কাশেম বিন আবু বকরের বইয়ের পর ‘হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ’ বইটিও দৃষ্টি কেড়েছে গণমাধ্যমের৷ কোথাও কোথাও ‘ইসলামি বই’ বিক্রি বৃদ্ধির সঙ্গে রক্ষণশীলতার দিকে ঝুঁকে পড়ার সম্পর্ক খোঁজা হয়েছে৷ এমন সম্পর্ক কি আদৌ আছে?
বিজ্ঞাপন
জুনের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে আবদুল্লাহ আল ফারুক ও তাঁর স্ত্রী সাদিকা সুলতানা সাকী’র ‘হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ’ বইটি৷ এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে ৫ হাজার কপি৷ প্রকাশক মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ জানিয়েছেন, পাঠক চাহিদা মেটাতে হিমসিম খাচ্ছে তাঁর প্রকাশনী সংস্থা ‘মাকতাবাতুল আজহার’৷ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং জাতীয় ক্রিকেট দলের পেসার রুবেল হোসেনের সাবেক বান্ধবী হিসেবে আলোচিত হ্যাপীর সাক্ষাৎকারনির্ভর বইটিতে হ্যাপী কিভাবে ধর্মের পথে ফিরেছেন সেই বিবরণ আছে৷ একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ঘটনাটি খুব গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছে৷ এর আগে একইভাবে কাশেম বিন আবু বকর নামের একজন লেখককে নিয়েও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল একই সংবাদ সংস্থা৷ প্রতিবেদনে কাশেম বিন আবু বকরের ‘ফুটন্ত গোলাপ’ বইটিকে বেস্টসেলার এবং মাদ্রাসা ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় বলে উল্লেখ করা হয়৷ সেই প্রতিবেদনের মতো হ্যাপীকে নিয়ে প্রকাশিত বইটি নিয়ে প্রতিবেদনেও বাংলাদেশে রক্ষণশীলতা বাড়ছে উল্লেখ করে কিছুটা উদ্বেগের কথা জানানো হয়৷ সর্বশেষ প্রতিবেদনে তারা দাবি করে যে, গেল কয়েক বছরে বাংলাদেশেইসলাম কট্টরপন্থার দিকে ঝুঁকছে৷
Faruk Short 1 - MP3-Stereo
এ বিষয়ে বইটির সহ-লেখক আবদুল্লাহ আল ফারুকের সঙ্গে কথা হয়েছে ডয়চে ভেলের৷ ৫৭টি ইসলামি বইয়ের লেখক ও অনুবাদক আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘‘শুধু ধর্মকে এখানে আমি সম্পৃক্ত করব না৷ একজন সেলিব্রেটির জীবনে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এবং আমি যেটাকে ভালো মনে করি, সেদিকে সে ঝুঁকেছে৷ সেজন্যই আমার এ লেখা৷’’ তাহলে প্রশ্ন হলো, এ ধরনের বই প্রকাশিত হওয়া এবং তার বিক্রির সঙ্গে কট্টরপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ার সম্পর্ক কোথায়?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার মনে করেন, এ ধরনের সম্পর্ক খুঁজতে গেলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভুল বার্তা চলে যেতে পারে৷ তাঁর মতে, এ সম্পর্ক খোঁজার দু’টো কারণ থাকতে পারে, এক, সাংবাদিকদের মধ্যে জনপ্রিয় বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির প্রবণতা৷ দুই, সারাবিশ্বে ইসলামকে যেভাবে রক্ষণশীলতা বা উগ্রবাদের ধারণায় পরিচিত করার চেষ্টা চলছে, তার প্রভাব পড়তে পারে এই প্রতিবেদনে৷ তবে ‘কন্সপিরেসি থিওরি’ ঢালাওভাবে তুলে ধরতে চান না তিনি৷ তিনি মনে করেন, সেই সিদ্ধান্তে আসতে হলে আরো গবেষণা দরকার৷
Shantonu Mojumder - MP3-Stereo
সেদিক থেকে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান মনে করেন, রাজনৈতিক ধর্মের ধারণা যতটা না মানুষের মধ্যে, তার চেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেখা যায়৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমার অনুমান গণমাধ্যমে উদারপন্থিদের চাইতে রক্ষণশীল মানুষদের সংখ্যা কম তো নয়ই, বরং বেশি৷ তাঁরা আন্তর্জাতিকভাবে এই ধারাটিকে সামনে আনার চেষ্টা করছে৷’’
শামসুজ্জামান খান বলেন, ইসলামি বইয়ের চাহিদা বাজারে সবসময়ই রয়েছে৷ বরং ঢাকার চেয়ে কলকাতার মুসলমানদের মধ্যে এর চাহিদা বেশি৷ কিন্তু বাংলাদেশে এখনো মূল ধারার লেখকদের চাহিদা বেশি৷
এ বছর বইমেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের কযেকটি বই৷ এছাড়া হুমায়ুন আহমেদ, আনিসুল হক, মুনতাসির মামুন, সাদাত হোসাইন, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমদাদুল হক মিলন এবং তরুণ লেখক দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের বই প্রচুর বিক্রি হয়েছে৷ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বইও প্রচুর বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক৷ ইসলামি গ্রন্থ মেলাতেও ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়৷ মুসলিম অধ্যুষিত দেশে একে অস্বাভাবিকভাবে দেখার চেষ্টা করার সুযোগ নেই বলে মনে করেন ড. শামসুজ্জামান খান৷
Bangla Academy DG - MP3-Stereo
গ্রামীণ মুসলিম জনগোষ্ঠীর কাছে কাশেম বিন আবু বকরের বইগুলোর জনপ্রিয়তাকে ইতিবাচকভাবেই দেখেন শান্তনু মজুমদার৷ তিনি বলেন, ‘‘রক্ষণশীল পরিবারগুলোতে যেখানে প্রেম ভালোবাসার কথা বলাই পাপ, সেখানে তাঁরা এ সব বই পড়ছেন৷ তাতে তাঁদের সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটছে৷’’
ড. শামসুজ্জামান খান ও শান্তনু মজুমদার মনে করেন, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদসহ উগ্র ইসলামপন্থার বিকাশ ঘটেছে৷ কিন্তু তার সঙ্গে কোনোভাবেই ইসলামি বই বেশি বিক্রি হওয়ার সম্পর্ক খোঁজার যৌক্তিক কারণ নেই৷ এছাড়া বাংলাদেশ ধীরে ধীরে আফগানিস্তান বা মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের মতো কট্টরপন্থি হয়ে যাচ্ছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার সময় আসেনি বলে মত তাঁদের৷
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭
ঢাকার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যান প্রাঙ্গণে চলছে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা৷ পয়লা ফেব্রুয়ারি এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ ছবিঘরে উঠে এসেছে মেলার জানা অজানা নানা কথা৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রতিষ্ঠাতা চিত্তরঞ্জন সাহা
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘মুক্তধারা’-র স্টল৷ নিজের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গঠনের পরের বছরই চিত্তরঞ্জন সাহার হাত ধরেই শুরু হয়েছিল একুশে গ্রন্থমেলার৷ দিনটি ছিল ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়সের সমান তাই গ্রন্থমেলার বয়সও৷
ছবি: DW/M. Mamun
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
এ বছর একুশে গ্রন্থমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ ভালো৷ প্রতিটি প্রবেশপথেই দর্শণার্থীদের তল্লাশি করেন পুলিশ সদস্যরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রবেশ পথ
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বেশ কয়েকটি প্রবেশপথ থাকায় এ বছর মেলার প্রবেশ পথে আগের বছরগুলোর তুলনায় দর্শকদের দীর্ঘ সারি কম ছিল৷
ছবি: DW/M. Mamun
সব্যসাচী লেখকের অনুপস্থিতি
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চারুলিপি প্রকাশনের স্টলে কবি সৈয়দ শামসুল হকের ছবি৷ এ বছর থেকে আর কখনো একুশের গ্রন্থমেলায় পাঠকরা দেখতে পাবেন না সব্যসাচী এই লেখককে৷ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
না থেকেও আছেন হুমায়ূন
সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়নে হুমায়ূন আহমেদের ছবি৷ গত পাঁচ বছর ধরে মেলায় তাঁর উপস্থিত না থকালেও পাঠকদের কাছে তিনি আজও সমান সমাদৃত৷
ছবি: DW/M. Mamun
জাগৃতি প্রকাশনী
ফয়সাল আরেফিন দীপনের জাগৃতি প্রকাশনীতে তাঁর স্ত্রী রাজিয়া রহমান জলি৷ দীপন চলে যাওয়ার পর প্রকাশনীটির হাল ধরেছেন তিনি৷ এ বছর জাগৃতি প্রকশনী থেকে তিনি প্রকাশ করেছেন ৫২টি নতুন বই৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রতিদিন নতুন বই
প্রতিদিনই মেলায় আসছে নতুন নতুন বই৷ বাংলা একাডেমির তথ্যমতে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলায় আসা নতুন বইয়ের সংখ্যা ২,৭৪৫৷
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় সেলফি তুলছেন মাদ্রাসার দুই শিক্ষার্থী৷
ছবি: DW/M. Mamun
ছুটির দিনে উপচে পড়া ভিড়
ছুটির দিনগুলোতে গ্রন্থমেলায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়৷ সাধারণ দিনগুলোতে মেলার দুয়ার বিকেল ৩টায় খোলা হলেও শুক্র ও শনিবারে মেলা শুরু হয় বেলা ১১টা থেকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়ন
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্থায়ী বিক্রয় কেন্দ্র ছাড়াও মেলার দু’টি চত্ত্বরে আরো দশটি প্যাভিলিয়ন ও স্টল থেকে পাঠকরা কিনতে পারবেন বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই৷
ছবি: DW/M. Mamun
নতুন বইয়ের স্টল
এবারের মেলায় নতুন বইয়ের একটি স্টল চালু করেছে বাংলা একাডেমি৷ মেলায় প্রকাশ হওয়া প্রতিদিনের নতুন সব বই একই জায়গায় চোখ বোলানোর সুযোগ পাচ্ছেন পাঠকরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের স্টল
দিনাজপুরের কান্তনগর মন্দিরের আদলে তৈরি এ স্টলটি নজর কেড়েছে সবার৷
ছবি: DW/M. Mamun
গ্রন্থমেলার পরিসর
সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে গ্রন্থমেলার একটি প্যাভিলিয়ন৷ এবারের গ্রন্থমেলায় একাডেমি চত্বরে ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে ১১৪টি ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ৩২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৪৯টি ইউনিটসহ মোট ৪০৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৬৩টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
একাডেমির প্যাভিলিয়ন রয়েছে দু’টি
এর বাইরে বাংলা একাডেমিসহ ১৪টি প্রকাশনা সংস্থাকে মোট ৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১৫টি প্যাভিলিয়ন দেয়া হয়েছে৷ এরমধ্যে একাডেমির প্যাভিলিয়ন রয়েছে দু’টি৷
ছবি: DW/M. Mamun
শিশু প্রহর
প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে ১.৩০ মিনিট শিশু প্রহর৷ মেলার এ সময়টি শুধুই শিশুদের জন্য৷
ছবি: DW/M. Mamun
জনপ্রিয় লেখক
অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে লেখক জাফর ইকবালকে ঘিরে ভক্তরা৷ অটোগ্রাফ নেয়ার পাশাপাশি ভক্তরা লেখকের সঙ্গে সেলফি তোলার সুযোগও হাতছাড়া করছেন না৷
বাংলা একাডেমির মঞ্চে মেলার প্রতিদিনই থাকছে আলোচনা অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান৷ ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি-সমকালীন প্রসঙ্গ এবং বিশিষ্ট বাঙালি মনীষার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ফুড কোর্ট
এবারের মেলায় বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বসেছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ফুড কোর্ট৷ ফলে মেলায় আগত দর্শনার্থীরা ভালো মানের খাবার পাচ্ছেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
21 ছবি1 | 21
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷