ইসরায়েল সমর্থকদের ওপর হামলায় নেদারল্যান্ডসে পাঁচজনের সাজা
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম শহরের একটি আদালত ইসরায়েলি ফুটবল ক্লাব মাকাবি তেল আবিব সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচজনকে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আমস্টারডামে গত ৭ নভেম্বর ইউরোপা লিগের একটি ম্যাচ চলাকালে মাকাবি তেল আবিবের পাঁচজন সমর্থক হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। হামলার আগে মাকাবি সমর্থকরা আরব-বিরোধী স্লোগান দেন, একটি ট্যাক্সি ভাঙচুর করেন এবং একটি ফিলিস্তিনি পতাকা পোড়ান বলে অভিযোগ৷
এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত সেফা ও. ছয় মাসের কারাদণ্ড পেয়েছেন। ফুটেজে দেখা গেছে, তিনি মাটিতে পড়ে থাকা ব্যক্তিদের মারধর করছেন। আদালত তাকে ঘটনাটির ‘প্রধান ভূমিকা পালনকারী' হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এছাড়া ২৪ বছর বয়সি উমুতকান এ. এক মাকাবি সমর্থককে আক্রমণ এবং তার স্কার্ফ ছিনিয়ে নেওয়ার দায়ে এক মাসের কারাদণ্ড পেয়েছেন। অন্য আরেকজনকে দুই মাসেরও বেশি কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং একজনকে ১০০ ঘণ্টা কমিউনিটি সার্ভিসের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
আরেক অভিযুক্ত, আবুশাবাব এম., যিনি গাজা উপত্যকায় বড় হয়েছেন, তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। তবে তার মামলাটি মানসিক স্বাস্থ্য পর্যালোচনার জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। প্রসিকিউশন জানায়, গাজার পরিস্থিতি এই ঘটনার পেছনে প্রভাব ফেলেছে। কারণ, এই সহিংসতার সঙ্গে ফুটবলের কোনো সম্পর্ক নেই৷ এ ঘটনায় আরো ছয় জনের বিচার অপেক্ষমাণ, যাদের মধ্যে তিনজন নাবালক।
টিআই/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ, ইএফই)
আদালতে বিচারপ্রার্থীদের যত দুর্ভোগ
আদালত অঙ্গনে গিয়ে বিচারপ্রার্থীদের অভিজ্ঞতার কথা শুনেছে ডয়চে ভেলে৷ তাদের নানা ধরনের দুর্ভোগের কথা থাকছে ছবিঘরে...
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
সন্তানের জন্য মায়ের সংগ্রাম
সাভারের অ্যানি আক্তার তার মেয়ে রাবিয়া বুসরিকে নিয়ে তিন মাসে একবার ঢাকার আদালতে আসেন সন্তানের ভরণপোষণের টাকা নিতে। রাবিয়ার বাবার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আদালতের মাধ্যমে মাসিক তিন হাজার টাকা ভরণপোষণের জন্য নির্ধারিত হলেও সেই টাকা তুলতে ঢাকায় যাতায়াত ও অন্যান্য কাজে প্রায় দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। বাকি টাকায় মেয়ের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন অ্যানি। তবুও মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য অ্যানি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
ছবি: Abdul Goni
শারমিনের অভিজ্ঞতা
ঢাকার মিরপুরের শারমিন আক্তার। তার ভাই ইব্রাহিম সরকার পালিয়ে একটি মেয়েকে বিয়ে করেন। ইব্রাহিম ও শারমিনের বিরুদ্ধে ওই মেয়েটির বাবা ধর্ষণ মামলা করেছেন। সেই মামলায় শারমিন ছয় মাস জেলও খেটেছেন। একজন নারী হওয়া সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দেয়ায় তিনি বিস্মিত ও হতাশ৷ ন্যায় বিচারের আশায় তাকে প্রতি মাসেই আদালতে আসতে হয়। শারমিন জানালেন, মামলার পেছনে তার অনেক টাকাও খরচ হয়েছে।
ছবি: Abdul Goni
বিগত সরকারের আমলের মামলার কারণে আদালতে আসা-যাওয়া
কৃষক দলের সদস্য হারুনুর রশিদ সুমন। রাজনীতির কারণে বিগত সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা হয়েছে। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর অনেকের মামলা প্রত্যাহার করা হলেও সুমনের মামলাগুলো আগের মতোই আছে। কিভাবে মামলা প্রত্যাহার হবে, কার কাছে যাবেন, কাকে ধরলে কাজ হবে জানেন না তিনি। তারপরও মামলা প্রত্যাহার হবে এমন আশায় প্রতিদিনই আসছেন পুরনো ঢাকার কোর্টে।
ছবি: Abdul Goni
ছেলেকে নিয়ে আদালতে
ছেলে আলামিন শুভর স্ত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ছেলের কারণে গত দুই বছর ধরে আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন আব্দুর রাজ্জাক। তার দাবি, স্বামীর সঙ্গে অভিমান করে শুভর স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু শুভর স্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা প্রভাবশালী হওয়ায় হত্যা মামলা করেছে। সেই মামলায় জেল খেটেছে শুভ। এখন প্রতিনিয়তই হাজিরা দিতে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আসেন আব্দুর রাজ্জাক।
ছবি: Abdul Goni
মামলার নিষ্পত্তিতে ধীর গতি
মামলা নিষ্পত্তিতে অনেক সময় লাগছে বলে মনে করেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি খুরশিদ মিয়া আলম। বর্তমান সরকারের কাছে মানুষের যে প্রত্যাশা, সেই গতিতে মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না বলেই মত তার। তিনি বলেন, লাখ লাখ রাজনৈতিক মামলা ছিল। সেগুলোর নিষ্পত্তি হচ্ছে কিছু কিছু। কিছু মামলা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। ঘন ঘন জজদের বদলিতেও বিচার কিছুটা বিঘ্ন হচ্ছে। বিচারপ্রার্থীদের ন্যায় বিচার, সুবিচার পেতে সময় লাগছে।
ছবি: Abdul Goni
‘নারী নির্যাতন-মাদকসহ অন্যান্য মামলায় প্রশাসনের নজর কম’
অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাসে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে মনে করেন আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন। তার মতে, ‘‘উল্টো দুর্ভোগ বেড়েছে। রাজনৈতিক মামলার কারণে নারী-মাদকসহ স্বাভাবিক সময়ে যে মামলাগুলো হয়, সেগুলো হচ্ছে না। এসব মামলার দিকে প্রশাসন নজর দিতেও পারছে না। প্রশাসনকে অস্থির মনে হচ্ছে। এই সরকারের আমলে ন্যায় বিচারের প্রত্যাশা ছিল, সেটা পূরণ হচ্ছে না।’’
ছবি: Privat
আদালতেও বৈষম্য
আদালতেও এক ধরনের বৈষম্য হচ্ছে বলে মনে করেন আইনজীবী আমিনুল গনি টিটো। তার মতে, রাজনৈতিক মামলা কিছুটা কমলেও অন্যান্য মামলা আগের মতোই আছে। আদালতে বিচারপ্রার্থী বা আইনজীবীদের ওপর হামলার ঘটনায় এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘আগে কিন্তু আইনজীবীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেনি। এই পরিস্থিতিতে আইনজীবীরা আদালতে দাঁড়াতে ভয় পাচ্ছেন। এভাবে তো আদালত চলতে পারে না।’’
ছবি: Privat
‘সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ আগের মতোই’
আগে জজ সাহেবরা অনেক বেশি চাপে থাকতেন বলে মনে করেন আইনজীবী তরিকুল ইসলাম। এখন জজ সাহেবদের উপর সেই চাপ নেই। পরিস্থিতিতে এক ধরনের ইতিবাচক গতি এসেছে। তবে তিনি মনে করেন, সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ আগের মতোই আছে। এখন একজন বিচারপ্রার্থী এক বছর পর একটি ডেট পান। সেদিনও যদি শুনানি না হয় তাহলে তারা তো হতাশ হবেনই।
ছবি: Privat
ন্যায় বিচারের আশায়
তিন সন্তানকে নিয়ে কেরানীগঞ্জের পলি আক্তারের এখন দিন কাটছে থানা আর আদালতের বারান্দায়। ন্যায়বিচারের আশায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আদালতেই থাকছেন। তার স্বামী মো. কবির তার দেখাশোনা করে না। কিস্তিতে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে একটি গাড়ি কিনে দিয়েছিলেন পলি। সেই গাড়ি নিয়ে কবির তাকে ছেড়ে চলে যায়। এখন স্বামীর বিচার চেয়ে ঘুরছেন আদালতের দরোজায়।