ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলের সেনা ও হেজডবোল্লাহ দুই পক্ষই একে অপরকে আক্রমণ করেছে। দুই তরফেই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ও মানুষ মারা গেছেন।
দক্ষিণ লেবাননের গ্রামে ইসরায়েল রাতে হামলা করে। তাতে সাতজন মারা যান। এরপর হেজবোল্লাহ ইসরায়েল সীমান্তের শহরে একের পর এত রকেট ছোড়ে। এর ফলে একজন মারা গেছেন। দুই দিকেই উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে। এই সংঘাত আরো বাড়ার আশংকা রয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় ইসরায়েল লেবাননের আরো দুইটি গ্রামে বোমা-হামলা করে এবং তাতে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ।
ইসরায়েলের দাবি
ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা লেবাননে জঙ্গিদের মোকাবিলা করছে। সেনার দাবি, তারা জঙ্গিদের লক্ষ্য করে আক্রমণ করেছে, তাতে একজন প্রধান জঙ্গি মারা গেছে। সেনার তরফ থেকে বলা হয়েছে, ''জঙ্গি গোষ্ঠী আল-জামাত আল-ইসলামিয়া গোষ্ঠীর একজন প্রধান জঙ্গিকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করা হয়েছিল। ওই জঙ্গি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আক্রমণের পিছনে ছিল। সেই জঙ্গি ও তার কিছু সঙ্গী মারা গেছে।''
হেজবোল্লাহর পরিচয়
লেবাননের ইরান সমর্থিত আধাসামরিক গোষ্ঠী হেজবোল্লাহ৷ তাদের একটি রাজনৈতিক দল আছে, আছে একটি সামরিক শাখাও৷ সম্প্রতি তাদের শক্তি বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Zaatari
ইতিহাস
১৯৮২ সালে ইসরায়েলের দক্ষিণ লেবানন দখলের প্রেক্ষিতে মুসলিম নেতারা মিলে হেজবোল্লাহ গড়ে তোলেন৷ হেজবোল্লাহ শব্দের অর্থ ‘আল্লাহর দল’৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাধারণ নাগরিকদের সমর্থন
দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলকে চলে যেতে বাধ্য করেছিল হেজবোল্লাহ৷ এরপর ২০০৬ সালে ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহ আরেক দফা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল৷ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ থেকে লেবাননকে রক্ষার কারণে শিয়াপন্থি হেজবোল্লাহর প্রতি সুন্নিসহ অন্য গোত্রের মানুষ ও লেবাননের সমাজে তাদের প্রতি এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Zaatari
ইরান ও সিরিয়ার সমর্থন
শুরু থেকেই দেশ দুটি হেজবোল্লাহকে সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে এসেছে৷ বর্তমানে হেজবোল্লাহর সামরিক শাখা লেবাননের সামরিক বাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী এবং সে অঞ্চলে তারা অন্যতম আধাসামরিক গোষ্ঠী হয়ে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
রাজনৈতিক শাখা
১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলা লেবাননের গৃহযুদ্ধের পর হেজবোল্লাহ রাজনীতির দিকে মনোযোগ দেয়া শুরু করে৷ হাসান নাসরাল্লাহ (ছবি) ১৯৯২ সালে হেজবোল্লাহর রাজনৈতিক অংশের নেতৃত্বে আসেন৷ বর্তমানে দেশটির শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের একটি বড় অংশ এবং খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মীয় গোত্রের সঙ্গে তাদের সখ্য গড়ে উঠেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সশস্ত্র শাখা
গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর অন্যান্য গোষ্ঠীর মতো হেজবোল্লাহ অস্ত্র ত্যাগ করেনি৷ প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির দলসহ অন্যান্য দলগুলো হেজবোল্লাহকে অস্ত্র ত্যাগের আহ্বান জানালেও তারা তা মানেনি৷ হেজবোল্লাহর যুক্তি, ইসরায়েল ও বাইরের অন্যান্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে অস্ত্র প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/AA
সন্ত্রাসী গোষ্ঠী?
যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ক্যানাডা ও আরব লিগের দেশগুলোর দৃষ্টিতে হেজবোল্লাহ একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী৷ কিন্তু যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন হেজবোল্লাহর বৈধ রাজনৈতিক শাখা ও তাদের সামরিক শাখাকে ভিন্ন চোখে দেখে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/I. Press
সিরিয়ার যুদ্ধে হেজবোল্লাহ
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে হেজবোল্লাহ৷ আসাদের টিকে থাকার পেছনে তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Syrian Central Military Media
শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা বৃদ্ধি
অনেক দিন ধরেই লেবাননকে ঘিরে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলে আসছে৷ হেজবোল্লাহর রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিবৃদ্ধি এবং সিরিয়া যুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণ লেবাননসহ অত্র অঞ্চলে শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা বাড়িয়েছে৷
ছবি: dapd
ইসরায়েলর সঙ্গে নতুন দ্বন্দ্ব?
সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নেয়ার মাধ্যমে ইরান ও হেজবোল্লাহ তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বাড়িয়েছে৷ বিষয়টিকে ইসরায়েল হুমকি হিসেবে দেখছে৷ ফলে সিরিয়ায় ইরান/হেজবোল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে বার কয়েক হামলাও করেছে ইসরায়েল৷ ইরান ও হেজবোল্লাহ সিরিয়ায় স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করুক, সেটি চায় না ইসরায়েল৷ ফলে ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহর মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ শুরুর আশংকা দেখা দিয়েছে, যেখানে ইরানও জড়িয়ে পড়তে পারে৷
ছবি: Getty Images/C. Furlong
9 ছবি1 | 9
লেবাননের মিডিয়া জানিয়েছে, আল-জামাত আল-ইসলামিয়ার একটি মেডিক্যাল সেন্টারের উপর আক্রমণ চালায় ইসরায়েল।
লেবাননের সরকারি বার্তা সংস্থা এনএনএ জানিয়েছে, ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান থেকে এই আক্রমণ চালানো হয়েছে্। তার ফলে সাতজন চিকিৎসাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। চারজন বেসামরিক মানুষ আহত হয়েছেন।
আল-জামাত আল-ইসলামিয়া এর আগে জানিয়েছিল, তারা হেজবোল্লাহকে সমর্থন করবে। হেজবোল্লাহকে ইরান সমর্থন করে এবং ইসরায়েল, অ্যামেরিকা, জার্মানি ও অন্য বেশ কয়েকটি দেশ তাদের জঙ্গি সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে।
হেজবোল্লাহ কী করে প্রত্যাঘাত করেছে?
এরপর হেজবোল্লাহ ইসরায়েল লক্ষ্য করে একের পর এক রকেট ছুড়তে থাকে।
এই রকেটগুলি কিরিয়াত শমোনা শহরের বাড়িতে গিয়ে পড়ে। উদ্ধারকারী দল গিয়ে ২৫ বছরের এক যুবককে উদ্ধার করে। তাকে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
লেবাননের সরকারি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ইসরায়েল সূর্যাস্তের পর একটি গ্রামে হামলা করেছে। সেখানে দুইজন চিকিৎসাকর্মী-সহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়াও ইসলরায়েল উপকূলবর্তী শহর নাকাউরাতেও হামলা করে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সেখানে প্যারামেডিক গ্রুপ ইসলামিক রিসালা স্কাউট অ্যাসোসিয়েশনের উপর হামলা করা হয় এবং তিনজন মারা যান বলে অভিযোগ।
ইসরায়েল দাবি করেছে, দুইটি জায়গায় তারা জঙ্গি ঘাঁটিতে আক্রমণ করেছে।
হেজবোল্লাহ প্রায় প্রতিদিনই দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলের ভিতরে হামলা করছে। গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের উপর অভূতপূর্ব আক্রমণ চালায়। তারপরেই হেজবোল্লাহ জানিয়ে দেয়, তারা হামাসকে সমর্থন করছে। অ্যামেরিকা, জার্মানি, ইসরায়েল-সহ অনেকগুলি দেশ হামাসকে জঙ্গি সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে।
হেজবোল্লাহ জানিয়েছে, সবমিলিয়ে তাদের ২৪০ জন যোদ্ধা মারা গেছেন। দুই তরফেই বেসামরিক মানুষ মারা গেছেন। কয়েক লাখ মানুষ এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন।