পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বিরাট মিছিল নিয়ে মধ্য ইসলামাবাদে পৌঁছে গেছেন তার সমর্থকেরা। পুলিশ এবং সেনার সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হলেও তাদের ছত্রভঙ্গ করা যায়নি।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে আন্দোলনকারীদের উপর চড়াও হয় সেনা। শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, তাদের নেতা ইমরান খানকে জেল থেকে মুক্তি দিতে হবে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও জানিয়েছে, মাঝরাতে মধ্য ইসলামাবাদের সমস্ত আলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরপর কাঁদানে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তে ছুঁড়তে ইমরান-সমর্থকদের সরানোর চেষ্টা করা হয়। বহু আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইমরান খানের দল নিষিদ্ধ করতে চায় পাকিস্তান সরকার
দেশটির সরকার বলছে, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নিষিদ্ধ করার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ দেশটিকে অনিশ্চয়তা ও বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
ছবি: Rizwan Tabassum/AFP/Getty Images
পিটিআই নিষিদ্ধের তোড়জোড়
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতা তারার জানিয়েছেন, জেলে থাকা ইমরান খানের দল পিটিআইকে নিষিদ্ধ করতে পদক্ষেপ নিবে তার সরকার। এরই মধ্যে এ নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, "এ ব্যাপারে প্রয়োজনে মন্ত্রিসভা এবং সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শও নেয়া হবে।"
ছবি: Rizwan Tabassum/AFP/Getty Images
কেন এ সিদ্ধান্ত?
ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পিটিআইকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পক্ষে তার সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য ও প্রমাণ রয়েছে। ইমরান খান এবং তার দলের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, দাঙ্গা উসকে দেয়া এবং রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য পাচার করা। অবশ্য এসব অভিযোগ শুরু থেকেই 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' আখ্যা দিয়ে অস্বীকার করে এসেছেন কারারুদ্ধ ইমরান খান।
ছবি: Banaras Khan/AFP/Getty Images
ইমরান খানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকার পর অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এখনও তিনি কারাগারেই রয়েছেন। ইমরানের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলার বেশ কয়েকটিতে অভিযোগ গঠনও করা হয়েছে। তবে অনেক মামলাই উচ্চ আদালত খারিজ করেছে, অথবা সাজা দিয়ে ঘোষণা করা রায় বাতিল করেছে। কয়েকদিন আগে তৃতীয় বিয়ে নিয়ে করা এক মামলায় তার সাজা খারিজ করে খালাস দিয়েছে একটি আদালত।
ছবি: Abdul Majeed/AFP
পিটিআই-এর পক্ষে রায়
এ বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচনে পিটিআইকে অংশ নেয়া থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ফলে দলটির প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য হন। তারপরও দলটির ৯৩ জন সদস্য নির্বাচনে জিতে সবচেয়ে বড় বিরোধী গ্রুপ হিসাবে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে গিয়েছে। গত সপ্তাহে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, অন্তত ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অন্তত ২০টি আসন থেকে অন্যায়ভাবে পিটিআইকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
ছবি: Anjum Naveed/AP Photo//picture alliance
সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিরোধীদের মন্তব্য
ইমরান খানের উপদেষ্টা জুলফিকার বুখারি ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, পিটিআইকে নিষিদ্ধ করা হলে "নিজের পায়েই কুড়াল মারবে সরকার"। এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, "সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টও পিটিআইকে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে বৃহত্তম দল হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।"
ছবি: Aamir Qureshi/AFP/Getty Images
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা
রাজনীতি বিশ্লেষক জাহিদ হুসাইন ডিডাব্লিউকে বলেছেন, এই পরিকল্পনা "দুর্যোগ ডেকে আনতে পারে" এবং "সরকারের নিজের পতনের কারণ হতে পারে"। তিনি বলেন, "পাকিস্তানে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার ঘটনা খুবই বিরল।" সংবিধান বিশেষজ্ঞ ওসামা মালিক অবশ্য মনে করেন পিটিআই ক্ষমতায় থাকার সময় ইসলামিক চরমপন্থি দল টিএলপিকে নিষিদ্ধ করে নিজেরাই নজির তৈরি করেছে। তবে এর সমাধান সুপ্রিম কোর্টেই হবে বলে মনে করেন তিনি।
ছবি: Rizwan Tabassum/AFP/Getty Images
6 ছবি1 | 6
এদিন দুপুরে ইসলামাবাদের রেড জোনে সমস্ত নিরাপত্তার বেষ্টনী ভেঙে ফেলেন আন্দোলনকারীরা। এখানেই আছে যাবতীয় সরকারি অফিস। আন্দোলনকারীদের নেতৃত্ব দেন ইমরানের স্ত্রী। তার কনভয় সমস্ত নিরাপত্তার বেষ্টনী ভেঙে রেড জোনে ঢোকে। তার সঙ্গেই হাজার হাজার ইমরান-সমর্থক সেখানে ঢুকে পড়ে অবস্থান করতে শুরু করেন।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করার কোনো প্রশ্নই নেই। পাশাপাশি যাবতীয় গণ্ডগোলের জন্য ইমরানের স্ত্রীকে দায়ী করেছেন তিনি। বস্তুত, আন্দোলনকারীদের হাতে প্রচুর সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আন্দোলনকারীদের মৃত্যুও হয়েছে। এই সবকিছুর দায় ইমরানের স্ত্রীকে নিতে হবে বলে নাকভি জানিয়েছেন।
হাজার হাজার ইমরান-সমর্থক এখনো ইসলামাবাদে অবস্থান করছেন। ইমরান খান জেল থেকে বার্তা দিয়ে জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনচালিয়ে যেতে হবে। ইমরানের মুক্তির পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের দাবি, বর্তমান সরকারকে বরখাস্ত করতে হবে।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এখনো পর্যন্ত ছয়জন আন্দোলনকারী এবং চারজন নিরাপত্তারক্ষীর মৃত্যু হয়েছে সংঘর্ষে। বিপুল পরিমাণ পুলিশ, সেনা এবং প্যারা মিলিটারি মোতায়েন করা হয়েছে রাজধানীতে। শনিবার থেকে সেখানে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।