লুহানস্কের ইসেচানস্ক শহর থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিল ইউক্রেন। তারা জানিয়েছে, শহর রক্ষার লড়াই চালিয়ে গেলে ফল মারাত্মক হতো।
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়ে দিয়েছেন, ইসেচানস্ক থেকে সেনা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ভিডিও ভাষণে তিনি বলেছেন, নতুন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শহরটি আবার দখল করা হবে।
রাশিয়া আগেই জানিয়েছিল, পুরো লুহানস্ক তারা দখল করে নিয়েছে। ইসেচানস্ক তাদের দখলে এসেছে। জেলেনস্কিও মেনে নিলেন, পূর্ব লুহানস্কের ইসেচানস্ক থেকে সেনা সরে এসেছে। জেলেনস্কি বলেছেন, ফ্রন্টের কিছু জায়গায় শত্রুরা সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল। তারা ওখান থেকে গোলাগুলি চালাতে পারতো। তবে তারা এখন প্রচুর আধুনিক অস্ত্র পাচ্ছেন বলে জেলেনস্কি জানিয়েছেন।
দনেৎস্কে গোলা
রোববার দনেৎস্কের কিছু এলাকায় সমানে গোলাবর্ষণ করেছে রাশিয়া। এর ফলে অন্ততপক্ষে ছয় জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ১৫ জন। লুহানস্ক দখর করে নেয়ার পর রাশিয়া এবার দনেৎস্কও পুরোপুরি দখলের চেষ্টা করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ক্যামেরায় ইউক্রেনের ধ্বংসস্তূপে আগামীর স্বপ্ন
যুদ্ধের সময়েও ইউক্রেনের মানুষ ভেঙে পড়েনি৷ তাই ধ্বংসযজ্ঞ আর মৃত্যুর মিছিলের মাঝেও চলছে স্বপ্ন রচনা৷ ফটোগ্রাফার স্তানিস্লাভ সেনিকের ক্যামেরায় চেরনিহিভের ধ্বংসস্তূপে স্কুল পরীক্ষার্থীদের ছবিগুলো সে কথাই বলে...
ছবি: Instagram/@senykstas
ধ্বংসস্তূপে অন্যরকম পরীক্ষা
যুদ্ধ শুরুর পর অনেকেই ইউক্রেন ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন৷ তবে যারা দেশ ছাড়েননি, তারা হয় দেশরক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন, নয়ত নিজেকে তৈরি রাখছেন, তৈরি করছেন দেশ পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখার জন্য৷ যুদ্ধের মাঝেও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষার্থীরা৷ ধ্বংসপ্রায় চেরনিহিভের শিক্ষার্থীরা স্কুল ফাইনালও দিয়েছে৷ তাদের কয়েকজনকে নিয়ে স্তানিস্লাভ সেনিকের ফটোশুটটাও ছিল অন্যরকম এক পরীক্ষা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
অচেনা রূপে চেনা শহর
এই দুই কিশোরীর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর চেরনিহিভেই জন্ম, বেড়ে ওঠা৷ তাদের প্রিয় শহর আজ রুশ হামলায় ধ্বংসপ্রায়৷ তবে ধ্বংসপ্রায় শহরটিও তাদের প্রিয়৷ এই শহরকে নতুন করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে তারা৷ স্তানিস্লাভ সেনিকের আইডিয়াটা তাই পছন্দ হয়েছে তাদের৷ বোমায় ভেঙে পড়া এক ভবনেই তাই ফটোশুটে অংশ নিয়েছে তারা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
দুঃস্বপ্নময় বর্তমানে সুন্দর এক স্বপ্ন
স্তানিস্লাভ সেনিকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফটোশুটটা ওরা চেরননিহিভের জীর্ণ, বিবর্ণ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে করতে রাজি হয়েছে মূলত একটি কারণে৷ বাকিদের মতো ওরাও ভেবেছে, এই ছবি থেকে যাবে স্মৃতি হয়ে৷ দিন বদলাবে৷ আসবে সুদিন৷ চেরনিহিভ একদিন আবার সেজে উঠবে নতুন সাজে৷ তখন এই দুই কিশোরী তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই ছবি দেখিয়ে বলতে পারবে, ‘‘দেখো, আমরা এই ধ্বংসপ্রায় শহরটাকে ভালোবেসে বেসে আবার বাঁচিয়ে তুলেছি৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ওরা আর ভয় পায় না, মন খারাপ করে না’
ছবির এই মানুষটিই স্তানিস্লাভ সেনিক৷ ছবি তোলাকে পেশা করেছেন পাঁচ বছর আগে৷ রাশিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত চেরনিহিভ শহরে শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভাবে ফটোশুটে অংশ নেবে কিনা- এ নিয়ে তার অনেক সংশয় ছিল৷ কিন্তু কথা বলে বুঝলেন, শিক্ষার্থীদের ফটোশুটে কোনো আপত্তি নেই৷ আরো দেখলেন, ‘‘ওরা এখন আর ভয় পায় না, প্রিয় শহরের ধ্বংসপ্রায় রূপ দেখে খুব বেশি মন খারাপও করে না৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
দুমড়ানো-মোচড়ানো গাড়ির ছাদে ওরা পাঁচজন
স্বাভাবিক অবস্থায় এই চেহারার গাড়ি কোনো শহরেই যত্ন করে রাখা হয় না৷ যুদ্ধ শেষ হলে এই দুটোকেও হয়ত আর কোথাও দেখা যাবে না৷ তবে এই পাঁচ শিক্ষার্থীর এই ফটোশুটের কল্যাণে আগামী পৃথিবীর অনেকেই নিশ্চয়ই মনে রাখবে গাড়ি দুটোর কথা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ভুল বুঝবেন না’
ফটোশুটে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা অবশ্য আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছে, কেউ যদি ছবিগুলো দেখে মনে করেন, চেরনিহিভের ধ্বংসপ্রায় চেহারা নিয়ে শিক্ষার্থীরা গর্বিত আর এ কারণেই তারা সেখানে ফটোশুটে অংশ নিয়েছে- তাহলে খুব বড় ভুল করা হবে৷ তাদের অনুরোধ, ‘‘প্লিজ, আমাদের ভুল বুঝবেন না, আমরা আসলে এই দুঃসময়টাকে ফ্রেমে ধরে রাখতে চাই, আগামী প্রজন্মকে ছবি দেখিয়ে বলতে চাই ভয়ঙ্কর এই যুদ্ধের কথা৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
6 ছবি1 | 6
অস্ট্রেলিয়ার সাহায্য
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী কিয়েভে গিয়ে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এটাই অ্যান্থনি আলবানিজের প্রথম ইউক্রেন সফর। তিনি কিয়েভে সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ সামরিক সাহায্য দেবেন। তার মধ্যে থাকবে ১৪টি সেনাদের নিয়ে যাওয়ার বাহন, ২০টি সাঁজোয়া যান এবং প্রচুর ড্রোন। এছাড়া আরো ১৬ জন রুশ নাগরিকের অস্ট্রেলিয়ায় ঢোকার উপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে।
শলৎসের বক্তব্য
জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস জানিয়েছেন, রাশিয়া এক বছর ধরে ইউক্রেন আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়েছে। এই যুদ্ধ অনেক দিন ধরে চলতে পারে। সেই ক্ষমতা মস্কোর আছে। সিবিএস নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে শলৎস বলেছেন, তারা আগে অত্যাধুনিক অস্ত্র চালানোর ব্যাপারে ইউক্রেনের সেনাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তারপর ইউক্রেনকে অস্ত্র সাহায্য করা হয়েছে। সেজন্য কিছুটা দেরি হয়েছে।
বোমা বর্ষণের মাঝেই যে হাসপাতালে চলে চিকিৎসা
বাখমুত শহরের এ হাসপাতালে দূর-দূরান্ত থেকে এত রোগী আসবে কোনোদিন ভাবেনি কেউ৷ এখন সেখানে নিত্য রোগীর আসা-যাওয়া৷ পুরোনো অ্যম্বুলেন্স, স্ট্রেচারের বদলে কাঠের দরজা নিয়েই চলছে যুদ্ধাহত সৈনিকদের চিকি’সা৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Jorge Silva/REUTERS
দরজায় চড়ে ‘নরক’ থেকে হাসপাতালে
যুদ্ধাহত সৈনিক ইগর বলছিলেন, ‘‘আমরা নরক থেকে এখানে এসেছি৷’’ বাখমুতের এই হাসপাতালে তিনি এসেছেন বাঁচার আশায়৷ হাতে গোনা কয়েকজন ডাক্তার এবং প্যারামেডিক্স প্রাণপণ লড়ছেন তাদের বাঁচাতে৷ হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি বলতে গেলে কিছুই নেই৷ পর্যাপ্ত স্ট্রেচারও না থাকায় ওপরের ছবির মতো কাঠের দরজায় তুলে আনতে হচ্ছে আহত সৈন্যদের৷
ছবি: Jorge Silva/REUTERS
সেকেন্ড-হ্যান্ড অ্যাম্বুলেন্স
এমনকি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আহত সৈন্যদের নিয়ে আসার জন্য ভালো কোনো অ্যাম্বুলেন্সও নেই৷ জার্মানি এবং পোল্যান্ডের তৈরি কয়েকটি সেকেন্ড-হ্যান্ড অ্যাম্বুলেন্সই ভরসা বাখমুতের এই হাসপাতালের৷
ছবি: JORGE SILVA/REUTERS
ক্যানাডা থেকে ইউক্রেনে
ছবির এই নারীর নাম এলেনা বুলাখতিনা৷ রুশ বংশোদ্ভূত এই ক্যানাডিয়ান কাজ করছেন পিরোগভ ফার্স্ট ভলান্টিয়ার মোবাইল হসপিট্যালে৷ ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালটির মূল কাজ লুহানস্ক অঞ্চলের পোপসানা শহরের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আহত সৈনিকদের বাখমুতের হাসপাতালে নিয়ে আসা৷ আহতদের সব চিকিৎসা হয় না এখানে৷ প্রাথমিক চিকিৎসায় রক্তপাত বন্ধ করে, কিছুটা সুস্থ করে সব রোগীকে পাঠিয়ে দেয়া হয় ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলের বড় কোনো হাসপাতালে৷
ছবি: Jorge Silva/REUTERS
‘এত রোগী আসবে ভাবিনি’
বুলাখতিনার ‘বস’ সভেতলানা ড্রুজেনকো জানালেন এত আহত সৈনিকের চিকিৎসা দিতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছেন, ‘‘যুদ্ধ শুরুর পর আমরা যখন কাজ শুরু করি, তখনও ভাবিনি এত লোক আহত হয়ে আসবে৷ এখন যে হারে আসছে, সংখ্যাটা সত্যিই বিশাল৷ অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, সব শহরেই মারা যাচ্ছে মানুষ৷’’
ছবি: Jorge Silva/REUTERS
‘পোপাসনা এখন ধ্বংসস্তূপ‘
আহত সৈন্য ইগরের যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা খুব ভয়াবহ৷ বলছিলেন, ‘‘ওরা (রুশ বাহিনী) ভূমি থেকে এবং বিমান থেকে হামলা চালিয়েছে, সব জায়গায় বোমা ফেলছে, দিনে-রাতে হামলা চালাচ্ছে৷ পোপাসনা একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে৷’’
ছবি: Alexander Ermochenko/REUTERS
আহত আলেসান্দ্রোর স্বস্তি
যুদ্ধাহত সৈনিক আলেসান্দ্রোর পরিবার যুদ্ধ শুরুর পরই ইউক্রেন ছেড়ে চলে গেছে পোল্যান্ডে৷ সেখানে তারা নিরাপদে আছেন৷ হাসপাতালে নিজের শরীরের ব্যথা ভুলে সন্তানের সঙ্গে কথা বলছেন আলেসান্দ্রো৷
ছবি: JORGE SILVA/REUTERS
6 ছবি1 | 6
ইউক্রেন পুনর্গঠনের জন্য
কীভাবে ইউক্রেনের পুনর্গঠন হবে, তানিয়ে সুইজারল্যান্ডে বৈঠকে বসছেন বেশ কয়েকটি দেশ ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সেখানে ভিডিও-ভাষণ দেবেন। এই বৈঠক অবশ্য রাশিয়ার হামলার আগে থেকে ঠিক করা ছিল। তখন ঠিক ছিল, ইউক্রেন কীভাবে সংস্কারের পথে চলবে তানিয়ে আলোচনা হবে। এখন তা বদল করে পুনর্গঠন করা হয়েছে।