মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনা প্রসঙ্গে বুধবার মার্কিন পরররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভাবী প্রেসিডেন্ট একে অপরের সমর্থনে কথা বলেছেন৷
বিজ্ঞাপন
প্রথমে ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে নেতানিয়াহু এবং ওবামা প্রশাসনের মধ্যে সম্পর্কে কিছুটা চিড় ধরেছিল৷ আর এবার দীর্ঘ ৮ বছর পর সেই সম্পর্কের যেন ইতি ঘটল এবং তা মধ্যপ্রাচ্য শান্তি চুক্তিকে ঘিরে৷ জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিয়ে প্রস্তাবের পক্ষে বুধবার মার্কিন পরররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরির বক্তব্যের পর দুই নেতাদের মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যায়৷
কেরি তাঁর এক ঘণ্টার বক্তব্যে বলেন, ‘‘আমরা যখন দেখতে পাচ্ছি শান্তির আশা আমাদের হাত ফসকে বেরিয়ে যাচ্ছে, তখন আমাদের বিবেক কি বলে না যে আমাদের কিছু করতে হবে? কিন্তু আমরা কিছুই করছি না, বলছিও না৷''
আর মাত্র তিন সপ্তাহ, তারপরেই ওবামা ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন৷ কেরিও আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকছেন না৷ আর ওবামার স্থলাভিষিক্ত হবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ কেরির ঐ মন্তব্য যে সরাসরি ট্রাম্পের দিকেই নির্দেশ করছে তা স্পষ্ট৷ কেননা ট্রাম্প এরই মধ্যে ইসরায়েলের সব কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন৷ আর ইসরায়েলকে এও ইঙ্গিত দিয়েছেন ২০ জানুয়ারিতে তার অভিষেকের পর অনেক কিছুতে পরিবর্তন আসবে৷ তিনি এও বলেছেন ইহুদি এই রাষ্ট্রের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে৷
কেরি তাঁর বক্তব্যে একটি কার্যকরি শান্তিচুক্তির জন্য ৬ পয়েন্টের ফ্রেমওয়ার্ক তুলে ধরেন, যেখানে তিনি বলেন, ‘‘পরবর্তী মার্কিন সরকার এ বিষয়গুলোতে আলোকপাত করতে পারে৷'' কেরি বলেন, ট্রাম্প হয়ত তাঁর কাছ থেকে অন্য ধরনের বক্তব্য আশা করেছেন৷ কিন্তু ওবামা চান তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন মধ্যপ্রাচ্য শান্তিচুক্তি বিষয়ে সবার কাছে তার প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার হয়ে যায়৷
শুক্রবার পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অধিকৃত এলাকার বৈধতা নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভোট অনুষ্ঠিত হয়৷ কেরি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘‘পশ্চিম তীরে নতুন বসতি স্থাপনের মাধ্যমে ইসরায়েল গণতন্ত্রের পথ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে৷''
কেরির বক্তব্যের অল্প কিছুক্ষণ পরেই নেতানিয়াহু জেরুসালেমে এক ভিডিওতে বক্তব্য রাখেন৷ সেখানে তিনি বলেন, ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে তার সম্পর্কের ইতি হয়েছে৷ আর ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে তিনি তৈরি৷ কেরির বক্তব্যের জবাবে তিনি ইসরায়েলে ফিলিস্তিনিদের হামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, বিদেশি নেতাদের কাছ থেকে শান্তির গুরুত্ব সম্পর্কে ‘লেকচার' শোনার কোনো দরকার নেই ইসরায়েলের৷
ট্রাম্প অবশ্য বসতি স্থাপন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি৷ কিন্তু তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘ইসরায়েলের সঙ্গে বিভিন্ন সময় অনেক মানুষ অন্যায় করেছে৷'' ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী মাসে দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলকে ইহুদি বসতি স্থাপনের ব্যাপারে শক্ত অবস্থান ধরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন৷
১৯৬৭ সাল থেকে পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুসালেম দখল করে রেখেছে ইসরায়েল৷ তবে যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিস্তিন এবং বিশ্বের বেশিরভাগ নেতা সেখানে তাদের বসতি স্থাপনের বিরোধিতা করে আসছে৷ বর্তমানে ঐ বসতিতে ৬ লাখ ইসরায়েলির বসবাস৷ তাই ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সরাসরি আলোচনা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য শান্তি চুক্তির সম্ভাবনা দেখছেন না বিশ্ব নেতারা৷
এর আগে বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপন বিরোধী প্রস্তাবনা পাসের মুখে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পূর্ব জেরুসালেমে নতুন বাড়ি নির্মাণের পদক্ষেপ অনুমোদন করা থেকে সরে আসেন৷ জন কেরির বক্তব্যের আগে তিনি এ পদক্ষেপ নেন৷
ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাত কোন পথে?
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি এলাকা জুড়ে যে সহিংসতার ঢেউ চলেছে, তা-তে দু’পক্ষেই হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে৷ সেই সঙ্গে বাড়ছে ক্ষোভ, অবিশ্বাস ও মারমুখি ভাব৷ এই প্রবণতা চলতে থাকলে একটি তৃতীয় ইন্তিফাদার সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/M. Abu Turk
একটি পবিত্র স্থান
পুরনো জেরুসালেমের প্রাচীন অংশে আল-আকসা মসজিদ; ঈদ-উল-ফিতরের নামাজ পড়ছেন ফিলিস্তিনিরা৷ ইসরায়েলিদের কাছে এই স্থানটি হল টেম্পল মাউন্ট৷ মাস খানেক আগে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে গুজব ছড়ায় যে, ইসরায়েল প্রাঙ্গণটি দখল করে নেওয়ার কথা ভাবছে৷ সেই থেকেই দাঙ্গা-হাঙ্গামার শুরু৷ ১৭ই জুলাই, ২০১৫-র ছবি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Gharabli
একটানা আক্রমণ
বিশেষ করে জেরুসালেমে ইসরায়েলিদের ওপর ছুরি আক্রমণের ঘটনা বাড়ায় ইসরায়েলি সরকার চিন্তিত৷ প্রধানত জেরুসালেমবাসী ফিলিস্তিনি কিশোররাই এই সব আক্রমণ চালাচ্ছে ও নিরাপত্তা কর্মীদের গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছে৷ তাদের কবর দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় আবার দাঙ্গা বাঁধছে৷ অক্টোবরের সূচনায় বেথলেহেমের কাছে একটি উদ্বাস্তু শিবিরে এক ১৩ বছর বয়সি ফিলিস্তিনি কিশোর এভাবে প্রাণ হারায়৷ বেথলেহেমে দাঙ্গার ছবি, ৫ই অক্টোবর, ২০১৫৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Coex
অন্যত্র, সর্বত্র
গাজা স্ট্রিপের দক্ষিণে খান ইউনুসেও একই দৃশ্য৷ ইসরায়েলি সৈন্যদের সঙ্গে সংঘাতে ১৫ বছর বয়সি মোহাম্মেদ আল-রেকেব প্রাণ হারানোর পর তাকে গোরস্তানে নিয়ে যাওয়ার সময় আত্মীয়স্বজন শোকার্ত৷ ৯ই অক্টোবর, ২০১৫-র ছবি৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
গাজা স্ট্রিপে
২২ বছর বয়সি জিহাদ আল-ওবাইদের সমাধি অনুষ্ঠানে যোগদান করে আল-কাসাম ব্রিগেডের জঙ্গিরা৷ জিহাদ প্রাণ হারান গাজা স্ট্রিপের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে, সীমান্তের কাছে, ইসরায়েলি সৈন্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে৷ ছবিটি তোলা ১০ই অক্টোবর, ২০১৫ তারিখে৷ ১৫ই অক্টোবর অবধি এই ‘তৃতীয় ইন্তিফাদায়’ এ যাবৎ প্রাণ হারিয়েছেন সাতজন ইসরায়েলি ও অন্তত ৩০ জন ফিলিস্তিনি; দু’পক্ষে আহত হয়েছেন অগণিত মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Khatib
বিজয় চিহ্ন
পশ্চিম জর্ডানের হেব্রনে মোহাম্মেদ ফারেস আল-জাবারিকে গোরস্তানে নিয়ে যাওয়ার সময় ইসরায়েলি সৈন্যদের সঙ্গে দাঙ্গা বাঁধে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের৷ আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে ভিক্টরি সাইন দেখাচ্ছেন এক ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারী৷ ছবিটি ১০ই অক্টোবর, ২০১৫-র৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Bader
বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, দাঙ্গা
পশ্চিম জর্ডানের নাবলুসে হাওয়ারা চেকপয়েন্টে ইসরায়েলি সৈন্যদের দিকে ঢিল ছুঁড়ছে ফিলিস্তিনি কিশোর ও তরুণেরা৷ ১১ই অক্টোবর, ২০১৫-র ছবি৷
ছবি: Reuters/A. Talat
যাত্রীবাহী বাসে আক্রমণ
১২ই অক্টোবর, ২০১৫-র ঘটনা৷ পুলিশের বিবৃতি অনুযায়ী জনৈক আরব একটি যাত্রাবাহী বাসের মধ্যে এক ইসরায়েলি সৈন্যকে ছুরিকাঘাত করার ও বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে৷ অপর এক সৈন্যের গুলিতে আততায়ী নিহত হয়৷ ছবিতে পুলিশ কর্মকর্তারা বাসটির বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/O. Ziv
ইসরায়েলি সরকার নিরুপায়
ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে হাজার চারেক পুলিশ ছাড়াও তিন’শ সৈন্য পথে নামানো হয়েছে৷ অস্থায়ী চেকপয়েন্ট সৃষ্টি করে গাড়ি ও ড্রাইভারদের পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ ছবিতে পূর্ব জেরুসালেমের জাবাল মুকাবর এলাকায় কংক্রিটের ব্লক বসানোর কাজ চলেছে বুধবার, ১৪ই অক্টোবর, ২০১৫ তারিখে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/S. Scheiner
আরো একটি মৃতদেহ
পূর্ব জেরুসালেমের ‘ওল্ড সিটির’ প্রবেশমুখে দামাস্কাস গেটে বুধবার আরো একটি ছুরি আক্রমণের ঘটনা ঘটে৷ দৃশ্যত পশ্চিম জর্ডানের হেব্রন থেকে আগত এক ২০ বছর বয়সি ফিলিস্তিনি তরুণ এক নিরাপত্তা কর্মীকে আক্রমণ করে ও নিরাপত্তা কর্মীদের গুলিতে নিহত হয়৷ ছবিতে নিহত আততায়ীর লাশ অকুস্থল থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷