গাজা উপত্যক্যায় ইসরায়েলের নতুন হামলার ফলে চরম খাদ্যসংকট আর মৃত্যুভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন অনেক মানুষ।
উত্তর গাজার জাবালিয়ায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলার স্থানে বসে আছে ফিলিস্তিনিরা।ছবি: REUTERS
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গাজা শহরের অধিবাসী আলা মোয়েইন বলেন, "প্রতিদিন ভাবি, এই রাতটাই আমার ও সন্তানদের শেষ রাত। সকালে বেঁচে থাকবো কি না জানি না।"
৩৫ বছর বয়সি আলা মোয়েইন, উত্তর গাজার জাবালিয়া শহর থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে গাজা শহরে আশ্রয় নেন। একচালার একটি ঘরে আরো আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে থাকছেন তারা পাঁচজন। খাদ্যের তীব্র সংকট, বাজারে অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি এবং মানবেতর জীবনযাপন এখন গাজাবাসীর জন্য নিদারুণ বাস্তবতা।
বাস্তুচ্যুতির যন্ত্রণা
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত গাজার অধিবাসী মোয়েইনকে একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে। ২১ লাখ গাজাবাসীর জন্য বাস্তুচ্যুতি এবং ক্ষুধার যন্ত্রণা যেন প্রাত্যহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বিষয়টি কৃষক নাইম শাফি'র ক্ষেত্রেও মিলে যায়। বেইত লাহিয়া নামক অঞ্চল থেকে পালিয়ে এখন রাস্তার পাশে তাঁবু খাটিয়ে বাস করছেন। এক ব্যাগ ময়দা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। জানেন না, কত দিন এইভাবে টিকে থাকতে পারবেন। জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতির সময় সামান্য শাক-সবজি লাগিয়েছিলেন, সেটাও ধ্বংস হয়েছে।
তিনি বলেন, "প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও গোলাবর্ষণ হচ্ছে। আমাদের কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রতিদিন যুদ্ধবিরতির খবর আসে, পরদিনই আবার বোমা হামলা হচ্ছে।"
সীমিত ত্রাণ ঢুকছে, তবে প্রয়োজন অনেক বেশি
ইসরায়েল ১৮ই মে এক ঘোষণায় জানায়, ১১ সপ্তাহের মানবিক অবরোধের আংশিক অবসান ঘটিয়ে গাজায় সীমিত পরিসরে ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। উক্ত অবরোধের কারণে গাজার প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন অনাহারের যন্ত্রণা সয়েছেন।
ইসরায়েল বলেছে, এই অবরোধ ‘সর্বোচ্চ চাপ' কৌশলের অংশ, যার লক্ষ্য হামাসকে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং ফিলিস্তিনি জঙ্গিগোষ্ঠীকে অবশিষ্ট ৫৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিতে বাধ্য করা।
গাজায় ইসরায়েলের হামলা : বাংলাদেশে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, ভাংচুর, লুটপাট
ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাই বিক্ষোভ চলছে বাংলাদেশ জুড়ে, উঠছে হামলা বন্ধের দাবি৷ বিক্ষোভের মাঝেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: DW
ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদ
ফিলিস্তিনীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে সোমবার বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে ধর্মঘটের ডাক দেয় বিভিন্ন সংগঠন৷ ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় হয় বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ৷ ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কাছাকাছিও একাধিক বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে সোমবার৷
ছবি: DW
আলোচনায় হামলা, লুটপাট
গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে বিক্ষোভ হয়েছে,এখনো হচ্ছে৷ বাংলাদেশেও বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়৷ কিন্তু সোমবার বেশ কয়েকটি জেলায় বিক্ষোভের সময় ভাংচুর, লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে৷
ছবি: Rafik Molla
চট্টগ্রামে বিক্ষোভ, ভাংচুর
সোমবার চট্টগাম শহরের বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে৷ বিক্ষোভের সময় ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়৷
ছবি: Kamol Das
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট
বিক্ষোভের সময় জিইসি মোড়সহ চট্টগ্রাম নগরীর কয়েকটি স্থানে কেএফসি, পিৎজা হাট, পুমাসহ বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, লুটপাট চালানো হয়৷এখানে নগরীর পুমা শোরুমে, হামলা, ভাংচুরের চিত্র৷
ছবি: Kamol Das
গাজীপুরে হামলা
সোমবার গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানেও বিক্ষোভকারীদের একাংশ হামলা, ভাংচুর চালায়৷ এ সময় শহরের বাটা’র শোরুমসহ বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়৷
ছবি: Dewan Mia
খুলনায় ভাংচুর
খুলনায় শহরেও বেশ কিছু স্থাপনায় ভাংচুর চালানো হয়৷ বাংলাদেশের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, শহরের কেএফসি ও বাটা শোরুমে হামলা করে ব্যাপক ভাংচুর চালায় কতিপয় বিক্ষোভকারী৷
ছবি: AS Bishwash
হামলাস্থলে সেনাবাহিনী
ভাংচুরের পর পরিস্থিতি সামাল দিতে খুলনা শহরের একটি বাটার শোরুমের সামনে অবস্থান নেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: AS Bishwash
সিলেটে বিক্ষোভ, ভাংচুর, লুটপাট
সোমবার গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে সিলেটেও রাস্তায় নামেন বিক্ষুব্ধরা৷ বিক্ষোভের সময় শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর, এমনকি লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে৷ ছবিতে সিলেট শহরের কেএফসি রেস্টুরেন্টে হামলা, ভাংচুরের মুহূর্ত৷
ছবি: Rafik Molla
কক্সবাজারে বিক্ষোভ, ভাংচুর
সোমবার কক্সবাজার শহরেও গাজায় ইসরেয়েলের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে৷ এ সময় শহরের সুগন্ধা পয়েন্টের একটি কেএফসি রেস্তোরাঁয় হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়৷
ছবি: AK Ahmed/DW
‘লুটের জুতো বিক্রির বিজ্ঞাপন’
সিলেটে কতিপয় বিক্ষোভকারী লুট করেই থেমে থাকেননি, বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী কেউ কেউ বাটা’র শোরুম থেকে লুট করা জুতো অনলাইনে বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপনও দিয়েছেন৷ এই ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আটক করার কথা জানিয়েছে পুলিশ৷
ছবি: Rafik Molla
সারাদেশে আটক ৫৬
পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম ডয়চে ভেলেকে জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় ভাংচুর, লুটপাটের অভিযোগে ৫৬ জনকে আটক করা হয়েছে৷ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামলার ভিডিও দেখে জড়িতদের চিহ্নিত করা হচ্ছে৷ সন্দেহভাজন সবাইকে আটক না করা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে৷
ছবি: Dewan Mia
মঙ্গলবারও বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদ ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে মঙ্গলবারও সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন৷
ছবি: DW
12 ছবি1 | 12
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার জাতিসংঘের পাঁচটি ট্রাক মানবিক সহায়তা নিয়ে গাজায় প্রবেশ করেছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, মোট নয়টি ট্রাককে ১৯ মে গাজায় সীমান্ত অতিক্রম করার অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল।
জাতিসংঘের ত্রাণ কার্যক্রমের প্রধান টম ফ্লেচার এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই নয়টি ট্রাকের ত্রাণ সামগ্রী "জরুরি প্রয়োজনের তুলনায় সমুদ্রের এক ফোঁটা মাত্র।"
আইডিএফ ১৮ই মে ঘোষণা করেছে, ‘অপারেশন গিডিয়ন' নামক নতুন সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে তাদের স্থল সেনারা উত্তর ও দক্ষিণ গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে।
গত সপ্তাহে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজার বিভিন্ন অংশ থেকে ফিলিস্তিনেদের সরে যাওয়ার সতর্কগাজাতা জারি করেছে।
ইসরায়েল কর্তপক্ষ বলেছে, ফিলিস্তিনিদের বিপদ থেকে দূরে রাখার জন্য এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
অন্ধকার রাতের আতঙ্ক
গাজা শহরের বাসিন্দা রায়েদ আল-আথামনা বলেন, "প্রতিদিন যুদ্ধবিমানের শব্দে আকাশ কাঁপছে। রাতে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সময় পার করি এবং কোনো ঘুম নেই। শুধু ভাবি, সকালে বাঁচবো তো?"
তিনি বলেন, শহরে এখন আশ্রয়প্রার্থীদের ভিড়। ত্রাণের অভাবে মানুষ শুধু বেঁচে থাকার লড়াই করছে। কিছু মানুষ আটদিন ধরে রুটি খেতে পারেননি। ‘‘সোমবার একবেলা ডাল রান্না করেছিলাম। বাচ্চাদের খিদে পায়, কিন্তু কিছু দিতে পারি না।''
দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে গাজাবাসী
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলতে থাকলে এবং মানবিক সহায়তার সুযোগ সীমিত থাকলে সেখানে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে৷
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
অপুষ্টির শিকার শিশুরা
অপুষ্টির শিকার ফিলিস্তিনি শিশু ইয়ানা আয়াদের মা গাজা উপত্যকার দক্ষিণে একটি ফিল্ড হাসপাতালে মোবাইলে থাকা ইয়ানার একটি ছবি দেখাচ্ছেন৷ ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের কারণে সেখানে দুর্ভিক্ষের শঙ্কা তৈরি হয়েছে৷
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
গরম খাবারের অপেক্ষা
একটি দাতব্য সংস্থার রান্না করা গরম খাবার নিতে ভিড় করেছে একদল ফিলিস্তিনি৷ যুদ্ধের কারণে গাজায় ত্রাণ সহায়তা ঠিকভাবে পৌঁছানো যাচ্ছে না৷ ছবিটি ১৯ জুন খান ইউনিসে তোলা৷
ছবি: Hatem Khaled/REUTERS
অপেক্ষায় শিশু
গাজায় খাদ্য সংকট চলছে৷ ছবিতে একটি শিশুকে খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Hatem Khaled/REUTERS
বাইরে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার অপেক্ষা
অপুষ্টির শিকার ফিলিস্তিনি শিশু আমজাদ আল কানুকে ধরে রেখেছেন তার মা নাদা৷ গাজার বাইরে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার জন্য খান ইউনিসের একটি হাসপাতালে অপেক্ষায় আছে শিশুটি৷
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
ক্যানসার চিকিৎসার অপেক্ষা
ফিলিস্তিনি শিশু জোরি আল-আর ক্যানসার এবং অপুষ্টির শিকার৷ চিকিৎসার জন্য সেও গাজার বাইরে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে৷ ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের কারণে সাধারণ গাজাবাসীরও মাসের পর মাস ধরে ভুগতে হচ্ছে৷
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
ফিলিস্তিনি মায়ের বিশ্রাম
গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে অসুস্থ সন্তানের পাশে বিশ্রাম নিচ্ছেন তার মা৷ যুদ্ধের কারণে সেখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে৷ বেসামরিক হতাহতের ঘটনা প্রতিনিয়তই বাড়ছে৷ হামাস গতবছরের অক্টোবরে ইসরায়েলে সন্ত্রাসী হামলা চালালে জবাবে গাজায় অভিযান শুরু করে দেশটি৷