ইরাক দিয়ে শুরু৷ তারপর সিরিয়া৷ তারপর? কোন দিকে এগোবে ইসলামিক স্টেট? ইরাক এবং সিরিয়ায় তাদের আপাত সাফল্যের রহস্য কী? উত্তর দুটো৷ এক. সাদ্দাম হোসেনের অনুগত সেনাকর্মকর্তারা, দুই. ধর্মীয় উন্মাদনা৷
বিজ্ঞাপন
এক বছর আগে ইসলামি খিলাফত কায়েমের লক্ষ্যের কথা বলে ইরাকে হামলা শুরু করেছিল জঙ্গি সংগঠন (আইএস)৷ শুরুতে অপ্রস্তুত, অগোছালো ইরাকি সেনাবাহিনী প্রায় বিনা বাধায় মোসুল ছেড়ে দিয়ে সুন্নিদের জঙ্গি সংগঠনটির অগ্রযাত্রা সহজ করে দিলেও পরে সুসংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে৷ শিয়া আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা তাদের সঙ্গে যোগ দেয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আরব বিশ্ব এবং পাশ্চাত্যের কয়েকটি দেশ বিমান থেকে বোমা হামলা শুরু করে আইএস-এর বিরুদ্ধে৷ তারপরও ইরাক এবং সিরিয়ার বেশ বড় একটা অংশ দখলে নিয়েছে আইএস৷ রহস্যটা কী? কোথায় আইএস-এর মূল শক্তি?
অনেক বিশ্লেষকের পর্যবেক্ষণ বলছে, আইএস-এর অগ্রযাত্রার পেছনে ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের অনুগত সেনা কর্মকর্তাদের বড় একটা ভূমিকা রয়েছে৷ ইসলামি জিহাদ বিষয়ক তাত্ত্বিক আবু মোহাম্মদ আল-মাকদিসিও তাঁদের একজন৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, ‘‘ওরা সামরিক ক্ষেত্রে সফল হচ্ছে, কারণ ওদের সঙ্গে বাথ পার্টির কর্মকর্তারা রয়েছে৷ ''
হত্যা, আতঙ্ক আর ঘৃণায় আইএস
শুধু ইরাক আর সিরিয়া নয়, আজকাল বিশ্বের অনেক দেশেই ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর তৎপরতার কথা শোনা যায়৷ খেলাফত কায়েমের কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা জঙ্গি সংগঠনটিকে নিয়েই আমাদের আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
তাদের কাছে নারী যেন বাজারের পণ্য
অনেক সময় আটক নারী ও শিশুদের আইএস জঙ্গিরা যৌন দাস হিসেবে ব্যবহার করে৷ সম্প্রতি আইএস-এর কবল থেকে পালিয়ে আসা ৪০ জনেরও বেশি ইয়াজিদি নারীর সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ নারী ও শিশুদের সঙ্গে আইএস-এর এমন আচরণে নিন্দা জানিয়েছেন সবাই৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
সাংবাদিক, এনজিওকর্মী হত্যা করে হুমকি
তাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা বন্ধ না করায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে নিরপরাধ মানুষ হত্যার বেশ কিছু নজীর গড়েছে আইএস৷ বিমান হামলার প্রতিশোধের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন সাংবাদিক, একজন এনজিও কর্মী এবং ব্রিটেনের দু’জন এনজিও কর্মীর শিরশ্ছেদ করেছে তারা৷ ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক জেমস ফলিকে৷ গত আগস্টে তাঁর শিরশ্ছেদ করে ভিডিওচিত্র প্রচার করে আইএস৷
ছবি: dapd
মুসলমান হলেও রক্ষা নেই....
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সিরীয় শরণার্থীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন পিটার কাসিগ৷ মুসলমান হিসেবে তাঁর নাম হয়েছিল আব্দুল রহমান কাসিগ৷ গত নভেম্বরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় তাঁকেও হত্যা করে আইএস৷ হত্যার পর ভিডিও চিত্রও প্রকাশ করা হয়৷ নৃশংস এ ঘটনাকে ‘শয়তানের কাজ' হিসেবে বর্ণনা করেন বারাক ওবামা৷
ছবি: picture-alliance/AP/Kassig Family
জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি, তারপর...
জাপানের দুই নাগরিককে জিম্মি করে প্রথমে ২০০ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করে আইএস৷ মুক্তিপণ না পাওয়ায় হারুনা ইউকাওয়াকে হত্যা করলেও সাংবাদিক কেনজি গোতোকে আটকে রাখে৷ গোতো এবং জর্ডানের বৈমানিক আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে জিম্মি করে তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে জর্ডানে আটক আইএস-এর এক নারী যোদ্ধার মুক্তি দাবি করা হয়৷ তাঁকে মুক্তি না দেয়ায় কেনজি গোতো এবং আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে হত্যা করে আইএস৷
ছবি: Reuters/www.reportr.co via Reuters TV
ইরাকে শুরু....
গত বছরের জুন মাসে ঝটিকা আক্রমণের ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় আইএস৷ সুন্দিদের এই জঙ্গি সংঠনটি তারপর ইরাকের বেশ বড় একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে৷ সিরিয়াতেও দখল করে নেয় কিছু এলাকা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বাংলাদেশেও তৎপর আইএস...
আইএস সরাসরি যুদ্ধ করছে ইরাক আর সিরিয়ায়৷ যোদ্ধা সংগ্রহ করা হচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্ত থেকে৷ জার্মানি, বৃটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে জঙ্গি মনোভাবাপন্নরা গিয়েছে ইরাক, সিরিয়ায়৷ এশিয়ার দেশগুলোতেও তৎপর আইএস৷ বাংলাদেশেও আইএস সমর্থক সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজনকে৷
ছবি: Reuters
জুতার নীচে আইএস!
আইএস-এর প্রতি ঘৃণাও বাড়ছে সারা বিশ্বে৷ ইরাকের স্থপতি আকীল খ্রীফ তো আইএস জঙ্গিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে বেছে নিয়েছেন অভিনব এক উপায়৷ পুরোনো জুতা সংগ্রহ করে তার নীচে জুতার পরিত্যক্ত ফিতা, বোতাম ইত্যাদি দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন আইএস জঙ্গিদের চেহারার আদল৷ আকীল খ্রীফ মনে করেন, আইএস জঙ্গিদের স্থান জুতার নীচেই হওয়া উচিত৷
ছবি: Armend Nimani/AFP/Getty Images
বৈমানিককে পুড়িয়ে মারা এবং জর্ডানের ‘প্রতিশোধ’
আটক নারী যোদ্ধাকে মুক্তি না দেয়ায় জর্ডানের বৈমানিক আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারে আইএস৷ ক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা ব্যবস্থা নিতেও দেরি করেনি জর্ডান৷ আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে (ওপরের ছবি) হত্যা করে আইএস ভিডিও প্রকাশের পরই তাদের নারী যোদ্ধা সাজিদা আল-রিশোয়াই ও আরেক কর্মীকে ফাঁসিতে ঝোলায় জর্ডান সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
8 ছবি1 | 8
ইরাক এবং সিরিয়ায় এ মুহূর্তে কমপক্ষে ৪০ হাজার যোদ্ধা এবং ৬০ হাজার বাইরে থেকে আসা সমর্থক রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ মূল যোদ্ধাদের মধ্যে ইরাকে শতকরা ৯০ ভাগই ইরাকি এবং সিরিয়ার রণক্ষেত্রে শতকরা ৭০ ভাগ সিরীয়৷
যুদ্ধে সফল হওয়ার জন্য সাদ্দাম হোসেনের সময়কার ইরাকি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি ধর্মীয় উন্মাদনাকেও সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে আইএস৷ গত ১৪ মে এক ভাষণে আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদি বলেছেন, ‘‘ইসলাম কখনো এক দিনের জন্যও শান্তির ধর্ম ছিল না, ইসলাম যুদ্ধের ধর্ম৷'' অধিকাংশ ইসলামি দার্শনিক এবং চিন্তাবিদ ইসলামকে যেখানে সবসময় ‘শান্তির ধর্ম' বলেছেন, সেখানে জঙ্গি সংগঠনের এক নেতার এমন ব্যাখ্যা৷ আইএস কি ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ানোরও চেষ্টা করছে?