লিবিয়ার ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সামরিক হস্তক্ষেপ দাবি করেছে মিশর৷ অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশেও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সতর্কতা বাড়ছে৷ তবে এই সতর্কতা বৃদ্ধির সময়েই টিউনিশিয়ায় চার পুলিশকে হত্যা করেছে জঙ্গিরা৷
বিজ্ঞাপন
ইসলামিক স্টেট-এ যোগ দেয়ার পরিকল্পনা করায় এক কিশোরীকে গ্রেপ্তার করেছে মালয়েশিয়ার পুলিশ৷ মালয়েশিয়ান পুলিশের চিফ ইনস্পেক্টর জেনারেল খালিদ আবু বাকার জানিয়েছেন, ১৪ বছর বয়সি মেয়েটি ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এ যোগ দেয়ার জন্য সিরিয়ায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল৷ পুলিশ বলছে, এ পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন মালয়েশিয়ান সিরিয়ায় গিয়ে আইএস-এর হয়ে যুদ্ধ করছে৷
ইসলামি জঙ্গি তৎপরতা অনেক দেশেই প্রকট রূপ নিয়েছে৷ কয়েকদিন আগে লিবিয়ায় ২১জন মিশরীয়কে পুড়িয়ে মারার ভিডিও প্রচার করে আইএস-এর লিবীয় শাখা৷ এরপরই লিবিয়ায় আইএস-এর ঘাঁটিতে এফ-১৬ বিমান থেকে বোমা হামলা চালায় মিশর৷ মিশর মনে করে এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে দু-একটি হামলা চালিয়ে লিবিয়াতেও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা আইএস জঙ্গিদের প্রতিহত করা যাবেনা৷ তাই মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি জাতিসংঘের প্রতি লিবিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘‘এখন আর আর কোনো বিকল্প নেই৷’’
হত্যা, আতঙ্ক আর ঘৃণায় আইএস
শুধু ইরাক আর সিরিয়া নয়, আজকাল বিশ্বের অনেক দেশেই ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর তৎপরতার কথা শোনা যায়৷ খেলাফত কায়েমের কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা জঙ্গি সংগঠনটিকে নিয়েই আমাদের আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
তাদের কাছে নারী যেন বাজারের পণ্য
অনেক সময় আটক নারী ও শিশুদের আইএস জঙ্গিরা যৌন দাস হিসেবে ব্যবহার করে৷ সম্প্রতি আইএস-এর কবল থেকে পালিয়ে আসা ৪০ জনেরও বেশি ইয়াজিদি নারীর সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ নারী ও শিশুদের সঙ্গে আইএস-এর এমন আচরণে নিন্দা জানিয়েছেন সবাই৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
সাংবাদিক, এনজিওকর্মী হত্যা করে হুমকি
তাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা বন্ধ না করায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে নিরপরাধ মানুষ হত্যার বেশ কিছু নজীর গড়েছে আইএস৷ বিমান হামলার প্রতিশোধের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন সাংবাদিক, একজন এনজিও কর্মী এবং ব্রিটেনের দু’জন এনজিও কর্মীর শিরশ্ছেদ করেছে তারা৷ ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক জেমস ফলিকে৷ গত আগস্টে তাঁর শিরশ্ছেদ করে ভিডিওচিত্র প্রচার করে আইএস৷
ছবি: dapd
মুসলমান হলেও রক্ষা নেই....
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সিরীয় শরণার্থীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন পিটার কাসিগ৷ মুসলমান হিসেবে তাঁর নাম হয়েছিল আব্দুল রহমান কাসিগ৷ গত নভেম্বরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় তাঁকেও হত্যা করে আইএস৷ হত্যার পর ভিডিও চিত্রও প্রকাশ করা হয়৷ নৃশংস এ ঘটনাকে ‘শয়তানের কাজ' হিসেবে বর্ণনা করেন বারাক ওবামা৷
ছবি: picture-alliance/AP/Kassig Family
জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি, তারপর...
জাপানের দুই নাগরিককে জিম্মি করে প্রথমে ২০০ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করে আইএস৷ মুক্তিপণ না পাওয়ায় হারুনা ইউকাওয়াকে হত্যা করলেও সাংবাদিক কেনজি গোতোকে আটকে রাখে৷ গোতো এবং জর্ডানের বৈমানিক আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে জিম্মি করে তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে জর্ডানে আটক আইএস-এর এক নারী যোদ্ধার মুক্তি দাবি করা হয়৷ তাঁকে মুক্তি না দেয়ায় কেনজি গোতো এবং আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে হত্যা করে আইএস৷
ছবি: Reuters/www.reportr.co via Reuters TV
ইরাকে শুরু....
গত বছরের জুন মাসে ঝটিকা আক্রমণের ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় আইএস৷ সুন্দিদের এই জঙ্গি সংঠনটি তারপর ইরাকের বেশ বড় একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে৷ সিরিয়াতেও দখল করে নেয় কিছু এলাকা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বাংলাদেশেও তৎপর আইএস...
আইএস সরাসরি যুদ্ধ করছে ইরাক আর সিরিয়ায়৷ যোদ্ধা সংগ্রহ করা হচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্ত থেকে৷ জার্মানি, বৃটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে জঙ্গি মনোভাবাপন্নরা গিয়েছে ইরাক, সিরিয়ায়৷ এশিয়ার দেশগুলোতেও তৎপর আইএস৷ বাংলাদেশেও আইএস সমর্থক সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজনকে৷
ছবি: Reuters
জুতার নীচে আইএস!
আইএস-এর প্রতি ঘৃণাও বাড়ছে সারা বিশ্বে৷ ইরাকের স্থপতি আকীল খ্রীফ তো আইএস জঙ্গিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে বেছে নিয়েছেন অভিনব এক উপায়৷ পুরোনো জুতা সংগ্রহ করে তার নীচে জুতার পরিত্যক্ত ফিতা, বোতাম ইত্যাদি দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন আইএস জঙ্গিদের চেহারার আদল৷ আকীল খ্রীফ মনে করেন, আইএস জঙ্গিদের স্থান জুতার নীচেই হওয়া উচিত৷
ছবি: Armend Nimani/AFP/Getty Images
বৈমানিককে পুড়িয়ে মারা এবং জর্ডানের ‘প্রতিশোধ’
আটক নারী যোদ্ধাকে মুক্তি না দেয়ায় জর্ডানের বৈমানিক আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারে আইএস৷ ক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা ব্যবস্থা নিতেও দেরি করেনি জর্ডান৷ আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে (ওপরের ছবি) হত্যা করে আইএস ভিডিও প্রকাশের পরই তাদের নারী যোদ্ধা সাজিদা আল-রিশোয়াই ও আরেক কর্মীকে ফাঁসিতে ঝোলায় জর্ডান সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
8 ছবি1 | 8
চার বছর আগে জাতিসংঘের সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমেই তখনকার স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যূত করা হয়েছিল৷ তবে চার বছরে লিবিয়ায় গণতন্ত্র সুসংহত হয়নি৷ বরং জঙ্গিবাদের উত্থানের আশঙ্কাই বাড়ছে সেখানে৷
এদিকে মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসির আহ্বানে আরব দেশগুলোর কুটনীতিকরা সমর্থন জানিয়েছেন বলে জানা গেছে৷ তবে কুটনীতিকরা বলছেন, জাতিসংঘের সামরিক অভিযানে লিবিয়ার বর্তমান সরকারের সমর্থন থাকা দরকার৷
টিউনিশিয়াতেও ঘটেছে জঙ্গি হামলার ঘটনা৷ মঙ্গলবার আলেজিরিয়ায় সীমান্তবর্তী শহর কাসেরিনে চার পুলিশকে গুলি করে হত্যা করে ইসলামী জঙ্গিরা৷
সবচেয়ে বড় হত্যা যজ্ঞের খবর এসেছে ইরাক থেকে৷ বিবিসি অনলাইনে পরিবেশিত এক খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার ইরাকের বাগদাদিতে ৪৫ জনকে পুড়িয়ে মেরেছে আইএস৷ ইরাকের এক সামরিক কর্মকর্তা জানান, নিহতরা ইরাক সামরিক বাহিনীর সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে৷