ইরাকে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে আইসিস বা ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠী সিরিয়ায় তাদের পেশিশক্তি দেখাতে শুরু করেছে৷ এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত আঞ্চলিক জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত উদ্যোগের ডাক দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া, সোমালিয়া ও আফগানিস্তানের মতো দেশে ইসলামি জঙ্গিবাদ যেভাবে গোটা অঞ্চলের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে, তার বিরুদ্ধে সম্মিলিত উদ্যোগের ডাক দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ তাদের মতে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে আইসিস ও আল-কায়েদার মতো গোষ্ঠীর মোকাবিলা করার প্রয়োজন রয়েছে৷ ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের পর্যবেক্ষক হিসেবে দেশটি এই মর্মে এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে৷ মার্কিন প্রশাসনও ইসলামি জঙ্গিবাদ নির্মূল করার লক্ষ্যে এক আন্তর্জাতিক অভিযানের প্রয়োজনিয়তার কথা বলেছে৷ উদ্দেশ্য, জঙ্গিদের অর্থায়ন, নতুন সদস্য ভর্তি করার মতো কার্যকলাপ বন্ধ করা৷ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রচারণা বন্ধ ও জঙ্গিদের শনাক্ত করার উদ্যোগও শুরু হয়ে গেছে৷
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
কিন্তু আইসিস-এর মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর সাফল্যের ভিত্তি নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়৷ সিরিয়া ও ইরাকে সুন্নি গোষ্ঠী বহুকাল কোণঠাসা হয়ে রয়েছে৷ সেখান থেকেই জঙ্গিদের প্রতি সমর্থন আসছে৷ যেমন সিরিয়ার উত্তর পূর্বাঞ্চলে মরু এলাকায় রাকা প্রদেশে আইসিস জঙ্গিরা কার্যত এক নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে৷ শুধু গণ হারে নৃশংস শাস্তি বা জোর করে মানুষের উপর তাদের নিয়ম চাপানো নয়, নাগরিক পরিষেবার মতো প্রশাসনিক কাজকর্মও চালাচ্ছে তারা৷ পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, সরকারি কর্মীদের বেতন দেওয়ার মতো ‘দায়িত্বশীল' আচরণের খবরও আসছে সেখান থেকে৷ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিজেদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভালোভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে তারা৷
ইরাক যুদ্ধের দশ বছর পর
দশ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক দখল করেছিল৷ এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনে কী পরিবর্তন এসেছে?
ছবি: DW/K. Zurutuza
সমস্যা আছেই
যুদ্ধ শেষে পুনর্গঠন কাজে বিভিন্ন দেশ থেকে ইরাকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাঠানো হলেও সাধারণ মানুষের জীবনের উন্নতি হয় নি৷ এখনো পানি, বিদ্যুত সহ মৌলিক চাহিদার তীব্র সংকট রয়েছে সেখানে৷ রয়েছে দারিদ্র্য ও বেকারত্বের উচ্চহার৷
ছবি: DW/K. Zurutuza
ইরাকি শরণার্থী
যুদ্ধের কারণে ইরাকের যেসব জনগণ পালিয়ে সিরিয়া চলে গিয়েছিল, তারা এখন ফিরতে শুরু করেছে৷ তবে জাতিসংঘের হিসেবে, এখনো প্রায় ১২ লক্ষ ইরাকি গৃহহীন অবস্থায় রয়েছে৷
ছবি: DW/K. Zurutuza
অসংখ্য চেকপয়েন্ট
প্রতি পাঁচ ইরাকির একজনের বাস রাজধানী বাগদাদে৷ প্রতিদিন তাঁদের অসংখ্য চেকপয়েন্ট পার হতে হয়৷ জনগণের নিরাপত্তার জন্যই এগুলো বসানো হয়েছে৷ তবে এখনো কমেনি সহিংসতা৷ মঙ্গলবারও গাড়ি বোমা হামলায় কমপক্ষে ৫৪ জন নিহত হয়েছে৷
ছবি: DW/K. Zurutuza
বাড়ছে নিহতের সংখ্যা
২০১২ সালে ৪,৫৬৮ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছে৷ তার আগের বছর সংখ্যাটা ছিল ৪,১৪৪৷ ‘ইরাক বডি কাউন্ট’ নামের একটি সংস্থা নিয়মিত মৃত্যুর হিসেব রেখে যাচ্ছে৷
ছবি: DW/K. Zurutuza
নারী শিক্ষার দুরবস্থা
সত্তরের দশকে ইরাকের মেয়েদের সবাই শিক্ষিত ছিল৷ এখন সেই হার ৪০’এ নেমে এসেছে৷ এছাড়া বেড়েছে শিশুদের বিয়ে দেয়ার ঘটনা৷
ছবি: DW/K. Zurutuza
তেজস্ক্রিয়তার শিকার
হিরোশিমা, নাগাসাকি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়৷ তার চেয়েও বেশি সংখ্যক ইরাকি তেজস্ক্রিয়তার কারণে ক্যান্সার, লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে৷ এছাড়া বাড়ছে শিশু মৃত্যুর হার৷
ছবি: DW/K. Zurutuza
ইরাকের আরব বসন্ত?
হাজার হাজার সুন্নি বিক্ষোভকারী গত ডিসেম্বর থেকে সুন্নি অধ্যুষিত ইরাকে নিয়মিত আন্দোলন করে আসছে৷ যার শুরু ২০১১ সালে আরব বিশ্বে ঘটে যাওয়া আরব বসন্তের সময়৷ উল্লেখ্য, ইরাকে বর্তমানে ক্ষমতায় শিয়াদেরই প্রাধান্য৷
ছবি: DW/K. Zurutuza
7 ছবি1 | 7
অর্থাৎ জনজীবনের কোনো অংশই তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়৷ নাগরিকদের একটা বড় অংশ এমন প্রশাসনিক দক্ষতার জন্য সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছে৷ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক সাংবাদিক সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে এসেছেন৷ এমনকি আইসিস-বিরোধীরাও স্বীকার করেছেন, যে আবু বকর আল-বাগদাদির নেতৃত্বে জঙ্গিরা ওই এলাকা দখল করে এক বছরেরও কম সময় এক আধুনিক দক্ষ প্রশাসন কায়েম করেছে৷ তবে সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসছে নেতার কাছ থেকেই৷
শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে বাশার আল-আসাদ সরকারের কর্মীদের সঙ্গেও সহযোগিতার পথেও যাচ্ছে তারা৷ অনেক সুন্নি সরকারি কর্মী জঙ্গিদের প্রশাসনেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন৷ উত্তর আফ্রিকা ও ইউরোপ থেকেও বিশেষজ্ঞদের এনে কাজে লাগাচ্ছে তারা৷ অর্থাৎ শুধু জঙ্গি গোষ্ঠী নয় – বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে তাদের ভাবধারা অনুযায়ী এক ইসলামি রাষ্ট্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে তারা অটল রয়েছে বলে মনে করেন রয়টার্সের সেই সাংবাদিক৷