1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইসলামি দল ও সংগঠনের কদর বাড়ছে

১৮ ডিসেম্বর ২০২২

নির্বাচন আর আন্দোলনের সময় ইসলামি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের কদর বাড়ে৷ এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছেনা৷ দেশের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ইসলামি দল ও সংগঠনগুলোকে এখন কাছে টানার প্রতিযোগিতা শুরু করেছে৷

Bangladesch | Führende Mitglieder von Hefazat-e-Islam
ছবি: bdnews24

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা শনিবার গণভবনে হেফাজত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন৷ হেফাজত কোনো রাজনৈতিক দল না হলেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব আছে বলে ধারণা করা হয়৷ আবার হেফাজত নেতাদের অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন ইসলামি দলের নেতা৷ প্রধানমন্ত্রী হেফাজত নেতাদের কাছে দেশের আরো খেদমত করার জন্য দোয়া চেয়েছেন৷ আর হেফাজত নেতারা তাদের কারাগারে আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তি চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে৷ শাপলা চত্বরের ঘটনায় সময় হেফাজত সরকার ও আওয়ামী লীগ বিরোধী ছিলো৷ সর্বশেষ তারা ভাস্কর্যকে মুর্তি আখ্যা দিয়ে আন্দোলনে নেমেছিল৷ তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সরকারের কৌশলে তারা রণে ভঙ্গ দেয়৷ এরই মধ্যে হেফাজত নেতারা মুক্তি পেতে  শুরু করেছেন৷ রোববার হেফাজত নেতা মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন৷

এদিকে, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, সেখানেও বদল এসেছে৷ গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে এই দূরত্ব অনেকটাই কমে এসেছে বলে মনে হচ্ছে৷ গত আগস্টে বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব প্রকাশ পায় জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্যে৷ তিনি তখন জামায়াতের এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘আমরা এতোদিন একটা জোটের সঙ্গে ছিলাম৷ ছিলাম বলে আপনারা হয়তো ভাবছেন কিছু হয়ে গেছে নাকি? আমি বলি হয়ে গেছে৷ ২০০৬ সাল পর্যন্ত এটি একটি জোট ছিলো৷ ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর জোট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে৷ সেদিন বাংলাদেশ পথ হারিয়ে ছিলো৷ সেটা আর ফিরে আসেনি৷বছরের পর বছর পর এই ধরনের অকার্যকর জোট চলতে পারে না৷''

এরপর বিএনপি নেতারাও জামায়াত নিয়ে ছিলেন চুপচাপ৷ কিন্তু ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের আগে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয় বিএনপির৷ জামায়াত বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যোগ দেয়৷ তারা বিএনপির ১০ দফায় সমর্থন দিয়েছে৷ ১০ ডিসেম্বর জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমানও বিএনপির সঙ্গে মিলিয়ে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ১০ দফা ঘোষণা করেন৷ জামায়াত বিএনপির ঘোষিত সব কর্মসূচির সঙ্গে একই সময়ে, একই দিনে যুগপৎ কর্মসূচি দিচ্ছে৷ এরইমধ্যে জাময়াতের আমির গ্রেপ্তার হয়েছেন৷

বিএনপি বলেছে, তারা একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া সব দলকেই তাদের সঙ্গে চায়৷

‘বাস্তবতা হলো তারা ভোটে একটা ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে’

This browser does not support the audio element.

কোন দলের সঙ্গে কত ইসলামি দল?

দেশে বিভিন্ন রাজনৈদিক দল ও জোটের সঙ্গে কম বেশি ৭০টি ইসলামি দল যুক্ত আছে বলে জানা যায়৷ এরমধ্যে আওয়ামী লীগের ১৪ দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত আছে চারটি ইসলামি দল৷ মিত্র হিসেবে আছে আরো ২৫টি অনিবন্ধিত  ইসলামি রাজনৈতিক দল৷ জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে সম্মিলিত জাতীয় জোটে আছে মোট ৩২টি ইসলামিক দল৷ আর বিএনপির ২০ দলীয় জোটে আছে পাঁচটি ইসলামি দল৷ মিত্র হিসেবে আছে আরো কয়েকটি দল৷ এই জোটগুলো গড়ে ওঠে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে৷  এরপর কয়েকটি দল অবশ্য জোট ছেড়েছে৷ তখন নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার আশায় ছোট-বড় অনেক ইসলমি দল বিভিন্ন জোটে যোগ দেয়৷ তবে নির্বাচনের পর তাদের আর জোট কেন্দ্রিক তেমন কোনো তৎপরতা চেখে পড়েনি৷ এখন তারা আবার সক্রিয় হয়েছে৷ বড় দলগুলোও তাদের শক্তি বাড়াতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে৷

বাংলাদেশে রাজনীতিতে ৭০টির মতো ইসলামি দল সক্রিয় থাকলেও ১৫০ টির বেশি ইসলামি দল রয়েছে৷ যারা সক্রিয় নয় তাদের মধ্য থেকেও কিছু দলকে সক্রিয় করে জোটকে ভারি করার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানাগেছে৷

বড় ইসলামিক দলগুলো মধ্যে চরমোনাই পীরের ইসলামি আন্দোলন কোনো জোটভুক্ত নয়৷ তারা কোনো জোটভুক্ত না হয়ে নিজেরাই একটি বড় ইসলামি দলগুলোর জোট করতে চায়৷

কেন তাদের কদর?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও রাজনীতি বিশ্লেষক শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘ভোট ও আন্দোলনের শক্তি বাড়াতে বড় দুই দলই  ইসলামি দলগুলোকে কাছে টানে৷ এক্ষেত্রে কোনো আদর্শ কাজ করে না৷ কিন্তু বাস্তবতা হলো তারা ভোটে একটা ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে৷ তাই ভোটের রাজনীতিতে কোনো আদর্শ থাকেনা৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘হেফাজতের মত সংগঠনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী যখন বৈঠক করে তখন তা আওয়ামী লীগের জন্য দু:খজনক৷ তারা নারী নীতি বিরোধী৷ তার পাঠ্যপুস্তকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও হুমায়ুন আজাদের মত সাহিত্যিকদের লেখা বিরোধী৷ তাদের দাবি মেনেও নেয়া হয়৷ হেফাজত কোনো রাজনৈতিক দল না হলে বিভিন্ন দলে তাদের প্রভাব আছে৷ ভোটে তাদের প্রভাব আছে৷ তারা একটা বড় ফ্যাক্টর৷ সেই বিবেচনায় হয়তো হেফাজতকে কাছে রাখতে চাইছে আওয়ামী লীগ৷''

‘‘বিএনপির জামায়াত আর আ. লীগের হেফাজত অনিবার্য হয়ে উঠেছে’’

This browser does not support the audio element.

‘‘অন্যদিকে জামায়াত আন্দোলন ও ভোট দুই দিকেই একটি ফ্যাক্টর৷ তারা কোনো জোটে গেলে তাদের ভোট বেড়ে যায়৷ তাই বিএনপি স্বাধীনতা বিরোধী দলটিকে সব সময়ই সাথে রাখে৷  বিএনপির মধ্যেও এর বিরোধিতা আছে৷ তারপরও জামায়াত ছাড়ছে না বিএনপি৷ এর একটি ভিন্ন কারণও আছে৷ তাদের আন্তর্জাতিকসহ নানামুখী যোগাযোগকে বিএনপি তার পক্ষে কাজে লাগাতে চায়৷ যার ফলে জামায়াতকে ছাড়া বিএনপির পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে,'' অভিমত এই অধ্যাপকের৷

তিনি মনে করেন, ‘‘ধর্ম ভিত্তিক দলগুলোকে বাদ দিয়েও বড় দুই রাজনৈতিক দল নির্বাচন, আন্দোলনে ভালো করতে পারে৷ তার প্রমাণও আছে৷ কিন্তু এখন তারা যেভাবে জড়িয়ে পড়েছে তাতে ধর্মভিত্তিত দল ও সংগঠনগুলোকে তাদের পক্ষে আর উপেক্ষা করার সুযোগ নেই৷ তাদের প্রভাব দিন দিন আরো বাড়বে৷''

ক্ষমতায় যাওয়ার প্রতিযোগিতা

সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নেহাল করিম মনে করেন, ‘‘এখানে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রতিযোগিতা হচ্ছে৷ নীতি, আদর্শ বলতে কিছু নেই৷ এর সঙ্গে গণতন্ত্র বা  নাগরিকদের কল্যাণের কোনো সম্পর্ক নেই৷ তাই যে যেভাবে পারছে তাকে দলে টানাছে৷ ভোট বাড়াচ্ছে৷ শক্তি বাড়াচ্ছে৷ বড় রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে হিসাব আছে যে ইসলামি দলগুলোর হাতে কত ভোট আছে৷ এখানে মসজিদ, মাদ্রাসা কেন্দ্রিক অনেক ভোট৷ সেই হিসাব করে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কাছে টানছে৷ তাই বিএনপির জন্য জামায়াত আর আওয়ামী লীগের জন্য হেফাজত অনিবার্য হয়ে উঠেছে৷''

তার কথা, ‘‘ওই দলগুলোকে তারা যে খুব মর্যাদা দেয় তা নয়৷ স্বার্থ হাসিলের জন্য তাদের ছিটোফোটা দিয়ে কাছে রাখে৷''

তিনি বলেন, ‘‘এই ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতির কারণে রাষ্ট্রের আদর্শিক অবস্থানও নষ্ট হচ্ছে৷ কোনো চরিত্র গড়ে উঠতে পারছেনা৷ এথেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রয়োজন সঠিক ও শক্তিশালী নেতৃত্ব৷ সেটার বড় অভাব বাংলাদেশে৷''

‘‘আর যারা এনিয়ে কথা বলবেন সেই বুদ্ধিজীবী শ্রেণিও কচ্ছপের মতো হয়ে গেছে৷ তারা বিপদ দেখলে মাথা ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলে৷ বুদ্ধিজীবীরা নগদজীবী হয়ে গেছেন৷ মাস্টাররা বিভিন্ন পদ পেয়ে যাচ্ছেন, তাতেই সব হয়ে যাচ্ছে৷''

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ