জাতিসংঘের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলেন তারা। সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
সেনার সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ কঙ্গোয়ছবি: AFP
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার কঙ্গোর একটি ধর্মীয় সংগঠন জাতিসংঘের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিল। কঙ্গোয় পশ্চিমা দেশগুলির বিভিন্ন সংগঠন যেভাবে কাজ করছে, তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন তারা। অভিযোগ, সেনাবাহিনী ওই আন্দোলনের অনুমতি দেয়নি। আন্দোলন শুরু হওয়ার পর সেনার সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। তাতেই অন্তত ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সেনার তরফে জানানো হয়েছে।
গোমা শহরে এই ঘটনা ঘটেছে। কিছুদিন আগে এক পুলিশকর্মীর উপর আক্রমণের ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অভিযোগ, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনী তাকে মারধর করেছে। তারই প্রতিবাদে এদিন মিছিলের ডাক দিয়েছিল ওই খ্রিস্টান ধর্মীয় সংগঠন।
মধ্য আফ্রিকায় আইএস-এর সহযোগী কারা?
কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের গ্রামে গত দুই বছরে রাতে হামলা চালিয়ে কয়েকশ মানুষকে হত্যা করেছে এডিএফ৷ ২০১৯ সালে তারা ইসলামিক স্টেট, আইএস এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিল৷
শুরুর কথা
১৯৯০ দশকের শুরুতে উগান্ডার সরকারের বিরোধী হিসেবে জামিল মুকুলুর নেতৃত্বে অ্যালাইড ডেমোক্রেটিক ফোর্স এডিএফ এর যাত্রা শুরু হয়৷ উগান্ডায় একটি ইসলামি সরকার বসানোর লক্ষ্য ছিল তাদের৷ ছবিতে এডিএফ এর হামলায় পুড়ে যাওয়া বাড়ি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Alexis Huguet/AFP/Getty Images
প্রতিষ্ঠা উগান্ডায়, কাজ কঙ্গোতে
২০১৩ সালে কঙ্গোর বেনি এলাকায় একের পর এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালায় এডিএফ৷ এর পরের বছর তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে কঙ্গোর সেনাবাহিনী৷ তখন মুকুলু পালিয়ে তাঞ্জানিয়া চলে যান৷ ২০১৫ সালে তাকে গ্রেপ্তার করে উগান্ডায় নিয়ে যাওয়া হয়৷ ছবিতে এডিএফ এর হামলায় নিহতদের সমাধি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Mailro
আইএস এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ
মুকুলু গ্রেপ্তার হওয়ার পর এডিএফ এর ঊর্ধ্বতন ইসলামিক লিগ্যাল কর্মকর্তা সেকা মুসা বালুকু দায়িত্ব নেন৷ তিনি এডিএফকে আন্তর্জাতিক জিহাদি গোষ্ঠীতে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেন৷ ২০১৯ সালের মাঝামাঝি আইএস এর এক ভিডিওতে এসে বালুকু তাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন৷
আবার অভিযান
২০১৯ সালের অক্টোবরে এডিএফ এর বিরুদ্ধে আবার অভিযান শুরু করে কঙ্গোর সেনাবাহিনী৷ এর প্রতিশোধ নিতে সাধারণ মানুষের উপর হামলা শুরু করে এডিএফ৷ জাতিসংঘ বলছে, গতবছর ৮০০র বেশি মানুষ হত্যা করেছে এডিএফ৷
ছবি: Reuters/Kenny Katombe
আধুনিক বিস্ফোরক ডিভাইস তৈরি
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কঙ্গোর বাইরে থেকে ফাইটাররা গতবছর সেখানে গিয়ে এডিএফকে আধুনিক বিস্ফোরক ডিভাইস তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়৷
ছবি: Getty Images/K.Maliro
হামলার দায় স্বীকার আইএস এর
২০১৯ সালের এপ্রিলে কঙ্গোতে একটি হামলার দায় স্বীকার করেছিল আইএস৷ গতমাসে উগান্ডায় দুটি হামলার দায় স্বীকার করে তারা৷ ঐ দুই হামলায় একজন প্রাণ হারান৷ এরপর গত মঙ্গলবার উগান্ডায় সংসদ ও পুলিশ সদরদপ্তরের কাছে চালানো দুটি আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট৷ ঐ হামলায় চারজন প্রাণ হারান৷ এডিএফ সদস্য মেডি এনকালুবো এই পরিকল্পনা করেন বলে জানিয়েছে মার্কিন ব্রিজওয়ে ফাউন্ডেশন৷
ছবি: Abubaker Lubowa/REUTERS
6 ছবি1 | 6
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, তারা শান্তিপূর্ণভাবেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী কোনো প্ররোচনা ছাড়াই তাদের উপর গুলি চালায়। তাতেই অন্তত ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুলি চললে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। অনেকেই আহত হয়েছেন। সেনা ১৬০ জনকে গ্রেপ্তার করে ঘটনাস্থল থেকে।
গোমায় রেডক্রসের প্রধান অ্যানে-সিলভি লিন্ডার জানিয়েছেন, তার ক্লিনিক আহততে ভরে গেছে। অধিকাংশের শরীরেই ছুরির আঘাত অথবা বুলেটের আঘাত আছে। ''মৃত অবস্থাতেও অনেককে নিয়ে আসা হয়েছিল।'' সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন অ্যানে-সিলভি। রেডক্রসের তরফে কঙ্গোর প্রশাসনের কাছে একটি আবেদন জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে যেন মানবিক ব্যবহার করা হয়। নিরপেক্ষ তদন্তেরও আবেদন জানানো হয়েছে।
রয়টার্সকে স্থানীয় মানুষ জানিয়েছেন, তারা একটি চার্চের সামনে সমবেত হয়েছিলেন। সেখান থেকেই তারা শান্তিপূর্ণ মিছিল বার করার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু সেনা সেখানেই তাদের পথ আটকে গুলি চালাতে শুরু করে। তাদের দাবি, অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।