হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তোলা হলো৷ ভর্ৎসনা করা হয়েছে হামাসকেও৷
বিজ্ঞাপন
মে মাসে ১১ দিন ধরে লড়াই হয়েছিল হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সেনার৷ তার দুই মাস বাদে রিপোর্ট প্রকাশ করল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷ যেখানে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি 'যুদ্ধাপরাধ' বা 'ওয়ার ক্রাইমে'র অভিযোগ তোলা হলো৷ হামাসের বিরুদ্ধেও অবশ্য একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে৷ সংস্থাটি জানিয়েছে, আগস্টে হামাসের বিষয়ে একটি আলাদা রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে৷
জেরুসালেমে ফিলিস্তিনি বসবাসকারীদের উচ্ছেদ নিয়ে প্রথম গোলমাল শুরু হয় হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে৷ সে সময় গাজা স্ট্রিপে একের পর এক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী৷ ইসরায়েলের সেই বিমান হামলা নিয়ে এর আগেও অনেক বিতর্ক হয়েছে৷ হামলায় গাজা স্ট্রিপে অবস্থিত সংবাদ সংস্থার ভবনও সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টে বলা হয়েছে ইসরায়েলের অন্তত তিনটি বিমান হামলায় ৬২জন সাধারণ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে৷ যুদ্ধের সঙ্গে যাদের কোনো সম্পর্ক নেই৷
হামাসের উত্থান ও কার্যক্রম
২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে হামাস৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বেশিরভাগ দেশের কাছে তারা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচিত৷ তবে হামাসের কিছু মিত্র দেশও রয়েছে৷
ছবি: Mohammed Abed/AFP/Getty Images
উত্থানপর্ব
১৯৮০-এর দশকে ইয়াসির আরাফাতের প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-র বিরোধিতায় হামাসের জন্ম৷ পিএলও-র বিরোধী শক্তি হিসেবে দাঁড় করাতে শুরুর দিকে ইসরায়েল সরকার হামাসকে অর্থ সহায়তা দিয়েছিল বলে অনেকক্ষেত্রে দাবি করা হয়৷ তবে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠায় কোনো ধরনের ভূমিকার কথা বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: Reuters/S. Salem
ইসরায়েলকে অস্বীকার
পিএলও-র মতো হামাস ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকারে বিশ্বাস করে না৷ তাদের প্রতীকে রয়েছে জেরুসালেমের ‘ডোম অব দ্য রক’৷ ইসরায়েল, গাজা ও পশ্চিম তীরকে একক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে তারা বিবেচনা করে৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
শান্তি চুক্তি প্রত্যাখ্যান
১৯৯৩ সালে ইয়াসির আরাফাত অসলো চুক্তির অধীনে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করেন, যার মধ্য দিয়ে ১৯৮৭ সালে শুরু হওয়া প্রথম ইন্তিফাদার অবসান হয়৷ হামাস এই শান্তি প্রক্রিয়া প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলে হামলা অব্যাহত রাখে৷
ছবি: J. David Ake/AFP/Getty Images
নির্বাচনে জয়
২০০৬ সালের গাজার সাধারণ নির্বাচনে হামাস পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে৷ এরপর থেকে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বে ফাতাহ-এর অধীনে রয়েছে পশ্চিম তীর আর গাজার নিয়ন্ত্রণ হামাসের হাতে৷ ২০০৮-০৯, ২০১২ ও ২০১৪ সালে ইসরায়েলি সেনার সঙ্গে হামাসের তুমুল লড়াই চলে৷
ছবি: AP
সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত
১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করে৷ ২০০৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নও তাদেরকে সন্ত্রাসী তালিকায় রাখে৷ হামাস এই বিষয়ে আদালতে চ্যালেঞ্জ করে৷ তবে আদালত তাদের আবেদন বাতিল করে৷ যুক্তরাজ্য ক্যানাডা, জাপান, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াও হামাসকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Khatib
হামাসের সহযোগী
হামাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সহযোগী কাতার৷ দেশটির আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল-থানি প্রথম রাষ্ট্রনেতা, যিনি ২০১২ সালে হামাস সরকারের সঙ্গে দেখা করেন৷ এখন পর্যন্ত দেশটি হামাসকে ১৮০ কোটি ডলার দিয়েছে৷ হামাসের প্রতি তুরস্কেরও সমর্থন রয়েছে৷ সংগঠনটির নেতা ইসমাইল হানিয়ের পক্ষে রাজনৈতিক অবস্থান রয়েছে রেচেপ তাইয়েপ-এর্দোয়ানের৷ এছাড়াও বিভিন্ন উদ্যোগ ও ফাউন্ডেশনের সহযোগিতাও পায় তারা৷
ছবি: AP
হামাসের রকেট উৎস
সবশেষ সংঘাতেও ইসরায়েলের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন শতাধিক রকেট ছুঁড়েছে হামাস৷ দীর্ঘদিন হামাস রকেটের জন্য ইরানের উপর নির্ভরশীল ছিল৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুদান ও মিশর হয়ে সেখান থেকে অস্ত্র চোরাচালান হতো৷ তবে বর্তমানে গাজাতেই হামাস রকেট বানাচ্ছে বলেও ধারণা করা হয়৷
ছবি: Mohammed Abed/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
মানবাধিকার সংস্থাটির প্রশ্ন, কেন ওই নিরপরাধ মানুষদের উপর আক্রমণ চালানো হলো? সংঘাতের গোড়া থেকেই ইসরায়েল দাবি করছিল, গাজা স্ট্রিপে শুধুমাত্র হামাসের ঘাঁটি লক্ষ্য করেই তারা আক্রমণ চালাচ্ছে৷ এমনকী, সংবাদ সংস্থার ভবনটিও হামাসের ঘাঁটি বলে তারা দাবি করেছিল৷ কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনটির বক্তব্য, অন্তত তিনটি বিমান হামলা শুধুমাত্র জনবসতির উপর হয়েছে৷ সেখানে কোনো হামাসের ঘাঁটি ছিল না৷ লোকালয়ে ওই হামলার ফলে ৬২ জনের মৃত্যু হয়৷ তার মধ্যে নারী এবং শিশুও আছে৷
পাশাপাশি হামাসের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছে সংস্থাটি৷ তাদের বক্তব্য, ওই ১১ দিনে ইসরায়েলের জনবসতি লক্ষ্য করে অন্তত চার হাজার রকেট ছুড়েছিল হামাস৷ যার ফলে ইসরায়েলের সাধারণ মানুষও আক্রান্ত হয়েছেন৷ আয়রন ডোম থাকায় বহু মানুষের প্রাণ বেঁচেছে৷ তবে হামাস নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট অগাস্টে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷
গাজায় ধ্বংসস্তূপেই শুরু নতুন জীবন
ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের সাম্প্রতিক সংঘাতের পর নতুন করে জীবনযুদ্ধে নেমেছেন গাজা উপত্যকার বাসিন্দারা৷ ধ্বংসস্তূপে কেমন করে তারা বসবাস শুরু করেছেন, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: MOHAMMED SALEM/Reuters
বাসার বদলে তাঁবু
ভেঙে পড়া বাসার ধ্বংসস্তূপের ওপরে তাঁবু গেড়ে বসে আছে জাওয়ারা পরিবারের সদস্যরা৷ রাতের আঁধারে মোমবাতির আলোই তাদের সম্বল৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/Reuters
অন্ধকারে আলো
গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের একটি ঘর৷ আশেপাশে কোথাও আলো নেই৷ শুধু একটি বাসার আলো দেখা যাচ্ছে৷ সেই বাসার একটি ছেলেকেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/Reuters
পতাকা
ইসরায়েলের বিমান হামলায় ভেঙে পড়েছে গাজা উপত্যকার বহু বাড়িঘর৷ এমনই এক ভবনের উপরে উড়ছে ফিলিস্তিনের পতাকা৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/Reuters
পড়ে আছে শুধু বিছানা
ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি ধ্বংস হওয়া বাসা৷ সেই বাসার ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি জামা ও তোষক উদ্ধার করতে পেরেছে এক বালক৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/Reuters
রান্নাবান্না
বাসার বেশিরভাগ ঘর ধ্বংস৷ অক্ষত আছে রান্নাঘরের একাংশ৷ সেখানে চুলা জ্বালিয়ে রান্না করছেন এক ফিলিস্তিনি নারী৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/Reuters
ধ্বংসস্তূপে শৈশব
শহরের বেশ বড় একটা অংশ ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত৷ এর মাঝেই শৈশবের নানা মুহূর্ত খুঁজে নিচ্ছে শিশু-কিশোররা৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে ধ্বংসস্তূপের পাশ দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাওয়া এক বালককে৷
ছবি: AHMED JADALLAH/Reuters
চলছে আড্ডা
যেখানে কয়েক দিন আগেই চলেছিল বিমান হামলা, সেইখানেই এখন স্থানীয় যুবকেরা জমাচ্ছেন আডডার আসর৷ ভাঙা বাসার গায়েই তামাক-হুঁকো সহযোগে আড্ডা চলছে৷
ছবি: SUHAIB SALEM/Reuters
সংসার
ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পর থেকে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আবার সংসার সাজাতে শুরু করেছেন গাজা উপত্যকার স্থানীয়রা৷ ছবিতে এমনই একটি পরিবার৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/Reuters
সাজসজ্জা
বিমান হামলায় ধ্বংস হওয়া ভবনের গায়েই পাতা রয়েছে চেয়ার, সামনে আয়না৷ এ অবস্থাতেই স্থানীয় এক নাপিত তার খদ্দেরদের চুল কাটছেন৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/Reuters
বাস্তবের মুখোমুখি
রাতের অন্ধকারে হাতে ধরা মোমবাতির আলোতেও চলছে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে প্রয়োজনীয় জিনিসের খোঁজ৷ ছবিতে মোমবাতি হাতে এক বালককে তার বাসার ধ্বংসস্তূপের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: SUHAIB SALEM/Reuters
10 ছবি1 | 10
মানবাধিকার সংগঠনটির অন্যতম কর্মকর্তা গেরি সিম্পসন সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছেন, ''ইসরায়েলের আক্রমণে গাজা স্ট্রিপে বহু অসহায় মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ যুদ্ধের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্কই নেই৷ এটা শাস্তিযোগ্য যুদ্ধাপরাধ৷''
ইসরায়েল এবং হামাস কোনো পক্ষই এখনো পর্যন্ত সাম্প্রতিক রিপোর্টটি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি৷ তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তারা আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত যাবে৷