ইসরায়েলে আল-জাজিরা বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন ইসরায়েলি সরকার৷ কাতারের আন্তর্জাতিক সংবাদ নেটওয়ার্কটি ইসরায়েলের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে, বলে ইসরায়েলের অভিযোগ৷
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েলের যোগাযোগ মন্ত্রী আয়ুব কারা রবিবার ঘোষণা করেন যে, তিনি ইসরায়েলে আল-জাজিরার কার্যকলাপ বন্ধ করে দিতে চান৷
কারা বলেন যে, তিনি আল-জাজিরার কর্মীদের প্রেসকার্ড বাতিল করতে চান ও জেরুসালেমে আল-জাজিরার কার্যালয়টি বন্ধ করে দিতে চান৷ এছাড়া তিনি কেবল অপারেটরদের আল-জাজিরার অনুষ্ঠান সম্প্রচার বন্ধ করতে অনুরোধ করেছেন, ও কেবল অপারেটররা আল-জাজিরার আরবি ও ইংরেজি চ্যানেল দু'টি সম্প্রচার না করতে সম্মত হয়েছেন, বলে কারা জানান৷ জেরুসালেমে আল-জাজিরার অফিস বন্ধ করে দিতে বাড়তি আইন প্রণয়নের প্রয়োজন পড়বে, বলে কারা মন্তব্য করেন৷
নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা সামলাতে কতটা প্রস্তুত কাতার?
সৌদি নেতৃত্বে জোট কাতারের উপর প্রবল চাপ বজায় রাখছে৷ সে দেশ তাদের শর্ত পূরণ না করায় উত্তেজনা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য পদক্ষেপের মুখে সে দেশ কতকাল মাথা উঁচু করে থাকতে পারবে?
ছবি: Getty Images/ANOC/M. Runnacles
একঘরে করে রাখার প্রচেষ্টা
জুন মাসের শুরুতেই কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও পরিবহণ যোগাযোগ ছিন্ন করেছিল সৌদি আরব, বাহরিন, সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ সন্ত্রাসবাদে মদত সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে কাতারের বিরুদ্ধে৷ কাতার অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Jaafar
শর্ত মানতে অস্বীকার
সৌদি নেতৃত্বে জোট কাতারের কাছে ১৩টি শর্ত পেশ করেছিল৷ আল জাজিরা নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া, ইরান ও তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কের মাত্রা কমানো সহ একাধিক দাবি পেশ করা হয়েছে৷ কিন্তু কাতার অনেক অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছে, বাকিগুলির ক্ষেত্রে নতি স্বীকার করতে প্রস্তুত নয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/T.Brakemeier
নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলা
সৌদি আরবের সঙ্গে স্থলপথে পরিবহণ যোগাযোগ ছিন্ন হবার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে টান পড়েছে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে কাতার দ্রুত সমুদ্রপথে পণ্য সরবরাহের নতুন ব্যবস্থা করে ফেলে৷ ফলে অভাব-অনটন দেখা যায়নি৷ তবে আমদানি সংক্রান্ত ব্যয় অবশ্যই বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/shalome05
আর্থিক ও অর্থনৈতিক প্রস্তুতি
আচমকা নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশের আর্থিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোয় কিছু রদবদল করতে হয়েছে কাতারকে৷ স্থানীয় ব্যাংকে কোটি কোটি ডলার জমা দিয়ে এবং এলএনজি গ্যাসের উৎপাদন ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে আপাতত পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে ছোট্ট অথচ বিত্তশালী এই দেশটি৷ অতএব অদূর ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞার ফলে তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই৷
ছবি: imago/Photoshot/Construction Photography
নতুন নিষেধাজ্ঞার কালো ছায়া
সৌদি নেতৃত্বে জোট কাতারের উপর বাড়তি নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিত দিয়েছে৷ এর আওতায় ব্যাংকিং সম্পর্ক ছিন্ন করা হতে পারে৷ তাছাড়া যে সব কোম্পানি কাতারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে এই জোট৷ কাতার সেই ধাক্কা সামলানোরও প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ডাব্লিউটিও কাতারের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারে৷
ছবি: Imago/H. Sobik
নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য পরিণতি
বিপুল অংকের অর্থ ও সম্পদের ফলে কাতার প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিতে পারবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ গ্যাস ও অন্যান্য পণ্য বিক্রির পথে বাধা না এলে কিছু ধাক্কা সত্ত্বেও কাতারের অর্থনীতিও চালু থাকবে বলে তাঁদের ধারণা৷ সে দেশের সরকার এখন থেকেই নানা পদক্ষেপের কথা ভাবছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Munoz Alvarez
ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ঝুঁকি
বর্তমান সংকটের ফলে কাতারের ব্যাংকিং ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷ কারণ ব্যাংকগুলি অর্থের জন্য বিদেশের উপর বড় নির্ভরশীল৷ গত মে মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির প্রায় ৩৬ শতাংশ লায়াবিলিটি ছিল বিদেশিদের হাতে৷ সেই অর্থে টান পড়লে কাতারকে নানাভাবে ঘাটতি পূরণ করতে হবে৷ বিশেষ করে বিদেশে কাতারের কিছু সম্পত্তি বিক্রি করতে হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
জঙ্গি গোষ্ঠীসমূহকে সহিংসতার ‘‘প্ররোচনা’’ দেবার জন্য আল-জাজিরাকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, বলে কারা অভিযোগ করেন৷ তাঁর দৃষ্টিতে আল-জাজিরা ‘‘সন্ত্রাসবাদকে সাহায্য করে’’: মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক আরব দেশ যে এই কারণে আল-জাজিরাকে নিষিদ্ধ করেছে, অথচ ইসরায়েল করেনি – কারা এই পরিস্থিতিকে একটি ‘‘বিভ্রম’’ বলে অভিহিত করেন৷
‘‘সম্প্রতি আমাদের এলাকার প্রায় সব দেশ স্থির করেছে যে, আল-জাজিরা সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দিয়ে থাকে, ধর্মীয় উগ্রপন্থাকে সমর্থন করে থাকে৷ এবং আমরা যখন দেখি যে, এই সব ক'টি দেশের মতে আল-জাজিরা ইসলামিক স্টেট, হামাস, হেজবোল্লাহ ও ইরানের হাতের ক্রীড়নক – শুধু আমরাই সে’ সিদ্ধান্তে আসিনি, তাহলে এখানে (আমাদের) একটা বিভ্রম ঘটছে’’, বলেন কারা৷
জর্ডান ও সৌদি আরব আল-জাজিরার স্থানীয় কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে; অপরদিকে সৌদি আরব, ইউএই, মিশর ও বাহরেইন আল-জাজিরা ও তাদের শাখা সাইটগুলিকে ব্লক করেছে –এছাড়া এই চারটি দেশ কাতারের কাছে যে বিভিন্ন দাবির তালিকা পেশ করেছে, সেখানেও আল-জাজিরা বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে, তবে সেই দাবি পূরণের কোনো সময়সীমা নির্দিষ্ট করা হয়নি৷
সৌদি ক্ষমতাকেন্দ্রে তারুণ্য
সৌদি আরবের ভবিষ্যৎ বাদশাহ মহম্মদ বিন সালমান ‘এমবিএস’ নামেও পরিচিত৷ গত কয়েক বছরে ক্ষমতাকেন্দ্রে তাঁর উত্থান সবার নজর কেড়েছে৷ এই তরুণ নেতা সম্পর্কে এই তথ্যগুলো কি জানা আছে?
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
বাদশাহর আস্থাভাজন
অশীতিপর বাবা বাদশাহ সালমান কার্যত দেশের ক্ষমতা প্রিয় ছেলের হাতেই তুলে দিয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন৷ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়াও তিনি পেট্রোলিয়াম কোম্পানি আরামকো ও দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন৷ উপ প্রধানমন্ত্রী পদও তাঁর দখলে ছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Saudi Press Agency
ঝুঁকি নিতে ভয় পান না
প্রচণ্ড পরিশ্রমী বলে পরিচিত মহম্মদ বিন সালমান সৌদি শাসকগোষ্ঠীর এতকালের ধীরস্থির ভাবমূর্তি ভেঙে দিয়েছেন৷ অর্থনৈতিক সংস্কারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি এতদিনের নানা প্রথা ভেঙে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন৷ তাঁর সমর্থকরা মনে করেন, বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করতে দেশে এমন নেতারই প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/abaca/Balkis Press
পররাষ্ট্র নীতির পরিবর্তন
এতকালের সংযম ভেঙে ফেলে সৌদি আরব গোটা অঞ্চলে নিজস্ব স্বার্থরক্ষায় বেশ কিছু বিতর্কিত পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ ইরানের প্রতি বৈরি মনোভাব, ইয়েমেনে সেনা অভিযান থেকে শুরু করে কাতারকে একঘরে করে ফেলার সিদ্ধান্তের পেছনেও মহম্মদ বিন সুলতানের স্বাক্ষর স্পষ্ট৷ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার স্থপতিও তিনি৷
ছবি: picture alliance / AP Photo
রাজপরিবারে উত্থান
সৌদি রাজপরিবারের জটিল ক্ষমতার কাঠামোর মধ্যে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের কোণঠাসা করে বাদশাহর ঠিক পরে শীর্ষ স্থানে পৌঁছানোর মতো অসাধ্যসাধন করেছেন ‘এমবিএস’৷ শুধু তাই নয়, এতকাল মনোনীত ‘ক্রাউন প্রিন্স’ মহম্মদ বিন নায়েফ (বামে) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও উপাধি খুইয়েও তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন৷
ছবি: Reuters/Saudi Press Agency
ব্যতিক্রমী জীবন
সৌদি রাজপরিবারের সন্তানরা সাধারনত বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন, কমপক্ষে মাস্টার্স ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছে যান৷ মহম্মদ বিন সালমান সেই পথে না গিয়ে দেশে থেকেই আইন নিয়ে পড়েছেন এবং বাবার কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছেন৷ বাদশাহ সালমান যখন নিজে ক্রাউন প্রিন্স ছিলেন, তখনও তিনি বাবার রাজসভার দায়িত্বে ছিলেন৷
ছবি: Getty Images
পেট্রোলিয়ামের উপর নির্ভরতা
সৌদি অর্থনীতি এতকাল তার বিশাল পেট্রোলিয়াম ভাণ্ডারের উপর নির্ভর করে ছিল৷ মহম্মদ বিন সালমান অর্থনীতির খোলনলচে বদলে ২০৩০ সালের মধ্যে সেই পরিস্থিতি বদলানোর উদ্যোগ শুরু করেছেন৷ ভরতুকিসহ অনেক সুযোগসুবিধা বন্ধ করে তিনি বেশ কিছু অপ্রিয় সিদ্ধান্তও নিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/Ali Jarekji
ধর্মীয় অনুশাসন
সৌদি আরবের প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে এখনো কোনো বড় সংঘাতে যাননি মহম্মদ বিন সালমান৷ তবে দেশের বিশাল যুবসমাজের কথা ভেবে তিনি সংগীতের জলসা, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ইত্যাদির ব্যবস্থা করেছেন৷ সেইসঙ্গে ধর্মীয় অনুশাসনের তত্ত্বাবধায়ক পুলিশের দৌরাত্ম্য কিছুটা কমিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Hilabi
7 ছবি1 | 7
নেতানিয়াহু বদ্ধপরিকর
ইসরায়েলের সরকারি কর্মকর্তারা বহুদিন ধরেই আল-জাজিরার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতি অ-পক্ষপাতমূলক মনোভাব পোষণের অভিযোগ করে আসছেন৷ ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিগডর লিবারমান আল-জাজিরার ইসরায়েল সংক্রান্ত বিবরণ প্রদানকে ‘‘নাৎসি জার্মানির কায়দায়’’ অপপ্রচারের সঙ্গে তুলনা করেছেন৷ প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি আল-জাজিরার বিরুদ্ধে সহিংসতায় ‘‘প্ররোচনা’’ দেওয়ার অভিযোগ করেন৷
‘‘আল-জাজিরা চ্যানেল টেম্পল মাউন্ট (আল-আকসা মসজিদ)-এর চারপাশে সহিংসতার প্ররোচনা দিয়ে চলেছে’’, বলে নেতানিয়াহু গত ২৭শে জুলাই তারিখে একটি ফেসবুক পোস্টে লেখেন৷ অপরদিকে নেতানিয়াহু সাধারণভাবেই নিউজ মিডিয়ার উপর বিশেষ প্রীত নন৷
আল-জাজিরা জেরুসালেমে তাদের কার্যালয় বন্ধ করে দেবার পরিকল্পনাকে ‘‘অ-গণতান্ত্রিক’’ বলে অভিহিত করেছে ও এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে, বলে জানিয়েছে৷