‘ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী'দের বিরুদ্ধে আরো মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
যাঁদের মারা হচ্ছে তাঁদের প্রায় সবাই মুসলমান৷ যাঁদের ধর্ষণ করা হচ্ছে সেই নারীরাও মুসলমান৷ তাই বারাক ওবামা মনে করেন, ওই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই মানে ইসলামের বিরুদ্ধে নয়, বরং ইসলামের অপব্যাখ্যাকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই৷
বিজ্ঞাপন
সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইরত বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র দেয়ার জন্য একটা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তুরস্ক৷ কয়েক মাস ধরেই দু'দেশের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা চলছিল৷ অবশেষে বৃহস্পতিবার আঙ্কারায় চুক্তি সাক্ষরিত হলো৷
তবে আঙ্কারার চুক্তি স্বাক্ষরের খবরকে ছাপিয়ে গেছে ইসলামি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বারাক ওবামার বক্তব্য৷ বুধবার হোয়াইট হাউজে শুরু হয়েছে ধর্মীয় উগ্রপন্থাবিরোধী তিন দিনের এক বিশেষ সম্মেলন৷ সম্মেলনে বিশ্বের ৬৫ টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন৷ সম্প্রতি পাশ্চাত্যের কয়েকটি দেশে সন্ত্রাসী হামলার পর ধর্মীয় উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়৷ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন বক্তব্য রাখেন৷
ইসলামের নামে বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান ওবামা৷ যুক্তরাষ্ট সিরিয়া ও ইরাকে আইএস-এর বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালাচ্ছে৷ পাশ্চাত্য এবং মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়া, ইরাক ও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোও অংশ নিচ্ছে সেই হামলায়৷ হামলা শুরুর পর থেকে আইএস-এর অগ্রযাত্রা অনেকটাই ব্যাহত৷ তবে ওবামা মনে করেন, শুধু যুদ্ধ করে আইএস এবং বিশ্বের অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনকে হারানো যাবে না৷
নির্দয়, নিষ্ঠুর, বিভৎস সন্ত্রাস চালিয়েও ইসলামি জঙ্গিরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই দাবি করে – ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশ৷ ওবামা বলেন, এটা চরম মিথ্যাচার৷ ইসলাম সন্ত্রাসকে অনুমোদন করে না৷ সুতরাং ইসলামের নামে সন্ত্রাস করলে আর সেই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামলে সেটা কখনোই ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই হতে পারে না, এটা শুধুই ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই৷
সম্মেলনে নিজের বক্তব্যে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনও উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে একতাবদ্ধ হবার আহ্বান জানান৷ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সকল পেশার মুসলমানদেরও শরিক হওয়ার আহ্বান জানান৷ তিনি বলেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করা, তাদের অপপ্রচারকে মোকাবেলা করা সব মুসলমানেরও দায়িত্ব৷ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই কোনো অঞ্চলের বিরুদ্ধে অন্য কোনো অঞ্চলের, কিংবা কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে কোনো অঞ্চল বা দেশের লড়াই নয় বলেও মন্তব্য করেন জাতিসংঘের মহাসচিব৷
হত্যা, আতঙ্ক আর ঘৃণায় আইএস
শুধু ইরাক আর সিরিয়া নয়, আজকাল বিশ্বের অনেক দেশেই ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর তৎপরতার কথা শোনা যায়৷ খেলাফত কায়েমের কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা জঙ্গি সংগঠনটিকে নিয়েই আমাদের আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
তাদের কাছে নারী যেন বাজারের পণ্য
অনেক সময় আটক নারী ও শিশুদের আইএস জঙ্গিরা যৌন দাস হিসেবে ব্যবহার করে৷ সম্প্রতি আইএস-এর কবল থেকে পালিয়ে আসা ৪০ জনেরও বেশি ইয়াজিদি নারীর সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ নারী ও শিশুদের সঙ্গে আইএস-এর এমন আচরণে নিন্দা জানিয়েছেন সবাই৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
সাংবাদিক, এনজিওকর্মী হত্যা করে হুমকি
তাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা বন্ধ না করায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে নিরপরাধ মানুষ হত্যার বেশ কিছু নজীর গড়েছে আইএস৷ বিমান হামলার প্রতিশোধের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন সাংবাদিক, একজন এনজিও কর্মী এবং ব্রিটেনের দু’জন এনজিও কর্মীর শিরশ্ছেদ করেছে তারা৷ ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক জেমস ফলিকে৷ গত আগস্টে তাঁর শিরশ্ছেদ করে ভিডিওচিত্র প্রচার করে আইএস৷
ছবি: dapd
মুসলমান হলেও রক্ষা নেই....
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সিরীয় শরণার্থীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন পিটার কাসিগ৷ মুসলমান হিসেবে তাঁর নাম হয়েছিল আব্দুল রহমান কাসিগ৷ গত নভেম্বরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় তাঁকেও হত্যা করে আইএস৷ হত্যার পর ভিডিও চিত্রও প্রকাশ করা হয়৷ নৃশংস এ ঘটনাকে ‘শয়তানের কাজ' হিসেবে বর্ণনা করেন বারাক ওবামা৷
ছবি: picture-alliance/AP/Kassig Family
জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি, তারপর...
জাপানের দুই নাগরিককে জিম্মি করে প্রথমে ২০০ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করে আইএস৷ মুক্তিপণ না পাওয়ায় হারুনা ইউকাওয়াকে হত্যা করলেও সাংবাদিক কেনজি গোতোকে আটকে রাখে৷ গোতো এবং জর্ডানের বৈমানিক আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে জিম্মি করে তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে জর্ডানে আটক আইএস-এর এক নারী যোদ্ধার মুক্তি দাবি করা হয়৷ তাঁকে মুক্তি না দেয়ায় কেনজি গোতো এবং আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে হত্যা করে আইএস৷
ছবি: Reuters/www.reportr.co via Reuters TV
ইরাকে শুরু....
গত বছরের জুন মাসে ঝটিকা আক্রমণের ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় আইএস৷ সুন্দিদের এই জঙ্গি সংঠনটি তারপর ইরাকের বেশ বড় একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে৷ সিরিয়াতেও দখল করে নেয় কিছু এলাকা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বাংলাদেশেও তৎপর আইএস...
আইএস সরাসরি যুদ্ধ করছে ইরাক আর সিরিয়ায়৷ যোদ্ধা সংগ্রহ করা হচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্ত থেকে৷ জার্মানি, বৃটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে জঙ্গি মনোভাবাপন্নরা গিয়েছে ইরাক, সিরিয়ায়৷ এশিয়ার দেশগুলোতেও তৎপর আইএস৷ বাংলাদেশেও আইএস সমর্থক সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজনকে৷
ছবি: Reuters
জুতার নীচে আইএস!
আইএস-এর প্রতি ঘৃণাও বাড়ছে সারা বিশ্বে৷ ইরাকের স্থপতি আকীল খ্রীফ তো আইএস জঙ্গিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে বেছে নিয়েছেন অভিনব এক উপায়৷ পুরোনো জুতা সংগ্রহ করে তার নীচে জুতার পরিত্যক্ত ফিতা, বোতাম ইত্যাদি দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন আইএস জঙ্গিদের চেহারার আদল৷ আকীল খ্রীফ মনে করেন, আইএস জঙ্গিদের স্থান জুতার নীচেই হওয়া উচিত৷
ছবি: Armend Nimani/AFP/Getty Images
বৈমানিককে পুড়িয়ে মারা এবং জর্ডানের ‘প্রতিশোধ’
আটক নারী যোদ্ধাকে মুক্তি না দেয়ায় জর্ডানের বৈমানিক আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারে আইএস৷ ক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা ব্যবস্থা নিতেও দেরি করেনি জর্ডান৷ আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে (ওপরের ছবি) হত্যা করে আইএস ভিডিও প্রকাশের পরই তাদের নারী যোদ্ধা সাজিদা আল-রিশোয়াই ও আরেক কর্মীকে ফাঁসিতে ঝোলায় জর্ডান সরকার৷