ইসরায়েলের সংস্থার সঙ্গে এ বার সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোম্পানির চুক্তি হলো। কোভিড ১৯ নিয়ে গবেষণা ও ভাইসার পরীক্ষার যন্ত্র তৈরি নিয়ে চুক্তি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
দিন কয়েক আগেই ইসারায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ঐতিহাসিক চুক্তির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। যে চুক্তির ফলে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হবে। তার দিন কয়েকের মধ্যেই আমিরাতের ন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে ইসরায়েলের টেরা গ্রুপের চুক্তি হলো। আমিরাতের সরকারি সংবাদসংস্থা এই খবর দিয়েছে।
এই চুক্তির মধ্যে দিয়েই আমিরাতের সঙ্গে ইসরায়েলের বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কার্যকর সহযোগিতাও শুরু হলো বলে জানিয়েছেন আমিরাতের সংস্থার চেয়ারম্যান খলিফা ইউসেফ খাউরি। তাঁর দাবি, এর ফলে করোনা ভাইরাস নিয়ে গবেষণার কাজ আরো শক্তিশালী হবে এবং মানবতা উপকৃত হবে।
এই চুক্তি সই হয়েছে আবু ধাবিতে। গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েল এবং আমিরাত ঘোষণা করে, অ্যামেরিকার উদ্যোগে তারা একটি ঐতিহাসিক চুক্তিতে সই করছে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হবে। তবে ইজরায়েলকেও গাজা ভূখণ্ডের কিছু এলাকা দখলের পরিকল্পনা ছাড়তে হবে।
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার যত চেষ্টা
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা চালিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷ কিন্তু এসেছে কি শান্তি?
জাতিসংঘ রেজ্যুলেশন ১৯৬৭
১৯৬৭ সালে ছয়দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা দখল করে ইসরায়েল৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সে বছরের ২২ নভেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘রেজ্যুলেশন ২৪২’ নামে একটি প্রস্তাব পাস হয়৷ প্রস্তাবে দখলকৃত ফিলিস্তিনি এলাকা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/Keystone
ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি ১৯৭৮
মিশর ও সিরিয়ার নেতৃত্বে আরব রাষ্ট্রগুলো ১৯৭৩ সালে আবারো ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়৷ এ যুদ্ধের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে বিশ্ব নেতারা৷ তাদের চেষ্টায় ১৯৭৮ সালে ১২ দিন আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবকাশ যাপন কেন্দ্র ক্যাম্প ডেভিডে এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়৷ এ চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির ভিত হিসিবে বিবেচনা করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Daugherty
মাদ্রিদ কনফারেন্স ১৯৯১
ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিষয়ে ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেতৃত্বে স্পেনের মাদ্রিদে এ কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে আরো অংশ নেয় ইসরায়েল, জর্ডান, লেবানান, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন৷ এ কনফারেন্সের তাৎক্ষণিক কোন ফলাফল আসেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Hollander
অসলো অ্যাকর্ড ১৯৯৩
১৯৯৩ সালে নরওয়ের অসলোতে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি আলোচনায় বসে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন৷ আলোচনার পরবর্তী ধাপে এ দু’দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যা অসলো চুক্তি নামে পরিচিত৷ চুক্তিতে বলা হয় যে, পশ্চিম তীর থেকে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করবে ইসরায়েল৷ পাঁচ বছরের জন্য ফিলিস্তিনকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের অনুমতিও দেয় এ চুক্তি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Sachs
আরব পিস ইনিশিয়েটিভ ২০০২
২০০২ সালে আরব লিগের নেতারা লেবাননের বৈরুতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি পরিকল্পনার একটি প্রস্তাব পাস করেন৷ প্রস্তাবনায় ইসরায়েলকে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ চলাকালীন দখলকৃত সব জায়গা ত্যাগ করতে বলা হয়, যেন পশ্চিম তীরে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে তোলা যায়৷ বিনিময়ে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/C. Kealy
রোডম্যাপ ২০০৩
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া জাতিসংঘের সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির রোডম্যাপ নামে পরিকল্পনার প্রস্তাব দেয়৷ ২০০৫ সালের মধ্যে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল দুইটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয় এই রোডম্যাপে৷
ছবি: Getty Iamges/AFP/J. Aruri
সংঘর্ষ, অস্ত্র বিরতির চেষ্টা
২০১২ সালের শেষ দিকে গাজায় দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়তে থাকে৷ এ সময় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি অস্ত্র বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ ২০১৪ সালে ইসরায়েলি এক তরুণ নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনে সামরিক অভিযান চালালে পরিস্থিতি আবারো খারাপ হতে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্যারিস সম্মেলন ২০১৭
২০১৭ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন বিষয়ে আলোচনা করতে ৭০টি দেশের প্রতিনিধিরা প্যারিসে একত্রিত হয়৷ তবে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের কোনো প্রতিনিধিই এ আলোচনায় অংশ নেয়নি৷
ছবি: Reuters/T. Samson
ট্রাম্পের শান্তি আলোচনা
প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়ে শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এতে বলা হয় পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন বন্ধ রাখবে ইসরায়েল, তবে ইতোমধ্যে অধিকৃত সকল স্থাপনায় তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে৷ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিন৷
ছবি: Reuters/M. Salem
9 ছবি1 | 9
এরপর গত রোববার দুই দেশের বিদেশমন্ত্রীরা ফোনে কথা বলেছেন। আমিরাত এই প্রথম ইসরায়েলের সঙ্গে টেলিফোন সংযোগ চালু করল। দুই বিদেশমন্ত্রী ঐতিহাসিক চুক্তির জন্য শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। তাঁরা খুব তাড়াতাড়ি সাক্ষাতে আলোচনা করবেন বলেও ঠিক হয়েছে।
দুই দেশের তরফে একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরায়েল অবিলম্বে নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াবে। তারা করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বের করারও চেষ্টা করবে। আগামী সপ্তাহে দুই দেশের প্রতিনিধিরা মিলিত হয়ে বিনিয়োগ, পর্যটন, সরাসরি বিমান চালানো, নিরাপত্তা, টেলি যোগাযোগ ও অন্য বিষয়ে কথা বলবেন।
মিশর ও জর্ডনের পর আমিরাতই হলো আরব দুনিয়ায় তৃতীয় দেশ যারা ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করল।