1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

​​​​​​​ইসলামিক নারীবাদ কী?

৪ মার্চ ২০২০

ইসলামিক নারীবাদ একটি তুলনামূলক নতুন তত্ত্ব এবং এর সমালোচনাও আছে৷ অনেকেই মনে করেন, ইসলাম ধর্ম অনেক বেশি পুরুষতান্ত্রিক, তাই এর সঙ্গে নারীবাদকে মেলানোর কোনো সুযোগ নেই৷ বিস্তারিত লিখেছেন সালমা খাতাব৷

Deutschland hochqualifizierte Migranten
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Nietfeld

অনেকের জন্যই ‘ইসলামিক নারীবাদী' শব্দগুলো বিপরীতার্থক৷ কিন্তু ১৯৯০ সালে যখন ইরানি ‘অ্যাক্টিভিস্ট' জিবা মির-হোসেইনি এই উপাধিটি চালু করেন, তখন এটি মূলত ছিল নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার সুযোগ তৈরির জন্য৷

যেহেতু জিবার স্বামী বিষয়টি মেনে নিচ্ছিলেন না, জিবা তাঁর স্বামীর কাছ থেকে ডিভোর্সও চাইছিলেন৷ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী আইন নিয়ে পড়াশোনা করার পর তিনি ইসলামের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করে দেখছিলেন কোন কোন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে স্বামীকে ডিভোর্স দেয়া যায়৷ কারণ, ইসলামিক আইনে পরিচালিত বেশিরভাগ দেশে কাজটি কঠিন৷

মাসের পর মাস আদালতে ধর্ণা দিয়ে অবশেষে তিনি স্বামীকে ডিভোর্স দিতে সক্ষম হন৷ তিনি এরপর যুক্তরাজ্যে ফিরে আসেন এবং ইসলামিক পারিবারিক আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন৷ সেই থেকে তিনি ধর্মীয় নীতি ও আধুনিক জীবন বাস্তবতার সংঘাতের জায়গাগুলোর আইনগত দিকগুলো নিয়ে কাজ করাকেই জীবনের লক্ষ্য বানিয়েছেন৷

২০০৯ সালে ইসলামিক নারীবাদ নিয়ে মালয়শিয়ায় একটি সম্মেলন হয়৷ ৫০টি দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে চলা এই সম্মেলনটি একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়৷ সম্মেলনটির আয়োজক ছিল ‘মুসাওয়াহ' বা সমতা নামের একটি আন্দোলন৷ এরা নিজেদের ‘মুসলিম পরিবারে সমতা ও ন্যায়ের বৈশ্বিক আন্দোলন' নামে পরিচয় দেয়৷

বিভিন্ন আরব দেশ এবং ইরানেও এই আন্দোলন বেশ গতি পেয়েছে৷ তারা জাতিসংঘ নারী বা ‘ইউএন উইমেন'-এর সঙ্গে মিলে ধর্মীয় কাঠামো নিয়ে গবেষণা করছে এবং ধর্মের নামে নারীদের ওপর যেসব বৈষম্যমূলক আচরণ করে তা বন্ধে কাজ করছে৷ যেমন, নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ বা এফজিএম৷

সব চিন্তাধারার নারীবাদীরা একসঙ্গে

মিশরে ইসলামী নারীবাদের ধারণা খুব বেশি বিস্তৃত নয়৷ অল্প কিছু গবেষক ও কর্মী এ নিয়ে কাজ করছেন, তাও খুবই সীমাবদ্ধ পরিসরে৷ ইংরেজির অধ্যাপক উমাইমা আবু বকর মিশরে এই ধারণার একজন প্রবর্তক৷ তিনি বলেন, ‘‘মিশরে ইসলামী নারীবাদের ধারণা আদর্শিক ও তাত্ত্বিক পর্যায়ের৷ তারা মুসলিম গবেষক ও ইসলাম বিশ্লেষকরা ধর্মের ঐতিহ্যগত পুরুষতান্ত্রিকতার সমালোচনা করা এবং আর সমতাভিত্তিক বিকল্প তৈরির সম্ভাব্যতা নিয়ে কাজ করেন৷ এই প্রকল্প স্থানীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে বিভক্ত৷''

মিশরে ইসলামী নারীবাদ এখনো ব্যক্তিগত পর্যায়েই কাজ করছে বলে জানান উমাইমা৷ তবে ‘দ্য উইমেন অ্যান্ড মেমরি ফোরাম' নামের একটি সংগঠনও কাজ করছে বলে জানান তিনি৷

উমাইমা জানান তাঁরা মিশরের আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মিলে কাজ করেন৷ তবে কিছু মৌলিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে দ্বিমতও রয়েছে তাদের৷ যেমন, নারীর অভিভাবকত্ব, বিশেষ করে বিয়ের ক্ষেত্রে৷

আলেকজান্দ্রিয়া ঘোষণা: নারীবাদের মাইলফলক

মিশরের শহর আলেকজান্দ্রিয়ার সংস্কৃতি কেন্দ্র ও লাইব্রেরি বিবলিওথেকা আলেকজান্দ্রিয়া থেকে ২০১৪ সালে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়৷ সেখানে নারী অধিকারের কয়েকটি মৌলিক বিষয় তুলে ধরা হয়৷ বিশেষ করে নারী ইস্যুগুলোর রাজনীতিকরণ এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর রাজনৈতিক সংকটে তার অপব্যবহার৷

তারা কট্টরপন্থা বা একেবারে বিচ্ছিন্নতা থেকে সরে গিয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করে৷

সমাজে নারী পুরুষের সমান অধিকারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে নারীকে আরো বেশি সামাজিক স্তরে অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা হয়৷ তারা দু'পক্ষের অংশীদারিত্বের কথা বলে৷

অভিভাবকত্ব নিয়ে ঘোষণায় বলা হয়, অনেক পুরুষ অভিভাবকত্বের সুযোগ নিয়ে পরিবারে স্ত্রী ও সন্তানদের ওপর একচ্ছত্র ক্ষমতার অপব্যবহার করে৷ ঘোষণায় তাদের অভিভাবকত্বকে অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলা হয়৷ অর্থাৎ স্ত্রী ও সন্তানদের চাহিদা মেটাবার জন্য যে আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন, সে দায়িত্ব পালন করবেন পুরুষ৷

ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, ‘‘অভিভাবকত্ব মানে এই নয় যে, পুরুষ যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বা কাজ করতে পারেন এবং স্ত্রী ও সন্তানের ওপর কর্তৃত্ব দেখাতে পারেন৷'' ঘোষণায় নারী ও পুরুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমতা বিধানের কথাও বলা হয়৷

সমালোচনার মুখে ইসলামী নারীবাদ

বিষয়টি নতুন হলেও ইসলামীও নারীবাদ সমালোচনার উর্ধ্বে নয়৷ অনেকেই মনে করেন ইসলামে পুরুষের কর্তৃত্ব অনেক৷ তাহলে এখানে নারীবাদের সুযোগ কোথায়?

উমাইমা বলেন, ‘‘নারীবাদের এমন সংজ্ঞা খুবই অগভীর এবং উদার নারীবাদেই সীমাবদ্ধ৷ অথচ বাস্তবতা হল, অনেক রকমের নারীবাদ রয়েছে যেমন, বামপন্থি নারীবাদ কিংবা খ্রিস্টান ও ইহুদী নারীবাদ আন্দোলন৷''

তিনি যোগ করেন, ‘‘নারীবাদের যেসব আন্দোলন ধর্মীয় গণ্ডিতে হচ্ছে, সেগুলো নতুন কিছু নয় এবং নারীবাদ কেবল উদারপন্থি ভাবনা নয়, এটা বিচিত্র ও সূক্ষ্ম৷''

ইসলামী নারীবাদের আরেকটি সমালোচনা হল, এটি মুসলিম ব্রাদারহুডের সমান্তরাল আদর্শ কি না৷ উমাইমা বলেন, আসলে ইসলামী নারীবাদ দু'তরফ থেকেই আক্রান্ত৷ যারা উদারপন্থি তারা শুধু নিজেদের স্বার্থেই একে ব্যবহার করতে চাইছেন৷ অন্যদিকে, কট্টরপন্থিরা একে বেশি উদার মনে করেন৷

তিনি মনে করেন, এই দুইয়ের মাঝে পড়ে মুসলিম নারীদের কণ্ঠস্বর শুনতেই যেন পান না কেউ৷

সালমা খাতাব/জেডএ

 

২০১৭ সালের এই ছবিঘরটি দেখুন:

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ