‘ধর্মীয় ভাবমূর্তিতে আঘাত হানছে’ এরকম ইন্টারনেট ওয়েবসাইট খুঁজে খুঁজে বন্ধ করে দিচ্ছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ৷ এদিকে, ‘ইসলামবিরোধী’ ব্লগারদেরকে শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করছে বিভিন্ন ইসলামি গোষ্ঠী৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে গত কয়েকদিনে কমপক্ষে দুটি ওয়েবসাইট বন্ধ এবং দশটি ব্লগ পোস্ট মুছে দেওয়া হয়েছে৷ বার্তাসংস্থা এএফপিকে এই তথ্য জানিয়েছেন টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি'র ভাইস-চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন আহমেদ৷ মূলত বিদ্বেষ ছড়ানো, সমাজে অশান্তি সৃষ্টির তৎপরতা আর মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে এসব সাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷
গিয়াসউদ্দিন এই বিষয়ে বলেন, ‘আমরা দেশের তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি অ্যাক্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি৷'
কর্তৃপক্ষ নিজেরা উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি বিভিন্ন কমিউনিটি ব্লগ সাইটের উদ্যোক্তাদেরকে ধর্মবিরোধী নিবন্ধ রোধে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে৷ বিটিআরসি'র অপর এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন এই তথ্য৷ তিনি বলেন, কমিউনিটি ব্লগগুলোকে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিবন্ধ ‘মডারেট' করতে বলা হয়েছে৷
জার্মানিতে শাহবাগের ঢেউ
শাহবাগের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে জার্মানির বিভিন্ন শহরে আয়োজন করা হয়েছে এবং হচ্ছে প্রতিবাদ সমাবেশ৷ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে জার্মানি প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত এসব প্রতিবাদের খবর ছবিসহ যোগ করা হয়েছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Sams ul Arefin
‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই’
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে যে জনসমুদ্র গর্জে ঘটেছে, তার ঢেউ আছড়ে পড়ছে গোটা দুনিয়ায়৷ জার্মানি বাদ থাকবে কেন? একের পর এক শহরে আয়োজন করা হচ্ছে সমাবেশ, মানববন্ধন৷ দাবি একটাই, ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই’৷
ছবি: DW/A. Islam
বনে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি, জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি
কনকনে শীত৷ তার তোয়াক্কা না করেই গত ১৯শে ফেব্রুয়ারি জার্মানির বন শহরে জাতিসংঘের কার্যালয়ের সামনে সমবেত তাঁরা৷ তাঁদের কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক, ছাত্র, কেউবা হোটেল-রেস্তোরাঁয় কাজ ফেলে আসা বাংলাদেশি৷ বন শহরের নানা প্রান্ত থেকে তাঁরা ছুটে এসেছেন সারা বিশ্বে একটা দাবিকে ছড়িয়ে দিতে, ‘‘একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই৷''
ছবি: DW/A. Chakraborty
কোলোন ক্যাথিড্রালের সামনে শাহবাগ সমাবেশ
জার্মানির অন্যান্য শহরের মতো বন শহরের কাছেই কোলোনে গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি বেলা তিনটেয় সমবেত হন সেই বাঙালিরা, যাদের মন রাজীবের হত্যাকাণ্ডে ক্ষুব্ধ, ভারাক্রান্ত, কিন্তু কণ্ঠে শাহবাগের সোচ্চার দাবি৷ সংগঠকদের মধ্যে অন্যতম, কোলোন ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস'র আইটিটি প্রতিষ্ঠানের গবেষক এবিএম ফিরোজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, রাজীবের হত্যাকাণ্ড তাঁদের আরো অনুপ্রাণিত করেছে৷
ছবি: Firoz
মিউনিখে প্রতিবাদ
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মিউনিখে বসবাসরত বাংলাদেশিরা ম্যুনশনার ফ্রাইহাইটে সমবেত হন৷ উদ্দেশ্য শাহবাগের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ৷ এসময় তাঁরা রাজাকারদের মৃত্যুদণ্ড এবং জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবি জানান৷
ছবি: M. Rahman
প্রতিবাদ ম্যোনশেনগ্লাডবাখে
জার্মানির ম্যোনশেনগ্লাডবাখ শহরে ১৩ই ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন একদল বাংলাদেশি শিক্ষার্থী৷ এই সমাবেশ থেকে কাদের মোল্লা এবং অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড প্রদানের দাবি জানানো হয়েছে৷
ছবি: Rajib Ahmed
এসেন ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ
জার্মানিতে বর্তমানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় হাজারের মতো৷ বিদায়ী রাষ্ট্রদূত মসূদ মান্নান জানিয়েছেন এই তথ্য৷ এই শিক্ষার্থীরা ছড়িয়ে আছেন বিভিন্ন শহরে৷ গত ১০ই ফেব্রুয়ারি ডুইসবুর্গ-এসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এসেন ক্যাম্পাসে একটি সমাবেশের আয়োজন করে শিক্ষার্থী, পেশাজীবীরা৷
ছবি: Sams ul Arefin
‘একাত্মতা ঘোষণা করছি’
ডুইসবুর্গ-এসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এসেন ক্যাম্পাসে আয়োজিত সমাবেশের অন্যতম আয়োজক শামস-উল-আরেফিন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারদের পূর্ণাঙ্গ শাস্তির দাবিতে এক সপ্তাহ আগে ঢাকার শাহবাগে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তার সঙ্গে আমরা জার্মানিতে বসবাসরত বাংলাদেশিরা একাত্মতা ঘোষণা করছি৷’’
ছবি: Sams ul Arefin
সমাবেশ ফ্রাঙ্কফুর্টে
ফ্রাঙ্কফুর্টে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত সমাবেশের ছবি আমরা পাইনি৷ তবে এই আয়োজন সম্পর্কে ফেসবুকে রয়েছে বিস্তর তথ্য৷ আয়োজকরা সেখানে লিখেছেন, ‘ঐকান্তিক ইচ্ছা আর কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে চলার মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ হতে পারলে আমরা বিশ্বাস করি ঘৃণা আর প্রতিরোধের আগুন সবখানে, সবসময়েই জ্বালিয়ে দেওয়া সম্ভব৷’
ছবি: Sams ul Arefin
পেছনের কাজ
প্রতিবাদ জানাতে প্রয়োজন হয় লিফলেট, ব্যানার, পোস্টার৷ জার্মানিতে বাংলা ভাষায় সেসব কি আর সহজে মেলে? শিক্ষার্থীরা তাই নিজেরাই নেমে পড়লেন কলম, পেন্সিল, তুলি নিয়ে৷ ছবিতে মুঠোফোন থেকে দেখে দেখে কাগজে রাজাকারের প্রতিকৃতি আঁকছেন এক আন্দোলনকারী৷
ছবি: Adnan Sadeque
আরো প্রতিবাদ কর্মসূচি
জার্মানির ফ্রাইবুর্গ, মিউনিখ, উল্ম, বার্লিন, ব্রেমেনে প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজন করা হচ্ছে বা হবে৷ এব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য আমাদের কাছে নেই৷ তবে প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজকরা চাইলে ‘Arafatul.Islam@dw.de’ ঠিকানায় ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য পাঠাতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/AP
10 ছবি1 | 10
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গত সপ্তাহে ঢাকায় ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা৷ এরপর ব্লগসহ সামাজিক যোগাযোগ সাইটে রাজীবের কথিত ‘ইসলামবিরোধী' বিভিন্ন নিবন্ধ ছড়িয়ে পড়ে৷ ফলে রক্ষণশীল বাংলাদেশি সমাজে নানাবিধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়৷
শাহবাগে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন রাজীব৷ তাঁর সহব্লগাররা এখন এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন৷ ব্লগারদের মূল দাবি হচ্ছে, ‘‘মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বয়কট করা৷''
পুলিশ এখনো রাজীব হত্যাকাণ্ডের কারণ জানাতে পারেনি৷ তবে নিহত রাজীবের ভাই অভিযোগ করেছেন, অনলাইনভিত্তিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকায় জামায়াতের ছাত্র সংগঠন তাঁর ভাইকে হত্যা করেছে৷
রাজীব হত্যাকাণ্ডের পর, বাংলাদেশের সামাজিক মিডিয়ায় ‘ইসলামবিরোধী’ বিভিন্ন নিবন্ধ ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে৷ এসবের মধ্যে রাজীবের লেখা রয়েছে বলেও দাবি করছে কিছু মহল৷ ব্লগার ইমরান এইচ সরকার এই বিষয়ে এএফপিকে বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের অর্থপুষ্ট কিছু সংবাদপত্র আমাদের ইসলাম বিরোধী হিসেবে দেখাতে চাইছে৷''
গত বুধবার পাঁচ সহস্রাধিক ইসলামপন্থী ঢাকা শহরে ইসলামকে বিদ্রুপকারী ব্লগারদের মৃত্যুদণ্ডসহ শাস্তি দাবি করে মিছিল করেছে৷ শুক্রবার জুম্মার পর এই নিয়ে সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে৷
বাংলাদেশ সরকার সামাজিক উত্তেজনা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছে৷ পাশাপাশি পত্রিকা ও কমিউনিটি ব্লগকে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-কে অবমাননাকর কোন ধরনের নিবন্ধ প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে বলেছে৷