তফসিল ঘোষণার পরে হবে, হলো না৷ সেনাবাহিনী নামলে হবে, তা-ও হলো না৷ ‘লেভেল প্লেইং ফিল্ড' বা ‘সমান সুযোগ' কথার কথা ছাড়া, এর আর কোনো তাৎপর্য দৃশ্যমান হলো না৷
বিজ্ঞাপন
একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছিল সবার প্রত্যাশা৷ তা অনেকটাই হয়েছে৷ সব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে৷ সেই অর্থে নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক ছিল৷ নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ থাকবে কিনা,ভোটার তার নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয়-সন্দেহ ছিল৷ সেটা যে এতটা কার্যকরভাবে দৃশ্যমান হবে,অনুধাবন করা যায়নি৷
নির্বাচনটি পরিপূর্ণ অংশগ্রহণমূলক দূরে থাক, লক্ষ লক্ষ ভোটে বাক্স ভরেছে, কিন্তু ভোটারকে ভোট দিতে হয়নি৷ বাংলাদেশে নির্বাচনের এ এক নতুন বাস্তবতা৷ যে বাস্তবতায় সরাসরি বলে দেওয়া মুশকিল যে, সন্ত্রাস করে কেন্দ্র দখল করা হয়েছে বা কারচুপি হয়েছে৷ তাহলে কী ঘটল নির্বাচনে?সে বিষয়ে দু-একটি কথা৷
১. খুলনা, গাজীপুর এমন কী বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে বর্তমান নির্বাচন কমিশন বলেছিল ‘চমৎকার' নির্বাচন৷ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নজিরবিহীন নৈরাজ্য দৃশ্যমান হয়েছিল সকাল এগারোটার মধ্যে৷ দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন বাতিল করে দিতে চেয়েছিলেন৷ অন্য কমিশনাররা আলোচনা করে একমতও হয়েছিলেন৷ বাতিল করা হয়নি এই যুক্তিতে যে, নির্বাচনি কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা বড়ভাবে বিঘ্নিত হতে পারে৷ তাঁদের প্রাণহানির আশঙ্কাও করা হয়েছিল৷ দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার তাঁর রিপোর্টে বিষয়টি বিস্তারিত লিখেছেন৷ প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে দেওয়া সেই রিপোর্ট প্রকাশ বা পর্যালাচনা করা হয়নি৷ ভোট গ্রহণের সময় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সচিব বলেছিলেন ‘নির্বাচন সুষ্ঠু' হয়েছে৷
একাদশ নির্বাচনের ১১ উক্তি
সহিংসতা, ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ, ভোট বর্জন, আগে-পরে ১৭ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ এই ছবিঘরে থাকছে নির্বাচন পরবর্তী কিছু প্রতিক্রিয়া৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nath
এখন আনন্দ মিছিলের সময় নয়: শেখ হাসিনা
কোনো জায়গায় কাউকে আনন্দ মিছিল না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ দেশের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ‘‘এখন আনন্দ মিছিল করার সময় নয়, দেশ গঠনের সময়৷’’
ছবি: Reuters/Bangladesh Sangbad Sangstha
পুনঃনির্বাচন দাবি করছি: ড. কামাল
কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন৷ রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিও জানান তিনি৷
ছবি: DW/Z. Ahmed
শেখ হাসিনায় জনগণ খুশি: ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মনে করেন, নির্বাচনে জনগণের ‘স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও গণজোয়ার’ প্রমাণ করেছে জনগণ প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ‘খুবই খুশি’ হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘সকাল থেকে সারা দেশে নারী, পুরুষ এবং তরুণ ভোটাররা ব্যাপকভাবে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েছেন৷’’
ছবি: bdnews24.com
প্রমাণ হলো ২০১৪ সালের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না: ফখরুল
নির্বাচনের নামে ‘নিষ্ঠুর প্রহসন’ করা হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে পাঁচ বছর আগের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিকই ছিল৷’’
ছবি: Bdnews24.com
ধানের শীষের এজেন্ট না এলে কী করা? : সিইসি
বিভিন্ন কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্ট নেই কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা করলেন পালটা প্রশ্ন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘ধানের শীষের এজেন্টরা কেন্দ্রে না আসলে কী করার? তাঁরা কেন্দ্রে কেন আসেননি বা কেন কোনো এজেন্ট নেই, সেটা প্রার্থীর নির্ধারিত এজেন্টরাই বলতে পারবেন৷’’
ছবি: bdnews24
বিএনপি এখন মুসলিম লীগের পথে: ইনু
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়েও বিএনপির নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য কর্মীদের অনাস্থাকে দায়ী করছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু৷ ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছেন, ‘‘দলটি এখন মুসলিম লীগের পরিণতির দিকে এগোচ্ছে৷’’
ছবি: privat
আওয়ামী লীগের ২৯৯ আসন গেজেট দিলেই হতো : আলাল
সকালে নির্বাচন শুরু হওয়ার সময়ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রত্যাশা ছিল বলে মন্তব্য বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের৷ তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনের নামে এই অর্থহীন তামাশার কোনো প্রয়োজন ছিল না৷ রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে একটা গেজেট জারি করে নিলেই হতো যে, নৌকা ২৯৯ আসন পেয়ে গেছে৷’’
ছবি: bdnews24.com
জনগণের রায় প্রত্যাখ্যানের অধিকার কারো নেই: নানক
আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক মনে করেন, বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্টকে প্রত্যাখ্যান করেছে জনগণ৷ তিনি বলেন, ‘‘জনগণের রায় প্রত্যাখ্যান করার অধিকার কারও নেই৷’’
ছবি: bdnews24.com
প্রতিশ্রুতি রেখেছি: পর্যবেক্ষকদের গওহর রিজভী
রোববারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার তার প্রতিশ্রুতি রেখেছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী৷ ভোটগ্রহণ শেষে ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকায় বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তিনি৷
ছবি: DW/ Zobaer Ahmed
শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ: ইসি সচিব
সারা দেশে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ৷ কমিশনের ফলাফল পরিবেশন কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা উদ্বোধন করে তিনি বলেন, ‘ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে’ নির্বাচন হয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com
আওয়ামী লীগও আমার মতো প্রার্থীকে ভয় পায়: হিরো আলম
বগুড়ার এক হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম৷ সিংহ প্রতীকে নির্বাচনে থাকা এ প্রার্থীর অভিযোগ, বিভিন্ন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের লোকজন ভোটারদের, এজেন্টদের বের করে দিয়েছে, নন্দীগ্রামে তাঁর ওপর হামলা হয়েছে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও তাঁকে কোনো সহায়তা করেনি৷
ছবি: YouTube/Little Big Films Bangladesh
11 ছবি1 | 11
বর্তমান নির্বাচন কমিশন ‘সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমূলক' নির্বাচনের একটি নিজস্ব ‘মানদণ্ড' তৈরি করেছে৷ সেই মানদণ্ড থেকে যে তারা বেরিয়ে আসবে না বা আসতে চায় না, তা গণমাধ্যম ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা করা ভোটাররা বিবেচনায় নেননি বা নিতে চাননি৷ তারা হয়ত ধরে নিয়েছেন ‘আগে যা-ই হয়ে থাকুক না কেন, এবার ঠিক হবে'৷
২. ঠিক হয়েছে কি হয়নি বা কতটা হয়েছে, সে বিষয়ে মন্তব্য না করে দু-একটি তথ্য উল্লেখ করলে বিষয়টি কিছুটা পরিষ্কার হতে পারে৷ গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে৷
খুলনা ১ আসনের মোট ভোটার ২,৫৯,৪২০ জন৷ নৌকা প্রতীক ভোট পেয়েছে ২,৫৩,৬৬৯, ধানের শীষ পেয়েছে ২৮,১৭০৷
নৌকা আর ধানের শীষের ভোট যোগ করলে হয় ২,৮১,১৭০, যা মোট ভোটারের চেয়ে ২২,৪১৯ ভোট বেশি৷
ভোটারের চেয়ে বেশি ভোট,কী করে সম্ভব? কাজটি কীভাবে হলো? কারা ভোট দিলেন? যত ভোটার তার চেয়ে একটি ব্যালট পেপারও বেশি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই৷ তাহলে বেশি ব্যালট পেপার কোথা থেকে এলো? এর ব্যাখ্যা কী? যদিও পরে এই ভুলটি সংশোধন করা হয়েছে, তারপরও এই ‘ভুলের' আসলে কোনো ব্যাখ্যা হতে পারে না৷
জনশ্রুতি ছড়িয়ে পড়েছে যে, ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয়েছিল৷ জনশ্রুতি নিয়ে যখন তর্ক-বিতর্ক চলছিল, তখন বিবিসি বাংলা একটি প্রমাণ হাজির করলো৷ ভিডিও চিত্রে দেখা গেল, ভোট গ্রহণ শুরুর আগেই ব্যালট বাক্সের অর্ধেক ভরা৷
বলা হতে পারে, এমন তো ঘটেছে দু-একটি জায়গায়৷ সামগ্রিক চিত্রের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই৷ এই যুক্তির পাল্টা যুক্তি দিতে চাই না৷ তবে পাঠক তাঁর মতো করে যুক্তি নিশ্চয় তৈরি করে নিতে পারবেন৷
৩. নির্বাচন কমিশন কোনো প্রকার রাখ-ঢাকের ধার ধারেনি৷ জনগণ বা গণমাধ্যমের দেখার চোখ আর নির্বাচন কমিশনের দেখার চোখ সম্পূর্ণ আলাদা৷ গ্রেপ্তার-হামলা-মামলার স্থির বা ভিডিও চিত্রের কোনো কিছুই নির্বাচন কমিশনের শক্তিশালী রঙিন চমশায় দেখা যায়নি৷ প্রধান নির্বাচন কমিশনার এক কথার মানুষ৷ শুরু থেকেই যা বলে এসেছিলেন ‘‘সমান সুযোগ তৈরি হয়েছে'' নির্বাচনের পর বলেছেন, ‘‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে৷'' ‘‘কোথাও কোনো সমস্যা ছিল না'', ‘‘তৈরি হয়েছিল উৎসবের পরিবেশ''৷ একজন নির্বাচন কমিশনার সাদা চোখে দেখে তাঁর মত প্রকাশ করেছেন৷ প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন ‘‘এই বক্তব্য অসত্য''৷
নির্বাচনের আগে সাংবাদিকদের পেটানো হয়েছে, গাড়ি- ক্যামেরা ভাংচুর করা হয়েছে৷ সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে সেই দৃশ্য দেখানো হয়েছে৷ নির্বাচন কমিশনের রঙিন চশমায় এসবের কিছুই ধরা পড়নি, দেখা যায়নি৷ নির্বাচনের দিনও সাংবাদিকরা নাজেহাল হয়েছেন৷ নির্বাচন কমিশন এসবের কিছুই দেখেননি৷
৪. এই দেখাদেখির বিষয়টির ইতি টানার উদ্যোগ নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন৷ তাদের চোখে যা ‘সুষ্ঠু-চমৎকার' নির্বাচন, দেশের মানুষকেও তেমনটাই দেখাতে চেয়েছে নির্বাচন কমিশন৷
নির্বাচন কমিশন যা দেখাতে চান না তেমন দৃশ্য যদি ধারণ করে ফেলেন সাংবাদিকরা, সে বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন নির্বাচন কমিশন৷ নির্বাচনের আগের রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল৷ স্থির বা ভিডিও চিত্র ক্যামেরায় ধারণ করলেও, তাৎক্ষণিকভাবে তা পাঠানো যেন না যায়৷ কথা ছিল, ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর মোবাইল ইন্টারনেট আবার চালু হবে৷ হয়েছিল, কিন্তু পরে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷
বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সহায়তা না করে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতায় সায় দিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ ভিসা জটিলতায় তারা আসতে পারেননি৷ যদিও ষাট জনের মতো বিদেশি গণমাধ্যম কর্মী এসেছেন৷ তাঁদেরও মোবাইলে ইন্টারনেটের সংযোগ না থাকায় জটিলতায় পড়তে হয়েছে৷
নির্বাচনের দিন যান চলাচল বন্ধ ছিল৷ ফলে কলাবাগান এলাকার ভোটার, যিনি এখন হয়ত বাসা বদল করে উত্তরায় চলে গেছেন, তাঁর পক্ষে কলাবাগান এলাকায় এসে ভোট দেওয়া সম্ভব হয়নি৷
৫. সব নির্বাচনে দেখা গেছে ভোটদানে মানুষকে উৎসাহিত করার নানাবিধ উদ্যেগ নেয় নির্বাচন কমিশন৷ এবার তার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র৷ মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে নির্বাচন কমিশন যুক্তি দেখিয়েছে, সব সঠিক ঘটনার মাঝে একটি ভুল সংবাদ সমস্যা তৈরি করতে পারে, যা যুক্তি হিসেবে অত্যন্ত দুর্বল৷
সত্য দেখব না, শুনব না, শুধু বলব ‘সব ঠিক' ‘চমৎকার' ‘সুষ্ঠু' – কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নীতি এমন হলে, নির্বাচন যেমন হওয়ার তেমনই হয়েছে৷
আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷
একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভোটাররা যা বললেন
বাংলাদেশে শেষ হলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ৷ কেমন ছিল নির্বাচন? দেখা যাক সাধারণ ভোটাররা কী বলেন...
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/A. Nath
আলী হোসেন
সত্তরোর্ধ আলী হোসেন জীবনে অনেক ভোট দেখেছেন, কিন্তু এবারের মতো ভোটের পরিবেশ জীবনে আর দেখেননি৷ জোর করে তাঁর ব্যালটে সিল মেরেছেন বুথের ভেতরে আগে থেকে অবস্থান করা অন্য একজন৷ শেষ বয়সে এসে হেনস্তা হওয়ার ভয়ে কিছুই বলতে পারেননি৷
ছবি: DW
এলিম মিয়া
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এলিম মিয়ার কেন্দ্রে ভোট হয়েছে ইভিএম পদ্ধতিতে৷ তিনি ৩০ জানুয়ারি সকালেই ভোট দিতে পেরেছেন৷ সকাল থেকেই কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষমান দেখেছেন তিনি৷ ভোটের পরিবেশও তাঁর কাছে সুষ্ঠু মনে হয়েছে৷
ছবি: DW
জুনায়েদ অমি
জীবনের প্রথম ভোটটি দিতে পেরে খুবই আনন্দিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী৷ ভোটের পরিবেশ বেশ ভালো বলে মনে হয়েছে তাঁর৷ তবে ভোট কেন্দ্রের আশপাশে ছাত্রলীগের কর্মীদের লাঠি হাতে উপস্থিতি এবং পুলিশের একপেশে ভূমিকা তাঁর ভালো লাগেনি৷
ছবি: DW
লামিয়া তাসনিম
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লামিয়া তাসনিম এবারই প্রথম ভোট দিলেন৷ বিষয়টি নিয়ে খুব উত্তেজিত ছিলেন৷ তবে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার পরও নিজের ভোটকেন্দ্র খুঁজে বের করতে তাঁর দুপুর পর্যন্ত সময় লেগেছে৷ কেন্দ্রে গিয়ে দেখেন ফটক বন্ধ৷ জানানো হয়, মধ্যাহ্ণবিরতি চলছে৷ কিন্তু ভোটের সময় তো কেন্দ্রে কোনো বিরতি থাকার কথা নয়৷ তাই অনেক বিতণ্ডা করে শেষ পর্যন্ত ভেতরে ঢুকে নিজের ভোটটি দিতে পেরেছেন৷
ছবি: DW
মোহাম্মদ মামুন
খুব সকাল সকালই ভোট দিতে পেরেছেন তরুণ ভোটার মোহাম্মদ মামুন৷ ভোটের পরিবেশ নিয়েও তিনি বেশ সন্তুষ্ট৷
ছবি: DW
নূরুল্লাহ
বেসরকারি চাকরিজীবী নুরুল্লাহের দাবি, ঢাকার একটি কেন্দ্রে তিনি ভোট দিতে গিয়েছিলেন দুপুর ১২টার দিকে৷ গিয়ে দেখেন তাঁর ভোট এর আগেই দেয়া হয়ে গেছে৷ ফলে ভোট তো দিতে পারেনইনি, উলটে ভোটকেন্দ্রের এজেন্টরা তাঁর সঙ্গে নাকি দুর্ব্যবহার করেছেন৷ ভোট না দিয়েই তাই ফিরে এসেছেন তিনি৷
ছবি: DW
মো. শাহ জালাল
পিরোজপুরের ভোটার মোহাম্মদ শাহ জালাল দশম জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন নৌকা মার্কায়৷ এবারও ভোট দিতে গিয়েছিলেন, তবে ব্যালটে নিজে সিল মারতে পারেননি৷ জানালেন, নৌকা মার্কার এজেন্টই তাঁর হাত থেকে সিল নিয়ে নৌকা মার্কার ওপরে মেরে দিয়েছেন৷
ছবি: DW
সিরাজুল ইসলাম
সিরাজুল ইসলাম এলাকায় বিএনপির সমর্থক হিসেবে পরিচিত৷ তাই আগে থেকেই নাকি তাঁকে ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল৷ তাঁর দাবি, ভয়ে আর তিনি ভোট দিতে যাননি৷