ব্রিটেনে বসবাসরত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চৌধুরী মইনুদ্দীনের বিরুদ্ধে আইএস জঙ্গি তৈরিতে ভূমিকা রাখার অভিযোগ উঠেছে৷ তবে জার্মানিতে আইএস-এর সে দেশে আক্রমণের হুমকির বিষয়টি নিয়েই চলছে আলোচনা৷
ছবি: picture-alliance/abaca/Yaghobzadeh Rafael
বিজ্ঞাপন
জার্মানি আক্রমণের হুমকি দিয়ে ভিডিও প্রকাশ করেছে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস৷ বুধবার প্রকাশিত এ ভিডিওতে জার্মানি আক্রমণের হুমকির পাশাপাশি জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকেও এক হাত নিয়েছে আইএস-এর হয়ে কথা বলা দুই তরুণ৷ ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের ওই দুই সমর্থক ভিডিওতে জার্মান ও আরবি ভাষায় কথা বলেছেন৷ এদিকে বুধবারই স্টুটগার্ট শহর থেকে দুই আইএস সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷
ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের ফেসবুক পাতায় আইএস-এর এই জার্মানি আক্রমণের হুমকির খবরটি শেয়ার করা হয়৷ অনেক পাঠক-বন্ধুই মন্তব্য করেছেন সেখানে৷ নির্বিচারে মানুষ হত্যা আর বর্বরতার জন্য আইএস-এর সমালোচনা করেছেন কয়েকজন৷
জুবায়ের ইসলাম লিখেছেন, ‘‘ওরা (আইএস) যে সন্ত্রাসী এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ ইসলাম মানে শান্তি৷ অথচ তাদের কাজকর্মের শান্তির সঙ্গে কোনো সম্পর্কই নেই৷''
জার্মানিতে জঙ্গিবাদ
তারা তরুণ, ধর্মান্ধ এবং জান্নাতে যেতে চায়৷ জার্মানিতে এমন প্রায় ৫০০ ইসলামি জঙ্গি আছে যারা যে-কোনো ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছে নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ বিষয়টি বেশ ভাবিয়ে তুলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Boris Roessler
ব়্যাপার থেকে জিহাদি
ডেনিশ কুসপার্ট এর বাবা জার্মান এবং মা ঘানার৷ তাঁর জন্ম ১৯৭৫ সালে বার্লিনে৷ ইসলামিক স্টেটের অন্যতম জিহাদিস্ট এই ব়্যাপার ডেসো নামেও পরিচিত৷ ২০১২ সালের শেষ থেকে সিরিয়ায় আছেন কুসপার্ট৷ তার লক্ষ্য হলো জার্মানির সালাফিস্টদের জিহাদি হওয়ার পথে নিয়ে যাওয়া৷ চলতি মাসের প্রথম দিকে শিরশ্ছেদের নতুন ভিডিওতে দেখা গেছে তাকে৷ জার্মান সরকার জাতিসংঘের সন্ত্রাসী তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করার ইচ্ছের কথা জানিয়েছে৷
ছবি: twitter.com
শরিয়া পুলিশ
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ভুপার্টাল শহরের রাস্তায় রাস্তায় এদের দেখা যায়৷ মুসলিম তরুণরা যাতে জুয়া না খেলে, মদ না খায় এবং গান না শোনে তার নির্দেশ দেয় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
অভিবাসী জঙ্গি
জার্মানিতে অন্তত কয়েক হাজার ইসলামপন্থি রয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকশ জনকে জঙ্গি হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ অনেকেই অভিবাসীদের সন্তান, যারা জার্মানিতে এসে একই সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে একতাবদ্ধ হতে গিয়ে এমন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে৷ আর কিছু আছে যারা ধর্মান্তরিত হয়ে এ পথে এগিয়ে যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নাইন ইলেভেন হামলা
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে যে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছিল, তার একটা অংশের পরিকল্পনা হয়েছিল জার্মানির হামবুর্গে৷ নাইন ইলেভেন হামলার সঙ্গে জড়িত চার পাইলটের তিনজন সহ আরও ছয় ব্যক্তি হামবুর্গের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন৷ ছবিতে উপরে মাঝখানে যিনি আছেন তিনি আত্মঘাতী বিমান চালক মো. আত্তা৷ নীচে বামদিকে যাকে দেখা যাচ্ছে তিনি মুনীর এল-মোতাস্সাদেক, যাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/lno
সুটকেস বোমা
২০০৬ সালে লেবাননের শিক্ষার্থী জিহাদ হামাদ এবং ইউসুফ আল হাজদিব কোলন শহর থেকে হাম ও কোবলেনৎস শহরে যাওয়ার দুটি ট্রেনে সুটকেস বোমা হামলার পরিকল্পনা করেছিল৷ তবে সেটা ব্যর্থ হয়েছিল৷ হামাদকে এখন বৈরুতে ১২ বছর জেল খাটতে হচ্ছে৷ আর আল হাজদিব জার্মানিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছে৷
ছবি: AP
সারল্যান্ড সেল
২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে নর্থ রাইন ভেস্টফালিয়া রাজ্য থেকে তিন ব্যক্তিকে আটক করা হয়৷ তারা আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে জার্মান ও মার্কিন সামরিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করছিল৷ এদের ১২ বছর ধরে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷
২০১১ সালের মার্চে আরিদ উকা নামে এক জঙ্গি ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে গুলি চালিয়ে দুই মার্কিন সেনাকে হত্যা করে এবং হামলায় আরো দুই জন গুরুতর আহত হয়৷ উকার জন্ম কসোভোতে, সে বেড়ে উঠেছে জার্মানিতে৷ ফেসবুকে সে নিজেকে একজন ‘জিহাদিস্ট’ বলে উল্লেখ করেছে৷
ছবি: picture alliance / dpa
ড্যুসেলডর্ফের আল কায়েদা সেল
হালিল এ (মাঝে) কে আদালতে হাজির করা হয়েছিল ২০১১ সালের ডিসেম্বরে৷ অভিযোগ ড্যুসেলডর্ফের সন্ত্রাসী সেলের সঙ্গে যুক্ত তিনি৷ এই সেলের এক সদস্যের দাবি তিনি কোনো এক সময় আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের দেহরক্ষী ছিলেন৷ এই সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কটি জার্মানির বেশ কয়েক জায়গায় বড় আকারের সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করছিল৷ তবে ঐ সেলের চার সদস্যই এখন কারাগারে বন্দি৷
ছবি: dapd
সালাফিস্ট
জার্মানিতে সালাফিস্টদের সংখ্যা বাড়ছে৷ বর্তমানে এদের সংখ্যা অন্তত ৭,০০০ বলে ধারণা করা হয়৷ ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে তারা ইসলাম প্রচারের অংশ হিসেবে জার্মান ভাষায় অনুদিত কোরআন শরীফ বিনামূল্যে বিতরণ করে আসছে৷ তাদের লক্ষ্য আড়াই কোটি কোরআন বিতরণ৷ তবে সালাফিস্টদের মধ্যে আগ্রাসী মনোভাব কম৷ প্রায় ৫০০ সালাফিস্ট সিরিয়া এবং ইরাকের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ঘুরে এসেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Britta Pedersen
বন শহরে হামলা
২০১২ সালের ডিসেম্বরে বন এর কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনে একটি নীল রং এর ব্যাগে বোমা পাওয়া গিয়েছিল৷ এই হামলার পেছনে মার্কো জি এর হাত ছিল বলে জানা গেছে৷ ওলডেনব্যুর্গ এ বেড়ে ওঠা মার্কো ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আইএস
২০১৩ সালের জুলাইতে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে সিরিয়া গিয়েছিলেন ক্রেসনিক বি৷ জার্মানিতে ফেরার সময় বিমানবন্দরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ দোষ প্রমাণিত হলে তার অন্তত চার বছরের কারাদণ্ড হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Boris Roessler
11 ছবি1 | 11
সানজিদা খানও মনে করেন খেলাফত কায়েম করার কথা বললেও আইএস-এর সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই৷ তাঁর মতে, ‘‘আল্লাহ গুনাহগারদের ক্ষমা করেন না৷ কাউকে হত্যা করা গুনাহ৷ তার সাজা দোজখ৷ ইসলামে কোনো জায়গায় কারো ক্ষতি করার কথা বলা নেই৷ যে ধর্মে বলা আছে কোনো গরিব প্রতিবেশী না খেয়ে থাকলে তাঁকে খাওয়ানোর পর নিজেকে খেতে হবে, সে ধর্মে মানুষকে হত্যা করার কথা থাকতে পারে না৷''
সানজিদা মনে করেন, ‘‘ওরা (আইএস) নিজে ধর্ম বানিয়েছে, ওদের ধর্ম ইসলাম না৷ ইসলাম যারা অনুসরণ করে তারা দোজখ ভয় পায়৷ আল্লাহ তাদের সাজা দেবেন৷''
মনিরুজ্জামান আইএস-এর হুমকিকে খুব এক গুরুত্ব দেননি৷ তিনি মনে করেন, আইএস হুমকি দিলেও জার্মানি আক্রমণ তারা করবে না৷ তাঁর ভাষায় ‘‘জঙ্গিরা এটা করবে না৷ যত গর্জে তত বর্ষে না৷ এই আক্রমণে ওদের অস্তিত্ব বিলীন হবে৷''