তৈরি হচ্ছে৷ ‘সেকেন্ড লাইফ' নামের ফরাসি কোম্পানি বেটেরিসের মতো স্টার্ট-আপ কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে পথিকৃৎ হয়ে উঠতে চায়৷ রেনো কোম্পানির পরিবেশ প্রযুক্তির প্রধান জঁ-ফিলিপ অ্যারমিন বলেন, ‘‘আমাদের কারখানা থেকে ভবিষ্যতমুখী কিছু করতে চাই৷ কারণ সেই উদ্যোগ অর্থনৈতিকভাবেও লাভজনক হবে বলে আমরা নিশ্চিত৷ এই প্রযুক্তি গাড়ি শিল্পের ক্ষেত্রে দিশা দেখাবে৷ কারণ সমাজ ও ক্রেতারা আরও বেশি করে জলবায়ু ও পরিবেশবান্ধব সমাধানসূত্র চাইছে৷''
প্যারিসে ই-কারের জয় জয়কার
এই মৌসুমে ইউরোপের কার শো শুরু হয়েছে প্যারিসে৷ বেশিরভাগ গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান তাদের ই-কার বা ইলেকট্রনিক গাড়ি নিয়ে উপস্থিত হয়েছে এবারের আয়োজনে৷ দেখুন গাড়ির অভিনব মডেলগুলো৷
ছবি: NetCarShow.com
প্যারিসের তারকা
ইলেকট্রনিক অ্যারিনায় জেনারেল মোটরের জার্মান ব্র্যান্ড ওপেলের ই-কার আমপেরা গতবার মোটেও জনপ্রিয়তা পায়নি৷ এই ফার্মটি এবার প্যারিসে নতুন অ্যামপেরা-ই ইলেকট্রিক কার পরিবেশন করছে৷ বলা হচ্ছে এটি একবার চার্জ করলে ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যায়৷ আর যদি সত্যিই তা হয় তবে এই গাড়িটি প্যারিস শোতে তারকা হতে বাধ্য৷
ছবি: GM Corp
বাভেরিয়া থেকে প্রতিযোগিতা
রেঞ্জের বিষয়ে সচেতন বিএমডাব্লিউ৷ অভিজাত এই গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটির নতুন সংস্করণ আই-৩ এর রেঞ্জ ৩০০ কিলোমিটার, আগে যা ছিল ১৯০ কিলোমিটার৷ এছাড়া প্রদর্শনীতে প্রতিষ্ঠানটির নতুন মডেল এক্স-টু ও আছে৷
ছবি: BMW AG
ভল্ফসবুর্গের রহস্য
জার্মান গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফক্সওয়াগন প্যারিস মোটর শোতে কোন ই-কার প্রদর্শন করবে না বলে গুজব শোনা যাচ্ছিল৷ জার্মানির বৃহত্তর গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি শোতে আই.ডি কার পরিবেশন করেছে, একবার চার্জ করলে যেটি ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U.Deck
বৈদ্যুতিক দৃষ্টি আকর্ষণ
পোর্শে প্রদর্শন করেছে প্যানামেরা-৪ মডেল, যার অশ্বশক্তি ৫৫০৷ ঘণ্টায় ২৭৮ কিলোমটার চলতে পারবে গাড়িটি৷
ছবি: Porsche AG
কেবল ই-কারই নয়
মার্সিডিজ-বেনৎস তাদের ই-কার নিয়ে উপস্থিত হয়েছে প্যারিসে৷ এর মডেলটা ভীষণ স্মার্ট৷ কোম্পানিটি ৫০০ কিলোমিটার রেঞ্জের ইলেকট্রিক গাড়ি প্রদর্শন করতে আগ্রহী৷
ছবি: Daimler AG
প্যারিসের প্রতিযোগিতা
এটা খুবই স্বাভাবিক যে স্বাগতিক দেশ ফ্রান্স প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার চেষ্টা করবে৷ যেমনটা করছে বা সিত্রোয়েন, যাকে ফরাসি ভাষায় বলা হয় সিত্রঁ৷ তারা যে মডেলটির প্রদর্শন করছে, তার নাম সিএক্সপেরিয়েন্স বা ফরাসিতে সিএক্সপেরিয়ঁ৷
ছবি: Citreon
পরিবার বান্ধব
পিউগিওট ৫০০৮ এর মডেলটি ৪.৬৪ মিটার লম্বা৷ ভেতরে অনেক জায়গা, এমনকি ড্রাইভারের জন্যও বেশ জায়গা রয়েছে, যেটাকে বলে আই-ককপিট৷ তাই জন সংযোগ বিশেষজ্ঞরা এই গাড়িকে বলছেন ‘পরিবার বান্ধব’৷
ছবি: Peugeot
ফেরারি
ফেরারির প্রকৌশলীরা দারুণ একটা কাজ করেছিল গতবার, তারা ৮০০ অশ্বশক্তির একটি মডেল বানিয়েছিল৷ এবার তারা একটি ইলেকট্রিক ইঞ্জিন ইনস্টল করছে, যার ফলে এর শক্তিবৃদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়েছে ৯৬৩ অশ্বশক্তি৷
ছবি: NetCarShow.com
প্যারিসে ফেরত
টয়োটার এই মডেলটি হাইব্রিড প্লাগ-ইন সংযুক্ত৷
ছবি: Toyota
9 ছবি1 | 9
এমন প্রচেষ্টার আরও দৃষ্টান্ত রয়েছে৷ চারটি কন্টেনারে ৫৪টি ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারি বোঝাই করা হয়েছে৷ ছোটখাটো এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বিদ্যুৎ সরবরাহের মূল গ্রিডের সঙ্গেও যুক্ত৷ সরবরাহে হেরফের হলেই গাড়ির পুনর্ব্যবহৃত ব্যাটারি সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারে৷ চারটি কন্টেনার এভাবে ৮,৮০০ ঘরবাড়িতে এক ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে৷
প্যারিসে সেন নদীর বন্দরেও গাড়ির ব্যাটারির পুনর্জন্ম ঘটছে৷ জাহাজ নির্মাণ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দিদিয়ে স্পাদ-ও নতুন এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এটাই পরিবহণ সংক্রান্ত সব কিছুর ভবিষ্যৎ৷ নৌকার ক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য৷ বিশেষ করে পরিবেশ দূষণের জন্য নৌকাকে দায়ী করা হচ্ছে৷''
স্পাদ তাঁর সব জলযানে সেকেন্ড-লাইভ ব্যাটারি লাগাতে চান৷ ছোট নৌকাগুলিতে এখনই সেটা সম্ভব হচ্ছে৷ বিনা দূষণে দিনে দুটি ট্রিপ সম্ভব হচ্ছে৷ ২০২৪ সালে অলিম্পিকের বছর পর্যন্ত তাঁর সব জলযান বিদ্যুৎ শক্তিতে চলার কথা৷ এভাবেও গাড়ির বাতিল ব্যাটারির পুনর্জন্ম হচ্ছে৷