ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে এবার রকেট হামলা চালানোর চেষ্টা করলো গাজার হামাস। যদিও ইসরায়েল সেনা জানিয়েছে মাঝ পথেই সেই রকেট ধ্বংস করেছে তারা।
বিজ্ঞাপন
রকেট আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। বুধবার সস্ত্রীক একটি নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে তাঁর বক্তৃতা চলাকালীন বেজে ওঠে অ্যালার্ম। সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীকে।
ইসরায়েলের সেনা জানিয়েছে, গাজা থেকে রকেট ছোড়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে। ইসরায়েলের আয়রন ডোম মিসাইল সিস্টেম সেই রকেট মাঝপথেই ধ্বংস করে। শুধু তাই নয়, পাল্টা উত্তরও দেওয়া হয়েছে গাজার কয়েকটি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে। যদিও ঘাঁটিগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
সরকার গঠন নিয়ে অচলাবস্থা কাটছে না ইসরায়েলে। জোট গঠন নিয়ে অচলাবস্থা অব্যাহত৷ তাই আবার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে দেশের পার্লামেন্ট। এর ফলে এক বছরের মধ্যে তৃতীয়বার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ইসরায়েলের ভোটদাতারা। আগামী ২ মার্চ ভোটগ্রহণ হবে৷
গত নির্বাচনে কোনও একটি দল সরকার বানাবার মতো গরিষ্ঠতা পায়নি৷ সরকার বানানোর জন্য তাই ভোট পরবর্তী জোট দরকার ছিল৷ দীর্ঘ আলোচনার পরেও সেই জোট তৈরি হয়নি। দলগুলো এখন একে অপরকে দোষারোপ করছে।
চলতি বছরে এপ্রিল ও সেপ্টেম্বরে দুবার নির্বাচন হয় ইসরায়েলে৷ সেখানে বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর দক্ষিণপন্থী লিকুদ ৩১ ও বেনি গান্টস এর ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পার্টি ৩২ আসনে জেতে৷ এরপর নেতানিয়াহু ও গ্রান্টস সরকার গঠন করা নিয়ে আলোচনা করেন৷ কিন্তু তাতে কোনও ফল হয়নি৷ নেতানিয়াহু ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ''আমাদের ওপর জোর করে নির্বাচন চাপিয়ে দেওয়া হল।'' তিনি সরাসরি এর জন্য গ্রান্টসকে দায়ী করেছেন।
গাজা উপত্যকায় কেন সংঘাত?
এই সংঘাত কয়েক শতাব্দী প্রাচীন৷ কিন্তু এ বছর কিছু ঘটনা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার সংঘাতকে আরো উস্কে দিয়েছে, যার ফলে গাজা উপত্যকায় উত্তাপ বিরাজ করছে৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
ঝরলো প্রাণ আরো তিন ফিলিস্তিনির
গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে আরো তিন জন ফিলিস্তিন নিহত হয়েছেন৷ ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এটিই সংঘাতের সর্বশেষ ঘটনা৷ গত মার্চ থেকেই ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের ওপর বার বার গুলি চালিয়েছে, যার কঠোর সমালোচনা করে আসছে জাতিসংঘ৷
ছবি: Imago/Zuma/A. Amra
ফেব্রুয়ারি ২০১৮: সীমান্তে বোমা
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সীমান্তে বোমা বিস্ফোরণে চার ইসরায়েলি সেনা আহত হন৷ইসরায়েল ফিলিস্তিনের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হামাসকে এর জন্য দায়ী করে গাজায় হামাসকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
জাতিসংঘের ত্রাণকার্য
জাতিসংঘ গাজা উপত্যকার অর্ধেকেরও বেশি মানুষের জন্য ত্রাণ সরবরাহ করে৷ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তারা সতর্ক করে যে, গাজায় দুর্ভিক্ষ হানা দিতে পারে৷ যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থায় তাদের প্রদেয় সংস্থান বন্ধ করে দেয়, যেন সমস্যা সমাধানে ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করে৷ পরে ত্রাণ সংস্থাটি বলে, জুলাই পর্যন্ত রসদ আছে তাদের কাছে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/S. Jarar'Ah
ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রীর সফর
পশ্চিমতীর ভিত্তিক ফাতাহ গ্রুপের ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী রামি হামদাল্লাহ’র নেতৃত্বে একটি দল গত ১৩ মার্চ গাজা সফর করেন৷ গাজায় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য হামাসকে দুষছে ফিলিস্তিনি সরকার৷ জবাবে হামাস বলেছে, এ ধরনের মন্তব্য গাজা ও পশ্চিমতীরের মধ্যে একতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
ইসরায়েলে আবারো বিমান হামলা
১৮ মার্চ গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে বোমা বিস্ফোরণে কেউ আহত না হলেও ইসরায়েল এই সুযোগে আরেক দফা বোমা হামলা চালায় গাজায়৷ হামাসের সুড়ঙ্গগুলোকে ধ্বংস করাই এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল৷ বোমা হামলার কারণে বাস্তুচ্যুত অনেক ফিলিস্তিনি ঘটনার পরের কয়েকদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত সীমানা দিয়ে ইসরায়েলে চলে যান৷
ছবি: Reuters/I. A. Mustafa
সীমান্তে বিক্ষোভের ঘোষণা
গাজা উপত্যকায় একটি শান্তিপূর্ণ মিছিলের ঘোষণা দেন ফিলিস্তিনিরা৷ তাঁরা পালিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমিতে ফিরে আসার অধিকার দেয়ার দাবি জানান৷ ইসরায়েল সেই দাবি মেনে নেয়নি৷
ইসরায়েল দাবি মেনে না নেয়ায় গত ৩০ মার্চ ল্যান্ড ডে’কে সামনে রেখে সীমান্তের দিকে প্রায় ত্রিশ হাজার ফিলিস্তিনি এগোতে থাকেন৷ কেউ কেউ সীমান্ত বেড়ার দিকে এগিয়ে যান৷ ইসরায়েলের সীমান্তরক্ষীরা তাঁদের ওপর গুলিবর্ষণ করলে ১৬ জন নিহত হন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Hams
আবারো সীমান্তে প্রতিবাদ
৬ এপ্রিল পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে এক সাংবাদিক নিহত হন৷ সেদিন মোট নয় ফিলিস্তিনি গুলিবিদ্ধ হন৷
ছবি: Reuters/I. A. Mustafa
আমরা আঘাত করবো: নেতানিয়াহু
গত ৯ এপ্রিল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, ‘‘আমাদের পরিষ্কার কথা, কেউ আমাদের আক্রমণ করবে মনে হলে, আমরা তা মেনে নেবো না৷ আমরা তাদের আঘাত করবো৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/G. Tibbon
তৃতীয়বারের মতো প্রতিবাদ
১৩ এপ্রিল তৃতীয়বারের মতো প্রতিবাদে সীমান্তে জড়ো হন ফিলিস্তিনিরা৷ ৩০ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৪৫ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Salem
ইসরায়েলি সেনাদের গুলি
ফিলিস্তিনিদের ইট পাটকেলের জবাব টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ছাড়াও গুলিবর্ষণ করে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা৷ এ নিয়ে জাতিসংঘ ব্যাপক সমালোচনা করলেও তা কানে তোলেনি তারা৷ নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি তোলা হলেও কাজ হয়নি৷
ছবি: Reuters/I.A. Mustafa
11 ছবি1 | 11
জোট গঠন করা যায়নি বলে দলের ভিতরেও খানিক কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন নেতানিয়াহু। ফলে ইসরায়েলেরবিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে তিনি নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। তারই মধ্যে বুধবার এই ঘটনা ঘটায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। বিরোধীদের বক্তব্য, গাজা এবং হামাস নিয়ে নরম মনোবভাব দেখাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও এ দিনের ঘটনার পর ফের বক্তৃতা করেন নেতানিয়াহু। সেখানে তিনি বলেন, এর আগে ইসরায়েলের উপর যারা আক্রমণ চালিয়েছে, রকেট ছুড়েছে, তারা কেউ আর এখন বেঁচে নেই। এ দিন যারা রকেট আক্রমণ চালালো, তারাও যেন মৃত্যুর জন্য তৈরি থাকে।
হামাস অবশ্য ইসরায়েলে রকেট হামলা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও বিবৃতি দেয়নি। ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় তাদের কোনও ক্ষতি হয়েছে কি না, সে বিষয়েও হামাসের তরফে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।