গাজার রাফাহ শহরে ইসরায়েলের বিতর্কিত সামরিক অভিযানের বিরোধিতা করে বাইডেন প্রশাসন সে দেশকে কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠানো বন্ধ করছে৷ ইসরায়েলি বাহিনী অভিযানের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
গাজায় সামরিক অভিযানকে ঘিরে ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মতপার্থক্য কোন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, এবার তা জানা গেছে৷ গাজার দক্ষিণে জনবহুল রাফাহ শহরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলার বিরোধিতা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন গত সপ্তাহ থেকেই অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ রেখেছে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্স-সহ একাধিক সংবাদ মাধ্যমের কাছে সেই পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন৷ এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই মার্কিন প্রশাসন গোটা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শেষ পর্যন্ত এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ বিশেষ করে একাধিক ধরনের বোমার সরবরাহ বন্ধ রাখছে বাইডেন প্রশাসন, যেগুলি দিয়ে ইসরায়েল গাজার শহরাঞ্চলে আক্রমণ চালাতে পারে৷ হোয়াইট হাউস ও মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করছে না৷ তবে ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থন অটুট রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারিন জিন-পিয়ের৷
অ্যামেরিকার একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন মহলে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রবল বিরোধিতার কারণে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বছরে বাইডেন প্রশাসন উভয় সংকটে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ বিশেষ করে গাজায় নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ও দুর্দশা সম্পর্কে অ্যামেরিকায় ক্ষোভ বাড়ছে৷ গত বছর ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের নৃশংস হামলার পর বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি জোরালো সমর্থন জানালেও সম্প্রতি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্য বেড়ে চলেছে৷
মঙ্গলবার ইসরায়েলি বাহিনী রাফাহ শহরের কাছে গাজা ও মিশর সীমান্ত দখল করে গুরুত্বপূর্ণ ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে৷ সেখানে সাঁজোয়া গাড়িও মোতায়েন করা হয়েছে৷ প্রবল আন্তর্জাতিক চাপ এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে বোঝাপড়ার সম্ভাবনা সত্ত্বেও নেতানিয়াহু রাফাহ শহরে স্থলবাহিনীর সামরিক অভিযান এখনো বাতিল করতে প্রস্তুত নন৷ হোয়াইট হাউসের সূত্র অনুযায়ী ইসরায়েল সেখানে ‘সীমিত' অভিযানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ তা সত্ত্বেও রাফায় নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটলে দুই দেশের সম্পর্কের আরো অবনতির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷
মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্ভাব্য বোঝাপড়া সম্পর্কে বিভ্রান্তি কাটছে না৷ হামাস গাজায় অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব মেনে নিয়েছে বলে যে খবর ছড়িয়ে পড়ছে, মার্কিন প্রশাসন মঙ্গলবার তার বিরোধিতা করেছে৷ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, হামাস মোটেই সেই প্রস্তাব মেনে নেয় নি, বরং জবাবে শুধু কিছু পালটা প্রস্তাব দিয়েছে৷ আপাতত সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
অ্যামেরিকার ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল। গাজায় ইসরায়েলের অভিযানের পর দেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞেরা যাকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করছেন।
ছবি: Craig Ruttle/AP Photo/picture alliance
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেছেন ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা। টেন্ট টাঙিয়ে বিক্ষোভস্থলেই অবস্থান করছেন তারা। মঙ্গলবার রাতে সেখানেই পৌঁছায় পুলিশ। প্রায় ৩০০ আন্দোলনকারীকে আটক করা হয়।
ছবি: Marco Postigo Storel/AP Photo/picture alliance
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য
বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, মার্কিন সরকার ইসরায়েলকে সাহায্য করছে, এরই প্রতিবাদে তারা আন্দোলনে বসেছিলেন। শান্তিপূর্ণভাবে তারা আন্দোলন করছিলেন।
ছবি: Craig Ruttle/AP/picture allaince
বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই আন্দোলনে ছাত্ররা ছিলেন না। বাইরে থেকে আন্দোলনকারীরা এসে সেখানে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। সে কারণেই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
ছবি: Ekaterina Venkina/DW
অন্য বয়ান
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, বিক্ষোভস্থলে সকলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন না। বাইরে থেকে কিছু মানুষ এসেছিলেন। কিন্তু সকলেই বাইরে থেকে আসেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আয়োজনেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল।
ছবি: Caitlin Ochs/REUTERS
ইউসিএলএ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফর্নিয়া লস অ্যাঞ্জেলেসেও ফিলিস্তিনপন্থিরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। মঙ্গলবার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থিদের সঙ্গে ইসরায়েলপন্থিদের সংঘর্ষ হয়।
ছবি: David Swanson/REUTERS
লাঠি নিয়ে হামলা
রয়টার্সের ছবিতে স্পষ্ট, ফিলিস্তিনপন্থিরা যেখানে টেন্ট টাঙিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন সেখানে লাঠি এবং পোল স্টিক নিয়ে আক্রমণ চালায় ইসরায়েলপন্থিরা।
ছবি: David Swanson/REUTERS
পুলিশের হস্তক্ষেপ
সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশকে ডাকে। ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢোকার পর সংঘর্ষ থামে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানিয়েছেন, যারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল তারা তাদের ছাত্র নয়। যদিও এই বক্তব্যের সত্য়তা জানা যায়নি।
ছবি: David Swanson/REUTERS
বহু আন্দোলনকারী আহত
ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষে বহু ছাত্র আহত হয়েছে। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে পুলিশের তরফে আহতের সংখ্যা জানানো হয়নি।
ছবি: Ethan Swope/AP Photo/picture alliance
একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ
গত কয়েকদিনে অ্যামেরিকার একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ পৌঁছেছে। বেশ কিছু জায়গায় ফিলিস্তিনপন্থিদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। বহু আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।