হেজবোল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ বুধবার বলেছেন, লেবাননের সঙ্গে যুদ্ধ করলে তা ইসরায়েলের বিপর্যয়ের কারণ হবে।
হেজবোল্লাহ নেতা নাসরাল্লাহ ইসরায়েল নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। ছবি: ANWAR AMRO/AFP
বিজ্ঞাপন
টিভি-ভাষণে তিনি বলেছেন, ''যদি শত্রুপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করে, তাহলে কোনোরকম সংযম না দেখিয়ে, কোনো নিয়ম না মেনে, কোনো বিধিনিষেধ না মেনে, সীমাহীনভাবে যুদ্ধ করব।''
নাসরাল্লাহ জানিয়েছেন, ''আমরা যুদ্ধকে ভয় পাই না।''
একদিন আগেই বৈরুতে ড্রোন হামলায় হামাস নেতা সালেহ আরৌরির মৃত্যু হয়েছে। তারপরই ইসরায়েলকে হুমকি দিসেন নাসরাল্লাহ।
আরৌরি ছিলেন হামাস ও হেজবোল্লাহের মধ্যে যোগাযোগের সেতু। হেজবোল্লাহকেও জঙ্গি সংগঠন বলে ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি,ইসরায়েল ও অন্য কয়েকটি দেশ।
হেজবোল্লাহর পরিচয়
লেবাননের ইরান সমর্থিত আধাসামরিক গোষ্ঠী হেজবোল্লাহ৷ তাদের একটি রাজনৈতিক দল আছে, আছে একটি সামরিক শাখাও৷ সম্প্রতি তাদের শক্তি বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Zaatari
ইতিহাস
১৯৮২ সালে ইসরায়েলের দক্ষিণ লেবানন দখলের প্রেক্ষিতে মুসলিম নেতারা মিলে হেজবোল্লাহ গড়ে তোলেন৷ হেজবোল্লাহ শব্দের অর্থ ‘আল্লাহর দল’৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাধারণ নাগরিকদের সমর্থন
দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলকে চলে যেতে বাধ্য করেছিল হেজবোল্লাহ৷ এরপর ২০০৬ সালে ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহ আরেক দফা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল৷ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ থেকে লেবাননকে রক্ষার কারণে শিয়াপন্থি হেজবোল্লাহর প্রতি সুন্নিসহ অন্য গোত্রের মানুষ ও লেবাননের সমাজে তাদের প্রতি এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Zaatari
ইরান ও সিরিয়ার সমর্থন
শুরু থেকেই দেশ দুটি হেজবোল্লাহকে সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে এসেছে৷ বর্তমানে হেজবোল্লাহর সামরিক শাখা লেবাননের সামরিক বাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী এবং সে অঞ্চলে তারা অন্যতম আধাসামরিক গোষ্ঠী হয়ে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
রাজনৈতিক শাখা
১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলা লেবাননের গৃহযুদ্ধের পর হেজবোল্লাহ রাজনীতির দিকে মনোযোগ দেয়া শুরু করে৷ হাসান নাসরাল্লাহ (ছবি) ১৯৯২ সালে হেজবোল্লাহর রাজনৈতিক অংশের নেতৃত্বে আসেন৷ বর্তমানে দেশটির শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের একটি বড় অংশ এবং খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মীয় গোত্রের সঙ্গে তাদের সখ্য গড়ে উঠেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সশস্ত্র শাখা
গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর অন্যান্য গোষ্ঠীর মতো হেজবোল্লাহ অস্ত্র ত্যাগ করেনি৷ প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির দলসহ অন্যান্য দলগুলো হেজবোল্লাহকে অস্ত্র ত্যাগের আহ্বান জানালেও তারা তা মানেনি৷ হেজবোল্লাহর যুক্তি, ইসরায়েল ও বাইরের অন্যান্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে অস্ত্র প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/AA
সন্ত্রাসী গোষ্ঠী?
যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ক্যানাডা ও আরব লিগের দেশগুলোর দৃষ্টিতে হেজবোল্লাহ একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী৷ কিন্তু যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন হেজবোল্লাহর বৈধ রাজনৈতিক শাখা ও তাদের সামরিক শাখাকে ভিন্ন চোখে দেখে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/I. Press
সিরিয়ার যুদ্ধে হেজবোল্লাহ
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে হেজবোল্লাহ৷ আসাদের টিকে থাকার পেছনে তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Syrian Central Military Media
শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা বৃদ্ধি
অনেক দিন ধরেই লেবাননকে ঘিরে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলে আসছে৷ হেজবোল্লাহর রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিবৃদ্ধি এবং সিরিয়া যুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণ লেবাননসহ অত্র অঞ্চলে শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা বাড়িয়েছে৷
ছবি: dapd
ইসরায়েলর সঙ্গে নতুন দ্বন্দ্ব?
সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নেয়ার মাধ্যমে ইরান ও হেজবোল্লাহ তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বাড়িয়েছে৷ বিষয়টিকে ইসরায়েল হুমকি হিসেবে দেখছে৷ ফলে সিরিয়ায় ইরান/হেজবোল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে বার কয়েক হামলাও করেছে ইসরায়েল৷ ইরান ও হেজবোল্লাহ সিরিয়ায় স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করুক, সেটি চায় না ইসরায়েল৷ ফলে ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহর মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ শুরুর আশংকা দেখা দিয়েছে, যেখানে ইরানও জড়িয়ে পড়তে পারে৷
ছবি: Getty Images/C. Furlong
9 ছবি1 | 9
হেজবোল্লাহ নেতা জানিয়েছেন, ''আরৌরির মৃত্যু একটা ভয়ংকর অপরাধ যা নিয়ে আমরা চুপ থাকতে পারি না।'' তিনি এর জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছেন। ইসরায়েল অবশ্য এখনো জানায়নি, তারাই ওই ড্রোন আক্রমণ করেছিল কিনা।
৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর থেকে হেজবোল্লাহ এবং ইসরায়েল একাধিকবার একে অন্য়ের দিকে রকেট আক্রমণ করেছে।
জার্মানি, ফ্রান্সের সমালোচনা
গাজা নিয়ে দুই ইসরায়েলি মন্ত্রীর মন্তব্যের সমালোচনা করলো জার্মানি ও ফ্রান্স। দুই মন্ত্রী বলেছিলেন, ''এই যুদ্ধের ফলে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র পুনর্বাসন করা হতে পারে। জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে, আমরা কঠোরতম ভাষায় দুই মন্ত্রীর বক্তব্য খারিজ করছি।''
ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বলেছে, ''ওই দুই মন্ত্রীর বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং উত্তেজনা-সৃষ্টিকারী।''
ইইউ-র পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেলও বলেছেন, ''মন্ত্রীদের বক্তব্য আন্তর্জাতিক আইন-বিরোধী।''