প্যারিসে ভয়াবহ হামলার প্রেক্ষাপটে জঙ্গি অর্থায়নের সঙ্গে যুক্ত ৪০টি দেশের নাম প্রকাশ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ৷সেখানে বাংলাদেশ না থাকলেও,কয়েকটি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও দাতব্য সংস্থার বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ আছে৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/Medyan Dairieh
বিজ্ঞাপন
[No title]
This browser does not support the audio element.
গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশের তিনজন আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব৷ তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, তাঁরা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডকে ৷ তাঁরা ঐ সংগঠনটিকে ব্যাংকের মাধ্যমে মোট এক কোটি আট লাখ টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করে ব়্যাব৷ এই তিনজন আইনজীবী হলেন – ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, লিটন এবং বাপন৷
বাংলাদেশের তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান – ইসলামী ব্যাংক, এইচএসবিসি ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড বা এসআইবিএল-এর বিরুদ্ধেও আছে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ৷ যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটির এক প্রতিবেদনেও এই তিনটি ব্যাংকের মাধ্যমে মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে৷
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক প্রতিবেদনে জানায়, ‘‘ইসলামী ব্যাংকে এমন কিছু অ্যাকাউন্ট হোল্ডার পাওয়া গেছে, যাঁদের নাম ছিল জাতিসংঘের সন্দেহের তালিকায়৷ এ সব অ্যাকাউন্টের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ‘লুকিয়েছিল' ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ৷''
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
এছাড়া অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাতও তাঁর গবেষণায় বলেছেন, ‘‘ইসলামী ব্যাংক জামায়াত নিয়ন্ত্রিত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান৷ এই ব্যাংক নানা ধরণের অদৃশ্য খাতে অর্থ খরচ করে৷ তাই তাদের পক্ষে জঙ্গি অর্থায়ন অসম্ভব কিছু না৷''
সরকার জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে ২০১২ সালে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ অধ্যাদেশ, সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন অধ্যাদেশ-২০১২ এবং অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা অধ্যাদেশ-২০১২ নামে তিনটি অধ্যাদেশ জারি করে৷
এছাড়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন সম্পর্কিত মামলা দায়েরের জন্য দু'টি পৃথক যৌথ তদন্ত ইউনিট গঠন করা হয়েছে৷ যৌথ এ তদন্ত ইউনিটে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ইন্টেলিজেন্স ইউনিট রয়েছে৷
এদিকে মুদ্রা পাচার ও জঙ্গি বা সন্ত্রাসী অর্থায়ন বন্ধে বাংলাদেশের নেয়া পদক্ষেপের সত্যতা যাচাইয়ে গত অক্টোবর মাসে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি) অন মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত একটি বিশেষজ্ঞ দল প্রায় দু'সপ্তাহ ঢাকায় অবস্থান করে৷ তারা জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের সক্ষমতা নিয়ে তখন প্রশ্নও তোলে৷
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে জঙ্গি অর্থায়ন হয় প্রধানত ইনফর্মাল সেক্টরের মাধ্যমে৷ কয়েকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক তা এখনো তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারেনি৷ তাই জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে এদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থের লেনদেন পর্যন্ত ব্যাংক নজরদারি করতে পারে৷ তবে কোন খাতে শেষ পর্যন্ত এই অর্থ ব্যবহার করা হয়, তা বের করার মতো গোয়েন্দা দক্ষতা এখনো বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর হয়নি৷''
তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংক-এ জঙ্গি অর্থায়ন বিরোধী ইন্টেলিজেন্স সেল গঠন করা হয়েছে৷ এটা নিয়ে দুদক কাজ করছে, কাজ করছে পুলিশের বিশেষ তদন্ত বিভাগও৷ তবে তাদের দক্ষ হতে সময় লাগবে৷''
বাংলাদেশে কি সত্যিই জঙ্গি অর্থায়ন হচ্ছে? আপনি কি শুনেছেন এমন কিছু? জানান নীচের ঘরে৷