ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন যাচ্ছেন৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরায়েল সফর করছেন৷ এই অবস্থায় ফিলিস্তিনি ‘জঙ্গি' সংগঠন হামাস ইসরায়েল সম্পর্কে সুর নরম করলো৷ ত্যাগ করলো মুসলিম ব্রাদারহুডকে৷
বিজ্ঞাপন
২০০৭ সালে মুক্ত ও অবাধ নির্বাচনে গাজায় বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল হামাস৷ কিন্তু পশ্চিম তীরে ফাতাহ'র সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে ফিলিস্তিনি ঐক্য ধাক্কা খায়৷ ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়ে গাজাকে কার্যত একঘরে করে রাখে৷ সশস্ত্র সংগ্রামের পথে গিয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থন পায়নি এই সংগঠন৷
তারপর গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে৷ কট্টরপন্থি মুসলিম ব্রাদারহুড সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের সরকারগুলি হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে৷ ইউরোপে তাদের ভাবমূর্তি নেতিবাচক৷ইসরায়েলের বর্তমান চরমপন্থি সরকার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শান্তির কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না৷ পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছেন৷ কয়েক দিন পরই তিনি ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন৷ ট্রাম্পও সম্ভবত চলতি মাসে ইসরায়েল সফর করবেন৷ ফলে নতুন মার্কিন প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য নীতির রূপরেখা স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে৷
এমনই এক প্রেক্ষাপটে কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস নেতা খালেদ মেশাল হামাসের নতুন নীতি তুলে ধরলেন৷ রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলকে ধ্বংস করার দীর্ঘ দিনের দাবি থেকে সরে এলো হামাস৷ তবে প্রত্যক্ষভাবে ইসরায়েলের অস্তিত্ব এখনো মেনে নিতে নারাজ তিনি৷ এমনকি সে দেশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামেও সমর্থন দিয়ে যাবে হামাস৷ অন্যদিকে হামাস নেতা এই প্রথম ১৯৬৭ সালের সীমানা মেনে নেবার ইঙ্গিত দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি কার্যত ইসরায়েলের অস্তিত্ব মেনেই নিয়েছেন৷ মেশাল বলেন, ১৯৬৭ সালের সীমার মধ্যে এক ‘অন্তর্বর্তীকালীন' ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র মেনে নিতে হামাস প্রস্তুত৷ অর্থাৎ ফাতাহ সংগঠনের অবস্থানের অনেক কাছাকাছি এসে ফিলিস্তিনি ঐক্যের উদ্যোগ নিল এই সংগঠন৷ তবে ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় যেতে এখনো নারাজ তারা৷
হামাসের নরমপন্থি মনোভাবের আরেকটি সংকেতও দিলেন মাশাল৷ বললেন, হামাস মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে৷ ফলে মিশর ও পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির পথ খুলে গেল বলে মনে করা হচ্ছে৷
হামাসের এই ঘোষণার ফলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শোনা যাচ্ছে৷ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র মনে করেন, হামাস দুনিয়াকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে৷ নরমপন্থি মনোভাবের মুখোশের আড়ালে তারা সন্ত্রাসের পথেই থাকছে৷ গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও ইসরায়েলের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে তারা৷
ফাতাহ সংগঠনের মুখপাত্র বলেন, হামাসের এই অবস্থান ১৯৮৮ সালে ফাতাহর অবস্থানের হুবহু প্রতিচ্ছবি৷ প্রায় ৩০ বছর ধরে ফাতাহর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগের পর তাই হামাসের এবার ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন৷
প্যালেস্টাইনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের কিছু ছবি
১৯৬৭ সালের ছ’দিনের যুদ্ধে জয়ের পর, তথাকথিত ‘উইপিং ওয়াল’ বা ওয়েস্টার্ন ওয়ালের কাছে জড়ো হয়েছিল ইসরায়েলি সেনারা৷ ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি করেন ফটো সাংবাদিক ডেভিড রুবিংগার৷ দেখুন সদ্য প্রয়াত সেই ফটোগ্রাফারের কিছু বিখ্যাত ছবি৷
ছবি: Getty Images/Newsmakers/GPO/David Rubinger
১৯৬৭ সাল: গাজা স্ট্রিপ
১৯২৪ সালে ভিয়েনায় জন্মগ্রহণ করেন ডেভিড রুবিংগার৷ কিন্তু নাৎসিদের হাত থেকে বাঁচতে প্যালেস্টাইনে পালিয়ে গিয়েছিলেন৷ নিজে বাঁচলেও, মা মারা যান হলোকস্টে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলন, সে সময়ই তাঁর মধ্যে ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়, পরবর্তীতে ফটোসাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ছ’দিনের সেই যুদ্ধে ইসরায়েলি সেনারা কীভাবে মিশরের সেনা ও ফিলিস্তিনিদের আটক করছে৷
ছবি: Getty Images/GPO/David Rubinger
ওয়েস্টার্ন ওয়ালে একত্রিত প্যারাট্রুপাররা
ডেভিড রুবিংগারের সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ এটি৷ এখানে ইসরায়েলি সেনাদের জেরুজালেমের তথাকথিত ‘উইপিং ওয়াল’ বা ওয়েস্টার্ন ওয়ালের ওপর দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৬৭ সালের ছ’দিনের যুদ্ধে প্রথমবারের মতো পশ্চিম তীর এবং গাজা স্ট্রিপ দখল করতে সক্ষম হয় ইসরায়েল৷ রুবিংগার এই ছবিটি তোলেন যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে৷ ইসরায়েলি সরকার খুব কম দামে সকলের কাছে এই ছবিটি বিক্রি করে৷ ফলে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায় ছবিটি৷
ছবি: Getty Images/Newsmakers/GPO/David Rubinger
যুদ্ধের সময় আরিয়েল শারন
এই ছবিটি সাবেক ইসরায়েলি সেনা প্রধান আরিয়েল শারনকে (মাঝে) দেখা যাচ্ছে অন্যান্য সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে, ১৯৬৭ সালের ১ জুন ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে৷ ছ’দিনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার দিন চারেক আগে তোলা এই ছবিটি৷ শারন পরবর্তীতে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন৷ ২০১৪ সালে মারা যান তিনি৷
ছবি: Getty Images/GPO/Newsmakers/David Rubinger
দ্বন্দ্ব সংঘাতের ইতিহাসের প্রামাণ্যচিত্র
এ ছবিতে ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তের দিকে চলেছে ইসরায়েলি সেনারা৷ ১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসে সিরিয়া যখন গোলান উপত্যকায় হামলা চালায়৷ রুবিংগার সেসময় জীবনের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ১০টি সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে গিয়ে ছবি তোলেন৷ ২০০৭ সালে নিজের বইটিতে তিনি লেখেন, ‘‘এই ছবিগুলোর দিকে তাকালে মনে হয়, আমি সত্যিই ভাগ্যবান ছিলাম৷ তাই বেঁচে ফিরতে পেরেছি৷’’ তাঁর বইটির নাম ‘ইসরায়েল থ্রু মাই লেন্স: একজন ফটোসাংবাদিক হিসেবে ৬০ বছর’৷
ছবি: Getty Images/AFP/GPO/David Rubinger
১৯৭৩ সালে ইয়ুম কিপুর যুদ্ধ
১৯৭৩ সালে ইয়ুম কিপুর যুদ্ধে সিরিয়ার সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ইসরায়েল৷ এ যুদ্ধ অক্টোবর যুদ্ধ নামেও পরিচিত৷ রুবিংগারের এই ছবিতে গোলান উপত্যকায় ইসরায়েলি ট্যাংকের বহর আর সিরীয় সেনাদের দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর এই প্রথমবারের মতো পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতিও ফুটে উঠেছে ছবিতে৷ আশির দশকেও এ অঞ্চলে উচ্ছ্বসিত ইসরায়েলি সেনা আর বিষাদগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের ছবি তুলেছিলেন রুবিংগার৷
ছবি: Getty Images/AFP/GPO/David Rubinger
জাতি নিমার্ণের আলোকচিত্রী
ডেভিড রুবিংগার তাঁর জীবনের দীর্ঘ ৫০ বছর ফটোসাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন৷ ইসরায়েলের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেস ডেভিডকে রুবিংগারকে ‘একটি জাতি তৈরির আলোকচিত্রী’ হিসেবে গণ্য করেছিলেন৷