চ্যান্সেলর হিসেবে শেষবার ইসরায়েল সফরে আঙ্গেলা ম্যার্কেল। দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে কথা বললেন। বললেন, ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়েও।
বিজ্ঞাপন
নির্বাচন হয়ে গেছে। জোট সরকার গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে। সেই সরকার তৈরি হওয়ার আগে পর্যন্ত আঙ্গেলা ম্যার্কেলই জার্মানির কেয়ারটেকার সরকার চালাচ্ছেন। চ্যান্সেলর হিসেবে শেষবার তিনি ইসরায়েল সফর করলেন। কথা ললেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটের সঙ্গে।
জার্মানি-ইসরায়েল: একটি বিশেষ সম্পর্ক
নাৎসি আমলের ইহুদি নিধন যজ্ঞে প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের অপমৃত্যুর জের ধরে আত্মপ্রকাশ ঘটে ইসরায়েলের৷ তাই ঐতিহাসিক কারণে জার্মানি ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্কের চরিত্র একেবারে অনন্য৷ কিছু মানুষের জীবন জুড়েও রয়েছে এ দুটি ভূখণ্ড...
গল্পগুচ্ছ
জার্মান লেখক সারা স্ট্রিকার ইসরায়েলে প্রায় পাঁচ বছর কাটিয়েছেন৷ সেখানেই লিখেছেন নিজের প্রথম উপন্যাসটি৷ আর সম্প্রতি ইসরায়েলি এবং জার্মান লেখকদের কাজ নিয়ে তৈরি অভিনব একটি গল্পগুচ্ছে একটি ছোট গল্পও লিখেছেন তিনি৷
ছবি: Win Schumacher
মানুষ, প্রকৃতি, ভবিষ্যৎ
এত দীর্ঘ একটা সময় ইসরায়েলে থাকার কারণে সেখানকার মানুষ, এমনকি প্রকৃতিকেও ভালোবেসে ফেলেছেন সারা৷ তাঁর মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফেডারেল জার্মান প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে, বেড়ে চলেছে সহযোগিতা৷ তাই সারা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী৷
ছবি: Win Schumacher
রন্ধনশিল্প
২০১৩ সালে জার্মানির টম ফ্রাঞ্জ ইসরায়েলের একটি বিখ্যাত রান্নার অনুষ্ঠান তথা প্রতিযোগিতা ‘মাস্টার শেফ’-এ প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলেন৷ আর তখন থেকেই ইসরায়েলে তিনি একটি অতি পরিচিত নাম৷
ভালোবাসার টানে
ইসরায়েল আর সেখানকার মানুষদের সঙ্গে এতটাই মিলেমিশে গিয়েছিলেন টম যে, আট বছর আগে ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি৷ হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন৷ এ অঘটনটা ঘটেছিল ভালোবাসার টানেই৷ প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি৷ বর্তমানে টমকে জেরুসালেমের একটি ছোট্ট সিনাগগে প্রতিদিন স্ত্রীর সঙ্গে প্রার্থনা করতে দেখা যায়৷
রাঁধুনি পরিবার
স্ত্রীর পরিবারেই থাকেন টম৷ তাঁরাও যে রান্নায় এক-একজন ওস্তাদ৷ তাই তাঁদের সঙ্গে রান্নাঘরে দারুণ সময় কাটে টমের৷ কত কী যে শিখেছেন তিনি এখানে৷ আসলে জেরুসালেমের খাবার-দাবার নিয়ে একটি বই লিখতেই তিনি এসেছিলেন ইসরায়েলে৷
গায়িকা হওয়ার স্বপ্ন
নাম: রিলি উইলো৷ বয়স: ৩৪৷ স্বপ্ন: দাদির মতো মস্ত গায়িকা হওয়ার৷ রিলির দাদি একসময় বার্লিনের বিখ্যাত গায়িকা ছিলেন৷ তাই রিলি ইসরায়েল ছেড়ে আজ পরবাসী৷ বহুদিন হলো বার্লিনেই ঘর বেঁধেছেন তিনি, সানন্দেই৷ যদিও নাৎসিদের কুখ্যাত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প আউশভিৎসে হত্যা করা হয়েছিল তাঁর প্রিয় দাদিকে৷
বার্লিনের আড্ডা
এটা ইসরায়েল নয়, জার্মানির ছবি৷ রাজধানীর ক্রয়েৎসব্যার্গ এলাকার একটা পাবে বসে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা মারছেন রিলি উইলো আর তাঁর স্বামী বেনেডিক্ট বিন্ডেভাল্ড৷ বার্লিনের এ অঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী নয়ক্যোলন এলাকায় বহু তরুণ ইসরায়েলির বাস৷
হালকা হাসির পাল্লা
ইসরায়েল থেকে আসা রিলি উইলো আর বন্ধু শাহাগ শাপিরা একটা বিষয়ে একমত৷ আর সেটা হলো: ইহুদি বুদ্ধিমত্তা আর ইসরায়েলি ব্যঙ্গ আসলেই অতীতের কালো অধ্যায়টাকে হালকা করতে সাহায্য করেছে অনেকটাই৷
ছবি: Win Schumacher
সোজা প্রশ্ন
পেশায় সাংবাদিক শাপিরার বয়স মাত্র ২৭৷ কিন্তু আজকের জার্মান সমাজে ইহুদিদের কীভাবে দেখা হয়, সেটা জানতে তাঁর দারুণ আগ্রহ৷ তাই পথে-ঘাটে কারুর সাথে দেখা হলেই তিনি প্রশ্ন করে বসেন: আচ্ছা, আপনি কি ইহুদি বিদ্বেষী?
হাসতে তো মানা নেই!
বার্লিনের হলোকস্ট মেমোরিয়ালটি দেখতে যাঁরাই আসেন, তাঁরাই নিজের মোবাইল ফোনটা দিয়ে একটা ‘সেল্ফি’ তুলতে ভোলেন না৷ ‘‘এখানে সেল্ফি তোলা নিষেধ’’ – না, সত্যি সত্যি না৷ দর্শনার্থিদের সঙ্গে দুষ্টুমি করে শাপিরা প্রায়ই এমনটা বলেন৷ আর লোকজন সব ঘাবড়ে গেলে, হো হো করে হেসে ওঠেন তিনি৷
10 ছবি1 | 10
বেনেটের উপস্থিতিতে সংবাদমাধ্যমকে ম্যার্কেল বলেছেন, ''জার্মানির কাছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।'' তার বক্তব্য, ইহুদিদের সঙ্গে অতীতে যা ঘটেছে তার জন্য জার্মানি এখনো দুঃখিত। কিন্তু এখন জার্মানিতে ইহুদিরা শান্তিতে বসবাস করতে পারেন। অতীত ইতিহাস ভুলে জার্মানি এবং ইসরায়েল ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সেই বন্ধুত্ব কীভাবে আরো শক্তিশালী করা যায়, তা নিয়ে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের কথা হয়েছে বলে ম্যার্কেল জানিয়েছেন।
বেনেটও দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ম্যার্কেলকে। ১৬ বছরের চ্যান্সেলর জীবনে আটবার ইসরায়েল সফর করেছেন ম্যার্কেল। এটাই চ্যান্সেলর হিসেবে তার শেষ সফর।
এদিন জেরুসালেমে হলোকাস্ট মিউজিয়ামেও যান ম্যার্কেল। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে তিনি দেখা করেননি। ফিলিস্তিনের প্রশাসকদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন না তিনি।
এদিন ইসরায়েলেই ইরান নিয়ে একাধিক কথা বলেন ম্যার্কেল। তার বক্তব্য, ইরান পরমাণু চুক্তিতে যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যত দ্রুত তা সম্ভব হয়, ততই মঙ্গল। এর জন্য রাশিয়া এবং চীনের রাষ্ট্রপ্রধানদের উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এদিনই জাতিসংঘ একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, ইরান আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ইউরেনিয়াম মজুত করে ফেলেছে। ইরান অবশ্য আগেই জানিয়েছিল, পরমাণু চুক্তিতে নতুন করে যোগ দেওয়ার বিষয়ে তারা অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে।