ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের দ্বিজাতি সমাধানের পক্ষে বাইডেন
২২ মে ২০২১
ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির পর ‘এটাই একমাত্র সমাধান' বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন৷ পাশাপাশি বিধ্বস্ত গাজা পুনর্গঠনে বড় আকারের সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘ ১১ দিনের টানা সংঘাতের পর শুক্রবার যুদ্ধবিরতিতে যায় ইসরায়েল সেনাবাহিনী ও ফিলিস্তিনের হামাস৷ যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় শনিবার থেকে পৌঁছাতে শুরু করেছে সাহায্য৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আশ্বাস দিয়েছেন, গাজাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে তিনি সাহায্য করবেন৷
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে বাইডেন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের জন্য বড় আকারের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন৷ তবে এই সাহায্য গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা হামাসের কাছে নয়, পাঠানো হবে ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীর কর্তৃপক্ষের কাছে৷
গত ১১ দিনের সংঘর্ষে গাজা উপত্যকার বহু বাড়ি ধ্বংস হয়েছে ইসরায়েলি বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায়৷ ইসরায়েলে অব্যাহত রকেট ছোঁড়ে হামাসও৷
ক্ষয়ক্ষতি কতটা, দেখছেন মানুষ
যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হতেই গাজার হাজার হাজার বাসিন্দা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন ক্ষয়ক্ষতিখোঁজ নিতে৷ তারা ভেঙে পড়া বাড়িঘর, পাড়াপ্রতিবেশীর খোঁজ নেন৷ সাগরের পাশে গিয়ে মৃতদের দাফন করেন৷
সব মিলিয়ে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৪৮জন, যার মধ্যে রয়েছে ৬৬ শিশু৷ আহত হয়েছেন এক হাজার ৯৪৮জন, জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷ মৃতদের মধ্যে অনেকে যোদ্ধাও ছিলেন৷
ইসরায়েলে ১২জন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে একটি শিশু৷
শুক্রবার থেকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে ইসরায়েলে কিন্তু জেরুসালেমে এখনও চলছে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ৷
হামাসের উত্থান ও কার্যক্রম
২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে হামাস৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বেশিরভাগ দেশের কাছে তারা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচিত৷ তবে হামাসের কিছু মিত্র দেশও রয়েছে৷
ছবি: Mohammed Abed/AFP/Getty Images
উত্থানপর্ব
১৯৮০-এর দশকে ইয়াসির আরাফাতের প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-র বিরোধিতায় হামাসের জন্ম৷ পিএলও-র বিরোধী শক্তি হিসেবে দাঁড় করাতে শুরুর দিকে ইসরায়েল সরকার হামাসকে অর্থ সহায়তা দিয়েছিল বলে অনেকক্ষেত্রে দাবি করা হয়৷ তবে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠায় কোনো ধরনের ভূমিকার কথা বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: Reuters/S. Salem
ইসরায়েলকে অস্বীকার
পিএলও-র মতো হামাস ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকারে বিশ্বাস করে না৷ তাদের প্রতীকে রয়েছে জেরুসালেমের ‘ডোম অব দ্য রক’৷ ইসরায়েল, গাজা ও পশ্চিম তীরকে একক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে তারা বিবেচনা করে৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
শান্তি চুক্তি প্রত্যাখ্যান
১৯৯৩ সালে ইয়াসির আরাফাত অসলো চুক্তির অধীনে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করেন, যার মধ্য দিয়ে ১৯৮৭ সালে শুরু হওয়া প্রথম ইন্তিফাদার অবসান হয়৷ হামাস এই শান্তি প্রক্রিয়া প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলে হামলা অব্যাহত রাখে৷
ছবি: J. David Ake/AFP/Getty Images
নির্বাচনে জয়
২০০৬ সালের গাজার সাধারণ নির্বাচনে হামাস পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে৷ এরপর থেকে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বে ফাতাহ-এর অধীনে রয়েছে পশ্চিম তীর আর গাজার নিয়ন্ত্রণ হামাসের হাতে৷ ২০০৮-০৯, ২০১২ ও ২০১৪ সালে ইসরায়েলি সেনার সঙ্গে হামাসের তুমুল লড়াই চলে৷
ছবি: AP
সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত
১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করে৷ ২০০৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নও তাদেরকে সন্ত্রাসী তালিকায় রাখে৷ হামাস এই বিষয়ে আদালতে চ্যালেঞ্জ করে৷ তবে আদালত তাদের আবেদন বাতিল করে৷ যুক্তরাজ্য ক্যানাডা, জাপান, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াও হামাসকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Khatib
হামাসের সহযোগী
হামাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সহযোগী কাতার৷ দেশটির আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল-থানি প্রথম রাষ্ট্রনেতা, যিনি ২০১২ সালে হামাস সরকারের সঙ্গে দেখা করেন৷ এখন পর্যন্ত দেশটি হামাসকে ১৮০ কোটি ডলার দিয়েছে৷ হামাসের প্রতি তুরস্কেরও সমর্থন রয়েছে৷ সংগঠনটির নেতা ইসমাইল হানিয়ের পক্ষে রাজনৈতিক অবস্থান রয়েছে রেচেপ তাইয়েপ-এর্দোয়ানের৷ এছাড়াও বিভিন্ন উদ্যোগ ও ফাউন্ডেশনের সহযোগিতাও পায় তারা৷
ছবি: AP
হামাসের রকেট উৎস
সবশেষ সংঘাতেও ইসরায়েলের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন শতাধিক রকেট ছুঁড়েছে হামাস৷ দীর্ঘদিন হামাস রকেটের জন্য ইরানের উপর নির্ভরশীল ছিল৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুদান ও মিশর হয়ে সেখান থেকে অস্ত্র চোরাচালান হতো৷ তবে বর্তমানে গাজাতেই হামাস রকেট বানাচ্ছে বলেও ধারণা করা হয়৷
ছবি: Mohammed Abed/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
বাইডেন যা বললেন
শুক্রবার ইসরায়েলকে উদ্দেশ্য করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন জেরুসালেমে ‘আন্তঃগোষ্ঠী লড়াই' বন্ধ হওয়া উচিত৷
তিনি আরো বলেন, ‘‘ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রশ্নে আমার দায়বদ্ধতার কোনো বদল হবে না৷'' যতক্ষণ না পর্যন্ত ইসরায়েলের অস্তিত্বকে ‘সর্বাত্মকভাবে' এই অঞ্চলে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না'৷ বাইডেন শুক্রবারের বক্তব্যে বলেন, বর্তমান যুদ্ধবিরতি বজায় থাকুক, তিনি সেই ‘প্রার্থনা' করেন৷
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের দ্বিজাতিভিত্তিক সমাধান নিয়ে বহুবছর ধরেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে৷ সবশেষ সংঘাতের পর সমাধানটি নিয়ে আবার নতুন করে কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ৷
এর আগে দ্ব্যর্থহীনভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন দেয়া এবং ফিলিস্তিনিদের অগ্রাহ্য করায় ডনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে মার্কিন নীতি সমালোচনার মুখে পড়ে৷