বাহারাইন সিকিউরিটি সামিটে গিয়ে ইসরায়েলেরসমালোচনায় মুখর হলেন সৌদি যুবরাজ তুর্কি বিন ফয়সল আল সৌদ। একেবারে চাঁচাছোলা ভাষায় তিনি বলেছেন, ''যতক্ষণ স্বাধীন ফিলিস্তিন না হচ্ছে, ততক্ষণ ইসরায়েল যেন আরব দুনিয়ার আর কোনো দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন না করে।'' তিনি যখন এই কথা বলছেন, তখন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সেখানে ছিলেন। সম্প্রতি সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য বাহারাইন ও আমিরাতের প্রতিনিধিদের ইসরায়েল তাঁদের দেশে ধুমধাম করে স্বাগত জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সৌদির এই আক্রমণের মুখে পড়ে কিছুটা হতচকিত হয়ে পড়েন ইসরায়েলের পররষ্ট্রমন্ত্রী।
এই শীর্ষ বৈঠকের নাম দেয়া হয়েছে মানামা ডায়লগ। সেখানেই সৌদির যুবরাজ বলেন, ''ইসরায়েল নিজেকে শান্তির দূত হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনের বাস্তব ছবিটা হলো, তারা একটি পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অধীনে আছে। ইসরায়েল তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণ দেখিয়ে ফিলিস্তিনিদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে অত্যাচার করছে। ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ কেউই ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না। ইসরায়েল ইচ্ছেমতো ফিলিস্তিনিদের বাড়ি ধ্বংস করছে, যাকে খুশি মেরে ফেলেছে।''
সৌদি যুবরাজের ভাষা ছিল অত্যন্ত কঠোর। তিনি সোজাসাপটা অভিযোগ করেন, ''ইসরায়েলের হাতে পরমাণু অস্ত্র আছে। আর তারা ও তাদের পেটোয়া মিডিয়া সমানে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে রক্তপিপাসু হত্যাকারী আছে, যারা সৌদির অস্তিত্বকেই মুছে ফেলতে চায়। তারপরেও ইসরায়েল প্রচার করে যে, তারা সৌদির বন্ধু হতে চায়।'' তাঁর মতে, ''সমস্যার সমাধান একমাত্র তখনই হতে পারে, যখন ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে অধিকৃত ভূখণ্ড ফিলিস্তিনকে ফিরিয়ে দেয় এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনকে মেনে নেয়। তা হলে আরব দেশগুলির সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব হতে পারে।''
সৌদি আরব, ইরান, ইসরায়েল কার শক্তি কেমন?
সৌদি আরবের তেলক্ষেত্রে হামলার পর অস্থির হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি৷ হুতি বিদ্রোহীরা এর দায় নিলেও ইরানকে দায়ী মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব৷ এ নিয়ে চলছে হুমকি-পাল্টা হুমকি৷ কিন্তু সামরিক শক্তিমত্তা কার বেশি?
ছবি: picture-alliance/EPA/TSGT
আকাশে সৌদি আরব
সামরিক খাতে সৌদি আরব ২০১৮ সালে ৬ হাজার ৭৬০ কোটি ডলার খরচ করেছে৷ ব্যয়ের দিক থেকে তাদের অবস্থান গোটা বিশ্বে তৃতীয় আর উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে৷ বিশ্বের সামরিক যন্ত্রপাতির সবচেয়ে বড় ক্রেতাও তারা৷ বর্তমানে সৌদির মোট সামরিক সদস্য ২ লাখ ৩০ হাজার৷ আছে ৮৪৮ টি যুদ্ধবিমান, ২৫৪ টি হেলিকপ্টার, ১০৬২ টি ট্যাংক ও ৫৫ টি যুদ্ধ জাহাজ৷ তবে নেই কোনো সাবমেরিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সমুদ্র আর সৈন্যে ইরান
সামরিক খাতে গত বছর ইরানের ব্যয় ছিল ১ হাজার ৩২০ কোটি ডলার, যা ২০১৭ সালের তুলনায় সাড়ে নয় ভাগ কম৷ অবরোধ আর অর্থনৈতিক মন্দায় গত এক দশকে দেশটির অস্ত্র আমদানির পরিমাণও কমেছে৷ ২০০৯-১৮ সালের মধ্যে তা্দের আমদানিকৃত অস্ত্রের পরিমাণ সৌদি আরবের মাত্র সাড়ে তিনভাগ৷ বর্তমানে দেশটির সামরিক সদস্য আট লাখ ৭৩ হাজার৷ ৫০৯ টি যুদ্ধ বিমান, ১৫৬ টি হেলিকপ্টার, ১৬৩৪ টি ট্যাংক, ৩৯৮ টি নৌযান, ৩৪ টি সাবমেরিনের মালিক তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Noroozi
ইসরায়েল নিজেই অস্ত্র তৈরি করে
২০১৮ সালে সামরিক খাতে এক হাজার ৫৯৫ কোটি ডলার ব্যয় করেছে ইসরায়েল৷ দেশটি নিজেই সামরিক অস্ত্র তৈরি করে, তাই তেমন একটা আমদানি করতে হয় না৷ গত বছর সর্বসাকুল্যে ১০৩ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনেছে যুক্তরাষ্ট্র আর জার্মানির কাছ থেকে৷ দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৬ লাখ ১৫ হাজার৷ তাদের বহরে আছে ৫৯৫ টি যুদ্ধবিমান, ১৪৬ টি হেলিকপ্টার, ২৭৬০ টি ট্যাংক, ৬ টি সাবমেরিন৷
ছবি: Reuters
প্রতাপশালী তুরস্ক
২০১৮ সালে তুরস্কের সামরিক ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৯৭ কোটি ডলার৷ এর মধ্যে ১১১ কোটি ডলার খরচ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, স্পেন, ইতালিসহ ৬টি দেশের কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয়ে৷ তুরস্কের সামরিক বাহিনীর সদস্য ৭ লাখ ৩৫ হাজার৷ যুদ্ধবিমান আছে ১০৬৭ টি৷ আছে ৪৯২ টি হেলিকপ্টার, ৩২০০ ট্যাংক, ১৯৪ টি যুদ্ধজাহাজ, ১২ টি সাবমেরিন৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
উপসাগরের ছোট শক্তি কাতার
কাতারের সবশেষ সামরিক ব্যয়ের হিসাবটি ২০১০ সালের৷ সে বছর তাদের বাজেট ছিল ২১৭ কোটি ডলারের৷ দেশটির সামরিক সদস্য সংখ্যা ১২ হাজার৷ আছে ১০০ টি এয়ারক্রাফট, ৪২ টি হেলিকপ্টার, ৯৫ টি ট্যাংক, ৮০ টি যুদ্ধজাহাজ৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Jaafar
পড়ন্ত শক্তির ইরাক
গেল বছর সামরিক বাহিনীর পেছনে প্রায় ৬৩২ কোটি ডলার খরচ করেছে ইরাক৷ এর মধ্যে ১৫৬ কোটি ডলার ব্যয় করেছে অস্ত্র ক্রয়ে৷ তাদের আছে ১ লাখ ৬৫ হাজার সৈন্য, ৩২৭ টি যুদ্ধবিমান, ১৭৯ টি হেলিকপ্টার, ৩০৯ টি ট্যাংক, ৬০ টি যুদ্ধজাহাজ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Abdul Hassan
এবং যুক্তরাষ্ট্র
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেট ছিল ৬৪ হাজার ৮৮০ কোটি ডলারের৷ প্রায় সাড়ে ২১ লাখ সামরিক সদস্যের বিশাল বাহিনী তাদের৷ ১৩,৩৯৮ টি যুদ্ধবিমান, ৫৭৬০টি হেলিকপ্টার, ৬২৮৭টি ট্যাংক, ৪১৫টি যুদ্ধজাহাজ, ৬৮টি সাবমেরিন আছে এই পরাশক্তির বহরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Pizzoli
7 ছবি1 | 7
এরপরেই বলতে উঠে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সৌদি প্রতিনিধির মন্তব্যে তিনি ক্ষুব্ধ। মধ্য প্রাচ্যে পরিবর্তন আসছে। সৌদির প্রতিনিধির কথায় তার ছাপ নেই। তাঁর মতে, শান্তিচুক্তি না হওয়ার জন্য ফিলিস্তিন দায়ী। বিকল্প দুইটি। ফিলিস্তিনকে সমস্যার সমাধান মেনে নিতে হবে, না হলে এ রকম দোষারোপ চালিয়ে যেতে হবে।
যখন এই উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় চলছে, তখন বাহারাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও মঞ্চে ছিলেন। তিনি অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, ''শান্তির পথ সহজ নয়। অনেক বাধা আসে। অনেক উপর-নীচ হয়। কিন্তু শান্তির পথে থেকেই ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সমস্যার সমাধান করতে হবে।''