পশ্চিম তীরে শনিবার ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ২০ বছরের এক ফিলিস্তিনি তরুণ নিহত হয়েছেন৷ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এমন তথ্য জানিয়েছে৷ ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ছড়িয়ে পড়লে এই ঘটনা ঘটে৷
বিজ্ঞাপন
ফিলিস্তিনের সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, বাড়ির ছাদে অবস্থানরত এক তরুণ বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান৷ ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ ফরিদ হাসান জানিয়েছেন, নিহত তরুণ নাবলুসের কাছের শহর কুসরার বাসিন্দা৷এই ঘটনায় আরো দুইজন আহত হয়েছেন৷ ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী সেখানে হতাহতের তথ্য নিশ্চিত না করলেও দাবি করেছে এক ব্যক্তি বাড়ির ছাদ থেকে থেকে তাদের লক্ষ্য করে বিস্ফোরক নিক্ষেপ করলে প্রতিক্রিয়ায় সৈন্যরা তার দিকে গুলি ছোঁড়ে৷
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, কুসরায় ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সহিংস সংঘাতের ঘটনা ঘটে৷ দুই পক্ষ একে অপরের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারতে থাকে৷
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা প্রায়ই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছে৷ ২৮ লাখ জনগোষ্ঠীর ফিলিস্তিনিদের বিপরীতে অঞ্চলটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ ইহুদি বসবাস করছেন৷
ইসরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট এর সরকার নাবলুসের এভিয়াটার বসতি থেকে ইহুদিদের জোরপূর্বক তুলে দেয়ার পর শুক্রবার সংঘাতের সূচনা ঘটে৷ সেটি দখল করে সামরিক ঘাঁটি তৈরির নতুন পরিকল্পনা করেছে ইসরায়েল সরকার৷
গাজায় ৩৯ হাজার ঘর তৈরিতে ইসরায়েলের বাধা
গত মে মাসে ইসরায়েলের হামলায় তাদের কারো ঘর মাটিতে মিশে গেছে, কারো ঘর আছে কিন্তু তাতে বাস করার অবস্থা নেই৷ ইসরায়েলের কারণে ঘরগুলো গড়ে তোলা যাচ্ছে না৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: MOHAMMED SALEM/REUTERS
৩৯ হাজার ঘর!
গাজার সরকারের হিসেব অনুযায়ী, ১১ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলের হামলায় ২২০০ ঘর পুরোপুরি ধংস হয়েছে আর ৩৭ হাজার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/REUTERS
দরকার ৫০০ মিলিয়ন ডলার
গত ২১ মে মূলত মিশর ও কাতারের সধ্যস্থতায় যুদ্ধ থামাতে রাজি হয় ইসরায়েল ও হামাস৷ যুদ্ধবিরতির আলোচনার সময় মধ্যস্থতাকারী দুই দেশ গাজায় ধংস ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর এবং রাস্তাঘাট নির্মাণে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের অর্থ সহায়তার প্রস্তাব রাখে৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/REUTERS
গাজায় ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে গাজা সীমান্ত ইসরায়েল ও মিশরের কঠোর নজরদারিতে৷ সীমান্ত দিয়ে হামাসের কাছে যাতে অস্ত্র বা অস্ত্র তৈরির রসদ যেতে না পারে- তা নিশ্চিত করার স্বার্থে এমন নিয়ন্ত্রণ আরোপ জরুরি বলে মনে করে ইসরায়েল ও মিশর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Hollander
পণ্য প্রবেশে বাধা
১১ দিনের যুদ্ধ চলার সময় সীমান্ত দিয়ে গাজায় পণ্য প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল৷ সেই নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে শিথিল করা হচ্ছে৷ সোমবার থেকে গাজায় জ্বালানি প্রবেশের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে৷ তবে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং বোতলজাত পণ্যের কারখানার জন্য অপরিহার্য সিরাপ প্রবেশ করতে না দেয়ায় গাজায় ৬০ বছর ধরে চলে আসা পেপসি কারখানা সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গেছে৷
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযোগ ও সন্দেহ
হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের বরাবরের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা, জাপান, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত সংগঠনটি সবসময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মদত দেয়৷ গাজাবাসীর জন্য অর্থ সংগ্রহ করে সেই অর্থের সিংহভাগ অস্ত্র কেনায় ব্যয় করে বলেও তাদের অভিযোগ৷ ইসরায়েলের সন্দেহ ঘর-বাড়ি নির্মাণের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার পেলেও তার সামান্যই এ কাজে ব্যয় করা হবে৷
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
হামাসের অস্বীকার
অন্যদিকে একক রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলকে অস্বীকার করে আসা হামাস বরাবরই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে৷ ওপরের ছবিতে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে আশ্রয় নেয়া কয়েকজন গৃহহীন গাজাবাসী৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/REUTERS
ইসরায়েলের নতুন শর্ত
গাজার ২০ লাখ অধিবাসীর দুই-তৃতীয়াংশের জীবনই অর্থ সহায়তা-নির্ভর৷ ঘর হারানোদের জীবন তাই এখন মহাসংকটে৷ কেউ কেউ ওপরের এই ছবির মতো জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুল বা অন্য কোনো ভবনে থাকছেন৷ অনেকের মাথার ওপরে শুধুই খোলা আকাশ৷ কিন্তু অর্থসহায়তার প্রশ্নে ইসরায়েল বলছে, ২০১৪ সালের যুদ্ধের সময় নিখোঁজ দুই সেনাসদস্য এবং দুজন বেসামরিক নাগরিক, অর্থাৎ চারজন ইসরায়েলিকে ফিরিয়ে দিলেই কেবল অর্থ সহায়তা দেয়া হবে৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/REUTERS
শর্ত মানা কি সম্ভব?
গাজাবাসীরা কি খুব তাড়াতাড়ি আবার মাথা গোঁজার ঠাঁই ফিরে পাবেন? দৃশ্যত তা অসম্ভব, কারণ, যে দু’জন সৈন্যকে ফেরত চাওয়া হচ্ছে তাদের ইসরায়েলও ইতিপূর্বে ‘মৃত’ ঘোষণা করেছে৷ তাছাড়া হামাস মনে করে, ইসরায়েল আটক ফিলিস্তিনীদের ফিরিয়ে দিলেই কেবল ইসরায়েলিদের ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব৷ অথচ ইসরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট ইতিমধ্যে কারাবন্দি ‘ফিলিস্তিনি জঙ্গিদের’ ফিরিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/REUTERS
ইসরায়েলের পাশে বাইডেন
অর্থ নিয়ে হামাস তা যেন অস্ত্র ক্রয়ে ব্যয় না করে তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও নিশ্চিত করতে চান৷ তাই গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ঘর-বাড়ি গড়ে তোলার বিষয়টি চূড়ান্ত করার কাজে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের অংশগ্রহণ দাবি করেছে বাইডেন প্রশাসন৷ কিন্তু ২০০৭ সালের গৃহযুদ্ধে হামাসের কাছে হেরে যাওয়ার পর থেকে মাহমুদ আব্বাসকে কখনো গাজার বিষয়ে আগ্রহ দেখাতে দেখা যায়নি৷
ছবি: Doug Mills/New York Times/Getty Images
9 ছবি1 | 9
গাজায় বিমান হামলা
উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে গাজাতেও৷ শনিবার সেখানে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল৷ দেশটির সামরিক বাহিনীর দাবি সেখান থেকে আগ্নেয় বেলুন ছোঁড়ার প্রতিক্রিয়ায় এই হামলা চালানো হয়৷ এর আগে এমন বেলুন থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে৷
গত মে মাসে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ও হামাসের মধ্যে ১১ দিনব্যাপী যুদ্ধে ২৫০ ফিলিস্তিনি ও ১৩ ইসরায়েলি প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ ২১ মে দুই পক্ষের অস্ত্রবিরতির মধ্যে এই যুদ্ধের অবসান হয়৷
এফএস/এসএস (এপি, এফপি, রয়টার্স)
৬ জুনের ছবিঘরটি দেখুন...
গাজায় ধ্বংসস্তূপেই শুরু নতুন জীবন
ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের সাম্প্রতিক সংঘাতের পর নতুন করে জীবনযুদ্ধে নেমেছেন গাজা উপত্যকার বাসিন্দারা৷ ধ্বংসস্তূপে কেমন করে তারা বসবাস শুরু করেছেন, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: MOHAMMED SALEM/Reuters
বাসার বদলে তাঁবু
ভেঙে পড়া বাসার ধ্বংসস্তূপের ওপরে তাঁবু গেড়ে বসে আছে জাওয়ারা পরিবারের সদস্যরা৷ রাতের আঁধারে মোমবাতির আলোই তাদের সম্বল৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/Reuters
অন্ধকারে আলো
গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের একটি ঘর৷ আশেপাশে কোথাও আলো নেই৷ শুধু একটি বাসার আলো দেখা যাচ্ছে৷ সেই বাসার একটি ছেলেকেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/Reuters
পতাকা
ইসরায়েলের বিমান হামলায় ভেঙে পড়েছে গাজা উপত্যকার বহু বাড়িঘর৷ এমনই এক ভবনের উপরে উড়ছে ফিলিস্তিনের পতাকা৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/Reuters
পড়ে আছে শুধু বিছানা
ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি ধ্বংস হওয়া বাসা৷ সেই বাসার ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি জামা ও তোষক উদ্ধার করতে পেরেছে এক বালক৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/Reuters
রান্নাবান্না
বাসার বেশিরভাগ ঘর ধ্বংস৷ অক্ষত আছে রান্নাঘরের একাংশ৷ সেখানে চুলা জ্বালিয়ে রান্না করছেন এক ফিলিস্তিনি নারী৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/Reuters
ধ্বংসস্তূপে শৈশব
শহরের বেশ বড় একটা অংশ ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত৷ এর মাঝেই শৈশবের নানা মুহূর্ত খুঁজে নিচ্ছে শিশু-কিশোররা৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে ধ্বংসস্তূপের পাশ দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাওয়া এক বালককে৷
ছবি: AHMED JADALLAH/Reuters
চলছে আড্ডা
যেখানে কয়েক দিন আগেই চলেছিল বিমান হামলা, সেইখানেই এখন স্থানীয় যুবকেরা জমাচ্ছেন আডডার আসর৷ ভাঙা বাসার গায়েই তামাক-হুঁকো সহযোগে আড্ডা চলছে৷
ছবি: SUHAIB SALEM/Reuters
সংসার
ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পর থেকে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আবার সংসার সাজাতে শুরু করেছেন গাজা উপত্যকার স্থানীয়রা৷ ছবিতে এমনই একটি পরিবার৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/Reuters
সাজসজ্জা
বিমান হামলায় ধ্বংস হওয়া ভবনের গায়েই পাতা রয়েছে চেয়ার, সামনে আয়না৷ এ অবস্থাতেই স্থানীয় এক নাপিত তার খদ্দেরদের চুল কাটছেন৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/Reuters
বাস্তবের মুখোমুখি
রাতের অন্ধকারে হাতে ধরা মোমবাতির আলোতেও চলছে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে প্রয়োজনীয় জিনিসের খোঁজ৷ ছবিতে মোমবাতি হাতে এক বালককে তার বাসার ধ্বংসস্তূপের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷