রাশিয়ার দাগেস্তানে রোববার দুটি সিনাগগ, দুটি গির্জা ও পুলিশের এক তল্লাশিচৌকিতে হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন৷ নিহতদের মধ্যে একজন যাজক ও অন্তত ১৫ জন পুলিশ সদস্য৷
বিজ্ঞাপন
দাগেস্তানের রাজধানী মাখাচকালা ও কাস্পিয়ান সাগরতীরের শহর দিয়ারবিয়েন্তেতে হামলাগুলো হয়েছে৷
ওয়াশিংটনের ‘ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার' এক গবেষণা নোটে লিখেছে, ইসলামিক স্টেটের উত্তর ককেশাস শাখা উইলায়াত কাভকাজ ‘সম্ভবত হামলাটি করেছে'৷
এর আগে মার্চ মাসে মস্কোর কাছে এক কনসার্ট হলে হামলায় প্রায় দেড়শ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ ইসলামিক স্টেট ঐ হামলার দায় স্বীকার করেছিল৷ যদিও মস্কো সেই সময় অভিযোগ করেছিল, হামলার পেছনে ইউক্রেনের হাতও ছিল৷ তবে কিয়েভ তা অস্বীকার করে৷
এছাড়া, এক সপ্তাহ আগে রস্টভ এলাকার কারাগারে বিক্ষোভ হয়েছে৷ এর পেছনেও ইসলামিক স্টেট ছিল৷
গত অক্টোবরে একদল বিক্ষোভকারী ‘আল্লাহু আকবর' বলে তেল আভিভ থেকে আসা ইহুদি যাত্রীদের ‘ধরতে' বিমানবন্দরে ঢুকে পড়েছিলেন৷
এসব ঘটনার পর রাশিয়ার গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তারা ব্যস্ত থাকায় এমনটা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন৷
দাগেস্তান ও এর আশেপাশের এলাকার জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করা সংস্থা দ্য খোরাসান ডায়েরির গবেষণা বিভাগের পরিচালক রিকার্ডো ভ্যালে রয়টার্সকে বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়া যুদ্ধ করার কারণে যে সুযোগ তৈরি হয়েছে তা নিয়ে ইসলামিক স্টেট ও অন্যান্য জিহাদি গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছিল৷
তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইসলামিক স্টেট নিয়ে পশ্চিম ও মস্কোর মধ্যে সহযোগিতায় ভাটা পড়েছে৷ এছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংক্রান্ত রাশিয়ার সম্পদও দাগেস্তান থেকে অন্যত্র চলে গেছে৷ দাগেস্তানে সাম্প্রতিক হামলা ‘গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে অনেক ফাঁক' থাকার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে বলে মনে করেন ভ্যালে৷
ক্রেমলিনের সাবেক উপদেষ্টা সের্গেই মারকভ বলছেন, ‘‘মৌলবাদী ইসলাম আবার রাশিয়ায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘এটা স্পষ্ট যে, ইসলামি সন্ত্রাসবাদের সমস্যা আছে এবং এটা মারাত্মক৷ কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে৷''
১৯৯০ দশকের শেষ থেকে ২০০০ দশকের শুরুর দিক পর্যন্ত রাশিয়াজুড়ে সাধারণ নাগরিকদের উপর নিয়মিত জঙ্গি হামলা হয়েছে৷ সাম্প্রতিক হামলার কারণে ঐ আতঙ্কের সময়টা আবার ফিরে আসছে কিনা সে বিষয়ে ভ্লাদিমির পুটিনের মুখপাত্র দিমিত্র পেশকভের কাছে জানতে চেয়েছিলেন একজন সাংবাদিক৷ তবে পেশকভ সেই শঙ্কা কম বলে জানিয়েছেন৷ ‘‘রাশিয়া এখন অন্যরকম৷ দাগেস্তানে যে ধরনের সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে সেটা রাশিয়া কিংবা দাগেস্তানের সমাজ সমর্থন করে না,'' বলেন তিনি৷
দাগেস্তানের প্রধান সের্গেই মেলিকোভ বলেন, সমাজকে অস্থিতিশীল করতে এই হামলা হয়েছে৷
মস্কো থেকে প্রায় ১,৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত দাগেস্তান মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা৷
দাগেস্তান এলাকাটি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ সেখানে নৌবাহিনীর একটি ঘাঁটি গড়ে তোলা হচ্ছে৷
দাগেস্তানে পশ্চিম চেচনিয়াও মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা৷ ১৯৯১ সালের সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সেখানে মস্কো বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে দুবার যুদ্ধ করেছে৷
জেডএইচ/এসিবি (রয়টার্স)
আলোচিত কয়েকটি জঙ্গি হামলা
১৯৯৯ সালে উদীচী দিয়ে শুরু৷ এরপর বেশ কয়েকটি আলোচিত হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা৷ ছবিঘরে থাকছে সেসব কথা৷
ছবি: bdnews24.com
উদীচীর সমাবেশে হামলা
১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ যশোরে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর সমাবেশে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত এবং ১০৬ জন আহত হয়েছিলেন৷ পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার সূচনা হয় ১৯৯৯ সালে৷ হরকাতুল জিহাদ (হুজি) উদীচীর সমাবেশে হামলা করেছিল বলে পুলিশের ঐ ইউনিট জানিয়েছে৷ উপরের ছবিটি প্রতীকী৷
ছবি: bdnews24.com
বাংলা বর্ষবরণে হামলা
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের সকালে ঢাকার রমনা বটমূলে ছায়ানটের ঐতিহ্যবাহী বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছিলেন৷ এই ঘটনায় শতাধিক আহতের মধ্যে অনেকেই পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন৷ এই হামলার মধ্য দিয়ে হুজি তাদের শক্ত অবস্থানের জানান দিয়েছিল৷ হামলার দায়ে ২০১৪ সালে হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেয়া হয়েছিল৷
ছবি: bdnews24.com
ব্রিটিশ হাইকমিশনারের উপর গ্রেনেড হামলা
২০০৪ সালের ২৫ মে সিলেটে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলা হয়েছিল৷ এতে পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হয়েছিলেন৷ আনোয়ার চৌধুরীসহ অর্ধশত মানুষ আহত হন৷ হামলার দায়ে ২০০৮ সালে হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ (ছবি) তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড ও দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ ২০১৭ সালের এপ্রিলে মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷
ছবি: A.M. Ahad/AP/picture alliance
আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন প্রাণ হারান৷ ২০১৮ সালে মামলার রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়৷ মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল, হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের জঙ্গিরা হামলায় অংশ নেয়৷ তবে ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল তখনকার জোট সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ‘ইন্ধন’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Munir
৬৩ জেলায় বোমা হামলা
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালিয়েছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)৷ এই হামলায় দুজন নিহত ও অন্তত ১০৪ জন আহত হয়েছিলেন৷
ছবি: DW/H. U.R.Swapan
ব্লগার হত্যা
জঙ্গি হামলায় বেশ কয়েকজন ব্লগার ও মুক্তমনা নিহত হয়েছেন৷ ২০১৩ সালে আহমেদ রাজিব হায়দার হত্যা দিয়ে শুরু৷ এরপর ব্লগার অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাশ, নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায়সহ আরও কয়েকজন হত্যার শিকার হন৷ ২০২১ সালে অভিজিৎ হত্যার মামলার রায়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়৷ তারা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য৷
ছবি: Robert Richter
হোসেনি দালানে হামলা
২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর আশুরা উপলক্ষ্যে হোসেনি দালানের শোক মিছিলে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা৷ এ ঘটনায় একজন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হন৷ চলতি বছরের মার্চে দেয়া রায়ে জেএমবির দুই সদস্যকে দশ ও সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
শিয়া মসজিদে হামলা
২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বর বগুড়ার এক শিয়া মসজিদের ভেতরে ঢুকে প্রার্থনারতদের উপর গুলি চালায় কমপক্ষে পাঁচ দুর্বৃত্ত৷ এতে মসজিদের মুয়াজ্জিন নিহত হন এবং অপর তিন ব্যক্তি আহত হন৷ হামলার প্রায় ১৪ মাস পর আদালতে দাখিল করা মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছিল জেএমবি এবং ইসলামি ছাত্রশিবির হামলায় অংশ নেয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
হোলি আর্টিজানে হামলা
২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ ২২ জন নিহত হন৷ পাঁচজন জঙ্গি অস্ত্র ও বিস্ফোরক নিয়ে বেকারিতে ঢোকার পর সবাইকে জিম্মি করেন৷ এরপর পুলিশ ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশের দুই কর্মকর্তা জঙ্গিদের গুলি ও বোমার আঘাতে মারা যান৷ কয়েকজনকে ছেড়ে দিলেও জঙ্গিরা অন্যদের নৃশংসভাবে হত্যা করে৷ জঙ্গিরা সবাই সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত হয়৷ ইসলামিক স্টেট এই হামলার দায় স্বীকার করেছিল৷
ছবি: bdnews24.com
জাফর ইকবালের উপর হামলা
২০১৮ সালে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক তরুণ ছুরি নিয়ে অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালায়৷ এই ঘটনায় এ বছরের এপ্রিলে ফয়জুল হাসান নামের একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ফয়জুল কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য কিনা তা প্রমাণিত হয়নি৷ তবে তিনি বিভিন্ন ইন্টারনেট সাইট থেকে জিহাদি প্রবন্ধ ও বই ডাউনলোড করে পড়ে, উগ্রবাদী বক্তাদের বক্তব্য শুনে সন্ত্রাসী কাজে উদ্বুদ্ধ হন৷