ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহের মধ্যে সংঘাত গত কয়েক সপ্তাহে বেড়েছে। এই সময় সীমান্তের মানুষ কীভাবে জীবন কাটাচ্ছেন?
বিজ্ঞাপন
উত্তর ইসরায়েলের কিরিয়াট শামোনা শহর থেকে বরফে ঢাকা মাউন্ট হারমনের দৃশ্য বড়ই সুন্দর। কিন্তু গত তিন মাসে খুব বেশি মানুষ এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছেন না।
কারণ, গত তিন মাস ধরে এই জনপদ রীতিমতো ভুতুড়ে শহরের চেহারা নিয়েছে। খালি রাস্তা। এক-দুটো বাদে সব দোকান বন্ধ। নিঃস্তব্ধ শহর মাঝেমধ্যে কেঁপে উঠছে বিস্ফোরণের প্রবল শব্দে।
এই শহর হলো ইসরায়েল ও লেবানন সীমান্তের কাছে। হেজবোল্লাহের সামরিক ঘাঁটি এখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে।
পুরসভার এমার্জেন্সি টিমের সদস্য ওরিয়েল ফ্রিশ বলছিলেন, ''অ্যালার্টের শব্দ শোনার পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে আমাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হচ্ছে। তারপরই আমরা বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। অনেক সময় বিস্ফোরণের শব্দের পর অ্য়ালার্টের শব্দ কানে আসছে। আমি যদি গাড়ি চালাই, তাহলে যে কোনো সময় আঘাত লাগতে পারে।''
স্বাভাবিক সময়ে এই শহরে ২৩ হাজার মানুষ বাস করেন। কিন্তু হামাস যখন গাজার কাছে ইসরায়েলের শহর আক্রমণ করলো, তারপর সরকার সীমান্তের সাড়ে তিন কিলোমিটারের মধ্যে থাকা শহর ও গ্রাম খালি করার নির্দেশ দেয়।
তারপর ইসরায়েলের সীমান্ত এলাকা থেকে ৫০ হাজার মানুষ চলে গেছেন। সেনার হিসাব ৩৫ হাজার জনকে মধ্য ইসরায়েলে পুনর্বাসন দেয়া হয়েছে।
হেজবোল্লাহর পরিচয়
লেবাননের ইরান সমর্থিত আধাসামরিক গোষ্ঠী হেজবোল্লাহ৷ তাদের একটি রাজনৈতিক দল আছে, আছে একটি সামরিক শাখাও৷ সম্প্রতি তাদের শক্তি বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Zaatari
ইতিহাস
১৯৮২ সালে ইসরায়েলের দক্ষিণ লেবানন দখলের প্রেক্ষিতে মুসলিম নেতারা মিলে হেজবোল্লাহ গড়ে তোলেন৷ হেজবোল্লাহ শব্দের অর্থ ‘আল্লাহর দল’৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাধারণ নাগরিকদের সমর্থন
দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলকে চলে যেতে বাধ্য করেছিল হেজবোল্লাহ৷ এরপর ২০০৬ সালে ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহ আরেক দফা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল৷ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ থেকে লেবাননকে রক্ষার কারণে শিয়াপন্থি হেজবোল্লাহর প্রতি সুন্নিসহ অন্য গোত্রের মানুষ ও লেবাননের সমাজে তাদের প্রতি এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Zaatari
ইরান ও সিরিয়ার সমর্থন
শুরু থেকেই দেশ দুটি হেজবোল্লাহকে সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে এসেছে৷ বর্তমানে হেজবোল্লাহর সামরিক শাখা লেবাননের সামরিক বাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী এবং সে অঞ্চলে তারা অন্যতম আধাসামরিক গোষ্ঠী হয়ে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
রাজনৈতিক শাখা
১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলা লেবাননের গৃহযুদ্ধের পর হেজবোল্লাহ রাজনীতির দিকে মনোযোগ দেয়া শুরু করে৷ হাসান নাসরাল্লাহ (ছবি) ১৯৯২ সালে হেজবোল্লাহর রাজনৈতিক অংশের নেতৃত্বে আসেন৷ বর্তমানে দেশটির শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের একটি বড় অংশ এবং খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মীয় গোত্রের সঙ্গে তাদের সখ্য গড়ে উঠেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সশস্ত্র শাখা
গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর অন্যান্য গোষ্ঠীর মতো হেজবোল্লাহ অস্ত্র ত্যাগ করেনি৷ প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির দলসহ অন্যান্য দলগুলো হেজবোল্লাহকে অস্ত্র ত্যাগের আহ্বান জানালেও তারা তা মানেনি৷ হেজবোল্লাহর যুক্তি, ইসরায়েল ও বাইরের অন্যান্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে অস্ত্র প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/AA
সন্ত্রাসী গোষ্ঠী?
যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ক্যানাডা ও আরব লিগের দেশগুলোর দৃষ্টিতে হেজবোল্লাহ একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী৷ কিন্তু যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন হেজবোল্লাহর বৈধ রাজনৈতিক শাখা ও তাদের সামরিক শাখাকে ভিন্ন চোখে দেখে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/I. Press
সিরিয়ার যুদ্ধে হেজবোল্লাহ
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে হেজবোল্লাহ৷ আসাদের টিকে থাকার পেছনে তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Syrian Central Military Media
শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা বৃদ্ধি
অনেক দিন ধরেই লেবাননকে ঘিরে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলে আসছে৷ হেজবোল্লাহর রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিবৃদ্ধি এবং সিরিয়া যুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণ লেবাননসহ অত্র অঞ্চলে শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা বাড়িয়েছে৷
ছবি: dapd
ইসরায়েলর সঙ্গে নতুন দ্বন্দ্ব?
সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নেয়ার মাধ্যমে ইরান ও হেজবোল্লাহ তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বাড়িয়েছে৷ বিষয়টিকে ইসরায়েল হুমকি হিসেবে দেখছে৷ ফলে সিরিয়ায় ইরান/হেজবোল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে বার কয়েক হামলাও করেছে ইসরায়েল৷ ইরান ও হেজবোল্লাহ সিরিয়ায় স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করুক, সেটি চায় না ইসরায়েল৷ ফলে ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহর মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ শুরুর আশংকা দেখা দিয়েছে, যেখানে ইরানও জড়িয়ে পড়তে পারে৷
ছবি: Getty Images/C. Furlong
9 ছবি1 | 9
গাজায় যুদ্ধ শুরুর তিন মাস পর এখনো এটা স্পষ্ট হয়নি, তারা কবে আবার নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারবেন? গত সপ্তাহে ইসরায়েল যুদ্ধবিমান, কামান, রকেট নিয়ে আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়েছে।
হেজবোল্লাহের সঙ্গে সংঘাত বাড়বে?
ইসরায়েলের মিডিয়ায় প্রায় প্রতিদিন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। মিডিয়া রিপোর্টে বলা হচ্ছে, হেজবোল্লাহের সঙ্গে লড়াই ঝুঁকিপূর্ণ হলেও অবশ্যম্ভাবী। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান স্থিতাবস্থা ভেঙে ইসরায়েল আগে আক্রমণ করতে পারে।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর থেকে ইসরায়েলের সেনা কখনই আর অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়তে চাইবে না।
ইসরায়েলের সেনাপ্রধান বলেছেন, ‘‘আমি জানি না, কবে উত্তরের দিকে লড়াই শুরু হবে। আমি শুধু এই টুকু বলতে পারি, গত কয়েক মাসের তুলনায় আগামী কয়েক মাসে এই সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যাবে।’’
কিরিয়াট শামোনা শহরে এখন দুই হাজারের মতো মানুষ থাকেন। তার মধ্যে একজন হলেন ফ্রিশ। তার পরিবার শহর ছেড়েছে। তিনি একটি স্কুলের প্রিন্সিপাল। এখন তিনি শহরের এমার্জেন্সি টিমের সদস্য।
ফ্রিসের ব্য়াখ্যা, এখানে যে মানুষরা ছিলেন, তারা এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছেন। অধিকাংশই হোটেলে থাকছেন। কিছু মানুষ বেসরকারি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন। বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে। গ্রামের দিকে ব্যবসা বাণিজ্য প্রায় বন্ধ, চাযের খেত এমনিই পড়ে আছে।
হামাসের সুড়ঙ্গে ইসরায়েলের আক্রমণ
ইসরায়েলের দাবি, উত্তর গাজার ভিতরে ঢুকে হামাস সুড়ঙ্গে আক্রমণ চালাচ্ছে তারা। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি দক্ষিণে পালাচ্ছেন।
ছবি: Ammar Awad/REUTERS
পালাচ্ছে মানুষ
ইসরায়েলের সেনা দাবি করেছে, উত্তর গাজা থেকে অন্তত ৫০হাজার বেসামরিক মানুষ দক্ষিণ গাজার দিকে পালিয়েছে। ইসরায়েলের সেনা তাদের পালাতে সাহায্য করেছে। ফোন করে, লিফলেট দিয়ে তাদের শহর ছাড়তে বলা হয়েছে।
ছবি: Belal Khaled/AA/picture alliance
সুড়ঙ্গের সন্ধানে সেনা
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, উত্তর গাজায় শহরের ভিতরে ঢুকে পড়েছে ইসরায়েলের সেনা। হামাসের সুড়ঙ্গ খুঁজে বার করে আক্রমণ চালাচ্ছে তারা। তারা এমন জায়গায় পৌঁছে গেছে, হামাস যা কোনোদিন কল্পনাও করতে পারেনি।
ছবি: Israeli Defense Forces/Handout via REUTERS
রকেট প্রস্তুকারকের মৃত্যু
ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসের এক গুরুত্বপূর্ণ রকেট প্রস্তুতকারক ব্যক্তি ইসরায়েলের সেনার হাতে নিহত হয়েছেন।
ছবি: Abed Khaled/AP Photo/picture alliance
উত্তর গাজায় ক্ষমতা হারিয়েছে হামাস
ইসরায়েলের দাবি, উত্তর গাজায় হামাস তার ক্ষমতা হারিয়েছে। এখনো দক্ষিণ গাজায় তারা লড়াই চালাচ্ছে। এবং সে কারণেই হাজার হাজার মানুষ উত্তর থেকে দক্ষিণের দিকে চলে যাচ্ছে। উত্তরের দখল কার্যত এখন ইসরায়েলের সেনার হাতে।
ছবি: Israel Defense Forces/Handout via REUTERS
১৩০টি সুড়ঙ্গ ধ্বংস
ইসরায়েলের সেনার দাবি, তারা উত্তর গাজায় হামাসের ১৩০টি সুড়ঙ্গ ধ্বংস করেছে। সুড়ঙ্গ অর্থাৎ, মাটির নিচে বাংকার। ইসরায়েলের দাবি, বেসামরিক বাড়ি, হাসপাতালের নিচে বাংকার বানিয়ে হামাস নিজেদের 'সন্ত্রাসী' কাজকর্ম চালাতো। সে কারণেই হামাসকে আক্রমণের সময় বহু বেসামরিক ভবনে আক্রমণ চালাতে হচ্ছে।
ছবি: Bashar Taleb/APA Images via ZUMA Press/picture alliance
বাংকারের কাঠামো
ইসরায়েলের দাবি, বাংকার গুলি ২ মিটার উঁচু এবং এক মিটার চওড়া। তার ভিতর জলের লাইন, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা সবই করা আছে। ফলে চাইলে মানুষ সেখানে টানা কিছুদিন থাকতে পারে।
ছবি: Bashar Taleb/APA Images via ZUMA Press/picture alliance
জি-৭ এর আবেদন
জি-৭ দেশগুলি ইসরায়েলের কাছে আবেদন জানিয়েছে সংঘাত-বিরতির জন্য। অ্যামেরিকার মতো তারাও বলেছে, যুদ্ধবিরতি না হোক, কৌশলগত বিরতি দিক ইসরায়েল। যাতে ওই সময়ে বেসামরিক মানুষ অন্তত ঘর থেকে পালাতে পারেন। ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা কৌশলগত বিরতি দিচ্ছে।
ছবি: Jack Guez/AFP
ইটালির হাসপাতাল জাহাজ
ইটালি গাজার কাছে সমুদ্রে একটি হাসপাতালের পরিকাঠামো যুক্ত জাহাজ পাঠিয়েছে। আহত বেসামিরক ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য ওই জাহাজ পাঠানো হয়েছে।
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
২০০৬ সালের যুদ্ধ ছয় সপ্তাহ স্থায়ী হয়েছিল। ফ্রিশের বক্তব্য, এবারের যুদ্ধ হামাসের আক্রমণের পর শুরু হয়েছে। কিন্তু এবার হেজবোল্লাহের সঙ্গে লড়াইও শুরু হয়ে যেতে পারে।
হামাসের থেকে হেজবোল্লাহ ভয়ংকর
কয়েক বছর আগে হেজবোল্লাহ একটি পরিকল্পনার কথা জানায়, যেখানে তাদের যোদ্ধারা ইসরায়েলের উত্তরের অংশ অধিকার করে নেবে। ২০১৮ সালে ইসরায়েলের সেনা জানতে পারে, হেজবোল্লাহ পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে লম্বা টানেল খুঁড়েছে, যা একেবারে ইসরায়েলের জনবসতির কাছে চলে এসেছে।
ফ্রিশ জানিয়েছেন, ইসরায়েলে বেশির ভাগ মানুষ মনে করতেন, ‘‘হেজবোল্লাহ কনোদিন আক্রমণ করবে না। কারণ, ইসরায়েল তাদের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। কিন্তু ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর সব ধারণা বদলে গেছে। হেজবোল্লাহের তুলনায় হামাস অনেক কম শক্তির ও কম প্রস্তুতি নেয়া সংগঠন। তারা ইসরায়েলকে আক্রমণ করার পর আমরা বিপদের মাত্রাটা বুঝতে পারছি।’’
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরায়েলের সেনার নর্দার্ন কম্য়ান্ডের এক অফিসার জানিয়েছেন, উত্তর ইসরায়েলের মানুষ মনে করছেন, তাদের বাড়ি ফেরাটা অবিলম্বে হবে না। হেজবোল্লাহ যতদিন সীমান্তের কাছে থাকবে, ততদিন বেসামরিক মানুষদের শহরগুলিতে ফেরা সম্ভব হবে না।
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার যত চেষ্টা
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা চালিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷ কিন্তু এসেছে কি শান্তি?
জাতিসংঘ রেজ্যুলেশন ১৯৬৭
১৯৬৭ সালে ছয়দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা দখল করে ইসরায়েল৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সে বছরের ২২ নভেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘রেজ্যুলেশন ২৪২’ নামে একটি প্রস্তাব পাস হয়৷ প্রস্তাবে দখলকৃত ফিলিস্তিনি এলাকা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/Keystone
ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি ১৯৭৮
মিশর ও সিরিয়ার নেতৃত্বে আরব রাষ্ট্রগুলো ১৯৭৩ সালে আবারো ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়৷ এ যুদ্ধের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে বিশ্ব নেতারা৷ তাদের চেষ্টায় ১৯৭৮ সালে ১২ দিন আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবকাশ যাপন কেন্দ্র ক্যাম্প ডেভিডে এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়৷ এ চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির ভিত হিসিবে বিবেচনা করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Daugherty
মাদ্রিদ কনফারেন্স ১৯৯১
ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিষয়ে ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেতৃত্বে স্পেনের মাদ্রিদে এ কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে আরো অংশ নেয় ইসরায়েল, জর্ডান, লেবানান, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন৷ এ কনফারেন্সের তাৎক্ষণিক কোন ফলাফল আসেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Hollander
অসলো অ্যাকর্ড ১৯৯৩
১৯৯৩ সালে নরওয়ের অসলোতে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি আলোচনায় বসে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন৷ আলোচনার পরবর্তী ধাপে এ দু’দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যা অসলো চুক্তি নামে পরিচিত৷ চুক্তিতে বলা হয় যে, পশ্চিম তীর থেকে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করবে ইসরায়েল৷ পাঁচ বছরের জন্য ফিলিস্তিনকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের অনুমতিও দেয় এ চুক্তি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Sachs
আরব পিস ইনিশিয়েটিভ ২০০২
২০০২ সালে আরব লিগের নেতারা লেবাননের বৈরুতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি পরিকল্পনার একটি প্রস্তাব পাস করেন৷ প্রস্তাবনায় ইসরায়েলকে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ চলাকালীন দখলকৃত সব জায়গা ত্যাগ করতে বলা হয়, যেন পশ্চিম তীরে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে তোলা যায়৷ বিনিময়ে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/C. Kealy
রোডম্যাপ ২০০৩
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া জাতিসংঘের সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির রোডম্যাপ নামে পরিকল্পনার প্রস্তাব দেয়৷ ২০০৫ সালের মধ্যে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল দুইটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয় এই রোডম্যাপে৷
ছবি: Getty Iamges/AFP/J. Aruri
সংঘর্ষ, অস্ত্র বিরতির চেষ্টা
২০১২ সালের শেষ দিকে গাজায় দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়তে থাকে৷ এ সময় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি অস্ত্র বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ ২০১৪ সালে ইসরায়েলি এক তরুণ নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনে সামরিক অভিযান চালালে পরিস্থিতি আবারো খারাপ হতে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্যারিস সম্মেলন ২০১৭
২০১৭ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন বিষয়ে আলোচনা করতে ৭০টি দেশের প্রতিনিধিরা প্যারিসে একত্রিত হয়৷ তবে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের কোনো প্রতিনিধিই এ আলোচনায় অংশ নেয়নি৷
ছবি: Reuters/T. Samson
ট্রাম্পের শান্তি আলোচনা
প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়ে শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এতে বলা হয় পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন বন্ধ রাখবে ইসরায়েল, তবে ইতোমধ্যে অধিকৃত সকল স্থাপনায় তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে৷ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিন৷
ছবি: Reuters/M. Salem
9 ছবি1 | 9
এখনো পর্যন্ত এই সীমান্তে ইসরায়েলের নয়জন সেনা ও ছয়জন বেসামরিক মানুষ মারা গেছেন। ইসরায়েলের সেনার মতে, হেজবোল্লাহের কাছে এক লাখ পঞ্চাশ হাজার অত্য়াধুনিক মিসাইল আছে।
ইয়োগেভের কাহিনি
মেইতাল ইয়োগেভ এখন সীমান্ত-শহর থেকে দূরে একটি হোটেলের দুইটি ঘর নিয়ে থাকেন। ৭ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি তার পার্টনার ও দুইটি শিশুর সঙ্গে লেবানন সীমান্তের কাছের একটি শহরে থাকতেন।
তিনি বলেছেন, ‘‘নিজের ঘরবাড়িই হলো আমাদের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। সীমান্তের কাছে থাকা সত্ত্বেও এটা মনে হয়েছে। হঠাৎ, বুঝতে পারি সেটা আর নিরাপদ নয়।’’
তার প্রথমে মনে হয়েছিল, কয়েকদিনের মধ্যে আবার নিজের বাড়িতে ফিরতে পারবেন। কিন্তু তা হয়নি। ইয়োগেভ বলছেন, ‘‘ভবিষ্যতে কী হবে তা বলতে পারছি না। কী করে জঙ্গিদের সঙ্গে চুক্তি হবে, তাও বুঝতে পারছি না। এটা ইসরায়েলের অস্তিত্বের লড়াই।’’
যুদ্ধের শুরুতেই তার পার্টনার সেনার রিজার্ভ ফোর্সে যোগ দিয়েছে। দিন পনেরো আগে তিনি বাড়ি এসেছিলেন। কিন্তু তাকে এবার উত্তর ইসরায়েলে যেতে বলা হয়েছে।
ইয়োগেভ জানিয়েছেন, ‘‘আমার আবার ভয় করছে। আমার রাগ হচ্ছে। রাজনীতিবিদদের উপর রাগ হচ্ছে। কী করে এটা থামবে? আমাদের কী হবে?’’