ইরানের সহায়তায় ইরাকি সেনাবাহিনী টিকরিট শহর জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর হাত থেকে ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ অন্যদিকে সামগ্রিকভাবে আইএস দমন অভিযানে কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
আইএস জঙ্গিদের কবল থেকে টিকরিট শহর মুক্ত করতে ইরাকের সেনাবাহিনীর অভিযান যত জোরদার হচ্ছে, শহরের বেসামরিক মানুষদের নিয়ে দুশ্চিন্তা তত বাড়ছে৷ চারদিক থেকে শহরটি অবরোধ করার ফলে রসদের সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷ ইরান এই প্রথম এত খোলাখুলিভাবে এই অভিযানে অংশ নেওয়ায় শিয়া-সুন্নি সাম্প্রদায়িক সংঘাতের আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে৷ আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামে তাদের সামরিক সহায়তার গুরুত্ব অস্বীকার না করলেও অ্যামেরিকা সহ কিছু মহল সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এড়িয়ে চলার ডাক দিচ্ছে৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি টিকরিট শহরের মূলত সুন্নি বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে আইএস-এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ডাক দিয়েছেন৷ তাঁর মতে, যুদ্ধে কারও পক্ষে নিরপেক্ষ থাকা সম্ভব নয়৷ আইএস-এর বিষয়ে নীরব থাকা মানে তাদের প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থন প্রকাশ করা৷ এমন মন্তব্যও সাম্প্রদায়িক উসকানি দিতে পারে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন৷
এদিকে ইসলামিক স্টেট-এর বিরুদ্ধে সার্বিক রাজনৈতিক রণকৌশলের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছে৷ সিরিয়ায় আসাদ-বিরোধী বিদ্রোহীদের জোট ‘হাজম আন্দোলন' ভেঙে যাবার ফলে আসাদ এবং আইএস-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও তাদের সামরিক সাজসরঞ্জাম সরবরাহের কাজে ব্যাঘাত ঘটছে৷ মার্কিন প্রশাসন আগামী তিন বছরে সিরিয়ার বিদ্রোহী যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা করেছে৷ এই উদ্যোগের আওতায় আসাদের বাহিনীর বদলে আইএস-এর মোকাবিলার উপরই বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে৷ এদিকে আল কায়েদার সিরিয়া শাখা ‘আল নুসরা ফ্রন্ট'-এর হামলার ফলেই ‘হাজম আন্দোলন' বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে৷তাদের হাতে মার্কিন অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম এসে পড়েছে বলেছে বলে তারা দাবি করছে৷ ‘হাজম আন্দোলন' ভেঙে যাবার পর তাদের অনেক সদস্য আবার ‘জাবাত আল শামিয়া' নামের উগ্র ইসলামপন্থি জোটে যোগ দিয়েছে৷ এমন সব ঘটনার ফলে অ্যামেরিকার পরিকল্পনা বানচাল হয়ে যাচ্ছে৷
হত্যা, আতঙ্ক আর ঘৃণায় আইএস
শুধু ইরাক আর সিরিয়া নয়, আজকাল বিশ্বের অনেক দেশেই ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর তৎপরতার কথা শোনা যায়৷ খেলাফত কায়েমের কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা জঙ্গি সংগঠনটিকে নিয়েই আমাদের আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
তাদের কাছে নারী যেন বাজারের পণ্য
অনেক সময় আটক নারী ও শিশুদের আইএস জঙ্গিরা যৌন দাস হিসেবে ব্যবহার করে৷ সম্প্রতি আইএস-এর কবল থেকে পালিয়ে আসা ৪০ জনেরও বেশি ইয়াজিদি নারীর সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ নারী ও শিশুদের সঙ্গে আইএস-এর এমন আচরণে নিন্দা জানিয়েছেন সবাই৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
সাংবাদিক, এনজিওকর্মী হত্যা করে হুমকি
তাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা বন্ধ না করায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে নিরপরাধ মানুষ হত্যার বেশ কিছু নজীর গড়েছে আইএস৷ বিমান হামলার প্রতিশোধের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন সাংবাদিক, একজন এনজিও কর্মী এবং ব্রিটেনের দু’জন এনজিও কর্মীর শিরশ্ছেদ করেছে তারা৷ ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক জেমস ফলিকে৷ গত আগস্টে তাঁর শিরশ্ছেদ করে ভিডিওচিত্র প্রচার করে আইএস৷
ছবি: dapd
মুসলমান হলেও রক্ষা নেই....
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সিরীয় শরণার্থীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন পিটার কাসিগ৷ মুসলমান হিসেবে তাঁর নাম হয়েছিল আব্দুল রহমান কাসিগ৷ গত নভেম্বরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় তাঁকেও হত্যা করে আইএস৷ হত্যার পর ভিডিও চিত্রও প্রকাশ করা হয়৷ নৃশংস এ ঘটনাকে ‘শয়তানের কাজ' হিসেবে বর্ণনা করেন বারাক ওবামা৷
ছবি: picture-alliance/AP/Kassig Family
জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি, তারপর...
জাপানের দুই নাগরিককে জিম্মি করে প্রথমে ২০০ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করে আইএস৷ মুক্তিপণ না পাওয়ায় হারুনা ইউকাওয়াকে হত্যা করলেও সাংবাদিক কেনজি গোতোকে আটকে রাখে৷ গোতো এবং জর্ডানের বৈমানিক আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে জিম্মি করে তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে জর্ডানে আটক আইএস-এর এক নারী যোদ্ধার মুক্তি দাবি করা হয়৷ তাঁকে মুক্তি না দেয়ায় কেনজি গোতো এবং আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে হত্যা করে আইএস৷
ছবি: Reuters/www.reportr.co via Reuters TV
ইরাকে শুরু....
গত বছরের জুন মাসে ঝটিকা আক্রমণের ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় আইএস৷ সুন্দিদের এই জঙ্গি সংঠনটি তারপর ইরাকের বেশ বড় একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে৷ সিরিয়াতেও দখল করে নেয় কিছু এলাকা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বাংলাদেশেও তৎপর আইএস...
আইএস সরাসরি যুদ্ধ করছে ইরাক আর সিরিয়ায়৷ যোদ্ধা সংগ্রহ করা হচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্ত থেকে৷ জার্মানি, বৃটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে জঙ্গি মনোভাবাপন্নরা গিয়েছে ইরাক, সিরিয়ায়৷ এশিয়ার দেশগুলোতেও তৎপর আইএস৷ বাংলাদেশেও আইএস সমর্থক সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজনকে৷
ছবি: Reuters
জুতার নীচে আইএস!
আইএস-এর প্রতি ঘৃণাও বাড়ছে সারা বিশ্বে৷ ইরাকের স্থপতি আকীল খ্রীফ তো আইএস জঙ্গিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে বেছে নিয়েছেন অভিনব এক উপায়৷ পুরোনো জুতা সংগ্রহ করে তার নীচে জুতার পরিত্যক্ত ফিতা, বোতাম ইত্যাদি দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন আইএস জঙ্গিদের চেহারার আদল৷ আকীল খ্রীফ মনে করেন, আইএস জঙ্গিদের স্থান জুতার নীচেই হওয়া উচিত৷
ছবি: Armend Nimani/AFP/Getty Images
বৈমানিককে পুড়িয়ে মারা এবং জর্ডানের ‘প্রতিশোধ’
আটক নারী যোদ্ধাকে মুক্তি না দেয়ায় জর্ডানের বৈমানিক আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারে আইএস৷ ক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা ব্যবস্থা নিতেও দেরি করেনি জর্ডান৷ আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে (ওপরের ছবি) হত্যা করে আইএস ভিডিও প্রকাশের পরই তাদের নারী যোদ্ধা সাজিদা আল-রিশোয়াই ও আরেক কর্মীকে ফাঁসিতে ঝোলায় জর্ডান সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
8 ছবি1 | 8
লিবিয়ায় আইএস-এর তৎপরতা মোকাবিলা করার ক্ষেত্রেও অসহায় হয়ে পড়ছে সে দেশের সরকার৷ তারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে অস্ত্র বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার আবেদন জানিয়েছে৷ আইসিস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিবিয়ার সেনাবাহিনীর কিছু বিশেষ অস্ত্র ও সরঞ্জামের প্রয়োজন পড়েছে৷ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমতি ছাড়া সে সব জোগাড় করা সম্ভব হবে না৷ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লিবিয়াকে অস্ত্র বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার বিরোধিতা করছে বটে, কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম মেনে নিলে তাদের আপত্তি নেই৷