ইসরায়েল থেকে সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের অভিযোগ
১৮ মে ২০১৯
সিরিয়ার আকাশ প্রতিরোধক ব্যবস্থা কিছু ড্রোন এবং ছোট আকারের ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম৷ ইসরায়েল অতীতে যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশটিতে আঘাত হেনেছিল৷ ফলে এবারও দেশটির দিকেই উঠছে অভিযোগের আঙুল৷
বিজ্ঞাপন
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন শনিবার জানিয়েছে, ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে জঙ্গিগোষ্ঠীদের নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের জবাব দেয়া হয়েছে রাশিয়ার পরিচালিত সিরিয়ার মেইমিম বিমানঘাঁটি থেকে৷ এতে এক ব্যক্তি নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলেও জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম৷
যুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ার ইতিহাস
বার্লিনের প্যার্গামন মিউজিয়ামে চলছে সিরিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিষয়ে অভিনব একটি প্রদর্শনী৷ যুদ্ধের আগে ও পরে কীভাবে বদলেছে দেশটির সাংস্কৃতিক মানচিত্র, তা তুলে ধরছে এই প্রদর্শনী৷
ছবি: Staatliche Museen zu Berlin, Museum für Islamische Kunst/E. Wirth
ধুলোয় মিশেছে ‘আলেপ্পোর দুর্গ’
দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীতে যার উত্থান, সেই বিখ্যাত ‘আলেপ্পোর দুর্গ’-এর সর্বত্র যুদ্ধের স্পষ্ট ছাপ দেখা যাচ্ছে৷ দুর্গের বিভিন্ন অংশ ধুলোয় মিশে গেলেও শিগগিরই তা পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হবে৷ উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সাল থেকেই এই দুর্গের নাম ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে৷
ছবি: Sultan Kitaz
ইতিহাস
বলা হয়, এই দুর্গের জন্ম খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে৷ যুদ্ধে এই দুর্গের আশেপাশের অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অক্ষত রয়েছে মূল প্রাঙ্গন৷ দুর্গের সামনে একটি মসজিদ রয়েছে৷
ছবি: Staatliche Museen zu Berlin, Museum für Islamische Kunst/E. Wirth
বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উমায়েদ মসজিদ বিশ্বের প্রাচীনতম মসজিদগুলোর একটি৷ অষ্টম শতাব্দীর গোড়ায় তৈরি এই মসজিদ ১৯৮০ সালে ইউনেস্কো’র ‘বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান’ তালিকায় স্থান পায়৷
ছবি: Issam Hajjar
বিশ্বখ্যাত আলেপ্পো বাজার
সিরিয়ার সবচেয়ে ঘন জনবসতি ছিল আলেপ্পো শহরে৷ সেখানের আলেপ্পো বাজার বা ‘সুক’-এ ছিল হাজারেরও বেশি ছোট ছোট দোকান৷ যুদ্ধে শহরের পুরোনো অংশ নিশ্চিহ্ন হলে তার ছোঁয়া লাগে এই বাজারেও৷ ফলে, হারিয়ে গেছে এই বাজারের বিশাল অংশ৷
ছবি: Issam Hajjar
বেল মন্দির
মেসোপটেমিয়ার আরাধ্য দেবতা ‘বেল’-এর এই মন্দিরের বয়স প্রায় ২,০০০ বছর৷ ২০১৫ সালে ইসলামিক স্টেটের বোমা হামলায় পালমিরা শহরে অবস্থিত এই মন্দিরটির কেন্দ্রীয় ভবনসহ অন্যান্য পবিত্র স্থান ধূলিসাৎ হয়ে যায়৷
ছবি: Staatliche Museen zu Berlin, Museum für Islamische Kunst/E. Wirth
পালমিরার ‘ভ্যালি অফ টুম্বস’
১৯৮০ সালে ইউনেস্কোর তালিকায় আসার পর থেকে এই অঞ্চলে শুরু হয় প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা৷ উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এই উপত্যকার একটি অংশ, যেখানে জার্মানি ও সিরিয়ার দুটি গবেষণা দল ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত কর্মরত ছিল৷ এই গবেষণা থেকে আঞ্চলিক ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানা যায়৷
ছবি: Sammlung M. Meinecke/A. Schmidt-Colinet
যুদ্ধের আগে আলেপ্পো
২০০১ সালে যখন এই ছবিটি তোলা হয়, তখনও কেউ জানত না, ঠিক কী হতে চলেছে এক দশক পরে৷ সোনালি সূর্যের আলোয় মোড়া আলেপ্পোর এই ছবিতে ঐতিহাসিক মসজিদটির মিনার দেখা যাচ্ছে, যা সেই সময় সংস্কার করা হচ্ছিল৷
ছবি: Peter Heiske
যুদ্ধবিধ্বস্ত আলেপ্পো
গত কয়েক বছরে সিরিয়ায় যুদ্ধের প্রতীক হয়ে উঠেছে আলেপ্পো৷ অতীতের এই বর্ধিষ্ণু শহর যুদ্ধের ফলে এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে৷ উপরের ছবিতে রয়েছে আবশির পাশা মসজিদ ও বেহরামিয়াহ মসজিদ চত্বরের ধ্বংসাবশেষের চিত্র৷ যুদ্ধের ফলে সিরিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা এই ছবি থেকে কিছুটা হলেও আন্দাজ করা যায়৷
ছবি: Nabil Kasbo
8 ছবি1 | 8
সিরিয়ার রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদসংস্থা সানা জানিয়েছে, বিমানঘাঁটিটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘‘অধিকৃত অঞ্চল (ইসরায়েল) থেকে ছোড়া উজ্জ্বল বস্তু প্রতিরোধ করেছে৷''
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে যা ইসরায়েলের দিক থেকে এসেছে বলে জানিয়েছে সিরিয়ার গণমাধ্যম৷
ব্রিটেনভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস-এর প্রধান রামি আব্দেল রহমান জানিয়েছেন, জারামানার কাছে এবং দামেস্কের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে৷
নিজস্ব সূত্রের বরাতে রেহমান জানিয়েছেন যে, ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্য ছিল কেসা অঞ্চলে অবস্থিত ইরানের রেভ্যুলেশনারি গার্ডস এবং লেবাননের হেজবোল্লাহ'র ঘাঁটি এবং অস্ত্রের গুদাম রয়েছে৷
প্রসঙ্গত, এর আগে সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে কয়েকশতবার বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল৷ সেসব হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল দেশটির শত্রু হিসেবে বিবেচিত ইরান এবং হেজবোল্লাহ'র বিভিন্ন স্থাপনা৷
তবে, ইসরায়েল দুশমন বিবেচনা করলেও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচিত এই দুই শক্তি সিরিয়ায় ২০১১ সালে আসাদবিরোধী আন্দোলন শুরুর পর থেকেই সেখানে সক্রিয় অবস্থান নিয়েছে৷
সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটলো যখন ইরান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার উত্তেজনার পারদ ক্রমশ তুঙ্গে উঠছে৷ ইতোমধ্যে পারস্য উপসাগরে একটি বিমানবাহী রণতরী পাঠিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷