ইসরায়েল বলছে, লেবাননে আক্রমণের পরিকল্পনা তৈরি। তুরস্ক লেবাননের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি এই যুদ্ধ চায় না।
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা লেবাননে হেজবোল্লাহর মোকাবিলায় প্রস্তুত। লেবাননে আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে ও বৈধতা পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিয়েছে তাদের দুই মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি।
লেবাননকে সমর্থন করে তুরস্ক আঞ্চলিক শক্তিগুলির কাছে আবেদন জানিয়েছে, তারাও যেন একইভাবে লেবাননের পাশে দাঁড়ায়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা মার্টিন গ্রিফিথস বলেছেন, ''যুদ্ধের পরিধি ও তীব্রতা বাড়লে তার ফল মারাত্মক হবে। আমি এটাকে ফ্ল্যাশ পয়েন্ট হিসাবে দেখছি।"
গত সাত অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের ভিতরে ঢুকে আক্রমণ করার পর থেকে ইরান সমর্থিত হেজবোল্লাহের সঙ্গে ইসরায়েলের সেনার নিয়মিত সংঘাত চলছে। হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল-সহ কয়েকটি দেশ।
তুরস্ক যা বলেছে
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ''ইসরায়েল যদি লেবানন আক্রমণ করে, তাহলে পুরো এলাকায় যুদ্ধ ছড়াবে।''
এর্দোয়ান বলেছেন, ''ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহুর যুদ্ধ ছড়ানোর পরিকল্পনা বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে। পশ্চিমা বিশ্ব যেভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করছে, সেটাও দুঃখজনক। লেবানন ও সেদেশের মানুষের পাশে দাঁড়াবে তুরস্ক। আমি ওই অঞ্চলের সব দেশের কাছে আবেদন করছি, তারাও যেন লেবাননের পাশে দাঁড়ায়।"
ইসরায়েল-হেজবোল্লাহের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে
লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে দেড় লাখ মানুয ঘরছাড়া। হেজবোল্লাহ ও ইসরায়েলের সেনার মধ্যে লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়েছে।
ছবি: AFP
সংঘাত তীব্র হয়েছে
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহের মধ্যে লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়েছে। ইসরায়েলের সেনার হাতে তাদের দুইজন কম্যান্ডোর মৃত্যুর পর হেজবোল্লাহ ইসরায়েলে ১৬০টি রকেট ছোড়ে। গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। তারপর থেকে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে উত্তেজনা তুঙ্গে। হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল-সহ বেশ কিছু দেশ।
ছবি: Ayal Margolin/JINI/XinHua/picture alliance
হেজবোল্লাহ ও ইসরায়েল
লেবাননের খুবই প্রভাবশালী গোষ্ঠী হলো হেজবোল্লাহ। লেবাননের রাজনীতি ও সমাজের উপর তাদের প্রভাব রয়েছে। হেজবোল্লাহ ইসরায়েলকে শত্রু বলে মনে করে। ১৯৯৬ ও ২০০৬ সালে হেজবোল্লাহ ও ইসরায়েল যুদ্ধ করেছে। একে অন্যের জায়গায় তারা আক্রমণ ও প্রতি-আক্রমণ করতে থাকে। এর ফলে প্রচুর মানুষ মারা গেছেন। উপরের ছবিতে হেজবোল্লাহের ছোড়া রকেটে ইসরায়েলে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি।
ছবি: Ayal Margolin/JINI/Xinhua/picture alliance
আবার পুরোদস্তুর যুদ্ধের আশঙ্কা
গতবছর ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে ঢুকে আক্রমণ করার পর থেকে ইসরায়েলের সেনা ও হেজবোল্লাহের মধ্যে আক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে এবং তা আরো তীব্র হয়েছে। এর ফলে পুরোদস্তুর যুদ্ধের আশঙ্কাও বাড়ছে। চলতি মাসে করা সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইসরায়েলের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, হেজবোল্লাহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হওয়া উচিত। উপরের ছবিতে লেবানন সীমান্তে উড়ছে ইসরায়েলের এফ ১৫ যুদ্ধবিমান।
ছবি: Ariel Schalit/AP Photo/picture alliance
যুদ্ধ কি হতে পারে?
গাজায় লড়াই বন্ধ করার জন্য এখন আন্তর্জাতিক স্তরে চেষ্টা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এই অবস্থায় ইসরায়েল যদি গাজার পাশাপাশি আরেকটি ফ্রন্টে যুদ্ধ শুরু করে তাহলে তা তাদের পক্ষে কৌশলগতভাবে ভালো হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাদের মতে, হেজবোল্লাহ হামাসের থেকে বেশি প্রশিক্ষিত ও তাদের হাতে আরো ভালো অস্ত্রশস্ত্র আছে।
ছবি: Francisco Seco/AP/picture alliance
লেবাননের অবস্থা
বেশ কিছু বছর ধরে লেবাননে আর্থিক ও রাজনৈতিক সংকট চলছে। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়তে হচ্ছে লেবাননকে। ফলে হেজবোল্লাহ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ুক, তা লেবাননের মানুষ চাইবেন না।
ছবি: Fadel Itani/NurPhoto/picture alliance
দুই পক্ষের ক্ষয়ক্ষতি
লেবাননের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলের হামলার ফলে ৮৮জন সাধারণ মানুষ-সহ ৩৭৫ জন মারা গেছেন। আর ইসরায়েলের হিসাব, তাদের ১৮ জন সেনা ও ১০ জন সাধারণ মানুষ হেজবোল্লাহের আক্রমণে মারা গেছেন।
ছবি: Ali Hashisho/XInhua/picture alliance
ঘরছাড়া মানুষ
লেবাননে সীমান্তের কাছের এলাকা থেকে প্রায় এক লাখ মানুষ ঘরছাড়া। তারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। ইসরায়েলের ৬০ হাজার মানুষও ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকছেন। সীমান্তের কাছের এলাকায় সমানে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ছে। ফলে সেখানে থাকা একেবারেই নিরাপদ নয়।
ছবি: AFP
7 ছবি1 | 7
অ্যামেরিকা ও জার্মানি সাবধান করলো
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক বুধবার বলেছেন, ''আরেকটি যুদ্ধ মানে আঞ্চলিক সংঘাতের সম্ভাবনা অভাবনীয়ভাবে বেড়ে যাওয়া।''
বেয়ারবক মঙ্গলবার ইসরায়েল ও লেবাননের নেতাদের সঙ্গে দেখাও করেছেন। তিনি সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে যুদ্ধ হলে বিপদ বাড়বে।
বেয়ারবকে জানিয়েছেন, ''এই যুদ্ধ যাতে না হয়, সেটা আমাদের দেখতে হবে। এখনই দুই দেশের মধ্যে আক্রমণ বাড়ছে। দুই দেশেরই মানুষের বড় অংশ যুদ্ধ চান না।''
মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন ওয়াশিংটনে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বলেছেন, ''ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহের মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ মানে তা আঞ্চলিক যুদ্ধের আকার নেবে। কূটনৈতিক পথেই এই উত্তেজনা কমাতে হবে।''
জার্মান নাগরিকদের লেবানন ছাড়ার নির্দেশ
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সব জার্মান নাগরিককে লেবানন চেড়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেছে। বুধবার তারা জানিয়েছে, ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। পশ্চিমা দেশগুলির নাগরিকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আক্রমণের সম্ভাবনাও বাড়ছে। তাই মন্ত্রণালয় সব জার্মান নাগরিককে সতর্ক করে দিচ্ছে।