২০১৪ সালের পর গাজায় মঙ্গলবার ভয়াবহ সংঘাত শুরু হয়েছিল ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনীদের মধ্য৷ এর প্রেক্ষিতে অস্ত্র বিরতির ঘোষণা এলেও পরিস্থিতি এখনো শান্ত হয়নি৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার সকালে দু' পক্ষ অস্ত্র বিরতিতে সম্মত হয়৷ হামাস বলছে মিশর এবং জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় তারা এই অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে৷ তবে তা তখনই কার্যকর হবে, যখন ইসরায়েলের পক্ষ থেকেও একই সংকেত পাওয়া যাবে৷
তবে হামাসের পক্ষ থেকে বক্তব্য জানা গেলেও ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷ কেবল ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিগদোর লিবারম্যান জানিয়েছেন, আজ রাতে এ বিষয়ে আলোচনা হবে৷ অবশ্য মঙ্গলবার অস্ত্রবিরতির ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব জানিয়েছিলেন তিনি৷
এই সংঘাত কয়েক শতাব্দী প্রাচীন৷ কিন্তু এ বছর কিছু ঘটনা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার সংঘাতকে আরো উস্কে দিয়েছে, যার ফলে গাজা উপত্যকায় উত্তাপ বিরাজ করছে৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
ঝরলো প্রাণ আরো তিন ফিলিস্তিনির
গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে আরো তিন জন ফিলিস্তিন নিহত হয়েছেন৷ ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এটিই সংঘাতের সর্বশেষ ঘটনা৷ গত মার্চ থেকেই ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের ওপর বার বার গুলি চালিয়েছে, যার কঠোর সমালোচনা করে আসছে জাতিসংঘ৷
ছবি: Imago/Zuma/A. Amra
ফেব্রুয়ারি ২০১৮: সীমান্তে বোমা
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সীমান্তে বোমা বিস্ফোরণে চার ইসরায়েলি সেনা আহত হন৷ইসরায়েল ফিলিস্তিনের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হামাসকে এর জন্য দায়ী করে গাজায় হামাসকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
জাতিসংঘের ত্রাণকার্য
জাতিসংঘ গাজা উপত্যকার অর্ধেকেরও বেশি মানুষের জন্য ত্রাণ সরবরাহ করে৷ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তারা সতর্ক করে যে, গাজায় দুর্ভিক্ষ হানা দিতে পারে৷ যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থায় তাদের প্রদেয় সংস্থান বন্ধ করে দেয়, যেন সমস্যা সমাধানে ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করে৷ পরে ত্রাণ সংস্থাটি বলে, জুলাই পর্যন্ত রসদ আছে তাদের কাছে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/S. Jarar'Ah
ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রীর সফর
পশ্চিমতীর ভিত্তিক ফাতাহ গ্রুপের ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী রামি হামদাল্লাহ’র নেতৃত্বে একটি দল গত ১৩ মার্চ গাজা সফর করেন৷ গাজায় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য হামাসকে দুষছে ফিলিস্তিনি সরকার৷ জবাবে হামাস বলেছে, এ ধরনের মন্তব্য গাজা ও পশ্চিমতীরের মধ্যে একতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
ইসরায়েলে আবারো বিমান হামলা
১৮ মার্চ গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে বোমা বিস্ফোরণে কেউ আহত না হলেও ইসরায়েল এই সুযোগে আরেক দফা বোমা হামলা চালায় গাজায়৷ হামাসের সুড়ঙ্গগুলোকে ধ্বংস করাই এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল৷ বোমা হামলার কারণে বাস্তুচ্যুত অনেক ফিলিস্তিনি ঘটনার পরের কয়েকদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত সীমানা দিয়ে ইসরায়েলে চলে যান৷
ছবি: Reuters/I. A. Mustafa
সীমান্তে বিক্ষোভের ঘোষণা
গাজা উপত্যকায় একটি শান্তিপূর্ণ মিছিলের ঘোষণা দেন ফিলিস্তিনিরা৷ তাঁরা পালিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমিতে ফিরে আসার অধিকার দেয়ার দাবি জানান৷ ইসরায়েল সেই দাবি মেনে নেয়নি৷
ইসরায়েল দাবি মেনে না নেয়ায় গত ৩০ মার্চ ল্যান্ড ডে’কে সামনে রেখে সীমান্তের দিকে প্রায় ত্রিশ হাজার ফিলিস্তিনি এগোতে থাকেন৷ কেউ কেউ সীমান্ত বেড়ার দিকে এগিয়ে যান৷ ইসরায়েলের সীমান্তরক্ষীরা তাঁদের ওপর গুলিবর্ষণ করলে ১৬ জন নিহত হন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Hams
আবারো সীমান্তে প্রতিবাদ
৬ এপ্রিল পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে এক সাংবাদিক নিহত হন৷ সেদিন মোট নয় ফিলিস্তিনি গুলিবিদ্ধ হন৷
ছবি: Reuters/I. A. Mustafa
আমরা আঘাত করবো: নেতানিয়াহু
গত ৯ এপ্রিল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, ‘‘আমাদের পরিষ্কার কথা, কেউ আমাদের আক্রমণ করবে মনে হলে, আমরা তা মেনে নেবো না৷ আমরা তাদের আঘাত করবো৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/G. Tibbon
তৃতীয়বারের মতো প্রতিবাদ
১৩ এপ্রিল তৃতীয়বারের মতো প্রতিবাদে সীমান্তে জড়ো হন ফিলিস্তিনিরা৷ ৩০ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৪৫ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Salem
ইসরায়েলি সেনাদের গুলি
ফিলিস্তিনিদের ইট পাটকেলের জবাব টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ছাড়াও গুলিবর্ষণ করে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা৷ এ নিয়ে জাতিসংঘ ব্যাপক সমালোচনা করলেও তা কানে তোলেনি তারা৷ নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি তোলা হলেও কাজ হয়নি৷
ছবি: Reuters/I.A. Mustafa
11 ছবি1 | 11
এরপর গত দুই দিন হামাস এবং ইসলামিক জিহাদ ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চল লক্ষ্য করে অন্তত ৪৬০টি রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে৷ এতে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ২৭ জন আহত হয়৷ তবে একটি রকেট পশ্চিমতীরে আঘাত হানলে একজন ফিলিস্তিনী নিহত হন৷
হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েল যুদ্ধবিমান গাজা উপত্যকার অন্তত ১৬০ টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে৷ একটি রকেট আঘাত হানে হামাসের আসকা টেলিভিশন কেন্দ্রে এবং তাদের নিরাপত্তা সদরদপ্তরে৷ নিহত হয় ৭ জন৷