এই প্রথম কোনো আরব দেশের সরকারি প্রতিনিধি দল ইসরায়েলে পা দিল। ভিসা ফ্রি যাতায়াতের চুক্তি হয়েছে ইসরায়েল-আমিরাতের।
বিজ্ঞাপন
ঐতিহাসিক ঘটনা। ইসরায়েলে এই প্রথম সরকারি সফরে গেল সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধি দল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু এই সফরকে 'ঐতিহাসিক' বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তবে আরব আমিরাতের এই সফরের তীব্র বিরোধিতা করেছে ফিলিস্তিন । তাদের দাবি, এই সফরের মাধ্যমে আরব আমিরাত ইসরায়েলের আধিপত্যবাদ এবং দখলদারির মানসিকতাকে স্বীকৃতি দিল।
ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত, বাহরাইনের চুক্তি
ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের ঐতিহাসিক চুক্তি হোয়াইট হাউসে সই হলো। ইসরায়েল লাভবান হলো। বিক্ষোভ প্যালেস্টাইনে।
ছবি: Getty Images/A. Wong
দীর্ঘ বিরোধের অবসান
কয়েক দশক ধরে চলা বিরোধের অবসান। সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে চুক্তিতে সই করল ইসরায়েল। কূটনৈতিক,সম্পর্ক গড়ে তুলবে তারা। চুক্তিতে সই করলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, আমিরাতের বিদেশ মন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন আল নেহয়ান এবং বাহরাইনের বিদেশমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল জায়ানি।
ছবি: Getty Images/AFP/S. Loeb
ট্রাম্পের সভাপতিত্ব
হোয়াইট হাউসে চুক্তি সই হয়েছে। সভাপতিত্ব করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট ভোটের আগে এই চুক্তি তাঁর অন্যতম তুরুপের তাস। ট্রাম্প বলেছেন, ''মধ্যপ্রাচ্যে নতুন ভোর হলো। এই চুক্তি ঐতিহাসিক।'' তার আশা, বাকি আরব দেশগুলিও আমিরাত ও বাহরাইনকে অনুসরণ করবে।
ছবি: Getty Images/A. Wong
উচ্ছ্বসিত নেতানিয়াহু
এতদিন আরব দুনিয়ায় কার্যত একঘরে ছিল ইসরায়েল। এ বার আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু হবে। তাই উচ্ছ্বসিত ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই চুক্তি আরব-ইসরায়েল সংঘাত চিরতরে শেষ করে দিতে পারে। তাই এই চুক্তি ঐতিহাসিক। শান্তির ভোর হলো। তার মতে, করোনা নামক অতিমারির দিন শেষ হবে, কিন্তু আজ যে চুক্তি হলো, তার জন্য দীর্ঘস্থায়ী শান্তি থাকবে।
ছবি: Reuters/T. Brenner
খুশি আমিরাত, বাহরাইন
নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ দিয়েছেন আমিরাতের বিদেশমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল যে শান্তির পথ বেছে নিয়েছে এবং প্যালেস্টাইনের এলাকা দখল করবে না বলেছে, তাতে তিনি খুশি। কয়েক দশক ধরে বিভাজন ও সংঘাতের পর শান্তি ফিরল। ইতিহাসের গতি পরিবর্তন হলো। খুশি বাহরাইনও।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Brandon
খারিজ করল প্যালেস্টাইন
হোয়াইট হাউসে যখন এই চুক্তি সই হচ্ছে, তখন প্যালেস্টাইনে বিক্ষোভ চলছে। বিশেষ করে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখণ্ডে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ইসরায়েল যে এলাকা দখল করে রেখেছে, তা ছেড়ে না দিলে শান্তি আসবে না। প্যালেস্টাইন এই চুক্তিকে খারিজ করে বলেছে, তাদের পিছন থেকে ছুরি মারা হয়েছে।
ছবি: Reuters/M. Salem
বিরোধে সৌদি, ইরান, তুরস্ক
এই চুক্তির বিরোধিতা করে প্যালেস্টাইনের পাশে দাঁড়িয়েছে সৌদি আরব, ইরান এবং তুরস্ক। সৌদি আরব বলেছে, তারা প্যালেস্টাইন সমস্যার প্রকৃত সমাধান চায়। তাদের দাবি, স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং পূর্ব জেরুসালেমকে তার রাজধানী করতে হবে। ইরান ও তুরস্কও চুক্তির বিরোধী। এই চুক্তিতে শুধু নতুন করে প্যালেস্টাইনের এলাকা দখন না করার মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইসরায়েল।
ছবি: Reuters/T. Brenner
লাভ কতটা
এক দল বিশেষজ্ঞের মতে, এই চুক্তির ফলে লাভ খুব বেশি হবে না। কারণ, এমনিতেই ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের সংঘাত একেবারেই কমে গিয়েছিল। লাভটা হলো, তাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হলো। ওই বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তিন দেশের একটাই লক্ষ্য, ইরানের প্রভাব কমানো। সে জন্যই এই চুক্তি সম্ভব হয়েছে।
ছবি: Reuters/T. Brenner
ট্রাম্প কতটা সুবিধা পাবেন
হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তি করিয়ে ট্রাম্প তার ক্ষমতা দেখাতে পারলেন বলে তার সমর্থকদের দাবি। এর ফলে ভোটের আগে ট্রাম্পের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হলো বলে তারা মনে করছেন। এর সুবিধা কি ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাবেন? ট্রাম্প-বিরোধীরা মনে করছেন, তার ভাবমূর্তি করোনা ও কৃষ্ণাঙ্গ-হত্যার ফলে যে জায়গায় নেমেছে, সেখান থেকে ওঠার আশা কম।
ছবি: Reuters/T. Brenner
8 ছবি1 | 8
মঙ্গলবারই আরব আমিরাতের একটি প্রতিনিধি দল ইসরায়েলে পৌঁছেছে। সেই দলে আছেন আমিরাতের অর্থমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন তৌক আল-মারি এবং অর্থমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ওবেইদ হুমেইদ আল-তায়ের। ইসরায়েলের সঙ্গে একাধিক চুক্তি সই করেছেন তাঁরা। আমিরাতের এই সফরে রয়েছেন মার্কিন কূটনীতিকরাও। বস্তুত, অ্যামেরিকার মধ্যস্থতায় মাসখানেক আগে আমিরাত এবং বাহরিনের সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তি সই হয় ইসরায়েলের। প্রথম উপসাগরীয় অঞ্চলের কোনো আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের চুক্তি হলো। এই প্রথম ইসরায়েলে পা রাখলেন আরব দেশের কোনো সরকারি প্রতিনিধি। অ্যামেরিকা আমিরাতের এই সফরকে স্বাগত জানিয়েছে।
ফিলিস্তিন অবশ্য আমিরাতের এই ইসরায়েল সফরের তীব্র কটাক্ষ করেছে। তাদের বক্তব্য, ইসরায়েল যে ভাবে দখলাদারি চালায়, যে ভাবে আধিপত্যবাদ বিস্তার করে বসে আছে, আমিরাত তাকে মান্যতা দিল। এর আগে বাহরাইন এবং আমিরাতের সঙ্গে ইসরায়েলের চুক্তি নিয়েও একই প্রতিক্রিয়া দিয়েছিল ফিলিস্তিন। প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের একজিকিউটিভ কমিটির সদস্য ওয়াসেল আবু ইউসুফ বলেছেন, আমিরাতের এই সফর 'লজ্জাজনক'। এর পর ইসরায়েল ফিলিস্তিনের আরো এলাকা দখলের চেষ্টা করবে। কূটনৈতিক ভাবে ইসরায়েলের অবস্থান আরও শক্ত করে দেওয়া হলো। আমিরাতের সফরের কড়া নিন্দা করেছে হামাসও। হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেছেন, ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ইসরায়েলের জোর আরো বাড়ল। ফিলিস্তিনের মানুষের উপর ইসরায়েলের অত্যাচার এ বার নতুন মাত্রা পাবে।
এ দিকে মঙ্গলবারই ইসরায়েলের সঙ্গে পাঁচটি চুক্তি সই করেছে আমিরাত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অভ্যন্তীরণ বিমান পরিবহণ সহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং চুক্তি হয়েছে। তবে আলোচনার সব চেয়ে বড় বিষয় দুই দেশের ভিসা চুক্তি। ভিসাহীন যাতায়াতে রাজি হয়েছে দুইটি দেশ। ইসরায়েলের প্রতিবেশী দেশ জর্ডন এবং মিশরের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু ওই দুইটি দেশের মানুষও ভিসাহীন চলাচলের সুযোগ পান না।আমিরাতের সঙ্গে কেন এই চুক্তি হলো, তা নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে কূটনৈতিক মহলে।