খসড়া আইন অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব পূরণের শর্ত আর থাকছে না৷ নির্বাচন কমিশনের এই ধরনের সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নারী নেতৃবৃন্দ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা৷
বিজ্ঞাপন
সংগঠনের সব পর্যায়ে ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ ভাগ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার শর্তে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে ২০০৮ সালে নিবন্ধন পেয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলো৷ কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলই এই শর্ত পূরণ করতে পারেনি৷ ফলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০ অনুচ্ছেদটি তুলে দিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক দলের জন্য নিবন্ধন আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন৷ এরইমধ্যে আইনের খসড়া ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে৷
নারী নেত্রী খুশি কবির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে নারীরা যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন এই ধরনের সিদ্ধান্ত নারীদের আবার পিছিয়ে দেওয়ার সামিল৷ ৫০ জন সংরক্ষিত নারী ছাড়াও ২০ জন নারী সরাসরি ভোটে এবার নির্বাচিত হয়ে এসেছেন৷ আমরা দেখেছি, যেখানে নারীদের সরাসরি ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, সেখানে নারীরা ভালো করেছেন৷ এখনো সংসদীয় কমিটিগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ কম৷ আরপিও'র বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হলে এই সব জায়গায় নারীদের অংশগ্রহণ আরো কমে যাবে৷ তখন বলা হবে, নারীদের যোগ্যতা নেই তাই তারা এখানে আসতে পারছেন না৷ এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের নারীরা আবারও সেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীতে পরিণত হবে৷ একটা কথা মনে রাখতে হবে, দেশে কিন্তু ৫১ শতাংশ ভোটার নারী৷ তাদের প্রতিনিধিত্ব ছাড়া দেশ এগুবে না৷’’
খুশি কবির
কেন এই আইন পরিবর্তন করা হচ্ছে, সেটার ব্যাখা দিয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন এখনো এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেনি৷ এটা সবার মতামতের জন্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে৷ মতামত পাওয়ার পরই চূড়ান্ত করা হবে৷ এই কাজটা নির্বাচন কমিশন নিজেরা করেনি৷ রাজনৈতিক দল থেকেই বলা হয়েছে, তাদের মূল দলের পাশাপাশি সহযোগী নারী সংগঠনও আছে৷ সেগুলোর নেতৃত্বে নারীরাই আছেন৷ এছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডেলিগেটদের ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়৷ এখন যদি ডেলিগেটরা নারীদের নির্বাচিত না করে তাহলে কি হবে? ২০০৮ সালে যখন আরপিও করা হয় তখন তাড়াহুড়ো করে এটা করা হয়েছিল৷ ফলে এমন অনেক কিছুই করা হয়েছিল, যা আসলে বাস্তব সম্মত নয়৷ এই কারণেই এটা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷’’
২০০৮ সালে নিবন্ধনের সময় রাজনৈতিক দলগুলোতে সর্বোচ্চ নারী নেতৃত্বের হার ছিল শতকরা ১০ ভাগ৷ আরপিওতে ১২ বছরে অর্থাৎ ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব বাধ্যতামূলক করা হয়৷ কিন্তু ১২ বছর পরও অবস্থার উন্নতি হয়নি৷
দক্ষিণ এশিয়ার সফল নারী রাজনীতিকরা
উন্নত দেশগুলোর তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর ক্ষমতায়নের হার কম৷ তবে এ অঞ্চল থেকেও উঠে এসেছেন অনেক নারী রাজনীতিবিদ৷ তাঁদের কারো কারো সাফল্য খুব উল্লেখযোগ্য৷ এমন নারী রাজনীতিবিদদের নিয়েই এই ছবিঘর...
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY
ইন্দিরা গান্ধী, ভারত
স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী ১৯৬৬ সালে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন৷ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া ইন্দিরা ভারতের ‘লৌহমানবী’ নামে খ্যাত৷ ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা ও পরে ১৯৮৪-তে ‘অপারেশন ব্লু স্টার’-এর মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের জন্য সমালোচিত হলেও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী নারী হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/KPA
শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ
বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা৷ ২০১৬ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের করা বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাশালী নারী তালিকায় ছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হাসিনা৷ সবচেয়ে বেশি সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকার রেকর্ডও তাঁর দখলে৷
ছবি: Reuters/A. Alfiky
খালেদা জিয়া, বাংলাদেশ
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে প্রথম নারী হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন৷ প্রথমবারে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ও পরে আবার ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন৷
ছবি: Bdnews24.com
বেনজির ভুট্টো, পাকিস্তান
১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ ও ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া বেনজির ভুট্টো কোনো মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী৷ সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী এই নেত্রী ২০০৭ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর দল ‘পাকিস্তান পিপলস পার্টি’র নেতৃত্ব দেন৷ রাজনীতির প্রথম পাঠ তিনি তাঁর পিতা, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর কাছে পেয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে, শ্রীলঙ্কা
বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন শ্রীলঙ্কার শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে৷ তিন দফায় (১৯৬০-৬৫, ১৯৭০-৭৭, ১৯৯৪-২০০০) দ্বীপ দেশটির দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷ শ্রীলঙ্কার সরকারী ভাষাকে ইংরেজি থেকে বদলে সিনহালা করার ফলে তিনি দেশের তামিল সংখ্যালঘুদের রোষের মুখে পড়েন৷
ছবি: picture alliance/Sven Simon
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারত
জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রেল, কয়লা, যুব, নারী ও শিশু বিষয়ক একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন পশ্চিমবঙ্গে প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
সোনিয়া গান্ধী, ভারত
প্রধানমন্ত্রী না হলেও ভারতের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক একটি নাম সোনিয়া গান্ধী৷ সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বামী রাজীব গান্ধী প্রয়াত হবার পর কংগ্রেসের দায়িত্বে আসেন তাঁর ইটালীয় বংশোদ্ভূত স্ত্রী সোনিয়া৷ ২০০৪ সালে সোনিয়ার নেতৃত্বেই কংগ্রেস দেশের ক্ষমতায় এলেও প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেন মনমোহন সিং-এর হাতে৷ প্রখর রাজনৈতিক বুদ্ধির কারণে তাঁর নাম স্থান পেয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের তালিকায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Hadebe
জয়ললিতা, ভারত
পাঁচ দফায় দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ভারতের তামিল নাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জয়ললিতা৷ জনসাধারণের কাছে ‘আম্মা’ বা মা নামে খ্যাত এই নেত্রী এককালে দক্ষিণী চলচ্চিত্রের নামকরা অভিনেত্রীও ছিলেন৷ ২০১৬ সালে ৫ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন৷
ছবি: Dibyangshu Sarkar/AFP/Getty Images
মায়াবতী, ভারত
উত্তর প্রদেশ-কেন্দ্রিক বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) মুখ্যত দলিত ও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের পার্টি৷ ২০০১ সালে দলের ভার নেন মায়াবতী৷ বিভিন্ন দলের সমর্থনে চারবার উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হন মায়াবতী৷ রাজ্যের প্রথম দলিত মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর নাম ভারতের সর্বোচ্চ করদাতাদের তালিকায় বেশ কয়েকবার উঠে এসেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Das
চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা, শ্রীলঙ্কা
১৯৯৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি ছিলেন চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা৷ এছাড়া নির্বাচন চলাকালীন সময়ে ১৯৯৪ সালে আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও তিনিই পালন করেন৷ দেশের প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মান ‘লিজোঁ অফ অনার’ পান ২০১৮ সালে৷ এই সম্মান পাওয়া প্রথম শ্রীলঙ্কার নাগরিক তিনিই৷
ছবি: picture-alliance/AP/Vincent Thian
হিনা রব্বানী খার, পাকিস্তান
২০১১- থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন হিনা রব্বানী খার৷ ৩৩ বছর বয়সি হিনা এই দায়িত্ব পেয়ে ইতিহাস গড়েন৷ পাকিস্তানে তিনিই প্রথম নারী হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী হয়ে দেশের সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হবারও রেকর্ড গড়েন৷ দেশে ও বিদেশে যুবপ্রজন্মের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বিষয়ে বক্তব্য রাখা এই নেত্রী বর্তমানে পাকিস্তানের সংসদ সদস্য৷
ছবি: dapd
সুষমা স্বরাজ, ভারত
মোট দশবার সাংসদ নির্বাচিত হওয়া প্রয়াত সুষমা স্বরাজ সবশেষ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন৷ রাজনীতিতে আসার আগে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুষমা মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে হরিয়ানার ক্যাবিনেট মন্ত্রী হন৷ ২০১৭ সালে মার্কিন পত্রিকা ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ বিজেপির এই রাজনীতিবিদকে ভারতের ‘সবচেয়ে প্রিয় রাজনীতিক’ আখ্যা দেয়৷ ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Singh
12 ছবি1 | 12
২০০৮ সালে আরপিও তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এটা খুবই খারাপ কাজ হবে৷ তারা তো ভালো কাজগুলো এক এক করে শেষ করে দিচ্ছে৷ তখন আমরা সবগুলো রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, নারী নেতৃত্বসহ সবার সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেই এটা চূড়ান্ত করেছিলাম৷ ১৬টি ইসলামিক দল তো এটা মানতেই চায়নি৷ এমনকি বড় রাজনৈতিক দলগুলোও মানতে চায়নি৷ তাদের আমরা রাজি করিয়েই এটা চূড়ান্ত করেছিলাম৷ ২০২০ সালে যদি এটা বাস্তবায়ন করা না যায় তাহলে সময় বাড়িয়ে ২০২৫ বা ২০৩০ সাল করা হোক৷ কিন্তু এটা প্রত্যাহার করা হলে নারীরা অবশ্যই পিছিয়ে পড়বে৷ শুধু চাকুরিতে বেশি করে নারীরা যুক্ত হলেই নারীর ক্ষমতায়ন হয় না৷ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে৷ এটা প্রত্যাহার হলে নারীদের সেই সুযোগের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে বলেই আমি মনে করি৷’’
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কমিটিতে ২৬ শতাংশ নারী সদস্য রয়েছেন৷ বিএনপির সব পর্যায়ের কমিটিতে ১৫ শতাংশ নারী সদস্য রয়েছেন৷ সেই তুলনায় এগিয়ে থাকা জাতীয় পার্টি-জাপার সব স্তরের কমিটিতে ২০ শতাংশ নারী নেতৃত্ব রয়েছে বলে দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে জানানো হয়েছে৷ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কমিটিতে নারী নেতৃত্বের হার আরও অনেক কম৷ যদিও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একমাত্র গণফ্রন্ট দাবি করেছে, দলটির সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রয়েছেন৷
রফিকুল ইসলাম
বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি মনে করি এই ধরনের সিদ্ধান্ত নারীদের পিছিয়ে দেওয়ার সামিল৷ আমার দল যেখানে নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে৷ আমাদের দলে দিন দিন নারী নেতৃত্ব বাড়ছে৷ আমরা অবশ্যই দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব৷ নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে এটা কোনভাবেই করা উচিত হবে না৷ এটা খারাপ দৃষ্টান্ত হবে৷’’
বিএনপির এই সাংসদের সঙ্গে অনেকটাই একমত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদিকা অপু উকিল৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্বের যে বাধ্যবাধকতা আছে সেটা বাদ দেওয়া একেবারেই ঠিক হবে না৷ রাজনৈতিক দলগুলো যদি ২০২০ সালের মধ্যে এটা পূরণ করতে না পারে তাহলে সময় বাড়িয়ে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দেওয়া হোক৷ কিন্তু আইনের মধ্যে বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করেন৷ তিনি দলের মধ্যে নারী নেতৃত্ব ২৫ শতাংশে নিয়ে এসেছেন৷ আর কিছুদিন সময় পেলে অবশ্যই এটা ৩৩ শতাংশে উন্নীত হবে৷’’
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটার এখনো কিছুই হয়নি৷ একজন কমিশনার প্রস্তাব করেছেন৷ তার ভিত্তিতে কমিশনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে৷ আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এখানে সর্বস্তরের মানুষ মতামত দিতে পারবেন৷ দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় যদি নির্ধারিত তারিখের মধ্যে খুব বেশি মতামত না পড়ে তাহলে সময় বাড়ানোর কথাও চিন্তা করতে পারে কমিশন৷ সবার মতামতের ভিত্তিতেই কমিশন এটা চূড়ান্ত করবে৷’’
আন্দোলনের নেতৃত্বে নারী
নারীদের প্রতিনিয়ত সম অধিকারের দাবিতে লড়াই চালিয়ে যেতে হয়৷ সরকার বিরোধী নানা আন্দোলনেও পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাস্তায় নামে নারী৷ কখন কখন আন্দোলনের নেতৃত্বেও তাদের দেখা যায়৷
ছবি: picture alliance/abaca
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে রাস্তায় ভারতীয় নারীরা
ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মূল টার্গেট দেশটির মুসলমান জনগোষ্ঠী৷ এরকম বৈষম্যমূলক একটি আইনের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে জোর আন্দোলন শুরু হয়৷ সব ভয় উপেক্ষা করে নারীরা সামনে থেকে ওই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন৷
ছবি: DW/M. Javed
‘ফ্যাসিবাদের’ বিরুদ্ধে নারী
পার্লামেন্টে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল উত্থাপন করে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি হুমকির মুখে ফেলে দেওয়ায় ভারতের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে৷ ওই আন্দোলনে ছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত৷
ছবি: DW/M. Krishnan
হিজাব খুলে প্রতিবাদ
কট্টর শরিয়া আইন অনুসরণ করা দেশ ইরানে নারীদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক৷ কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অনেক নারী হিজাব খুলে সরকারের ওই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন৷ নানা দমন পীড়নের শিকার হওয়ার পরও দেশটির বড় বড় নগরীতে নারীদের এ প্রতিবাদ চলছে৷
ছবি: picture-alliance/abaca/SalamPix
সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
ইরানে সাধারণ মানুষের বাকস্বাধীনতাই হরণ করা হয়েছে৷ সেখানে নারীদের সমঅধিকার বা বাকস্বাধীনতার দাবি কঠোর ভাবে দমণের শিকার হওয়াটাই স্বাভাবিক৷ তারপরও দেশটির সব আন্দোলনে নারীদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Roberson
পাকিস্তানের নারীরা বললেন ‘যথেষ্ট হয়েছে’
পাকিস্তানে সাধারণত নারীদের সমঅধিকারের দাবিকে ‘পশ্চিমা আগ্রাসন’ বা ‘এনজিও মাফিয়া’ বলে বিদ্রুপ করা হয়৷ সমাজের বড় একটি অংশ নারীবাদীদের অচ্ছুত ভাবে৷ এত বাধার পরও পাকিস্তানের নারীরা ধীরে ধীরে আওয়াজ তুলতে শুরু করেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Raza
বৃহৎ সামাজিক আন্দোলন
সমঅধিকারের আন্দোলন ছাড়াও পাকিস্তানের নারীরা লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা, বাল্যবিবাহ এবং ‘অনার কিলিং’ এর মত সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন৷ গণতন্ত্র রক্ষায় নানা আন্দোলনেও তাদের সক্রিয় উপস্থিতি দেখা যায়৷
ছবি: DW/T. Shahzad
ছোট্ট মিছিলের বড় প্রভাব
পাকিস্তানের প্রতিবেশী আফগানিস্তানেও নারীদের সমঅধিকারের দাবি কখনোই বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারনি৷ গত কয়েক দশক ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে শান্তি ফেরানোই যেখানে মূল লক্ষ্য সেখানে নারীদের অধিকার নিয়ে আলাদাভাবে কথা হয় না৷ তারপরও দেশটির নারীদের মাঝেমধ্যে নিজেদের অধিকারের দাবিতে রাস্তায় নামতে দেখা যায়৷
ছবি: DW/H.Sirat
কী পাচ্ছেন আফগান নারীরা
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে তালেবানের সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে আফগানিস্তানে শান্তি ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷ কিন্তু যদি আবারও তালেবান দেশটির ক্ষমতায় চলে আসে তবে আফগান নারীরা এখন যেটুকু অধিকার পাচ্ছেন সেটুকুও কেড়ে নেওয়া আশঙ্কা রয়েছে৷