আট মাস জেল খেটে অবশেষে কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন ফিলিস্তিনি তরুণী আহেদ তামিমি৷ ইসরায়েলের সেনাদের চর-লাথি দেয়ার অপরাধে তাঁকে সাজা দেয়া হয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
রোববার তিনি কারাবাস থেকে মুক্ত হন৷ মুক্তি পেয়ে নিজ গ্রামে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণে নিহতের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন৷ বলেন, ‘‘এক শহিদের বাড়ি থেকে বলছি, এই ভূমি যতদিন না দখলদারমুক্ত হবে, ততদিন প্রতিরোধ চলবে৷'' গ্রামবাসীদের উদ্দেশে বলেন তামিমি৷
তিনি আরো বলেন, ‘‘কারাগারে বন্দি নারীরা সবাই শক্ত আছেন৷ আর আমার পাশে যারা দাঁড়িয়েছেন সবাইকে ধন্যবাদ জানাই৷''
তামিমি ফিলিস্তিনের ওয়েস্ট ব্যাংকের গ্রাম নাবি সালেহ'র বাসিন্দা৷ ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ও ইহুদি সেটেলারদের আগ্রাসন ও জমি দখলের বিরুদ্ধে বরাবরই এই গ্রামের বাসিন্দা প্রতিবাদী৷
তামিমিও প্রতিবাদী ছিলেন৷ নানা সময়ে তাঁর সাহসী প্রতিবাদ তাঁকে আলাদা করে চিনিয়েছে৷ তাঁকে প্রতিবাদের প্রতীকও বলেন অনেকে৷ তিনি যখন শিশু ছিলেন, তখন ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের একটি ছবির কারণে তখনকার তুর্কি প্রধানমন্ত্রী এর্দোয়ানের সঙ্গে দেখা করার নিমন্ত্রণ পান৷
আরেকবার এক সেনার হাতে কামড় বসানোর ছবিটি প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে ওঠে৷ তাই বারবারই ইসরায়েলের জন্য ‘বিরক্তি'র কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন তামিমি৷
গত ডিসেম্বরে তেমনি এক প্রতিবাদের সময় ইসরায়েলি সেনাদের ওপর চড়াও হন তামিমি৷ সেই ঘটনার ফেসবুক লাইভ করেন তাঁর মা নারিমান৷
এরপরই তামিমির বিরুদ্ধে ‘উসকানি' ও হামলার অভিযোগসহ মোট ১২টি অভিযোগ আনে ইসরায়েল৷ পরে অভিযোগ কমানো হলেও আট মাসের কারাবাসের সাজা পান তিনি৷ তবে এই ঘটনা ১৭ বছর বয়সি তামিমির্ফি লিস্তিনি আইকনে পরিণত করেছে৷
এদিকে, শনিবার ইসরায়েলের পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেছেন দেশটির নামকরা এক আরব সংসদ সদস্য৷ সংসদের প্রধান বিরোধী দল জিওনিস্ট ইউনিয়ন অ্যালায়েন্সের নেতা জোওহাইর বাহলোউল সম্প্রতি পাশ হওয়া একটি আইনের প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগ করেছেন৷
আইনটিকে বর্ণবাদী আখ্যা দিয়ে পদত্যাগ করা বাহলোউল বলেন, ‘‘ইসরায়েলে সমতা বিধানের কথা বলে রাষ্ট্রীয়ভাবে, সাংবিধানিকভাবে আরবদের বাদ দেয়া হয়েছে৷'' এক টেলিভিশন শো-তে তিনি এ কথা বলেন৷
‘‘এখন আমি কি খাঁচার ভেতরে বসব? এই ধ্বংসাত্মক, বর্ণবাদী ও চরমপন্থি সংসদকে কি আমার বৈধতা দেয়া উচিত?'' বলছিলেন তিনি৷
এই আইন এখন মেনে নিলে আরবদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আর কোনো আশা থাকবে না বলে মনে করেন তিনি৷
উল্লেখ্য, ইসরায়েলের সংসদে পাশ হওয়া সেই আইনে ইহুদিদের প্রথম সারির অধিবাসী ও হিব্রুকে একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে৷
জেডএ/ডিজি (রয়টার্স, ডিপিএ)
গাজার বিক্ষোভে ফিলিস্তিনি নারীদের ভূমিকা
বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতি জুম্মাবারে ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি সীমান্তে প্রতিবাদ প্রদর্শন করে চলেছেন৷ সীমান্তে সংঘর্ষের ছবি মিডিয়া জুড়ে; অপরদিকে বেসামরিক, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও সমাবেশে প্রধানত পাওয়া যাবে ফিলিস্তিনি নারীদের৷
ছবি: Reuters/M. Salem
শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ
জুম্মাবারের প্রতিবাদ শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগে থেকেই তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ শিবির গড়া হয়েছিল৷ বিক্ষোভকারীরা এই পন্থায় গাজায় অসহনীয় মানবিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করতে চাইছিলেন৷ ৩০শে মার্চ ফিলিস্তিনিদের তথাকথিত ভূমি দিবসে সেই বিক্ষোভ গণআন্দোলনে পরিণত হয়৷ ঐ দিনটিতে ফিলিস্তিনিরা তাদের বিতাড়নের কথা স্মরণ করেন৷
ছবি: Reuters/M. Salem
বিক্ষোভ এক ধরনের উৎসব বৈকি
বিক্ষোভ শিবিরের অভ্যন্তরে নারীদের নানা কাজ৷ আন্দোলন শুরু হওয়া যাবৎ বেশ কয়েক শত ফিলিস্তিনি মহিলা ছেলে-মেয়ে সঙ্গে করে বিক্ষোভে যোগ দিতে আসছেন৷ তাঁদের মধ্যে অনেকে সীমান্তে সংঘাতপূর্ণ প্রতিবাদেও সামিল হন৷
ছবি: Reuters/S. Abo Elouf
শিল্পের স্থান সর্বত্র
ফিলিস্তিনি চিত্রশিল্পী রেহাম আল-এমাউয়ি মহিলা প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ছবি আঁকেন৷ শিবিরে তাঁর মতো আরো অনেক শিল্পী আছেন৷ ইসরায়েল যে ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাবর্তন করতে দিতে রাজি নয়, তার বিরুদ্ধে তাঁদের এই প্রতিবাদ৷ গাজা স্ট্রিপের বাসিন্দাদের ৭০ শতাংশ উদ্বাস্তু বা উদ্বাস্তুদের সন্তান-সন্ততি৷
ছবি: Reuters/S. Abo Elouf
সোশ্যাল মিডিয়াতে সক্রিয়
ফিলিস্তিনি নারীরা তাঁদের দুরবস্থার কথা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও জ্ঞাপন করেন – কেননা তাঁদের ঘিঞ্জি, দারিদ্র্যপূর্ণ গাজা স্ট্রিপ পরিত্যাগ করার কোনো উপায় নেই৷ ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় ৮০ শতাংশ ফিলিস্তিনি তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত হন অথবা পলায়ন করেন৷
ছবি: Reuters/S. Abo Elouf
শিবিরের জন্য রুটি তৈরি
ইসরায়েল উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তন করতে দিতে অরাজি৷ ১৯৯৩ সালের আন্তর্জাতিক আলাপ-আলোচনায় ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের প্রস্তাবটিও বিবেচিত হয় – কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি৷ আজ পশ্চিম জর্ডান ও গাজা স্ট্রিপে দু’টি পৃথক ফিলিস্তিনি সরকার তাদের ঝগড়া-বিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন, যার একটি ফল হলো দারিদ্র্য, বিশেষ করে গাজা স্ট্রিপে৷ তাই বিক্ষোভ শিবিরে নারীরা রুটি গড়ে বিতরণ করে থাকেন৷
ছবি: Reuters/S. Abo Elouf
বিক্ষোভকারীদের জন্য পানি
ইসরায়েলের সীমান্তে যাঁরা প্রতিবাদ প্রদর্শন করছেন, তাঁদের অধিকাংশ তরুণ ফিলিস্তিনি, যাঁদের ভবিষ্যতের কোনো আশা নেই৷ ইসরায়েল ও পশ্চিমি মিডিয়া এই প্রতিবাদের জন্য হামাসকে দায়ী করে থাকে – অপরদিকে হামাস সীমান্তে ইসরায়েলি সৈন্যদের সহিংসতার কথা বলে৷ যার ফলে সীমান্তে বিক্ষোভ দু’পক্ষের কট্টরপন্থিদের হাতে প্রচারণার অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
ছবি: Reuters/S. Abo Elouf
আহতদের পরিচর্যা
প্রতিবাদ শুরু হওয়া যাবৎ সীমান্তে বেশ কিছু ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি সৈন্যদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন, শত শত ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন৷ গাজা স্ট্রিপে জনস্বাস্থ্যগত কাঠামো ভেঙে পড়তে চলেছে, হাসপাতালগুলি আহতদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে৷ ওষুধপত্র, বিদ্যুৎ বা বিশুদ্ধ পানি, সব কিছুর অভাব৷ স্বেচ্ছাসেবী মহিলারা ইসরায়েলি সৈন্যদের নিক্ষিপ্ত কাঁদানে গ্যাসে আহত ফিলিস্তিনিদের পরিচর্যা করছেন৷
ছবি: Reuters/S. Abo Elouf
ভূমিকা বদল?
প্রতিবাদ যেখানে সংঘর্ষের রূপ নিচ্ছে, সেখানেও ফিলিস্তিনি মহিলাদের পাওয়া যাবে৷ ১৮ বছর বয়সের তরুণী আয়া আবেইদ রয়টার্স সংবাদসংস্থাকে বলেছেন, ‘‘কেউ কেউ আমাদের বলেন: পুরুষরা যা করে, তা তোমরা করতে পারো না! অনেকের ভয় যে, আমরা আহত হতে পারি৷ অন্যরা আবার আমাদের একসঙ্গে লড়ার উৎসাহ দেন৷’’
ছবি: Reuters/M. Salem
রণাঙ্গণে
আন্দোলনের নাম ‘প্রত্যাবর্তনের জন্য মহান অভিযান’৷ আন্দোলন চলবে আগামী ১৫ই মে ইসরায়েলের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অবধি৷ একইভাবে ফিলিস্তিনিরা ‘নকবা’ বা স্বদেশ থেকে তাঁদের বিতাড়নের কথা স্মরণ করছেন: ওয়ার্কশপ বা থিয়েচারের সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির টায়ার পোড়ানো বা পাথর ছোঁড়াতেও ফিলিস্তিনি মহিলারা সামিল৷