ইসলামবিরোধী ‘পেগিডা' আন্দোলনের সমালোচনায় ম্যার্কেল
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল নববর্ষের বার্তায় বলেছেন, তাঁর দেশ শরণার্থীদের গ্রহণ করা অব্যাহত রাখবে৷ ইসলামবিরোধী পেগিডা আন্দোলনেরও সমালোচনা করেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে ম্যার্কেল বলেন, ‘‘যাঁদের সহায়তা প্রয়োজন জার্মানি তাঁদের সহায়তা করবে৷'' তিনি জানান, ২০১৪ সালে জার্মানি আশ্রয়প্রার্থীদের কাছ থেকে দুই লক্ষেরও বেশি আবেদন পেয়েছে, যেটা বিশ্বে সর্বোচ্চ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ২০১৪ সালই সবচেয়ে বেশি শরণার্থী দেখেছে, বলেও জানান জার্মান চ্যান্সেলর৷ ম্যার্কেল বলেন, নির্যাতনের শিকার মা-বাবার সন্তানেরা জার্মানিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারবে – এ জন্য জার্মানি গর্ব করতে পারে৷
২০১৪ সালে জার্মানি: কয়েকটি আবেগঘন মুহূর্ত
বিশ্বকাপ জয়, বার্লিন প্রাচীরকে স্মরণ, পেগিডা বির্তক – জার্মানদের জন্য এক আবেগী বছর ছিল ২০১৪৷ বছরটিতে যেসব ব্যক্তি এবং ঘটনা মানুষের নজর কেড়েছিল, সেসব নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Reuters
সমকামী ফুটবলার
জার্মানির ফুটবলের জগতে সমকামিতার বিষয়টি এখনো এক ‘ট্যাবু’ হিসেবে রয়ে গেছে৷ ২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার টোমাস হিটসেলস্প্যার্গার ঘোষণা করেন যে তিনি সমকামী৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বুন্ডেসভের’-এ আরো নারী
২৭ বছর বয়সি ল্যাফটেন্যান্ট ইয়ানিন আসেল জার্মান সামরিক বাহিনীর কোনো সাবমেরিনের প্রথম নারী ‘ওয়াচ অফিসার’৷ ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে তিনি এই দায়িত্ব রয়েছেন৷ ছোটবেলা থেকেই এরকম কিছু একটা করার স্বপ্ন দেখেছিলেন ইয়ানিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Charisius
একজন প্রেসিডেন্টের হাজতবাস
জার্মানির অন্যতম সফল ফুটবল ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের ম্যানেজার এবং প্রেসিডেন্ট উলি হ্যোনেস ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার দায়ে কারাভোগ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Hase
চ্যান্সেলরের সঙ্গে ‘সেলফি’
নিজের দেশে এবং বিদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একজন সম্মানিত নারী জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ মার্কিন ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’ তাঁকে ঘোষণা করেছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী হিসেবে৷ তা সত্ত্বেও জনগণের কাছ থেকে খুব একটা দূরে থাকেন না তিনি৷ বরং মাঝেমাঝেই বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে ‘সেলফি’ তুলতে হয় তাঁকে৷
ছবি: Reuters
মহাকাশে একজন জার্মান
২০১৪ সালের ২৮ মে জার্মান মহাকাশচারী আলেক্সান্ডার গ্যার্স্ট পৃথিবী ছেড়ে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন আইএসএস-এ চলে যান৷ তিনি ফিরে আসেন নভেম্বরের ১০ তারিখ৷ মহাকাশে অবস্থানকালে টুইটারে বেশি সক্রিয় ছিলেন গ্যার্স্ট৷ তাঁর তোলা বিশ্বের বিভিন্ন ছবি গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে৷
ছবি: Reuters
চতুর্থ তারকা
বিশ্বকাপের ২০০৬ এবং ২০১০ সালের আসরে শিরোপা জিততে ব্যর্থ হয় জার্মানি৷ ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে ব্রাজিলের মাটিতে অবশেষে চূড়ান্ত বিজয় পেয়েছে তারা৷ জার্মান জাতীয় দলের জার্সিতে যোগ হয়েছে চতুর্থ তারকা৷ ফুটবলের এই পরাশক্তি এখন পর্যন্ত চারবার বিশ্বকাপ জয় করেছে৷
ছবি: Reuters
গন্তব্য জার্মানি
২০১৪ সালে দু’লাখের মতো মানুষ জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন৷ গত বেশ কয়েকবছরের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় সংখ্যা৷ মূলত সিরিয়া, ইরাক এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের মানুষরা এসব আবেদন করেছেন৷ বিষয়টি নিয়ে জার্মানিতে বিতর্ক চললেও সামগ্রিকভাবে যুদ্ধ শরণার্থীদের স্বাগত জানাতে এখনো প্রস্তুত জার্মানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Marc Müller
কোলনে সহিংসতা
ইসলামপন্থিদের বিপক্ষে প্রতিবাদ জানাতে ২০১৪ সালের ২৬ অক্টোবর কোলনে রাস্তায় নামে জার্মান ফুটবল ‘হুলিগানস’ এবং কিছু উগ্র ডানপন্থি৷ সালাফিস্টদের বিরুদ্ধে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের এই সমাবেশ এক পর্যায়ে দাঙ্গার রূপ নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Schmülgen
একসময় সেখানে একটি দেয়াল ছিল...
অবিশ্বাস শোনালেও বার্লিন প্রাচীরের পতনের ২৫ বছর হয়ে গেল৷ গত ৯ নভেম্বর দেয়ালের পতনের ২৫ বছর পূর্তি বেশ বড় করে উদযাপন করেছে জার্মানি৷
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
বিদায়, টুচে
একটি ম্যাকডোনাল্ডস রেস্তোরাঁয় বিরোধ মেটাতে গিয়ে তুর্কি বংশোদ্ভূত তরুণী টুচে মারা যান৷ নভেম্বর মাসে হাজার হাজার মানুষ তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
ড্রেসডেনের দিকে চোখ সবার
২০১৪ সালের শরৎকালে ড্রেসডেনে শুরু হয় ‘পেগিডা’ প্রচারণা৷ কয়েক হাজার মানুষ ইসলামবিরোধী সমাবেশে অংশ নেয় সেখানে৷ সমালোচকরা বলছেন, ইসলামবিরোধী এই প্রচারণার পেছনে রয়েছে ডানপন্থি এবং বর্ণবাদী উদ্দেশ্য৷ তবে পেগিডার সমর্থকরা মনে করেন, জার্মানির মূলধারার সমাজ কার্যত এভাবে যৌক্তিক সমালোচনা করছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Caroline Seidel
11 ছবি1 | 11
‘পেগিডা'-র সমালোচনা
সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানির কয়েকটি শহরে ইসলামবিরোধী পেগিডা (পেট্রিয়টিক ইউরোপিয়ানস এগেনস্ট দ্য ইসলামাইজেশন অফ অক্সিডেন্ট) আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ম্যার্কেলের সমালোচনা করে জার্মান নাগরিকদের এ ধরণের কর্মসূচি থেকে নিজেদের দূরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, এ ধরণের কর্মসূচি বিভিন্ন বর্ণ ও ধর্মের মানুষের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ৷ ‘‘আপনারা এই আন্দোলনের আয়োজকদের অনুসরণ করবেন না৷ তারা শীতল হৃদয়ের অধিকারী এবং তাদের মন প্রায়ই পক্ষপাতদুষ্ট ও ঘৃণায় পূর্ণ,'' নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বলেন জার্মান চ্যান্সেলর৷
প্রসঙ্গ আইএস
ইসলামিক স্টেট-এর জঙ্গিরা বিশ্বের জন্য যে বিপদের কারণ হয়ে উঠছে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে দেন ম্যার্কেল৷ এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি ‘‘সব শ্রেণির মানুষের উপর নির্যাতন চালিয়েছে, আর যারা তাদের বিরোধিতা করেছে তাদের হত্যা করেছে,'' বলেন তিনি৷ আইএস ‘আমাদের মূল্যবোধের' জন্যও হুমকি, বলেন জার্মান চ্যান্সেলর৷
ম্যার্কেল তাঁর নববর্ষের বার্তায় ইউরোপ-রাশিয়া সম্পর্ক, ইবোলা নিয়েও কথা বলেন৷ ইউক্রেন সংকটের কারণে ইউরোপ বিভক্ত হবে না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, জার্মানি রাশিয়াকে সঙ্গে নিয়েই নিরাপদ ইউরোপ গড়তে চায়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে গিয়ে নয়৷
জার্মানিকে ভালোবাসার দশ কারণ
পর্যটকদের কাছে ইউরোপে স্পেনের পর দ্বিতীয় জনপ্রিয় দেশ হচ্ছে জার্মানি৷ আর এই জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে৷ জার্মানির প্রতি মানুষের এই আকর্ষণের দশটি কারণ থাকছে এখানে৷
ছবি: picture-alliance / Bildagentur Huber
সেক্সি বার্লিন
২০১৩ সালে এগারো মিলিয়ন পর্যটক জার্মানির রাজধানীর বার্লিন ভ্রমণ করেছেন৷ এই সংখ্যা বছর ভেদে বেড়ে চলেছে৷ এদের অধিকাংশই বয়সে তরুণ এবং পার্টিপ্রেমী৷
ছবি: Svea Pöstges
‘বিয়ার পাগল’ জাতি
অনেক মনে করেন, জার্মানদের চেয়ে বেশি বিয়ার সম্ভবত আর কোনো জাতি পান করতে পারে না৷ তবে এটা সত্য নয়৷ গড়পড়তা হিসেবে অস্ট্রিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্রের বাসিন্দারা এক্ষেত্রে আরো এগিয়ে আছেন৷ তবে বিয়ারের মানের প্রশ্নে জার্মান বিয়ার প্রস্তুতকারীরা অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
শুধুই ‘সাওয়ারক্রাউট’ নয়!
এক হাজার ক্যালোরি দেখতে এরকম৷ জার্মানরা এরকম স্থানীয় ডিশ খেতে ভালোবাসেন৷ সেটা ‘আইসবইন’ হোক কিংবা ‘পিঙ্কেল’৷ তবে তাঁরা অন্য খাবারও পছন্দ করেন৷ বিশেষ করে ভেগান খাবারের চাহিদা এখন বাড়ছে এ দেশে৷ জার্মানির প্রথম ভেগান সুপারমার্কেটের অবস্থান বার্লিনে৷
ছবি: Jörg Beuge - Fotolia.com
পৌরাণিক জঙ্গল
জঙ্গলের সঙ্গে জার্মানদের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে৷ জার্মানির এক তৃতীয়াংশই জঙ্গল৷ ইউরোপের মধ্যে এক্ষেত্রে দেশটির অবস্থান প্রথম৷ জঙ্গলের মধ্যে হাঁটাচলা করলে মনে প্রশান্তি আসতে পারে আর পরিবেশের পরিবর্তনটাও ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায় জঙ্গলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
‘ফুটবল আমাদের জীবন’
যাঁরা মনে করেন জার্মানদের মধ্যে আবেগ, অনুভূতি কম, তাঁদের উচিত হবে কোনো এক শনিবার জার্মানির কোনো ফুটবল স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখা কিংবা ‘স্পোর্ট বারে’ কিছুটা সময় কাটানো৷ বলা বাহুল্য, এবারের বিশ্বকাপের সময়টা জার্মানরা কাটিয়েছেন ব্যাপক উৎসব, আনন্দ করে৷
ছবি: picture-alliance/AP
বেটোফেন থেকে ব্যার্গহাইন
বাখ এবং বেটোফেনের কারণে জার্মানিকে সাধারণত ‘ক্লাসিকাল’ বা ধ্রুপদী সংগীতের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়৷ তবে এটা কিন্তু ‘টেকনো’ মিউজিকেরও আবাস ভূমি, যা নব্বইয়ের দশকে দারুণ জনপ্রিয় ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রোম্যান্টিক সব ক্যাসেল...
জার্মানিতে সহস্রাধিক ক্যাসেল রয়েছে৷ তবে বাভারিয়ার নয়শোয়ানস্টাইন এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত৷ প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ মানুষ ক্যাসেলটি দেখতে যান৷
ছবি: DW/M. Roddewig
জার্মান ‘আউটোবান’
সবাইকে পেছনে ফেলে নিজের গাড়িটিকে সর্বোচ্চ গতিতে চালানোর স্বপ্ন কে দেখে না বলুন? জার্মানির মহাসড়কে এটা সম্ভব৷ জার্মানির অনেক রাস্তায় এখন সর্বোচ্চ গতিসীমা ১২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা ঠিক করে দেয়া হলেও, অনেককেই সেটা খুব একটা মানতে দেখা যায় না৷
ছবি: picture alliance/zb
জার্মান অন্তরঙ্গতা
জার্মানরা অত্যন্ত অন্তরঙ্গভাবে মেলামেশা পছন্দ করেন৷ বিশেষ করে বিয়ার গার্ডেনে তাঁদের চরিত্রের এই দিকটির প্রমাণ মেলে৷ হাত এক গ্লাস বিয়ার নিয়ে গল্প জুড়ে দেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিসমাস মার্কেট
জার্মানির ক্রিসমাস মার্কেট বা বড়দিনের বাজারের আদলে মার্কেট এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা যায়৷ বড়দিনের সময় জার্মানির প্রায় প্রতিটি শহরে বসে ক্রিসমাস মার্কেট৷ শীতের অন্ধকার দিনগুলোতে এই বাজার যেন আলোর বন্যায় ভাসিয়ে দেয় এক-একটা শহরকে৷