ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেহকে হত্যার পিছনে ইসরায়েল রয়েছে বলে আগেই দাবি করেছিল ইরান। বৃহস্পতিবার রোমে একটি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সভায় ফের সরাসরি ইসরায়েলকে ওই ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন ইরানের পরাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ।
ইরান-চীন সম্ভাব্য চুক্তি: সরকার খুশি, জনগণ অখুশি?
চীনের সঙ্গে ২৫ বছরের এক চুক্তি করতে চলেছে ইরান৷ মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সদা সমালোচিত এই দুই দেশের চুক্তি ইরানের জনগণ সানন্দে গ্রহণ করবে কিনা সেটাও এখন প্রশ্ন৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Getty Images/AFP/T. A. Clary
চুক্তির খুব কাছাকাছি
কয়েকদিন আগে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাভেদ জারিফ জানান, চীনের সঙ্গে ইরানের ২৫ বছরের একটা কৌশলগত চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসের দাবি, তারা চীন-ইরান আলোচনার কিছু ডকুমেন্ট পেয়েছে৷ ফার্সি ভাষায় লেখা সেই কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশ দুটি এখন চুক্তি সম্পাদনের দ্বারপ্রান্তে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Hase
কী থাকবে চুক্তিতে?
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, শুধু অর্থনৈতিক বিষয় নয়, সামরিক সহযোগিতার বিষয়াদিও থাকবে দ্বিপাক্ষিক এই চুক্তিতে৷
ছবি: picture-alliance/zumapress.com/R. Fouladi
পারস্পরিক স্বার্থ
চীন ইরানকে দেখছে নিজস্ব পণ্যের গুরুত্বপূর্ণ বাজার এবং তেলের উৎস হিসেবে৷ ইরান মনে করে, এই চুক্তির ফলে ইরানে চীনের বিনিয়োগ বাড়বে এবং দেশটির অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা অর্থনৈতিক অবরোধের চাপ কমবে৷
ছবি: Reuters/T. Peter
পারস্পরিক মিল
মানবাধিকারের প্রশ্নে চীন আর ইরান সবসময়ই সমালোচিত৷ ধারণা করা হয়, সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় চীনে, বিরোধীদের কণ্ঠরোধেও সে দেশের সরকার সবসময় তৎপর৷ সাম্প্রতিক সময়ে উইগুর মুসলমানদের ব্যাপক নির্যাতনের অভিযোগের মুখেও রয়েছে চীন৷ ইরানেও মানবাধিকার পরিস্থিতি খুব খারাপ৷ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দমন-পীড়ন সেখানে প্রায় স্বাভাবিক ঘটনা৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
চীনের প্রতি ইরানি জনগণের মনোভাব
চীনের পণ্য ইরানি শিল্পোদ্যোগকে ব্যর্থ করে দিচ্ছে৷ এছাড়া করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়ানোর জন্য চীনকে দায়ী মনে করেন অনেক ইরানী৷ ট্যুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য ও তুলনামূলক রাজনীতির সিনিয়র প্রভাষক আলী ফাতোল্লাহ-নেজাদ মনে করেন, এসব কারণে চীনের সঙ্গে চুক্তিকে ইরানের জনগণের বড় একটা অংশ ভালো চোখে না-ও দেখতে পারে৷ এর ফলে ইরান সরকারের সঙ্গে জনগণের সম্পর্কের অবনতি হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. A. Clary
5 ছবি1 | 5
আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জাভেদ জারিফ বলেছেন, ইরানে সন্ত্রাস চালাচ্ছে ইসরায়েল। পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যার ঘটনার পিছনেও তারাই রয়েছে। অথচ পৃথিবীর সমস্ত দেশ চুপ। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলি কখনো কোনো কথা বলে না। ইরানের জমিতে তারা বিনা বাধায় একের পর এক সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারে। এরপরেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির বিরুদ্ধে সরব হন জাভেদ। বলেন, এই পরিস্থিতিতে মধ্য প্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলিকে স্থির করতে হবে ইসরায়েলের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তারা ইরানের পাশে থাকবে কি না। মুখে না বললেও জাভেদ বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি সাম্প্রতিক কয়েকটি চুক্তির বিষয়ে কথা বলছেন। সম্প্রতি আরব আমিরাত এবং বাহারিন ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছে। সে বিষয়টি নিয়েই সতর্ক করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আরো একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন জাভেদ। অ্যামেরিকা তাদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা না তুললে তারা কোনো ভাবেই মাথা নত করবে না। ডনাল্ড ট্রাম্পের পরে জো বাইডেন ইরান নীতি বদলাতে পারেন বলে মনে করছেন বহু বিশেষজ্ঞ। কিন্তু জাভেদের বক্তব্য, অ্যামেরিকার কোনো কথা শুনতেই তারা রাজি নয়। একমাত্র অ্যামেরিকা নিষেধাজ্ঞা তুললে, তাহলেই কথা হতে পারে।
বস্তুত, পরমাণু বিজ্ঞানীর হত্যার পরে ইরানের সংসদ একটি আইন তৈরি করেছে। যাতে দেশে ইউরেনিয়াম মজুত বহু গুণ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। ইরান বুঝিয়ে দিয়েছে, এখন আর তারা কারো কথা শুনবে না। অ্যামেরিকা নীতি না বদলালে তারা পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করবে বলেও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে।